নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

১৪ ই মে, ২০১৭ সকাল ১১:০৯

মার্কিন তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন (১৭৪৩-১৮২৪), যিনি ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে (১৮০১ থেকে ১৮০৯) দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার বিখ্যাত উক্তি যদি কোনো সমাজে মিডিয়া ও সরকারের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলা হয়, মুক্তমনের মানুষদের সুস্থ পছন্দ হিসেবে বেছে নিতে হবে মিডিয়াকে। মিডিয়াকে সরকারসহ সব প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে মিডিয়ার স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে বলা আছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণœ করে এমন কোনো আইন কখনো মার্কিন কংগ্রেস পাস করবে না। সংবিধানে যুক্ত এই আইনটি হলো মার্কিন মিডিয়ার রক্ষাকবচ। শ্লীলতা-অশ্লীলতা, নৈতিকতা কোনো অজুহাতেই আমেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ করা যাবে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। একই অনুচ্ছেদে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে মার্কিন বাক-স্বাধীনতা যতটা শর্তমুক্ত, আর্থ-সামাজিক ও ঐতিহাসিক বাস্তবতায় বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতায় কিছুটা শর্ত আরোপ করা হয়েছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনের প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং (খ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চয়তা দান করা হইল {বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ : ৩৯(২)}। প্রত্যেক দেশের সংবিধান তার দেশবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা, ভাবাবেগ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে। তাই প্রত্যেক দেশের নিজস্ব সংবিধান থাকে। অন্যথায় ধর্মগ্রন্থের মতো সব দেশের সংবিধানও একটাই হতো। বাক-স্বাধীনতা বা ব্যক্তি-স্বাধীনতার মাত্রা পরিমাপের মাপকাঠি প্রত্যেক দেশে ভিন্ন। যেমনটি শিশুশ্রম ইউরোপ, আমেরিকায় একেবারেই নিষিদ্ধ। কারণ ওইসব দেশে প্রয়োজনে শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করে। আমাদের দেশে শিশুশ্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হলে বহু শিশু না খেয়েই মারা যাবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও রিপোর্টার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের (আরএসএফ) সদ্য প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনের ভিত্তি বা গবেষণা পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। ইউরোপ, আমেরিকা একই মানদন্ডে আরএসএফের ফ্রিডম ইনডেক্সে তৈরি করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। উল্লেখিত ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান দুই ধাপ পিছিয়ে বিশ্বে ১৪৪তম অবস্থান থেকে ১৪৬-এ গেছে। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একেবারে রুদ্ধ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই বক্তব্য কতটা অন্তঃসারশূন্য তার প্রমাণ হচ্ছে অ্যামনেস্টি ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদপত্রের শিরোনাম আকারে প্রকাশিত হওয়া। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যামনেস্টি গণমাধ্যম নিয়ে প্রতিবেদনটি দিল্লি থেকে প্রকাশ করে। তারা বিবিসিকে জানিয়েছে, ঢাকায় আসার ভিসা তাদের দেওয়া হয়নি বিধায় বাধ্য হয়ে দিল্লিতে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভিসা না দেওয়ার বিষয়টি একেবারেই কাল্পনিক এবং এ ধরনের প্রচারণা হঠকারিতামূলক বলে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আইটিবিষয়ক অবৈতনিক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ অ্যামনেস্টির এমন প্রতিবেদনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে সন্দেহ পোষণ করেছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের যাবতীয় অপরাধীদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে এই সংস্থাটি কোনো বিবৃতি দেয়নি।
আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশে যেটা সর্বত্রই চোখে পড়ে, সেটা হচ্ছে আইন মেনে না চলার প্রতিযোগিতা। সমাজজীবনের সর্বত্রই আইন অমান্যের এ প্রতিযোগিতা লক্ষণীয়। ড্রাইভার, হেলপার, ট্রাফিক, আরোহী সবাই আইন লঙ্ঘন করছে। যারা ব্যস্ত রাস্তার মাঝখান দিয়ে মোবাইল ফোন কানে দিয়ে আড়াআড়ি দৌড়াচ্ছে তাদের কথা বলি না। নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকে দায়ী করলেও ভোটারদের দায়ী করি না। ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনে পুরো গ্রামের মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে লাঠিসোটা নিয়ে কেন্দ্র দখল করতে এবং মহিলা ভোটারদের পুলিশের সঙ্গে ঢিলাঢিলি করতে দেখেছি। স্বাধীন মতপ্রকাশের সব বাধা এ দেশে এখনো দূর হয়নি। প্রশাসন ও শক্তিধর মহল থেকে এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু বাধা এখনো রয়েছে, এটা কোনো গবেষণা ছাড়াই বলা যায়। এদের বিরুদ্ধে মিডিয়া ও সুশীল সমাজ প্রায় সোচ্চার। কিন্তু তথ্য বিকৃতিকারী, উস্কানিদাতা ও চক্রান্তকারীদের ব্যাপারে কেউ কথা বলে না। এখন পর্যন্ত ৩৫টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে বলে জানা গেলেও এর কোনোটাই সরকারবিরোধিতার জন্য বন্ধ করা হয়নি, বরং ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক লেখা এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুস্পষ্ট ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে প্রশাসন পোর্টালগুলো বন্ধ করে, যা সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইনের সুনির্দিষ্ট ধারা মোতাবেকই করা হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যতটুকু চাপের মধ্যে আছে সেটা নন-স্টেট অ্যাক্টিভেস্টদের পক্ষে থেকে, মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদীদের কাছ থেকে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাপের অনুপস্থিতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনটি সব কটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। গণমাধ্যমের সংখ্যা বৃদ্ধিকেই অনেকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মাপকাঠি হিসেবে মানতে না চাইলেও এটা বলা যায় যে, শত শত পত্রিকার অনুমোদন, অনলাইন ও এফএম রেডিও, কমিউনিটি রেডিও, প্রায় ৩০টি প্রাইভেট টিভির অনুমোদন দিয়ে সরকার কোনোভাবেই লাভবান হয়েছে বলে জানা যায়নি। রাজনীতিক, সংবাদকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নির্দ্বিধায় তাদের নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছে এবং প্রায় সব বিষয়ে সবাই সবকিছু স্বাধীনভাবে বলছেন বা লিখছেন। টিভি লাইভ টক শোগুলো দেখলে এ ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। কোনো এডিটিং ছাড়াই যে যা বলছেন তা সরাসরি সম্প্রচার হয়ে যাচ্ছে। কেউ বাধা দিচ্ছে না। তার পরও যারা বাক-স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়ে আছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের যে অন্য মতলব আছে, সেটা বুঝতে কারো বাকি থাকে না। মজার ব্যাপার হলো বাক-স্বাধীনতা সীমিত হওয়ার বিষয়টি তারা আবার গণমাধ্যমেই বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে হলুদ সাংবাদিক, তথ্য বিকৃতকারী, উস্কানিদাতা ও চক্রান্তকারীরা চাপে রয়েছে। কোনো সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিক চাপে নেই। বাংলাদেশের গণমাধ্যম কখনো বর্তমান সময়ের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেনি। এটা অস্বীকার করা যাবে না, সাংবাদিক হত্যার বিচার দ্রুত করা যায়নি বা যাচ্ছে না। হুমায়ুন কবীর বালু, মানিক সাহা, শামসুর রহমান, মীর ইলিয়াস, হোসেন দীলিপ, শেখ বেলাল উদ্দীন, প্রবীর সিকদার, সৈয়দ নাজমুল ইমাম, সাগর-রুনিসহ অনেক নিহত ও নির্যাতিত সাংবাদিকের মামলাগুলো দ্রুত এবং সঠিক বিচার হয়নি বা বিচারই শুরু হয়নি। সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং দেশের নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্টিকেল ১৯-এ যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হওয়া সব সহিংসতার দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত করা, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টদের নিজ নিজ কাজ করার জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি সরকার ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করেছে। তা ছাড়া বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক আলোচনা হবে, সমালোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, মুক্ত গণমাধ্যম বিষয়ে যে পরিমাণ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে এতেই প্রমাণ হয়, বাংলাদেশের গণমাধ্যম মুক্ত ও স্বাধীন।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম অতীতে অনেক চাপের মধ্য দিয়ে কাজ করেছে। স্বাধীনতার পর নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে গণমাধ্যমকে। কখনো গণতান্ত্রিক শাসকদের কবলে পড়েছে, আবার কখনো সামরিক শাসক। আর সঙ্গে মালিকানা ও বিজ্ঞাপনের চাপ তো বরাবরের। সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক বিভাজনে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের এই বিভাজিত রাজনীতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায়। তাদের মধ্যে যখন রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয় তখন কিছুই করার থাকে না। সাংবাদিকদের দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও সুবিধা গ্রহণের মানসিকতা কখনো বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে পেশাদার হতে দেয়নি। তথাপি বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও ঝুঁকি সত্ত্বেও গণমাধ্যম দেশে গণতান্ত্রিক বিকাশ ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে অমূল্য অবদান রাখছে। এই ভূমিকা অব্যাহত রাখতে সাংবিধানিক অঙ্গীকার অনুযায়ী গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা, সুশাসন, জনকল্যাণমুখী, অংশগ্রহণমূলক এবং টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া মজবুত করতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এমন সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ ও সংবাদকর্মীদের ওপর হয়রানি বন্ধ করা, স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের উপযোগী পরিবেশ উত্তরোত্তর বিকাশ নিশ্চিত করা সরকারের যেমন দায়িত্ব, তেমনি নিরপেক্ষ সাংবাদিকতাও মুক্ত গণমাধ্যমের একটি অপরিহার্য অংশবিশেষ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০১৭ সকাল ১১:৪১

নাগরিক কবি বলেছেন: ভাল আলোচনা করেছেন। নিরপেক্ষ জার্নালিস্টদের জীবন কিন্তু আমাদের দেশে সত্যি বিপর্যস্ত। :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.