![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমগ্র পৃথিবীতে স্বপ্নপুরীসম এক দেশ। বিলাসে ও আভিজাত্যে তুলনাহীন। সব বিশেষণকে একত্রিত করলে যে দেশের নামটা আপনার মাথায় প্রথমে আসে তার কথাই লিখছি। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সংক্ষেপে ইউএই। অফুরন্ত তেলের খনি, প্রাচুর্য ও বৈভবের সংমিশ্রণে তৈরি এই দেশ যেন পৃথিবীর বুকে এক স্বপ্নপুরী। ফ্যাশন বৈচিত্র্য, গোল্ড ভেন্ডিং মেশিন, মানুষের পরিবর্তে উটের পিঠে রিমোট নিয়ন্ত্রিত রোবট দিয়ে দৌড়, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উঁচু দালানসহ নানান বিস্ময়ের সমাহার যেন এই দেশটি। এতো প্রাচুর্য, এতো বিলাসিতা, তবুও কোথায় যেনো এক অস্বস্তি!
হ্যাঁ। আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় অস্বস্তির কারণ হচ্ছে সেই দেশের আবহাওয়া, তথা তাপমাত্রা। মরুভূমির এই দেশে মাঝেমধ্যে তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যায়। তার সঙ্গে বালুর ঝড় এ দেশে একটা স্বাভাবিক ঘটনা। অন্য দেশে যা অকল্পনীয়, সেটাই আরব আমিরাতে স্বাভাবিক। এখানে অতিরিক্ত গরম থাকে সবসময়। তাই কেউ বাসের জন্য কোনো বাসস্টপেজে দাঁড়ালে সেখানে দেখতে পাবে এসি করা ছোট ঘর। প্রত্যাশিত বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এসি রুমে বসে!
কিন্তু এতো গরম আর কতো সহ্য করবে দেশটির মানুষ? বৃষ্টিরও দেখা মেলে না তেমন একটা। অত্যধিক গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। তাইতো দরকার বৃষ্টির। প্রাকৃতিক বৃষ্টির কোনো আভাস নেই অথচ হঠাৎ করে মুষলধারে নামলো বৃষ্টি! ঠিক তাই। আরব আমিরাতে এখন প্রায়ই কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি নামানো হয়।
এটি সত্যই দারুণ একটি ব্যাপার যে আজ মানুষ চাইলে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। জানতে ইচ্ছে করছে আসল বৃষ্টিইবা হয় কীভাবে? অনেকেই জানে, তবুও লিখছি।
ট্রপোস্ফিয়ারে থাকা মেঘগুলো যত উপরে উঠতে থাকে, তাদের তাপমাত্রাও তত কমতে থাকে, কারণ ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমতে থাকে। যখন মেঘগুলোর তাপমাত্রা ০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের চেয়ে বেশী থাকে, তখন এদেরকে বলা হয় উষ্ণ মেঘ এবং যখন এদের তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে কম থাকে তখন এদের বলা হয় শীতল মেঘ।
উষ্ণ মেঘের ক্ষেত্রে ছোট ছোট জলের বিন্দুগুলো একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে করতে আকৃতিতে কিছুটা বড় হতে থাকে এবং এই বড় আকৃতির জন্য এরা মেঘের প্লবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাটিতে এসে পড়ে যেটাকে আমরা আসলে বৃষ্টি বলে জানি।
শীতল মেঘের ক্ষেত্রেও কিছুটা একই ঘটনা ঘটে। সেখানে ছোট ছোট বরফের ক্রিস্টালগুলো বড় হতে হতে প্লবতাকে আবারও বূড়ো আঙুল দেখিয়ে মাটিতে পড়তে থাকে। যখনই এই ছোট ছোট আইস ক্রিস্টালগুলোর তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশী হয়, তখন সেগুলো গলে গিয়ে জলের ফোঁটা হিসেবে পড়তে থাকে।
আগ্রহী পাঠকগণ নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছেন, যদি কোনোভাবে ছোট ছোট জলের বিন্দু কিংবা আইস ক্রিস্টালগুলোকে কৃত্রিমভাবে ভারী করে দেয়া যায়, তাহলেই কেল্লা ফতে! কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে তখন আর কোনো বাধাই থাকবে না!
