![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগামী ডিসেম্বর মাসকে ‘কাউন্সিলের মাস’ টার্গেট করে দল গোছানোর প্রক্রিয়ায় হাত দেয় বিএনপি। এরপরই শীর্ষ নেতাদের মধ্যে শুরু হয় কাদা ছোড়াছুড়ি। ফলে থমকে গেছে দল গোছানোর প্রাথমিক কর্মকাণ্ড
খোন্দকার কাওছার হোসেন : ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল। বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে সম্ভাব্য আগামী নেতৃত্বের দ্ব›েদ্বর কারণে থেমে গেছে দল পুনর্গঠনের কার্যক্রম। বিশেষ করে ১/১১’র সংস্কারপন্থী এবং খালেদাপন্থীদের দ্ব›দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। চলছে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি। বিএনপির এক সময়ের পরীক্ষিত, ত্যাগী অথচ বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরানোর প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে আগামীর নেতৃত্বের দ্ব›েদ্বর কারণে ডিসেম্বরের সম্ভাব্য জাতীয় কাউন্সিল নিয়েও অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বর মাসকে ‘কাউন্সিলের মাস’ টার্গেট করে দল গোছানোর প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছে বিএনপি। সফল একটি কাউন্সিল করার জন্য সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে দায়িত্বও দিয়েছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপরই শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে কাদা ছোড়াছুড়ি। কতিপয় নেতা একে অপরকে ঘায়েল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরাও। ফলে থমকে গেছে দল গোছানোর প্রাথমিক কর্মকাণ্ড।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পরপর কয়েক দফা আন্দোলনে ব্যর্থতার পর বিএনপির হাইকমান্ড নিশ্চিত হয়েছেন বর্তমান নেতৃত্ব দিয়ে এ সরকারকে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এমন বাস্তবতায় দলকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বর্তমান নেতৃত্বের ওপর ভরসা না করে দলে তরুণ ও মেধাবীদের চালকের আসনে দেখতে চান তিনি। ঘোষণা দেন দল পুনর্গঠনের। এ জন্য এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন যোগ্য
মেধাবী ও জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক এমপিদের কাঁধে দলের দায়িত্ব দেয়ার আগ্রহ দেখান তিনি। সঙ্গে উদার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেন। এ জন্য বিএনপির দরজা-জানালা খুলে দেন। যাতে বিএনপিতে যুক্ত হতে কারো কোনো প্রতিবন্ধকতায় না পড়তে হয়।
পাশাপাশি একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন নেতাদের দলে ফিরিয়ে এনে যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্ব দিতে উদ্যোগী হন তিনি। তার এ উদ্যোগের সঙ্গে বিএনপির মধ্যে জামায়াতবিরোধী ও প্রগতিশীল অংশ একমত হয়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দলটির সাবেক মহাসচিব প্রফেসর ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী, কাজী জাফর আহমেদ, সানাউল হক নীরুসহ বিএনপির সংস্কারপন্থীদের সঙ্গেও আলোচনা শুরু হয়। এসব নেতাকে দলে ভিড়িয়ে আগামী জাতীয় কাউন্সিলে সম্মানজনক পদে বসানো হবে এমন প্রতিশ্রæতি নিয়েও আলোচনা করা হয় দলটির অভ্যন্তরে।
বিষয়টি টের পেয়ে এর বিরোধিতায় মাঠে নামেন দলের কট্টরপন্থীরা। সাবেক নেতাদের দলে ফেরানো ও সক্রিয় করা ঠেকাতে তারা নানা অতৎপরতা শুরু করেন। যে কোনো মূল্যে তাদের ঠেকানোর ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। এ লক্ষ্যে তারা সাবেক নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছেন। এতে এক শ্রেণির মিডিয়াকর্মীকেও ব্যবহার করছেন। সাবেক এ নেতাদের বিগত দিনের নেতিবাচক কার্যক্রম তুলে ধরছেন চেয়ারপারসনসহ দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে। কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন সাবেক নেতাদের বিরুদ্ধে একাট্টা হতে। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সাবেক নেতাদের বিগত দিনের কর্মকাণ্ড স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে।
দল থেকে বহিষ্কার হওয়া, বাদ পড়ার সময়কালের কথা স্মরণ করিয়ে দেন খালেদা জিয়াকে। বিশেষ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি পদ থেকে কোন পরিস্থিতিতে বিদায় নিয়েছিলেন। দল থেকে চলে যাওয়ার সময় কর্নেল অলি আহমেদ বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে কী কী বাজে কথা বলেছিলেন। মহাজোটের সমাবেশে শেখ হাসিনার পাশে তাদের অবস্থান গ্রহণসহ নানা কর্মকাণ্ড। বিগত ১/১১ সময়ে সংস্কারবাদীদের ভূমিকা দলকে ভাঙার নানা তৎপরতা। তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাদের বহিষ্কারকালীন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এদের বিশ্বাস না করে দলে ফিরিয়ে না আনার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান কট্টরপন্থীরা।
