![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক কথা 'মনের কথা' হলেও সবসময় তা প্রকাশ করা সম্ভব হয়না। কেননা তাতে তর্ক-বিতর্কের অবকাশ থাকে। তার মানে এই নয় বিতর্কে আমার অরুচি। তবে কক্টেলে আমার হ্যাঙ্গ ওভার হয়। তাই মনের কথা প্রকাশ করতে এই মাধ্যম বেছে নিলাম। মানুষের মন আর মনের মানুষকেও জানার ইচ্ছে রইল।
মোবাইল ফোনের সাথে আমার সহাবস্থান ২০০৩ সাল থেকে। দাদা লটারীতে একটা পেয়েছিল। ট্রিয়ামের সেট। আধুনিক ওয়াকি টকির মত সাইজ। ঐ বাজারে বেঢপ মনে হত না। সিম কার্ড ভরার এবং চালানোর মত টাকা ছিল না। একটা ইন্টারনেট ক্যাফেতে কাজ করতাম। পেতাম ৪০০ টাকা। ওদের কম্পিউটার ব্যবহার করে টিউশনি করতাম। ২০০০ টাকার মত পেলেও অর্ধেকটা ক্যাফেতে দিতে হত। মানে আমার টাকার কিছুটা আমার মায়না হিসাবে ফেরত আসত। ২০০ টাকার মত রেখে বাকীটা মার হাতে তুলে দিতে হত সংসার খরচের জন্য। সেই সময় ৮০০ টাকা লাগতো সিম ভরতে। ১২.৫০ টাকা ছিল আউট গোয়িং,ইনকামিং ৮.৫০। কাজেই মোবাইল পোষা ছিল বিলাসিতা। তাই পড়ে ছিল অনেকদিন। শুধু অ্যালার্ম বাজিয়ে শখ মেটাতাম। আর অন্যের মোবাইল হাতিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলতাম।
বছর দুয়েক পড়ে ক্যাফে ছেড়ে একটা কম্পিউটার স্কুলে কাজ করাকালীন মোবাইলটায় কার্ড ভরি। ৪৫০ টাকা হয়ে গেছে সিমের দাম। এস এম এস ১ টাকা। মায়ের ফ্যামিলী পেনশন শুরু হয়ে গেছে তাই আমার ওপর চাপ একটু কম। বাড়িতেও ফোন এসেছে।
প্রথম ফোনটা করলাম বাড়িতে। দরজার এপার থেকে। দাদা ধরল,
:কিরে কি ব্যাপার?
:দাদা শোন, আমার আসতে একটু দেরী হবে।
:ঠিক আছে, কখন আসবি?
:আমি চইলে আসছি, দরজা খোল।
: সে কিরে!! কার্ড ভরছিস নাকি!!
