![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সরকারের শেষ সময়ে এসে দেশে জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুরের রাজনীতি শুরু হয়েছে। নির্বিচারে ভাঙচুর করা হচ্ছে দেশের সম্পদ। রক্ষা পাচ্ছে না বেসরকারি সম্পদও। রাজনৈতিক সমাবেশে ককটেল বিষ্ফোরনের মতো ঠুনকো কারণে ডাকা হচ্ছে দিনের পর দিন হরতাল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে বিরোধীদলের কোনো নেতার বাড়ির পোষা প্রাণী মারা গেলেও বুঝি হরতাল আহ্বান করা হবে। যে রাজনীতিবিদদের দেশ ও জাতি নিয়ে ভাবার কথা সেই রাজনীতিবিদরা এখন ক্ষমতা নিয়ে ভাবছে। হরতাল আর আগের দিনের হরতালে নেই। ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বেড়েছে। আগের হরতালের তুলনায় সম্প্রতি হওয়া হরতালে ক্ষতির পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন। দু’এক বছর আগেও হরতালে প্রাণহানির কথা চিন্তা করা যেতো না। কিন্তু সময় বদলেছে, পাল্টেছে হরতালের পিকেটিংয়ের ধরন। সম্প্রতি কয়েকদিনের হরতালে ঝরে গেছে পুলিশসহ কয়েক ডজন মানুষের প্রাণ। মানুষের জীবনের পাশাপাশি মালের ক্ষতিও বেড়েছে বহুগুণে। অজানা আতঙ্কে জনমন বিপর্যস্ত। আতঙ্কে বসবাস করছে দেশবাসী। হরতালে পথচারীদের মনে থাকে অজানা ভয়, না জানি কখন কোন দিক থেকে মাথার উপর বোমা বা ককটেলের বিষ্ফোরন ঘটে। হরতালের পুড়ছে হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পদ। এর প্রভাবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশী বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে অন্য রাষ্ট্রের কাছে। দেশের এমন ক্রান্তিকালে হরতালের নেতিবাচক দিক তুলে ধরতে হবে দেশের গণমাধ্যমকে। দেশবাসী ও সাধারণ মানুষকে করতে হবে সচেতন। হরতালের অপকারিতা বোঝাতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের। তৈরি করতে হবে হরতাল বিরোধী জনমত ও গনসচেতনতা। দেশ ও জাতিকে রক্ষায় দল, মত নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। সবাইকে বোঝাতে হবে বাংলাদেশটা আমার ও আপনার। এ দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে হবে। হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে। দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে হরতালকে না বলতে হবে সবাইকে। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্যের। হরতাল বন্ধে সকল পেশার ও মতের মানুষদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুরের
ধ্বংসাত্মক হরতালের রাজনীতি
হরতালে গাড়িতে আগুন দেওয়ার রেওয়াজ আগেও ছিল এখনও আছে। তবে এর প্রবণতা বেড়েছে বহুগুণে। ছোট ছোট বাস-ট্রাকে আগুন দিলেও এখন রেলগাড়ি ও পণ্যবাহী ট্রাকও হরতালের আগুন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আজ থেকে ৫ বছর আগেও গাড়িতে আগুন দিলে গাড়ি চালক, হেলপার ও যাত্রীদের নামার সুযোগ দিতো পিকেটাররা। এখন দিন বদলেছে। এখন আর সে সুযোগও দেয় না পিকেটাররা। আগুনে কে মারা গেল এটা দেখার সময়ও নেই তাদের। বিএনপি-জামায়াতের হরতালে গত আড়াই মাসে সারাদেশের পরিবহন খাতে ২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ক্ষতির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এনায়েত উল্লাহ বলেন, হরতালের কারণে সারাদেশে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পরিবহন খাত। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় হরতালের আগেরদিন রাতে। তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার হরতালের বিকল্পের কথা বলি কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনে না। আর এভাবে প্রতিনিয়ত পরিবহনের ক্ষতি হলে অচিরেই এই সেক্টর ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। গত কয়েকদিনে জামায়াত-বিএনপির হরতালে আক্রমণের একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন উপড়ে ফেলে স্টেশন ভাঙচুর ও ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ও বাস। এমনকি রাজধানীর সুরক্ষিত কমলাপুর রেলস্টেশনেও রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন দেয় হরতাল আহ্বানকারীরা। কিছুদিন আগেও হরতালে প্রকাশ্যে মিছিল ও পিকেটিং করতো হরতাল আহ্বানকারীরা। এখন সে সময় বদলে গেছে। হরতালে পিকেটিং ছিল হরতাল আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার হরতালে বিরোধীদলকে দমাতে কঠোর অবস্থান নেয়। তারা হরতালে পিকেটিংকারীদের মোবাইল কোর্ট আইনে গ্রেফতার