পাশাপাশি পাল্টা অভিযোগ রয়েছে কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধেও। দলে ফিরতে আগ্রহীরাও কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে চালাচ্ছেন বিভিন্ন প্রচারণা। সরকারের সঙ্গে লিঁয়াজো রেখে সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলনেই নেই বিএনপির কট্টরপন্থীরা। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তারা। মামলার আসামি হয়েও আত্মগোপনের নামে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করেন রাজধানীর রাজপথে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের উত্ত্যক্ত করছে না। দলের গোপন তথ্য ফাঁস করার মতো অভিযোগও রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ দলীয় পদ ব্যবহার করে তৃণমূল নেতাদের কমিটিতে পদ দেয়ার নামে উৎকোচ আদায় বা কমিটি বাণিজ্য করা। এ ছাড়া এসব কট্টরপন্থীর বড় ভয় বি. চৌধুরী, অলি আহমেদসহ সংস্কারবাদীরা বিএনপিতে ফিরলে দলে কট্টরপন্থীদের প্রভাব ও গুরুত্ব কমে যাবে। এমন আশঙ্কা থেকেই কট্টরপন্থীরা আদাজল খেয়ে বিরোধিতায় নেমেছেন।
এমন বাস্তবতায় সাবেক নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না তিনি। ফলে থমকে গেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। প্রক্রিয়াটি জোরেশোরে শুরু হলেও গত কয়েকদিনে গতি মন্থর হয়ে গেছে। এতে করে দলটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ও আগামী কাউন্সিলের ডেটলাইন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাদের মতে, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যে গতিতে চলছে তাতে নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল করা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
সূত্র মতে, দলের বৃহত্তর স্বার্থে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, চৌধুরী কামাল ইবনে ইফসুফ, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, ড. ওসমান ফারুক, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, মোহম্মদ শাহজাহানসহ সিনিয়র নেতাদের একটি বড় অংশই এখন দলকে শক্তিশালী করতে সংস্কারবাদী, দলত্যাগী ও বহিষ্কৃত সাবেক নেতাদের যে যেখানে রয়েছেন তাদের দলে ফিরিয়ে আনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, বহিস্কৃত এক সময়ের ত্যাগী ওইসব নেতাদের ফিরিয়ে আনার বিরোধিতা করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মান্নান, শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রিজভী আহমেদ।
সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বশেষ পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আর কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছর পরপর জাতীয় কাউন্সিলের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে তা করা সম্ভব হয়নি বিএনপির। এরপর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের জন্য তারিখ নির্ধারণ করে বিএনপি। ১১ মার্চ দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানসহ নেতাকর্মীদের ব্যাপক হারে ধরপাকড়ের মুখে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে দলটি। এরপর নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে ২০১৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কাউন্সিল আয়োজনের সময় চায় দলটি। কিন্তু সে সময়ের মধ্যে কাউন্সিল করতে ব্যর্থ হয় বর্তমান নেতৃত্ব। এভাবেই ঝুলে যায় দলটির ৬ষ্ঠ কাউন্সিল। এবার আর জাতীয় কাউন্সিল ঝুলিয়ে রাখতে চাইছেন না খালেদা জিয়া। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে এবারো অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে দলটির জাতীয় কাউন্সিল।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, দলের নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সব দলেই এটা থাকে। এটা গণতন্ত্রের অংশ। এটাকে কাদা ছোড়াছুড়ির মতো নেগেটিভ অর্থে দেখা ঠিক হবে না। তিনি জানান, বিএনপি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে কাউন্সিলের তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। নির্ধারিত হলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। দৈনিক ভোরের কাগজ
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫
জাহিদ নীল বলেছেন: BNP er dol gothon korea kono lab nai