আর উচ্ছাস চাপতে পারলাম না, দাদাও না।
কয়েকদিন খুব ফোন চলল। বাড়ি থেকে মোবাইলে মোবাইল থেকে বাড়িতে। এছাড়াও টুকটাক। ১৪ দিনের শেষে আবার কার্ড ভরতে হল ৩০০টাকার। একমাস পড়ে একটা নাম্বার থেকে এস এম এস পেলাম। হাই, হাও আর ইউ? রিপ্লাই, ফাইন, বাট হু আর ইউ? আমাকে চিনতে পারছোনা? ঠিক আছে চিনতে হবেনা। মনে কর আমি তোমার আপন কেউ। তিন দিন পড়ে বুঝলাম সে কে? ক্যাফেতে থাকাকালীন একজনের প্রতি দূর্বলতা তৈরী হয়েছিল, নীলাক্ষী। স্বীকারও করেছিলাম, সে অস্বীকার। কারও কাছ থেকে নাম্বার জোগার করেছে। শুরু হয়ে গেল মোবাইলিং। মিনিটে মিনিটে এস এম এস আর ১ টাকা করে জলাঞ্জলী। বেশ কিছুদিন। আর এস এম এসে পোষাচ্ছিল না। ফোন করা শুরু হল ১ ঘন্টা ২ ঘন্টা ৩ ঘন্টা। ইনকামিং ফ্রি হয়ে গেছে আউট গোয়িং ৩.৫০। একদিন হিসাব করে দেখলাম ৪ মাসে মোবাইলের পেছনে হাজার চারেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। ফলাফলে পেয়েছি নীলাক্ষীর ফ্লার্টিং। বুঝে গেলাম বাঁশ খেয়েছি মোবাইলের দখল নিয়ে। এটা প্রথম বাঁশ। আরও আছে।
মোবাইলটা আমার অঙ্গ হয়ে গেল। ওটাকে ছাড়া থাকা যায়না। ভুল করে বাড়িতে ফেলে এলে খালি খালি মনে হয়। কিছু দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার মোবাইলিং শুরু হল। পাশের বাড়ির দাদার শালীর সাথে। চলল বেশ কিছুদিন। শেষও হল। সাথে জলে চলে গেল আরও অনেক ক্যাশ কার্ড। ইতিমধ্যে কম্পিউটার সেন্টার উঠে গেছে। আর ক্যাশ কার্ড ভরতে হবেন মনকে এই স্বান্তনা দিয়ে দূঃখের সাথে মোবাইলের সিম ল্যাপস করে দিলাম। পড়ে রইল আবার।
চাকরী শুরু করলাম বর্তমান সংস্থায়। পোষ্টিং উত্তর বঙ্গের এক প্রত্যন্ত জেলায়। কয়েক দিনের মধ্যেই জেলা পরিকল্পনা আধিকারিক বললেন, আপনার কন্টাক্ট নাম্বার কত। স্যার আমার কন্টাক্ট নাম্বার সার্কিট হাউসের ল্যান্ড ফোন। চলবেনা, মোবাইল নিন। সুতরাং মোবাইলে প্রাণ ফেরাতে হল। দ্বিতীয় বাঁশ খেলাম। নাম্বার কিছু দিনের মধ্যেই জেলায় ছড়িয়ে গেল। আমি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ এরিয়ায় থাকতাম। বেশীর ভাগ অফিশিয়াল স্টাফ বাইরে থাকত। তাই আধিকারিক দের কাছে রাত বিরেতে আমি ছিলাম সহজ লভ্য। আর একটা ভুল হয়ে গিয়েছিল। ১ মাসের মধ্যে প্রমাণ করে ফেলেছিলাম বেশীর ভাগ সরকারী স্টাফদের চাইতে আমাদের কোয়ালিটি ও জ্ঞান অনেক ভাল। নজরে পরে গিয়েছিলাম সবার। যখন তখন জেলাশাসক ডেকে পাঠাতেন। রাত নেই দিন নেই। মনে মনে মোবাইলটাকে দুষতাম।
জানুয়ারীর ১ তারিখ একটা ফোন এল। (এটা তৃতীয় বাঁশ যেটা সারাজীবন বহন করতে হবে)
: হ্যালো, হ্যাপী নিউ ইয়ার।
: সেম টু ইউ।
: আমাকে চিনতে পারছ? বলত কে?
: তনু। কেমন আছ, কি খবর?