ও সাজা দেওয়ার কাজ পাকাপোক্ত করে। এর ফলে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা হরতাল আহ্বান করলেও হরতালের সমর্থনে প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং করতে খুব একটা আগ্রহী নয়। চোরাগোপ্তা হামলা ও গেরিলা কায়দায় হরতালে পিকেটিং করে তারা। এর ফলে দেশে হরতালের রাজনীতিতে শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি। জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির জন্য সরকার পক্ষ দায়ী করছে বিরোধীদলকে। অন্যদিকে বিরোধীদল দায়ী করছে সরকারি দলকে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায়কে কেন্দ্র করে গত দেড় মাসে দেশের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে; যার মধ্যে প্রায় এক ডজন পুলিশও রয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারে ছাড়িয়ে গেছে।
হরতালে ৪ গুণ বেশি ক্ষতি
এবারের হরতালের চরিত্র ছিল আগেরগুলোর চেয়ে ভিন্ন, যার প্রভাব পড়েছে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র। বেড়েছে হরতালে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা। ফলে আগেরগুলোর তুলনায় এবারের হরতালে চার গুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে- এ মূল্যায়ন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সবুর খানের। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, আগের হরতালগুলোতে প্রভাব পড়ত বিভাগীয় শহরগুলোতে। তা ছাড়া রপ্তানিতেও তেমন সমস্যা হতো না। সাম্প্রতিক হরতালে সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ছে। রপ্তানিতে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে এর আগে টানা হরতালেও রাতের বেলা ট্রাক চলত। গান পাউডার দিয়ে ট্রাকসহ পণ্য পুড়িয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি আগে কখনো দেখা যায়নি। এ জন্য সারাদেশেই ট্রাক চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায় হরতালে। ফলে রপ্তানিপণ্য পরিবহন ছাড়াও সারাদেশে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। এতে একদিকে যেমন কৃষকসহ শিল্প উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনই ক্ষতির শিকার হয়েছেন পণ্যের গ্রাহক ও ক্রেতারা। অর্থাৎ এবার ক্ষতির শিকার সবাই। আগামী দিনগুলোয় এমন অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। রপ্তানিকারকদের দাবি, গত কয়েকদিনের হরতালে বহু প্রতিষ্ঠান সময়মতো পণ্য পাঠাতে পারেনি। ফলে তাদের আগামী কয়েক দিনে অর্ডার বাতিল, পণ্যমূল্য থেকে ক্ষতিপূরণ কেটে রাখা, বিমানে পাঠানোর মতো সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে সুনামের। এ গেল রপ্তানিখাতের কথা। দেশের জন্য পণ্য উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের অবস্থাও করুণ। কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়েছে, তবে বিক্রি সেভাবে হয়নি। স্থানীয় বাজারে দাম পড়ে গেছে, ঢাকাসহ অন্য শহরে বেড়ে গেছে। আমদানি পণ্যের জাহাজ বা ট্রাক বন্দরে এসেছে। কিন্তু পণ্য বন্দর ছাড়তে পারেনি। শিল্পপণ্যের চাহিদা না থাকায় উৎপাদন কম হয়েছে। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির প্রতিটি কর্মকা- পরস্পর সংযুক্ত। এর প্রভাবও একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। একটি দোকানে কেনাবেচা কমে গেলে উৎপাদন কমে যায়। বিক্রেতা ও উৎপাদনকারী যে ব্যাংকে লেনদেন করেন, ওই ব্যাংকের আমানত ও ঋণ কমে যায়। সার্বিকভাবে বছর শেষে এর প্রভাব পড়ে ব্যাংকের মুনাফায়। দেশজুড়ে বছরব্যাপী এ ধরনের সহিংসতা চললে শেষে ব্যাংকের মুনাফা কমে যেতে পারে। আর তার অনিবার্য ফল শেয়ারবাজারে ওই ব্যাংকটির শেয়ারের দরপতন ও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি। সব মিলিয়ে বছর শেষে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া।
হরতালে প্রতিদিন ক্ষতি
এক দিনের হরতালে কতো ক্ষতি হয়, এর কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশে। বেসরকারি পরিসংখ্যানও গবেষণা নির্ভর হয়। বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির মতে, এক দিনের হরতালে খুচরা কেনাবেচায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ পরিবহন সমিতিগুলোর মতে, হরতালে দৈনিক ক্ষতি আড়াই’শ কোটি টাকার মতো। ২০০৫ সালে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএনডিপি হিসাব করে বলেছিল, এক দিনের হরতালে সরাসরি ৫০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। তারপর গত আট বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে। জিডিপির আকার ৯ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে ক্ষতিও বেড়েছে। ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) মতে, এক দিনের হরতালে ক্ষতি প্রায় ২০ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
