![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো কোনো দেশ নয়। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, কোনো শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে নয়। সেই স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে অধুনা নিম্নমধ্য আয়ের দেশ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি সাফল্য বাংলাদেশকে কিনতে হয়েছে বেশ চড়া দামে। তবুও বাংলাদেশ থেমে থাকেনি। তবে থামানোর চেষ্টা হয়েছে বার বার। পিতৃহত্যার মাধ্যমে এতিম করার চেষ্টা হয়েছে, আদর্শ হত্যার মাধ্যমে লক্ষ্যহীন করার চেষ্টা হয়েছে, অর্থনীতি হত্যার মাধ্যমে ভিক্ষুক বানানোর চেষ্টা হয়েছে; কিন্তু কোনোটাই সম্ভব হয়নি। শত সংকটের ভেতরেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মস্নান হয়ে যায়নি। দেশি-বিদেশি রকমারি চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে গ্রহের বুকে। প্রতিদিন নিত্যনতুন সাফল্য বগলদাবা করছে। স্বাধীনতা-উত্তর ৮০০ কোটি টাকার বাজেট এখন ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি কোটি টাকা। ৫ হাজার কোটি টাকার অর্থনীতি চার দশকে ৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জিডিপির বিচারে ৪৪তম, ক্রয়ক্ষমতার (পিপিপি) বিচারে ৩৩তম এবং প্রবৃদ্ধিতে পঞ্চম স্থানে উন্নীত হয়েছে। ২০৫০ সালে খোদ পশ্চিমা অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাসও পাওয়া যাচ্ছে। সহযাত্রী নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে অনেক আগেই পিছে ফেলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়াকে। বাংলাদেশের এ অসামান্য আর্থিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এশিয়া অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এটি নিশ্চয়ই এক বড় স্বীকৃতি।
শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক রাজনৈতিক এমনকি সামরিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আশাব্যঞ্জক। সামাজিক উন্নয়নের প্রায় অধিকাংশ সূচকেই বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে। ভারতে এখনো প্রকাশ্য দিবালোকে গণধর্ষণ হয়, ডাইনি পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। অথচ বাংলাদেশে সরকারপ্রধান নারী, বিরোধীদলীয় প্রধান নারী, সংসদের স্পিকার নারী, বিচারপতি নারী। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবদান অসামান্য। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাববিরোধী রাজনীতিতে প্রায় সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও পুরো আফ্রিকায় জাতিসংঘ পরিচালিত শান্তিরক্ষা মিশনে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়ে বিশ্বের ৫৩তম সামরিক শক্তি হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালের বিজয় দিবসে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সব আয়োজন সম্পন্ন করতে চলেছে আমাদেরই বাংলাদেশ।
এভাবে একের পর এক উন্নয়নের ইট গেঁথে যখন সাফল্যের সৌধ গড়ে তুলছে বাংলাদেশ তখন ১৬ কোটি মানুষের শ্রমে ও ঘামে তিলে তিলে গড়ে তোলা এ ভাবমূর্তি বিসর্জন দেয়ার পাঁয়তারা করছে দেশি-বিদেশি কুচক্রী মহল। আজ বাংলাদেশে বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এ কথা ঠিক যে, মাত্র সপ্তাহ ব্যবধানে দুজন বিদেশির নিহত হওয়ার ঘটনা অগ্রাহ্য করার মতো নয়; কিন্তু তাই বলে এর ফলে বাংলাদেশের সমগ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা বিদেশিদের অবস্থানের জন্য সম্পূর্ণ স্বনির্ভরযোগ্য হয়ে পড়েছে, তেমনটি ভাবাও মনে হয় ভূ-রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মানছি গুলশানের কূটনৈতিক জোনে খুন হওয়া ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজার এবং রংপুরের গ্রামীণ জনপদে খুন হওয়া জাপানি নাগরিক হোসে কোমিও হত্যাকা- আমাদের ত্রুটিপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি ভ্রূকুটি করছে। তবে সে জন্য হত্যারহস্য উদ্ধার এবং পুনঃ হত্যা প্রতিরোধে গৃহীত ব্যবস্থার কমতিও দেখা যাচ্ছে না। একেবারে সীমিত নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে দেশের প্রায় সোয়া ২ লাখ বৈধ এবং অসংখ্য অবৈধ বিদেশির নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যের নতুন সতর্কবার্তা, নির্বিচারে হামলার আশঙ্কা, কিংবা আরো পশ্চিমা নাগরিক খুন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ যতটা না যুক্তিসংগত, তার চেয়ে অনেক বেশি ভাবমূর্তি হানিকর হয়ে পড়েছে। কারণ, বাস্তব পরিস্থিতি যতই স্বাভাবিক মনে হোক না কেন, নিজ নিজ দেশের সদর দপ্তরের নির্দেশে বিদেশিরা নিজেদের গুটিয়ে নেয়া শুরু করেছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি সফর বাতিলের পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের মধ্যে জরুরি প্রয়োজন না-থাকা বিদেশিদের ইতোমধ্যে স্ব স্ব দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জাপান, স্পেনসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডাসহ অনেক পশ্চিমা দেশই স্ব স্ব নাগরিকদের গতিবিধি সীমিত রাখার পরামর্শ দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।
