![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় খরস্রোতা মাতামুহুরী বিধৌত গিরি উপত্যকা আলীকদম একটি সীমান্তবর্তী ঐতিহাসিক জনপদ। অন্তবির্হিন মৌননিস্তব্দ সৌন্দর্য আর দিগন্ত বিস্তৃত গ্রন্থিল পাহাড়িকার লম্বমান সারি আলীকদম উপজেলাকে সবুজের চাদরে ঘিরে রেখেছে। এখানকার নৈসর্গিক প্রকৃতির বুকে পাহাড়ীদের জীবনযাত্রা দেশী-বিদেশী ভ্রমণপিয়াসী পর্যটকদের অতিপ্রিয়।
মা-মাটির সাথে নাড়ির সম্পর্কিত এই আলীকদম অনেক কিংবদন্তি ও হারিয়ে যাওয়া সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর। দু:খজনক বাস্তবতা হলো, এসব তথ্য-উপাত্ত উদ্ধার, সংরণ, গবেষণা ও প্রকাশনায় ইতোপূর্বে কেউ ভ্রুপে করেনি। এ উপজেলার পরিচিতিমূলক গবেষণাধর্মী কোন বই-পুস্তক না থাকায় সর্বমহলে আলীকদম একটি অবহেলিত দুর্গম অঞ্চল হিসেবে গণ্য হত। অথচ প্রাচীন এ জনপদকে অনেক বিশেষণে চিত্রায়িত করা যায়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রিজার্ভ ফরেস্টটি আলীকদমের মাতামুহুরী রেঞ্জ। এর আয়তন ১ ল প্রায় ৩ হাজার একর। এখানকার পর্যটন সম্ভাবনাময় ঐতিহাসিক আলীর সুড়ঙ্গ নিয়ে রয়েছে নানা কিংবদন্তি ও ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র। শুধু তাই নয়, ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগীজ পন্ডিত জোয়াও জে বরোজের অংকিত মানচিত্রে আলীকদম নামক এ অঞ্চলকে ‘লোভাসডোকাম’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। যা আলীকদমের পর্তুগীজ ভাষ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও মোঘল সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ১৫১২ সালে গোটা চট্টগ্রাম নিজ দখলে আনলে খোদা বখশ্ খান ছিলেন তার অধীনে দণি চট্টগ্রাম অঞ্চলের শাসক। এ প্রশাসনিক এলাকার সদর দফতর ছিলো আলীকদম। মিঃ বারোজের মানচিত্রে আলীকদম রাজ্য ও খোদা বখশ্ খানের কথা ব্যক্ত আছে। চাকমা রাজা তৈন সুরেশ্বরীর রাজধানী ও পুরার্কীতির মধ্যে আলীর সুড়ঙ্গ এ জনপদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসুত্র। এ ধরণের হারিয়ে যাওয়া তথ্য গ্রন্থবদ্ধ হলে অতীত ঐতিহ্য অনুসন্ধিৎসুদের জ্ঞানাহরণেও ভূমিকা রাখতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করছি যে, পার্বত্য আলীকদম উপজেলার সাংবাদিকেরা শত বাধা-বিপত্তি, রক্তচুর ভ্রুকুটি উপো ও অর্থনৈতিক দৈন্যতার কঠিন নিগড়ের নাগপাশ চিহ্ন করে সত্য তথ্য উদ্ঘাটনের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। উন্নয়নশীল এ উপজেলার সার্বিক অগ্রগতি ও জনগণের জীবন-যাত্রার মানকে সরকারী উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি লেখালেখির মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিকরা। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত আলীকদম প্রেসকাবের সদস্যরা এখানকার জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখের সারথী হিসেবে পাশে থাকায় এলাকার সঠিক চিত্র সরকার ও সর্বমহলে তুলে ধরছে। এরই ধারাবাহিকতার সার্থক প্রয়াস আলীকদমের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনধারাকে সংরণ, উন্নয়নের জন্য গবেষণার মাধ্যমে গ্রন্থিত “প্রেক্ষণ : পার্বত্য চট্টগ্রাম গিরিনন্দিনী আলীকদম” শীর্ষক বইটি। আমি এ বইটির রচনা ও গবেষণা কাজে যাঁকে প্রাথমিক