জামায়াতি সন্ত্রাসে রাষ্ট্রের ক্ষতি
২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন থেকে জামায়াত-শিবির দেশজুড়ে যে নৈরাজ্য ও নাশকতা চালিয়ে আসছে তাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ বিপুল। এখন পর্যন্ত প্রায় ২২৫ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। তবে এটাই সব নয়, কিছু ক্ষতির হিসাব এখনো মেলেনি। হরতালের সময় ও এর আগে-পরের সহিংসতা ও অচলাবস্থা মিলিয়ে বেসরকারি খাত ও ব্যক্তিগত সম্পদের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে ক্ষতির মোট পরিমাণ ঠিক কতো এর কোনো হিসাব কেউ করেনি। ব্যবসায়ীরা অবশ্য এরই মধ্যে বলেছেন, অন্য সময়ের তুলনায় এবারের হরতালে চার গুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে। ব্যক্তিজীবন ও স্বাস্থ্যের ক্ষতির আর্থিক মূল্য নিরুপণ করা সম্ভব নয়। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় গত কয়েক দিনে আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপড়ে ফেলা হয়েছে রেললাইন, আগুন দেওয়া হয় সরকারি কার্যালয় ও রেলের বগিতে। নির্বিচারে ভাঙচুর ও পোড়ানো হয় সরকারি যানবাহন। রক্ষা পায়নি আগুন নেভানোর গাড়িও। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায়। সেদিনের আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। গত ৫ মার্চ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন এসব তথ্য জানান। তবে এই আর্থিক ক্ষতির চেয়েও বড় যে ক্ষতি হয়েছে তা সুদূরপ্রসারী। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পুড়ে যাওয়ায় সেখানকার আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জনজীবনে সৃষ্টি হবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাঘাত। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি ও ব্যক্তির জান-মালের ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইনী কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারি সংস্থা ও কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, চলমান সহিংসতায় কেবল বগুড়ায় ১১ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। রেলওয়ের ক্ষতি হয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকা। বিআরটিসির ক্ষতি প্রায় দুই কোটি টাকা। চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এর মধ্যে প্রায় তিন কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দেশজুড়ে ফায়ার সার্ভিসের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। তবে পুলিশের গাড়ি পোড়ানো, সেতুর ক্ষতি করাসহ বেশ কিছু ক্ষতির আর্থিক মূল্য বের করা যায়নি। বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকলেও অন্যসব হরতালের মতো জামায়াতের ডাকা হরতালেও কিছু জেলার সঙ্গে রেল যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। জামায়াত রেলকেই বেছে নেয় সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে। সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর ছয় দিনে রেলওয়েকে কেন্দ্র করে ৫৯টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত পশ্চিম রেলের দুটি স্টেশন ও তিনটি কোচ পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেছি।’ জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবনির্মিত সরকারি পর্যটন মোটেলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করছে পর্যটন করপোরেশন। তবে মোটেলটির ঠিকাদার খায়রুল ইসলাম জানিয়েছেন, মোটেলটির ক্ষতি মেরামত করতে এক কোটি টাকারও বেশি খরচ হবে। বগুড়া থানায় হামলা, ফাঁড়ি ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে আগুনের ঘটনায় ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ প্রধান ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক বলেছেন, সহিংসতায় পাঁচটি থানা ও ছয়টি পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সব মিলিয়ে সেখানে ক্ষতি হয়েছে