![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রান্নাবান্না তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের নাম স্মরণীয় রসুন (গারলিক)। রসুনের কোয়াগুলো একে অপরের সঙ্গে বেশ সুন্দর ও সুসজ্জিতভাবে জড়িয়ে থাকে। কোয়াগুলোর শিকড় থাকে কিন্তু একই জায়গায়- যার মাধ্যমে মাটি থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে কোয়াগুলো দিনের পর দিন পরিপুষ্ট হয়ে উঠে। ঠিক সেরূপ বাংলাদেশে যারা সন্ত্রাস করছে বা জঙ্গি ভাবাদর্শে বড় হচ্ছে, তাদের মূল বা শিকড় কোথায় গ্রথিত রয়েছে তা জানার অবকাশ রয়েছে। কোথা বা কোন সংগঠন থেকে আসছে তাদের ফাইন্যান্স? কারা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, প্রশিক্ষণ দেয়? হলি আর্টিজানের তরুণরা কিংবা শোলাকিয়া বা কল্যাণপুরের জঙ্গিদের সঙ্গে পেট্রোল বোমা বা ব্লগার/প্রকাশক হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের শিকড় কি ভিন্ন মনে হয়? নাকি মিল রয়েছে? তাছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর হলে যাদের মন গভীর বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে, গভীর শোকে কাতর হয়ে পড়ে যাদের মন, এমনকি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর নাম শুনলেই যারা অস্বস্তিবোধ করতে থাকেন, আবোল-তাবোল বিতর্ক সৃষ্টি করে থাকেন, তাদের শিকড়ই বা কোথায় গ্রথিত? এসব শিকড়ের মূল কি রসুনের শিকড়ের ন্যায় এক জায়গায় গ্রথিত নয়?
যাহোক, বাংলাদেশে নিকট অতীতে যেসব অতর্কিত জঙ্গি হামলা বা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে তা যে শুধু বাংলাদেশের একক সমস্যা তা নয়। প্রতিবেশী দেশের নিরাপত্তার জন্যও তা যেমন হুমকিস্বরূপ, তেমনি সারা পৃথিবী জুড়েই অতর্কিত জঙ্গি হামলা বা সন্ত্রাসী অ্যাটাক যেন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া বা উত্তর আফ্রিকার দেশে অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে অহরহ। নিরীহ মানুষ হত্যা যেন স্বাভাবিক ঘটনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ দেশগুলোতে। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে এসব দেশ থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সাগর পাড়ি দিয়ে অসংখ্য মানুষকে দেশ ত্যাগী হতে দেখেছি আমরা। গত বছর শিশু আয়লান কুর্দির নিষ্প্রাণ দেহ সাগর তীরে পড়ে থাকতে দেখে নির্বাক হয়েছে এ পৃথিবী। যারা দেশত্যাগী হয়েছেন, তাদের অনেকেই পা বাড়িয়েছেন ইউরোপের পথে, বনে জঙ্গলে বা দ্বীপে। কিন্তু সেই ইউরোপেও কি শান্তির সুবাতাস বইছে? জঙ্গি হামলা থেকে মুক্ত কি ইউরোপ? এই তো কিছুদিন আগে তুরস্কের ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্ট সন্ত্রাসী আক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিল- সেই সন্ত্রাসীদের অনেকেই ছিলেন চেস্নিয়া ও কাজাকিস্তানের নাগরিক। তাছাড়া ফ্রান্সের বাস্তিল উত্সবে আতশবাজির শব্দের মধ্যে শান্তভাবে বসে থাকা নিরীহ মানুষদের উপরে ঠাণ্ডা মাথায় চলন্ত ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে ৮৪ জনের অধিক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তিউনিশিয়ার বংশোদ্ভূত এক উন্মাদ-যার পার্সোনাল লাইফের সমস্যার কোনো অন্ত ছিল না, যাকে ধর্ম কর্ম পালন করতেও কখনো দেখেনি কেউ। শুধু ইউরোপ কেন, প্রচণ্ড প্রতাপশালী দেশ আমেরিকাও ন্যাশনাল সিকিউরিটির পিছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচা করেও নিরীহ মানুষের জীবন অতর্কিত হামলার হাত থেকে এখনো নিরাপদ করতে পারেনি। যেমন, ক’মাস আগে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডোতে ওমর মতিন নামের এক বিকৃত মস্তিষ্কের মানব সমকামিতার প্রতি বিদ্বেষ থেকে এক সমকামী ক্লাবে ঢুকে প্রায় ৫০ জনের অধিক নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছিল। এরূপ অসংখ্য ঘটনা ঘটেই চলেছে এ পৃথিবীতে। বাংলাদেশ শুধু নয়, প্রতাপশালী/ অপ্রতাপশালী সব দেশই তাই কম-বেশি হিমশিম খাচ্ছে জঙ্গি বা সন্ত্রাস দমনে।
জঙ্গি হয়ে এ পৃথিবীতে কেউ জন্মায় না। পরিবেশ পরিস্থিতি, বিশেষ লোভ, ভুল ভাবাদর্শ মানুষকে জঙ্গি করে তোলে। কথায় আছে যে, সঙ্গ দোষে সাধুর মরণ। অনেক ভালো ছেলে-মেয়ে মগজ ধোলাই চক্রের বেড়াজালে পড়ে যেমন ভুল পথে পা বাড়ায়, র্যাডিকেল জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হয়ে উঠে, তেমনি ভুল ভাবাদর্শে তারা নিজের জীবনই কেবল বিকিয়ে দেয় না, নিরীহ মানুষদের জীবনও হরণ করে থাকে। এসব জঙ্গি বা কোনো জঙ্গি সংগঠন তাই কারো বন্ধু বা মিত্র হতে পারে না। সাধু-জঙ্গি থেকে সাবধান। এরা নিজের, দেশের ও দশের চিরশত্রু।
©somewhere in net ltd.