![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে যে প্রতিবেদনটি ভারতের দিল্লিতে উপস্থাপন করেছে তাতে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট। তারা বিবিসিকে জানিয়েছে ঢাকাতে আসার ভিসা না পেয়ে বাধ্য হয়েছে সেখানে বক্তব্য দিতে। যদিও ভিসা প্রত্যাখ্যানের কোনো সংবাদ আমাদের জানা নেই তবু তারা একথা বলার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছে বাংলাদেশে স্বাধীন মতামত প্রকাশের পরিবেশ অনুপস্থিত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও রিপোর্টার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের (আরএসএফ) সদ্য প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনের সূত্র অনুসারে আরএসএফের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪ থেকে পিছিয়ে ১৪৬-এ গেছে। প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত তিন-চার বছরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পুরোপুরি কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। আতঙ্ক আর দমন-পীড়নের চাপে পড়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর পুরোপুরি স্তব্ধ। সরকার ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের রক্ষা তো করতে পারেইনি বরং নতুন আইন প্রণয়ন করে সাংবাদিক ও ব্লগারদের স্বাধীন মতামত ও কাজকর্মকে অপরাধের তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সংস্থাটি এও বলেছে যে, মুক্ত সাংবাদিকতাকে সরকার যেন একটা অপরাধ বলেই গণ্য করছে। অ্যামনেস্টির মতে, বাংলাদেশে টানা বহু বছর ধরে সংসদীয় গণতন্ত্র থাকলেও সেটা স্বাধীন মতপ্রকাশের রাস্তা পরিষ্কার করতে পারছে না। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে বাংলাদেশে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অবশ্য এই প্রতিবেদনকে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিশিষ্টজনরা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অপচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।
আসলে অ্যামনেস্টির এই প্রতিবেদন বহুলাংশে বাস্তবতাবর্জিত এবং স্বকপোলকল্পিত। বাংলাদেশে অন্তত এই মুহূর্তে সংবাদপত্রে মতপ্রকাশের ওপর আদৌ কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। মধ্যরাতে অনুষ্ঠিত একাধিক টিভি চ্যানেলে বহুল প্রচারিত ‘টকশো’র নামে প্রায় সবাই নিজের মতপ্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন এমনকি সরকারের যথেচ্ছ সমালোচনা করেই। নিকট অতীতে মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। এমনকি একজন গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে। আইনের শাসনের ভিত্তিতে তারা প্রত্যেকেই বর্তমানে জামিনে আছেন এবং কেউ কেউ অবস্থান করছেন বিদেশে। সুতরাং এক্ষেত্রে অ্যামনেস্টির ঢালাও অভিযোগ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয় এবং বাস্তব পরিস্থিতি তা সমর্থন করে না। তবে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনের মূল সুর হলো, জঙ্গিদের হামলা আর হুমকির ভয়ে বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ কমে এসেছে। কিন্তু আমরা জানি, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার বিচার ইতোমধ্যে সম্পন্ন এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৮ জঙ্গির সাজা হয়েছে। অন্যান্য হত্যাকান্ডেরও কয়েকটি তদন্তও বিচারাধীন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশগ্রহণ না করে প্রকারান্তরে নেমেছিল জ্বালাও-পোড়াও নীতিসহ মানুষ হত্যায়। স্বাধীনতাবিরোধী মানবতাবিরোধীদের বিচারসহ মৃত্যুদ- কার্যকরের ক্ষেত্রেও তাদের বিরোধিতা লক্ষণীয়। এর ফলে প্রকারান্তরে রাজনীতিতে একঘরে হয়ে যাওয়া বিএনপি-জামায়াত জোট প্রকাশ্যে জনসমাবেশ করতেও ভয় পাচ্ছে। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনেও অনেকটা যেন তাদের সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে! গণতন্ত্রের নামে জঙ্গিবাদ ও জ্বালাও-পোড়াও নীতি অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয়। দুই. ২ মে (২০১৭) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, ‘গণমাধ্যম আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান কাঠামো তৈরি করা আছে যেখানে গণমাধ্যমের ওপর ক্রমাগতভাবে চাপ বাড়ছে।’ ওইদিন অন্যেরা স্বীকার করেছেন যে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন তুলনামূলক মুক্ত। তবে যারা গণমাধ্যমের সঙ্গে আছেন তাদের পেশা ও জীবনের নিরাপত্তা থাকতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, সার্বিকভাবে ২০০৯ সাল থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সুবিশাল কর্মযজ্ঞে দেশে গণমাধ্যমের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছে এবং অবাধ তথ্যপ্রবাহের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। গণমাধ্যমের উন্নয়নে এ সময়ে নতুন ১৬৪৭টি পত্রিকা নিবন্ধিত হয়েছে; বেসরকারি খাতে নতুন ৩৬টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনসহ ২৪টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিওকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক ও ষান্মাষিক মিলে মোট পত্রিকার সংখ্যা ২৮৫৫টি। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র নিয়ে সরকারি ৪টি ও অনুমোদনপ্রাপ্ত ৪৪টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে ২৬টি সম্প্রচাররত; পাশাপাশি সম্প্রচারিত হচ্ছে ২১টি এফএম রেডিও ও ১৭টি কমিউনিটি রেডিও। এছাড়া সংবাদপত্রকে ঘোষণা করা হয়েছে শিল্প হিসেবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে বলেই অ্যামনেস্টির ওই সরকার বিরোধী প্রতিবেদন সব কটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এর কারণ হলো, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের একান্ত প্রত্যাশা একটি জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ সরকার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা। তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তথ্য অধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠার কারণে জনগণের তথ্যে অধিকার দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট এই দুই মাধ্যমের স্বাধীনতা আরও নিশ্চিত করেছে। কারণ তথ্যে প্রবেশাধিকার ও অবাধ তথ্য প্রবাহ মানব পুঁজি উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। একটি ওয়াকিবহাল নাগরিক গোষ্ঠী দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে অধিক সচেতন এবং পরবর্তীতে তারা তাদের পছন্দসই যোগাযোগ মাধ্যম বেছে নিতে পারছে।
তিন. বাংলাদেশের গণমাধ্যম মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে যে স্বাধীন তা পত্রিকাগুলোর কন্টেন্ট বা আধেয় বা বিশেষ ক্রোড়পত্র দেখলেই বোঝা যায়। কখনো কখনো প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ গুরুত্বহীনভাবে ছাপানো হয়। কখনো বা উপসম্পাদকীয়তে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনামূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে। অন্যদিকে টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোর আলোচক নির্বাচনের ক্ষমতা একান্তই সেই হাউজের প্রযোজক বা প্ল্যানিং এডিটরের ওপর নির্ভর করে। সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ সেখানে নেই। সম্প্রতি এদেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়েছে। উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে নিরাপদ করা হয়েছে কর্মক্ষেত্র। দুর্নীতবাজদের বিরুদ্ধে লিখতে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। চাপমুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারছে দেশের গণমাধ্যম। সংবাদকর্মীদের ওপর এখানে সরকারি চোখরাঙানি বা নিয়ন্ত্রণ কৌশল নেই।
সকলে এক বাক্যে স্বীকার করবেন, সংবাদমাধ্যমের ওপর রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রকৃত পেশাদারি সাংবাদিক নন বরং তথ্য বিকৃতকারী, উস্কানিদাতা ও চক্রান্তকারীরা চাপে থাকে। অথচ মিথ্যাচার করছে অ্যামনেস্টি। তারা স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ায়নি। বঙ্গবন্ধু সপরিবার নিহত হওয়ার পরও টুঁ শব্দ করেনি। তথ্যমন্ত্রীর সূত্র অনুসারে, এখন পর্যন্ত ৩৫টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে। তার কোনোটিই সরকারের বিরোধিতার জন্য নয়, বরং ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক লেখা প্রকাশের জন্য প্রশাসনের নির্দেশে ওই পোর্টালগুলো বন্ধ হয়। সরকার, করপোরেশন, বিজ্ঞাপন, পাঠক-দর্শক- এই নানামুখী সমীকরণ মিলিয়ে গণমাধ্যমকেও শেষ পর্যন্ত মুনাফা করতে হয়। তাকে টিকে থাকতে হয়। তাই, এই টিকে থাকার লড়াইয়ে, গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন থাকবে তা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ভাল হলে গণমাধ্যমও স্বাধীন হবে। গণতন্ত্রের অন্যতম একটি শর্তই হলো সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। গণমাধ্যম এই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। অতীত এবং বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যম বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা যেমন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি স্বাধীনভাবে কাজ করার যাবতীয় সুযোগ দিতে হবে সাংবাদিকদের। তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার গতি আরও ত্বরান্বিত হবে। আর সুশাসন সুমন্নত অবস্থানে পৌঁছালে তার মাধ্যমেই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ভাল হবে।
২| ০৮ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪
ফ্রিটক বলেছেন: সরকারের দালালি আর কত করবেন,?এবার একটু থামুন। আপনি তো পুরাই আন্ধা। ব্লগে এসেও আপনাদের দালালির গল্প আর ভাল লাগে না।
৩| ০৮ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: মহেড়া বলেছেন: আপনার লেখাটি পড়ে মনে হলো বি,টি,ভির সংবাদ দেখলাম। আমি কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়েছি।
হয়ত জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন অনুষ্ঠানের কথিকা
৪| ০৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:১০
আমি চির-দুরন্ত বলেছেন: বাংলাদেশে গত তিন-চার বছরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পুরোপুরি কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। আতঙ্ক আর দমন-পীড়নের চাপে পড়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর পুরোপুরি স্তব্ধ।
ভুল বলেছে কোথায় ?? আপনার মনে হতে পারে ভুল। তবে সচেতন একজন নাগরিক (যে পক্ষেরই হোক না কেন) এটাকে সঠিক বলেই রায় দিবে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৩
মহেড়া বলেছেন: আপনার লেখাটি পড়ে মনে হলো বি,টি,ভির সংবাদ দেখলাম। আমি কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়েছি।
