নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:১০

চী নের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর ঢাকা সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ বরাবরই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার পররাষ্ট্রনীতিতে নমনীয় নীতি গ্রহণ করে আসছে। যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতির মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। মূলত এই মূলনীতিকে ধারণ করেই বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তার বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর বাংলাদেশের বিদেশনীতিরই একটা সফলতার অংশ। গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের প্রচারণা আসছে যা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সফলতারই বহিঃপ্রকাশ।
শি জিনপিং-এর এই সামপ্রতিক সফর বিবেচনা করলে একটা বিষয় বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে আর সেটা হচ্ছে এই যে, কূটনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক দু’দিক থেকেই এ সফর ঐতিহাসিকতার পরিচয় বহন করে। কারণ জিনপিং-এর বৈঠকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে চীন সরকার যে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে এটা শি জিনপিং-এর সফরের পূর্বেই অনুমান করা হয়েছিল। আর চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চীনের প্রেসিডেন্টের সফর সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন তা থেকে স্পষ্টভাবেই অনুমেয়—শি জিনপিং- এর সফরে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতা।
চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এগিয়ে আসছে। তার এ সফরে অনেকগুলো বড় চুক্তি স্বাক্ষরিত সম্পন্ন হয়েছে। এ সম্পর্কে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, শি জিনপিং-এর সফরের সময় রেকর্ড পরিমাণ ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই চীনসহ সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়ন বিস্ময়। আর এ কারণেই চীন ঋণ দিতে আগ্রহী। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করলে বলা যেতে পারে যে এ সফর বাংলাদেশের জন্য বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। ইতোমধ্যেই চীন নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করাতে সমর্থ হয়েছে। তাই চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সামপ্রতিক বিশ্বের একজন ক্ষমতাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিবেচনা করলে হয়তো অযৌক্তিক হবে না। কেননা তিনি একদিকে যেমন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা তেমনি একইসঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান। শি জিনপিং ২০১০ সালে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার আগ্রহ তখন থেকেই। তাই প্রায় তিন দশক পর বিশ্বের শক্তিশালী একটি দেশের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর যে খুবই তাত্পর্যপূর্ণ তা মেনে না নেওয়ার কোনো উপায় নেই।
দু’দেশের মধ্যে ২৬টি নানা ধরনের চুক্তি এবং সমঝোতা হয়েছে। বলা হচ্ছে চীনা প্রেসিডেন্ট যেরকম বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে এসেছেন এই সফরের সময় সেটা একটা রেকর্ড। গত ১৪ অক্টোবরের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই শেখ হাসিনা এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আনুষ্ঠানিকভাবে ছয়টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম এবং খুলনায় দুটি বড় তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, যার একেকটির ক্ষমতাই হবে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে একটি টানেল তৈরির প্রকল্পেও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে চীন। এছাড়া একটি সার কারখানা, ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট’ নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে চীনা অর্থ সাহায্যে।
চীন বাংলাদেশের উপকূলে গভীর সমূদ্রে একটি বন্দর নির্মাণেও আগ্রহী ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিবেশি ভারতের এ নিয়ে আপত্তি আছে। যার ফলে এই প্রকল্পটি নিয়ে কথা-বার্তা আর এগোয়নি বলেই মনে করা হয়। চীনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় ছিলেন চীনা ব্যবসায়ীদের একটি বড় প্রতিনিধি দলও। বাংলাদেশ বিনিয়োগে তারা কতটা উত্সাহী? বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট মতলুব আহমেদ বলছেন, চীনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের ১৩টা চুক্তি হয়েছে। এই ১৩টি চুক্তিতে প্রায় এক হাজার তিন’শ ষাট কোটি ডলার ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, এর মধ্যে সৌর বিদ্যুত্ থেকে শুরু করে অবকাঠামো, রেলওয়েসহ নানা খাতের বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা চলছে দেশটির গণমাধ্যমে।
৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এলেন। ফলে এ সফরের তাত্পর্য তুলে ধরতে চাইছে পত্রিকাগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে। এ অবস্থানের কারণে চীনের পরিকল্পিত সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট ও ম্যারিটাইম সিল্ক রোড নির্মাণে কীভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তার বিশ্লেষণ চলছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড বলে পরিচিত চীনের এ প্রকল্প এবং বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত ও চীনের মধ্যকার অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণেও বাংলাদেশের অবস্থানকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন চীনের কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সফরে এসব ইস্যুতে অনেকখানি অগ্রগতি হবে।
এছাড়া বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো, পরিবহন, জ্বালানি, উত্পাদন সক্ষমতা ও সর্বোপরি অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রসঙ্গও উঠেছে। বলা হয়েছে, এ সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা সিনহুয়া বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বেশকটি প্রতিবেদন ছেপেছে। সিনহুয়ার একটি বিশ্লেষণটিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ ও কলম্বিয়া সফরের লক্ষ্য হলো—চীনের প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের রূপরেখার অধীনে উভয় পক্ষের কৌশলগত সহযোগিতা গভীর করা ও আঞ্চলিক কানেকটিভিটি ত্বরান্বিত করা। আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুপ্রতিম ও সহযোগিতাপরায়ণ প্রতিবেশ অব্যাহত রাখা। রাষ্ট্রায়ত্ত ইংরেজি পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল:চীন-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ককে ভয় পাওয়ার দরকার নেই ভারতের। সেখানে বলা হয়েছে, চীনের অনেকের বিশ্বাস ভারতের উত্থান ঠেকাতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে চীন। আবার ভারতের অনেকের ধারণা, চীনের প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প নিয়েও ভারতে অনেকের মধ্যে সংশয় কাজ করে। ধারণা করা হয়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিল করতে চায় চীন। চীনের বৃহত্তম পত্রিকা পিপলস ডেইলির একটি বিশ্লেষণির শিরোনাম ছিল : শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফর ঐতিহাসিকভাবে তাত্পর্যপূর্ণ।
শাসক দলের মালিকানাধীন এ পত্রিকার কলামটিতে বলা হয়েছে, চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কের মাইলফলক হয়ে থাকবে। ইংরেজি পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের আরেকটি প্রতিবেদনে শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফরকে যুগান্তকারী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নীত করবেন শি—শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং শুয়ানইয়ুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠেয় অষ্টম ব্রিকস সম্মেলনের পূর্বে প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
তবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দিকে চীনা বিশ্লেষকদের বিশেষ নজর দেখা গেছে বিশ্লেষণিগুলোয়। পিপলস ডেইলির বিশ্লেষণিতে এ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এছাড়া গ্লোবাল টাইমসকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ওয়াং শিডা বলেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ এ শিল্প বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
জিয়াং জিংকুই বলেন, চীন নিজেদের শিল্পখাত হালনাগাদ করার চেষ্টা করছে। তাই টেক্সটাইলের মতো শ্রমশক্তিপ্রধান শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এ সফরকে সামনে রেখে পিপলস ডেইলিতে মতামত কলাম লিখেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং। তিনি লিখেছেন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক বাহিনী ও সাংস্কৃতিক খাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নীত করবে এ সফর। উন্মোচন করবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়। তবে গ্লোবাল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে চীনের রাষ্ট্র মালিকানাধীন চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট ওয়াং শুশেং বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও তুলে ধরেছেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.