দাদার শালীর সূত্রে ফোনেই পরিচয় হয়েছিল কয়েকমাস আগে। মাঝখানে আর যোগাযোগ হয়নি। কেননা আমি দাদার শালী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। অনেকক্ষন গল্প হল। ও ছিল ভীষণ একা, আর আমি এমন জায়গায় থাকি সন্ধ্যার পর কুকুরও টহল দিতে আসেনা। এক বছর শুধু ফোনে ফোনে গল্প হল একদম রুটিন মেনে। ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারতাম না। ফোনেই সংসার পেতে ফেললাম। ঝগড়াঝাটি, রাগ অনুরাগ সব আমার মোবাইল। ইতিমধ্যে সেট বদলেছি, এল. জি-১৫০০ । ভালবাসার প্রথম পর্বের একবছর তনুকে দেখিনি এবং ও আমাকে। পরের বছর জানুয়ারীর ১ তারিখ ফর্মাল প্রপোজ করলাম না দেখেই। সেই মোবাইলে। স্বীকৃতি পেলাম কয়েকদিন পর। মোবাইলে। এখনকার কথা আর কি বলব। বিয়ে হয়নি এখনি মায়নার হিসাব নেয়। সারা দিনে তিন চারবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। অবশ্যই মোবাইলে।
( আসল কতাডা কই। একটা মোবাইল কিনছি। অনেকদিনের শখ ছিল গান শোনন যায়, ফটুক উঠান যায় এমুন একখান কিনুম। কিনা ফালাইছি, নকিয়া-৬৩০০। এইডা জাইনা শুইনা খাইছি।)
২| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ দুপুর ২:৩৮
শাইরি বলেছেন: ৫
৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ দুপুর ২:৪৫
বকলম বলেছেন: মানুষ শখ কইরা কেমনে বাঁশ খায় তার সুন্দর উপস্থাপন।
জয় বাবা বাঁশ বৃক্ষ।
৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ দুপুর ২:৫৬
সপ্তক বলেছেন: সুখে থাকা ভুতে কিলানো লোক বাপের জন্মে প্রথম দেখলাম.........তবে লেখাটা জটিল...বাঁশ খাওয়া যে এক্ টা শিল্প এটা প্রথম জানলাম...
৫| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৩:০২
ইলা বলেছেন: তক দিব? ৫+
৬| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৩:১৮
মনের কথা বলেছেন: নেটের লাইন কাইটা গেছিল। হঠাৎ....
দাদার বিয়াতে দুই দিদি মিলা আরএকখান মোবাইল দিছে। দাদায় খুব খুশী। আমারে দেখায়া কয় ভাই মোবাইলটা দিছেরে। আমি কই, কি যে দিছে বুঝতে পারবি পরের মাসেই।
দাওয়াত পাইবা অনলাইন@উদাসী স্বপ্ন
সবাইরে ধন্যবাদ
৭| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৩:২১
অনুমান বলেছেন: ভাল লিখছিস, এত কথা জানতাম না।
৮| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৩:২৪
মনের কথা বলেছেন: কাকু কই আছিলা এতদিন। রাজাদা কই?
৯| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৪:০২
অনুমান বলেছেন: ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। তাড়াতাড়ি লিখব।
১০| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৪:১৪
মদন বলেছেন: ৬৩০০ সেট টা বড়ই সোন্দয্য
১১| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৪:২৩
মনের কথা বলেছেন: হ খুব সোন্দর। এন সিরিজের চাইতে দেখতে ভালা।
১২| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৫:৩৩
গোপাল ভাঁড় বলেছেন: ভাল্লাগ্লো.. মোবাইলের গলায় মালা দিয়া, দেয়ালে টাংগায়া রাখেন..
১৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৫:৩৭
মনের কথা বলেছেন: উপায় নাই, আমার ফোন বন্ধ করা নিষিদ্ধ।@গোপাল ভাঁড়
১৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ রাত ৮:৫৫
আন্ধার রাত বলেছেন: এরকম বাঁশ ইচ্ছা করে কত খাইলাম।
নকিয়া সেট আমার কাছে মনে হয় মেয়েদের জন্যই বিশেষ করে তৈরী করা হয়।
১৫| ০৭ ই আগস্ট, ২০০৭ সকাল ১১:১৬
মনের কথা বলেছেন: হুমঃ
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই আগস্ট, ২০০৭ দুপুর ২:২৯
উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: @মনের কথা,
এত সুন্দর লেখা!
৫ না দিয়া পারলাম না!
বিয়ার দাওয়াত কিন্তু চাই!