এক কোটি টাকার মতো। উপজেলা পরিষদে আগুন ও দুটি গাড়ি পোড়ানোয় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। শিবগঞ্জে পল্লীবিদ্যুতের সাবস্টেশন ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে ওই এলাকার কৃষকরা সরাসরি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। দেশের গড়পড়তা উৎপাদন হিসাব অনুযায়ী ওই পরিমাণ জমিতে প্রায় ৩২ হাজার টন চাল উৎপাদন হওয়ার কথা, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৯৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের হামলায় ব্যক্তিগতভাবে অনেকের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিকা-ের শিকার হয়েছে। এসবের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ
গত চার বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে; চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। সম্প্রতি হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভসহ নানা সহিংসতায় রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। শুল্ক আদায়ে স্থবিরতা বিরাজ করছে, মূসক আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। তবে আয়কর আদায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক এ ধারার জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাকেই দায়ী করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা। এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম। এনবিআর রাজস্ব আদায়ের যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেসবের পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাই দায়ী। গোলাম হোসেন বলেন, প্রায় ছয় মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিল্প ও বিনিয়োগে নেতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে। গত দুই মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে। সহিংসতা চলছে দেশের কিছু জায়গায়। এতে বিনিয়োগ ও শিল্প খাত স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজস্ব আদায়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভসহ নানামুখী রাজনৈতিক সহিংসতায় চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ রয়েছে। গত সাত দিনের হরতালে শুধু চট্টগ্রাম বন্দরেই রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা। আবারও হরতাল বা রাজনৈতিক সহিংসতায় শুল্কসংক্রান্ত ঘাটতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। গোলাম হোসেন বলেন, আয়কর ও মূসক আদায়ের জন্য কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে ঠিকমতো যেতে পারছেন না। যাঁরা যাচ্ছেন তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যের অচলাবস্থার কথা বলে সময় চাচ্ছেন করদাতারা। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি থেকে গেছে। আলোচ্য সময়ে ২১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকার ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। একই সময়ে আমদানি শুল্ক বাবদ ১৯ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৮ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত অন্যান্য খাতে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ২২৪ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে আয়কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছে এনবিআর। গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫৩১ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয়কর আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, চলতি বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আরো আট হাজার কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশ ছিল। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অতিরিক্ত এ রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
গতি কমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে
সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও রপ্তানিখাতে বছরখানেক ধরেই গতি কম। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহারের সীমা তুলে নিয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ার গতি শ্লথ। ফলে উৎপাদনেও টান পড়েছে। তাজরীন, স্মার্ট ফ্যাশনে আগুন, শ্রমিকের মৃত্যু, ডলারের দাম পড়ে যাওয়া এবং ইউরোপ ও আমেরিকায় তিন বছর ধরে মন্দাভাব, সব মিলিয়ে নানা শঙ্কায় ১৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের পোশাক খাত। অন্য ছোট খাতগুলোর প্রধান বাজার ইউরোপ। পোশাক ছাড়া অন্য পণ্য সেখানে রপ্তানি করে তেমন সুবিধা করা যাচ্ছে না। দেশীয় প্রধান প্রধান খাতে মন্দা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আবাসন খাতের ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বড়গুলো কোনো রকমে টিকে আছে। কাগজ, সিমেন্ট, স্টিল ইত্যাদি বড় বড় খাতে উৎপাদনক্ষমতার বড় অংশ অব্যবহƒত থেকে যাচ্ছে। ফলে কোম্পানিগুলোর পণ্যের একক প্রতি উৎপাদন খরচ বেশি লাগছে। কিন্তু বাজারে চাহিদা কম থাকায় দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। কাঁচামাল, যন্ত্রপাতিসহ পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় চলতি ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশের লেনদেন ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। এই সময়ে পণ্য-বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। তবে আমদানি কমে যাওয়ার মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসাকে মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। আলোচ্য সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তিভিত্তিক মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। শিল্প কাঁচামাল আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদান দুটির আমদানি কমে যাওয়ায় শিল্পের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান, সর্বোপরি প্রবৃদ্ধি কমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। জ্বালানির অভাব, অবকাঠামোর দুর্বলতা ও উচ্চ সুদহারে দেশের অর্থনীতি সমস্যায় আছে। এর মধ্যে সহিংসতা ও হরতাল আরো সংকট তৈরি করবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ আর অবকাঠামো সংকটে বাংলাদেশে তেমন বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে পারছেন না। কিন্তু এ দেশের অনেক সম্ভাবনা আছে। সেগুলো কাজে লাগাতে বাধাগুলো দূর করতে হবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক দিন হরতাল হলে যে ক্ষতি হয়, তা পরের দিন কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ ধরনের হরতাল ও সহিংসতা অব্যাহত থাকলে পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলেছে বেশ কয়েকটি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান। মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান ২০০৭ সালে বলেছিল, বাংলাদেশ হবে আগামী দিনের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাঁচটি দেশের একটি, যাদের তারা বলেছে ‘ফ্রন্টিয়ার ফাইভ’। কিন্তু আদতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ তেমনভাবে হচ্ছে না বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে। এর ওপর এক বছর ধরে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে দেশজুড়ে। দিন যতো যাচ্ছে তা আরো বাড়ছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার আগে বিভিন্ন দেশের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। সহিংসতা অবশ্যই এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক হিসেবে কাজ করে। নতুন বিনিয়োগ হয় না, পুরনো বিনিয়োগকারীরা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেন। অনিশ্চয়তা দেশ থেকে টাকা অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার হার বাড়িয়ে দেয় বলেও মনে করেন ওই অর্থনীতিবিদ। গ্লোবাল ইনটিগ্রিটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে গেছে। প্রতিবছর বিদেশে চলে যাওয়া অর্থের পরিমাণ দেড় বিলিয়ন ডলার। তবে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে
সম্প্রতি বিরোধীদলের রাজনৈতিক তা-ব ও অগ্নিসংযোগের কবল থেকে দেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে। বিএনপি’র পৃষ্ঠপোষকতা ও নৈতিক সমর্থনে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও তা-বের কারণে দেশের অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত। এতে অসুবিধায় পড়ছে সাধারণ জনগণ। তাদের অনেকেরই জীবন ও জীবিকা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ গত ৪ বছর ধরে বাংলাদেশে যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ছিল, তাতে অনেকেই নিশ্চিত ছিলেন, বাংলাদেশ অচিরেই মাঝারি আয়ের দেশে পরিণত হবে। বিশ্বে অনেক দেশে যখন অর্থনৈতিক মন্দা, তখন আমাদের দেশে বার্ষিক উন্নয়নের ধারা সাড়ে ৬ শতাংশ। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রধান লক্ষ্য দেশের অর্থনীতি। তারা দেশের শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, ব্যবসা প্রভৃতি প্রতিটি খাতকেই ধ্বংস করতে চায়। তারা নির্বিচারে কলকারখানা, বিদ্যুতেকেন্দ্র ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাচ্ছে। অর্থনীতি ধ্বংসের মাধ্যমে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। কৃষি এদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি। জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই তা-ব ও অগ্নিসংযোগের কবল থেকে দেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে। এ জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। নাশকতার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততার খবর প্রমাণিত হয়েছে বহু আগেই। কারণ এরা আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমর্থন করে না। জামায়াত দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। শাহবাগের নতুন প্রজšে§র পক্ষ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। সরকারের ভেতর-বাইরের বিভিন্ন মহল থেকেও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধের জোর দাবি উঠেছে। এমতাবস্থায় সরকারকে ভেবে-চিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিকল্প বিবেচনার সময় এসেছে
হরতাল নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য শুরু হতে না হতেই সমাবেশস্থলে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। প- হয়ে যায় সমাবেশ। কালবিলম্ব না করে ঘোষণা আসে হরতালের। ‘হরতাল, হরতাল’ ধ্বনি উঠল বিক্ষিপ্ত মানুষের মধ্যে। এরপর ঘটল আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস একটি পুলিশি অভিযান। অনেকের বিশ্বাস ছিল, রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান পরিচালিত হয় না। বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দীর্ঘদিন প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করেছেন এই ভরসায়। কিন্তু এ ধরনের বিশ্বাস আর টেকেনি। পরবর্তীতে এর প্রতিবাদে দীর্ঘ হরতালের কর্মসূচি পালন করে বিরোধী দল। হরতাল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি। এক সময়, পাকিস্তান আমলে বা বাংলাদেশ আমলেও রাজনীতির চরম কর্মসূচি হিসেবে হরতাল ব্যবহৃত হতো। গত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ অনেক হরতাল করেছে। হরতালের চাপে জোট সরকার পদত্যাগ করেনি, মেয়াদ শেষ করেই ক্ষমতা ছেড়েছে। এখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট হরতাল করছে। এরা নিশ্চয় জানে, হরতাল দিয়ে সরকারকে নরম করা যাবে না। তাহলে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এই হরতাল ডেকে কী লাভ এমন প্রশ্ন নানা মহল থেকেই উঠছে। আজকাল ‘হরতাল’-এর পুরনো চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। আগে হরতাল মানেই গাড়ির চাকা ঘুরছে না, অফিস-আদালত চলছে না, বন্ধ থাকছে সব শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। এখন কী হয়? হরতালের দিন কম হলেও গাড়ি চলছে, অফিস-আদালত চলছে, স্বাভাবিকতা না থাকলেও জনজীবন থেমে থাকে না। মাঝ থেকে মানুষের জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়, গাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগানোর নানা হাঙ্গামা চলতে থাকে। ঘটে মৃত্যুর ঘটনাও। হরতাল ডেকে কী ফল ঘরে তোলা যায়, তা হরতাল আহ্বানকারীরা নিশ্চয় বুঝতে পারেন। আন্তঃজেলা বাস না চললেও ছোট-বড় শহরে গণপরিবহন চলেছে। হরতাল আহ্বানকারীরা গাড়ি ভেঙেছে, পুড়িয়েছে। মালবাহী ট্রাক পুড়েছে। যাত্রীবাহী ট্রেন পুড়িয়েছে, রেললাইন উপড়ে ফেলেছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে হরতালের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে গেছে, এমনটি মনে করছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। গণতন্ত্র থাকলে ভিন্নমত থাকবে, দাবি-দাওয়া থাকবে। দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলনও করতে হবে। তবে হরতালের বিকল্প জরুরি হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে হরতাল পরিহারের পথে খুঁজতে হবে। হরতাল নৈরাজ্যের জš§ দেওয়া এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়া কোনো সমস্যা সমাধানে অবদান রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কথা উপলব্ধির সময় এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষদের ভাবতে হবে হরতালের বিকল্প খুঁজে বের করতে। হরতালের বিকল্প ভাবার সময় এখনই।