এসব মোকাবেলায় বাংলাদেশও তো একেবারে হাত গুটিয়ে বসে নেই। কূটনীতিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে। কূটনৈতিকগুলোয় ব্যাপক নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে, চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে, ফলে পুনঃ হত্যার সম্ভাবনা কমে আসছে। এত কিছুর পরও ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ সম্পর্কে সর্বশেষ সতর্কবার্তায় দেশটিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে বলা কতখানি অভিপ্রেত? শুধু তাই নয়, দুই বিদেশি হত্যাকা-ে ইঙ্গ-মার্কিন কর্তৃপক্ষ আইএসআই (ওঝও) জঙ্গিদের গন্ধ শোঁকবার চেষ্টা করছে। ওঝঞঊ ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালক জনৈক রিটা কাটজের একটি টুইটার মেসেজের ওপর ভিত্তি করে পশ্চিমারা বাংলাদেশে আইএস উপাদানের উপস্থিতির সাক্ষ্য দিচ্ছেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রমাদ গুনছেন। বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে অজিরা তাদের নির্ধারিত ক্রিকেট ম্যাচ প্রত্যাহার করেছে। পশ্চিমা রেড অ্যালার্টের কারণে ট্যুরিজম শিল্প বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগব্যবস্থা বিঘি্নত হবে এবং দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি বাংলাদেশেও আইএস জঙ্গিরা ঢুকে পড়ল? দুই বিদেশি খুন হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ রকম দ্রুত সিদ্ধান্তে পেঁছানো কি ঠিক? এ ঘটনা যে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের কর্মকা-, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিংবা কোনো উগ্রপন্থী জঙ্গির কাজ তা-ও মানার পেছনে গ্রহণযোগ্য কারণ দেখানো যেতে পারে; কিন্তু মূলত ইরাক ও সিরিয়া, বড়জোর লেভেন্ট অঞ্চলকেন্দ্রিক 'খেলাফত রাষ্ট্র' প্রত্যাশী জঙ্গিরা তাদের ঘোষিত মিশন সফল করার আগেই বাংলাদেশে পাড়ি জমাবে_ এমনটি কোনো বুদ্ধিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে হয় ভাবতে পারবেন না। তা ছাড়া এমনিতেই আইএস জঙ্গিরা বর্তমানে পুতিনবাহিনীর মুহুর্মুহু বিমান হামলায় বিপর্যস্ত এবং আত্মরক্ষাপ্রবণ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে যে উগ্রপন্থী মৌলবাদীরা ছিল তারাই কম-বেশি রয়ে গেছে এবং বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে সহিংস হয়ে দেখা দিচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় কার্যকর করার সময় এলেই তারা নতুন করে সহিংস হয়ে ওঠে। এটি অনেকবার দেখা গেছে। তবে এবারের টার্গেট বিদেশি হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হয়েছে। পশ্চিমাবিদ্বেষী আইএস কিংবা বোকো হারামের সম্পৃক্ততা খোঁজার চেষ্টা চলছে। তা চলুক। তবে স্বদেশি জঙ্গিরাও যে এমন দুষ্কর্ম ঘটাতে সিদ্ধহস্ত, তাও বিস্মৃত হলে চলবে না। বাংলাদেশিদের হত্যা করে উদ্বেগ বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া যায় না বলেই হয়তো তারা এবারে, ঠিক মুজাহিদদের মৃত্যুদ-ের ঘণ্টাধ্বনি বাজার কালে ঘোলা জল সৃষ্টি করে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে নিরীহ বিদেশিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিশ্বকে বোঝাতে চাইছে যে, বাংলাদেশও পাক-আফগানদের পথে পা বাড়িয়েছে।
তবে দুই বিদেশি হত্যাকা-ের ঘটনার কার্যকারণ সন্ধানে গ্রহ চষে বেড়ানোয় দোষের কিছু নেই। এতে আইএসের সম্পৃক্ততা প্রমাণ হলেও তেমন কিছু এসে যায় না, বরং বাংলাদেশে আইএসের বীজাণু অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা যায়। তবে সমস্যা হলো, বিদেশি হত্যাকা- নিয়ে রাজনীতি করা। তদন্তকাজ চলাকালে প্রায় সব মহলই নিজ নিজ স্বার্থবৃদ্ধির জায়গা থেকে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছে। সবচেয়ে নেতিবাচক হলো পশ্চিমাদের রেড অ্যালার্ট জারি। পশ্চিমা বিশ্বে কি কোনো বিদেশি খুন হয় না? অথচ বাংলাদেশে দুজন বিদেশি হত্যাকা-র ঘটনায় রং চড়িয়ে তারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাইছে। বিদেশি হত্যাকা-ের ঘটনা সব বিচারেই একটি বড় মাপের সন্ত্রাস। এ ধরনের টেরোরিজম প্রতিহত করার জন্য সর্বোতভাবে কাউন্টার টেরোরিজম টুলসগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। যে কোনো মূল্যে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তৃতীয় বিদেশিটি খুন হতে যাচ্ছেন না। শত সাফল্যের ভেতরেও বিদেশি হত্যাকা- দুষ্টক্ষতের মতো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সে দুর্গন্ধ আরো প্রকট করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক শত্রুরা। কৃত্রিম সংকটের ছায়া দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি। বিদেশি হত্যাকা- নিয়ে চলমান কূটনৈতিক রাজনীতির মুখে ছাই দিতে হলে যথাশিগগির সম্ভব খুনিদের ধরতে হবে। মোটিভ উদ্ঘাটন করতে হবে। সর্বোপরি এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা দেখাতে হবে। সংকট উত্তরণে সাফল্যের মহিমা বাড়ে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৩
ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: বিদেশি হত্যাকা- নিয়ে চলমান কূটনৈতিক রাজনীতির মুখে ছাই দিতে হলে যথাশিগগির সম্ভব খুনিদের ধরতে হবে। মোটিভ উদ্ঘাটন করতে হবে। সর্বোপরি এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা দেখাতে হবে। সংকট উত্তরণে সাফল্যের মহিমা বাড়ে।