প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কীভাবে করা হবে আর কী দিয়েই বা করা হবে? এর জন্য বেশ কিছু উপায় আছে। যেমন, বিমানের মাধ্যমে মেঘে হাইগ্রোস্কোপিক পাউডার বা জল স্প্রে করা। কিন্ত সবচেয়ে সাধারণ উপায়টি হচ্ছে ড্রাই আইস (কঠিন কার্বন ডাইঅক্সাইড) বা সিলভার আয়োডাইড ব্যবহার করা।
এভাবে রাসায়নিক ছিটিয়ে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত ঘটানোর পদ্ধতিকে বলা হয় ক্লাউড সিডিং। ক্লাউড সিডিং সাধারণত তিন রকমের হয়ে থাকে।
স্ট্যাটিক ক্লাউড সিডিংঃ এখানে সিলভার আয়োডাইড মেঘে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মেঘে থাকা জলের অণুগুলোকে ঘনীভূত করা হয় যার ফলে বৃষ্টিপাত হয়।
ডায়নামিক ক্লাউড সিডিংঃ এ পদ্ধতিতে বাতাসের বেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মেঘের মধ্য দিয়ে সাধারণের চাইতে বেশী পরিমাণ পানির অণুর প্রবাহ ঘটানো হয়। বেশ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে আগাতে হয় বলে এই পদ্ধতিটি স্ট্যাটিক ক্লাউড সিডিং এর চেয়ে বেশ জটিল।
হাইগ্রোস্কোপিক ক্লাউড সিডিংঃ এ পদ্ধতিতে মেঘের নিচের অংশে সোডিয়াম ক্লোরাইড ছিটিয়ে দেয়া হয়। জলের অণুগুলো সোডিয়াম ক্লোরাইডের সাথে মিশে গেলে আস্তে আস্তে বড় এবং ভারী হতে থাকে, ফলে বৃষ্টিপাত হয়।
এসব উপায়েই কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানো হয়।
এখন ফিরে যাই মূল প্রসঙ্গে। আরব আমিরাতে প্রচণ্ড গরম হতে মানুষকে রক্ষা করবার জন্য যখন লবণ ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে প্রযুক্তির সাহায্যে নামানো হলো কৃত্রিম বৃষ্টি তখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অধিবাসীদের মধ্যে নিশ্চয়ই এক চিন্তার উদ্রেক হয়। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে ন্যুজ ঢাকা শহরে প্রতিদিনই বাড়ছে নানা ধরণের গাড়ির চাপ। গাড়ির ধোঁয়ায় এ শহরের বাতাস দিনে দিনে বিষাক্ত হয়ে উঠছে। বিভিন্ন নির্মাণ ও সংস্কারকাজের কারণে বাড়ছে ধূলা। ধোঁয়া-ধূলায় ঢাকা শহর জুড়ে এখন প্রায়ই ধোঁয়াশা দেখা যায়। পরিবেশ দূষণের ফলে থার্মোমিটারে পারদের উচ্চতা হরহামেশাই উপরের দিকে উঠতে থাকে।
অব্যাহত তাপপ্রবাহে ক্রমশ তাপমাত্রা বাড়ছে রাজধানী ঢাকার। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজকেও ৩৩-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার উপরে। এ বছর দেশে তাপামাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। বায়ুর ক্রমবর্ধমান দূষণে তাপমাত্রার এই বৃদ্ধি বাড়বে বৈ কমবে না।
নগরবাসীর মধ্যে এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কেনার হিড়িক। যদিও সকলেই এই সাধ্য নেই। তবুও অনেকে টাকা ধার করে বা কিস্তিতে কিনছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। এই যন্ত্রের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে বায়ু আরও দুষিত হয়ে বাতায় অসহনীয় মাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় ঢাকা শহরের আবহাওয়াও হতে পারে আরব আমিরাতের আবহাওয়ার মতো। দিনে দিনে এখানে তাপমাত্রা বাড়ছে। গবেষকরা ধারণা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০ বছর পরে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তবে কি তখন আমাদেরকেও কৃত্রিম উপায় বৃষ্টি নামিয়ে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে? অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে।
তাহলে ঢাকা তথা বাংলাদেশকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আসন্ন অভিশাপ থেকে বাঁচাতে হলে আমাদের কী করতে হবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকাতে এখনই "স্থানীয় উদ্ভাবন" কাজে লাগাতে হবে। অর্থাৎ যে শহরে যেরকম পরিস্থিতি সে অনুযায়ী সেখানে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সব জায়গায় একই ধরনের পদক্ষেপ নিলে সেটা কার্যকরী হবে না। কয়েক দশক আগে ঢাকার শহরের জন্য যে মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল তাতে আজকের দিনের এতো অধিক সংখ্যক জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করা হয়নি। এর ফলে ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। তাই শহরের স্থানীয় ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জনমিতিকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এখন যে জায়গাগুলো সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত সেখানে সবার আগে সবুজ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। গাছপালা লাগানোর পাশাপাশি পরিবেশ-বান্ধব গ্রিন ইটের ব্যবহারও বাড়াতে হবে। ছিদ্রওয়ালা ইট দিয়ে বাড়ি ও দালান তৈরির ব্যাপারে লোকজনকে উৎসাহিত করতে হবে। কারণ এধরনের ইট তাপ ধরে রাখে না। কিন্তু সলিড ইট তাপ ধরে রাখে এবং তার ফলেই তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
আসুন আমরা সকলেই সতর্ক হই। পরিবেশকে দূষণ হতে রক্ষা করি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করি। বেশি করে গাছ লাগাই। পরিবেশবান্ধব দ্রব্য ব্যবহার করি। পরিবেশের অনুকূল জীবনধারায় অভ্যস্ত হই। সকলে মিলে একটি বাসযোগ্য ঢাকা শহর গড়ে তুলি।
তথ্যসূত্রঃ বিভিন্ন পত্রিকা ও ইন্টারনেট।
২| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৪:০৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
ছিদ্রওয়ালা ইট দিয়ে দেয়াল বানায়ে, সিমেন্টের স্তর দেয়ার পর, উহা র কি হবে?
৩| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:৩০
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
বেশ তথ্য সমৃদ্ধ লেখা ।
সবুজের বেষ্টনি ও সমাহার ঘটানো ছাড়া
রাজধানী শহড় ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর
আর কোন সহজ বিকল্প নেই ।
নতুন করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও
বাস্তবায়নএকান্ত অপরিহার্য্য।
শুভেচ্ছা রইল
৪| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:৩৮
শেরজা তপন বলেছেন: দুবাই আর শারজার কৃত্রিমতা আমার একদম পছন্দ হয়নি।
পয়সার জোরে ওরা প্রকৃতির ওপর প্রভাব খাটিয়ে - আশেপাশের দেশকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনাটি ভাল হয়েছে!
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৮:১৮
আহমেদ জী এস বলেছেন: মোনায়েম খান নিজাম,
সুন্দর ও জেনে রাখার মতো লেখা।
সবুজের ঘেরাটোপে ঢাকাকে ঢাকতে না পারলে একদিন ঢাকাও ইউএই'র মতো হয়ে যাবে।