রাজনীতিবিদসহ সবাইকে ভাবতে হবে
গণতান্ত্রিক রাজনীতি একটি দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশকে স্থিতিশীল ও গতিশীল করে তোলে। সরকার অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে সচেষ্ট থাকে। কোনো ব্যত্যয় ঘটলে বা অসংগতি দেখা দিলে বিরোধীদলগুলো সরকারের সেই দুর্বলতা ধরিয়ে দেয়, যাতে দেশের জনগণ, রাষ্ট্রের ও জনগণের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেই সঙ্গে অনুল্লিখিত একটি বার্তাও জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় যে পরবর্তী নির্বাচনে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিলে এ ধরনের দুর্বলতা থাকবে না। এটাই এক কথায় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধীদলের পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়। একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশে সরকার ও বিরোধীদল বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্থিতিশীলতা প্রদর্শন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা নিয়ে বিতর্ক করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বেলায় যেনো বিধি বাম। দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কর্মকা-ের নামে যে হরতাল ও সহিংসতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে স্থবির হয়ে পড়ছে জনজীবন; ধীরে ধীরে এগোনো অর্থনীতির পা অচল হয়ে পড়ছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে শুধু যে বাজার সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে তা-ই নয়, উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত এবং ব্যক্তির নিরাপত্তা ও সচ্ছলতার সঙ্গে জড়িত সব খাত অস্বাভাবিক রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। একদিকে শিল্প খাতে যেমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সঙ্গে শিল্প বিনিয়োগ-সম্ভাবনাও মারাত্মকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে, যা একটি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। বীমা কোম্পানিগুলো আর্থিক চাপে পড়লে জনগণের নিরাপত্তা শঙ্কার মুখে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে হরতালকেন্দ্রিক সহিংসতায় যে গাড়ি, সম্পদ ভাঙচুর ও অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে, তাতে স্বাভাবিকের তুলনায় বীমা কোম্পানিগুলোতে অনেক বেশি বীমার টাকার দাবি (ক্লেম) উঠেছে। কৃষি উৎপাদন ও সরবরাহ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ, মুদ্রাবাজার-এর কোনো খাতই সরাসরি লোকসানের আওতার বাইরে নয়। অতএব বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এখন ভাবতে হবে হরতালের মতো কর্মসূচি কী করে এড়িয়ে যাওয়া যায়। দেশ পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদদেরও বিরোধীপক্ষকে এমন এক সন্তোষজনক অবস্থানে টেনে আনতে হবে, যাতে হরতালের মতো কর্মসূচি তারা পরিহার করে। দেশের উৎপাদন ব্যাহত হলে, শিল্প উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হলে সার্বিক অর্থনীতিতে যে চাপ পড়বে, তার দায়ভার ও পরিণতি দেশবাসীর সঙ্গে রাজনীতিবিদদেরও ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশে এক সময় জাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে ও জাতির আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে হরতাল ডাকতে হতো। তখন অর্থনৈতিক কর্মকা- এতোটা বিস্তৃত ছিল না। শত শত কোটি টাকার লোকসান গুণতে হতো না। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। সুতরাং একটি দিন হরতাল ঘোষণার আগে যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলের শতবার ভেবে দেখা প্রয়োজন।
২| ১৪ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৬
কাকচক্ষু বলেছেন: যেদিন ভাঙ্গারির ব্যবসা বন্ধ হইব সেই দিন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:১২
লিঙ্কনহুসাইন বলেছেন: ভাঙচুরের সংস্কৃতি...কবে হবে শেষ?
উওরঃ যেই দিন আওয়ামীলীগ , বিএনপি জামাত নামে কোন রাজনীতি দল থাকবেনা , সেই দিন এই ভাঙচুরের সংস্কৃতি বন্ধ হবে ।