![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এম. মনসুর আলী : গত ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ঢাকাস্থ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০১৬ বিতরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে দেশ সেরা উপজেলা প্রশাসক হিসেবে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৬ গ্রহণ করেন প্রযুক্তি, শিক্ষাও মিডিয়াবান্ধব উপজেলা প্রশাসক( ইউএনও) সৈয়দা নাহিদা হাবিবা। বর্তমানে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে কর্মরত আছেন।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে এবং প্রাথমিক শিক্ষায় বিপ্লব সৃষ্টি করে গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার ৮জন উপজেলা প্রশাসকের( ইউএনও) মধ্যে প্রথম, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১জন উপজেলা প্রশাসকের (ইউএনও) মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিভাগের সেরা উপজেলা প্রশাসক( ইউএনও )নির্বাচিত হয়েছিলেন।সবশেষে জাতীয় পর্যায়ে ৮ বিভাগের সব সেরা উপজেলা প্রশাসকদের ( ইউএনও) সঙ্গে হাড়ভাঙ্গা প্রতিযোগীতা করে সবাইকে পেছনে ফেলে তিনি হয়ে গেলেন সেরাদের সেরা।সততা,পরিশ্রম,দেশপ্রেম দায়িত্ববোধ ও আত্মবিশ্বাসের বলে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট অজর্ন করলেন তিনি।
অদ্বৈত মল্লবর্মণ,সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দি খাঁর জন্মভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার হালটা যখন অস্থিচর্মসার অবস্থা, তখন আলোর দিশারী হয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব নিয়ে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর সরাইলে যোগদান করেছিলেন সৈয়দা নাহিদা হাবিবা।
এই কর্মবীর শৈল্পিক মানুষটি সরাইলে যোগদান করেই, শিক্ষার এই কংকালসার ও দৈন্যাবস্থা অবস্থা দূর করার জন্য এবং শিক্ষাকে সর্বজনীন, গুণগত ও মানসম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক শিক্ষার উপর কাজ শুরু করেছিলেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিশুর মেধা বিকাশের বুনিয়াদ গঠন হয়। তাই রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কখনো বাঁশের সাঁকো বেয়ে, কখনো ক্ষেতের আলপথ দিয়ে হেঁটে, কখনো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে তিনি প্রায় প্রতিদিনই ছুটে যেতেন ভৌগোলিকভাবে হাওর-বাঁওড়ে অবস্থিত সরাইল উপজেলার চরকাকরিয়া,বড়ইচাড়া,কাকরিয় ধামাউরা,ষাটবাড়িয়া,হরিপুর,তেলিকান্দি,জয়ধরকান্দি,দুবাজাইল,পরমানন্দপুর ইত্যাদি গ্রাম্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।যেখানে পূর্বে কখনো কোন উপজেলা প্রশাসকের( ইউএনও) পদ চিহ্ন পড়েননি।
সরাইল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন।বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ ও ঝরেপড়া রোধকল্পে- সরাসরি নিজে আকস্মিকভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে উপস্থিত হয়ে তা তদারকিসহ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ,বাসস্থানের পরিবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে যোগাযোগ, মিড ডে মিল উপকরণ (টিফিন বক্স) বিতরণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ (কলম, খাতা, জ্যামিতি বক্স) ও পোশাক বিতরণ, জার্সি ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি ব্যবস্থার জন্য পানির ফিল্টার বিতরণ, শ্রেণীকক্ষ এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখাসহ বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে ফুলবাগান করা, শ্রেণীকক্ষে ঝুড়ি স্থাপন, পরিচ্ছন্ন দল গঠন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বেঞ্চ সরবরাহসহ নানাবিধ প্রশংসনীয় ও শিক্ষাবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এর ফলে সরাইল উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী বিদ্যালয়মুখী হয়েছে। এতে করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঝরেপড়াও রোধ হয়েছে বলে অভিভাবক, শিক্ষক এবং এলাকার গণ্যমান্য সচেতন ব্যক্তিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই অর্থে সৈয়দা নাহিদা হাবিবা শুধু একজন উপজেলা প্রশাসক (ইউএনও) নয়, তিনি একজন আলোকবর্তিকা ও বটে। তাছাড়া উক্ত উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত নিরোধ নিষ্পত্তি যা স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও সমাধান হয়নি তা তিনি একেএকে সমাধান করেছেন।
তার বহুমুখী কাজের স্বীকৃতি হিসেবে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় “জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাপদক ২০১৬” এর জাতীয় পর্যায়ে তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলা প্রশাসক (ইউএনও) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। নিজের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে চমকে দিয়েছেন সবাইকে। কারণ সমগ্র বাংলাদেশের ৪৯১ জন উপজেলা প্রশাসকের (ইউএনও)সাথে হাড়ভাঙ্গা প্রতিযোগিতায় নেমে তিনি হয়ে গেলেন প্রথম, সেরা। পেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন হতে সম্মাননা সনদ। বেগম রোকেয়ার ছায়াখ্যাত সৈয়দা নাহিদা হাবিবা সম্পর্কে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রচারবিমুখ লেখক এম এ রহমান স্যার ফেসবুকের এক কমেন্টে লেখেন- “সমাজে মাঝে মাঝেই এমন সব ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে; যাদের তুলনা শুধু তারাই - সৈয়দা নাহিদা হাবিবা এমনই একজন।”
সরাইলের সচেতন নাগরিক সমাজ সৈয়দা নাহিদা হাবিবাকে বাল্যবিয়ে বন্ধের শৈল্পিক কারিগর মনে করতেন। কারণ তার চেষ্টা, প্রচেষ্টা, কর্মদক্ষতা ও সচেতনতায় দেশের সবচেয়ে বাল্যবিয়েপ্রবণ উপজেলা সরাইল আজ নিরানব্বই ভাগ বাল্যবিয়েমুক্ত উপজেলা। বাল্যবিয়ে রোধকল্পে এলাকায় জনসমাবেশ, উদ্বুদ্ধকরণ সভা, লিফলেট বিতরণসহ তার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। তিনি শতভাগ চেষ্টা করেছেন সম্পূর্ণরূপে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে। তার কাছে বাল্যবিয়ের খবর আসামাত্রই তিনি এলাকার চেয়ারম্যান, পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানীয় মেম্বারদের বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দিতেন। এমনকি তিনি তাদের নিয়ে বর-কনের বাড়িতে হাজির হয়ে অনেক বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। শতজনের খাবারের আয়োজনের দোহাই দিয়েও বাল্যবিয়ের ব্যাপারে কেউ কোন রকম ছাড় পাননি তাঁর কাছে। তিনি মনে করেন, প্রত্যেকটি শিশুর একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে। আর তার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। একটি কন্যাশিশুর জীবন বাল্যবিয়ের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে তা মেনে নেয়া যায় না। এলাকার সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে কৃষক, জেলে কামার-কুমার সবাই জানতেন যেখানেই বাল্যবিয়ে সেখানেই এই নীতিবান কর্মকর্তার কঠোর হস্তক্ষেপ। বাল্যবিয়ে সম্পর্কে তিনি কোন ধরনের অনুরোধ মানতেন না। তার চেষ্টা ও হস্তক্ষেপে সরাইল উপজেলা প্রায় ৯৯ ভাগ বাল্যবিয়েমুক্ত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে যদি তার মতো আরো ১০০ জন এরকম নিবেদিতপ্রাণ, দেশপ্রেমিক, সৎ, কর্মবীর সৈয়দা নাহিদা হাবিবা থাকতো তাহলে উন্নত জাতি গঠনের মূলভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষার চিত্রটা পাল্টে যেত এদেশে। সুহাসিনী, চির নবীন এই মানুষটি মন ও মননে সব সময় একজন সুচিন্তার মানুষ। আমার অসীম ভালবাসা, নিরন্তর শুভেচ্ছা ও অপার শ্রদ্ধা রইলো এই সাদামনের উচ্চ শিক্ষিত, উদারমনা ও মুক্তচিন্তার মানুষটির জন্য।
সাংবাদিক; নয়া আলো
[email protected]
01711471960
©somewhere in net ltd.