স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে পেয়েছি তিনি হলেন আলীকদমের সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আহমেদ। মূলত: তিনিই আমাকে ২০০৫ সালে ‘আলীকদম উপজেলা ডেভেলপমেন্ট প্রোপাইল’ তৈরীর পরামর্শ ও তথ্যনির্দেশনা দেন। তাঁর পরামর্শ না পেলে হয়ত আমি এ বইটি রচনায় উৎসাহী হতাম না। দরাজ দিল এ সরকারী কর্মকর্তার নামটি আমার হৃদয়পটে অয় হয়ে থাকবে। বইটি গ্রন্থনায় ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি মূলত: পার্বত্যাঞ্চলের শেকড়সন্ধানী লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় আতিকুর রহমান সাহেবের কাছে কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি আমার সহকর্মী মোঃ কামরুজ্জামান, আবু শামা, দেশমনি তঞ্চঙ্গ্যা, উচ্চতমনি তঞ্চঙ্গ্যার কাছে কাছে ঋণী হয়ে রইলাম। শেষ পর্যায়ে এ প্রকাশনার সারবস্তুকে সহজীকরণে নিজের মেধা দিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও সহযোগিতা করেছেন আলীকদম জোনের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ, পিএসসি, এলএসসি। তাঁর অকৃত্রিম মমতাবোধ বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে। উদার মনের এ সরকারী কর্মকর্তার প্রগাঢ় দেশপ্রেমের শিক্ষা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা আমার মেধা-মননকে শানিত ও উজ্জীবিত করেছে। তাঁর কাছে আমি ঋণী হয়ে থাকবো। তাছাড়া প্রকাশনার কাজে গতিসঞ্চার করেছেন আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমল কৃষ্ণ মন্ডল, ইউ.পি চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম ও নাছির উদ্দিন সওদগার প্রমুখ। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। এ বইটি আলীকদমের আগামী প্রজন্মের কাছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বইটিতে আমি উন্নয়ন-সম্ভাবনা ও সমস্যা-সীমাবদ্ধতার বর্ণনা সংক্ষেপে দেয়ার চেষ্টা করেছি। এটি আমার ক্ষুদ্র প্রয়াসমাত্র। আরো গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ বইটি পরবর্তীতে কলেবর বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ করা হবে। এ ভারটি হয়তো আগামী প্রজন্মও নিতে পারে। এখানে স্বীকার করে নিজেকে ভারমুক্ত করছি যে, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই বইটির পান্ডুলিপি তৈরী করেই ক্ষান্ত ছিলাম। অবশেষে বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রৈ আমাকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন লামা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রুহুল আমিন। বইটি প্রথম প্রকাশের ক্ষেত্রৈ দু:খজনক এক বাস্তবতা আমাকে বিস্ময়ে হতবাক করেছে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী সহকারে এটি সংশোধনী সংস্করণ হিসেবে প্রকাশ হলো। পরিশেষে বিনয়ের সাথে স্বীকার করছি, আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে এই বইয়ে হয়ত অনেক তথ্য-উপাত্তের বিচ্যুতি হতে পারে। রচনাশৈলী ও বাচনভঙ্গিতেও ঘটতে পারে অযাচিত শব্দসম্ভার। যদি সহৃদয় পাঠক বইটির ভুলভ্রান্তির বিপরীতে সঠিক তথ্য জানান তবে তা সাদরে গৃহীত হবে। এতে গ্রন্থটির ঐতিহাসিক মূল্য আরো বৃদ্ধি পাবে। সবাইকে ধন্যবাদ।গিরিনন্দিনী আলীকদম
©somewhere in net ltd.