নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেষ পর্যন্ত লেখাটাই থাকে। টিভি, রেডিও, ওয়েবসাইট, চলচ্চিত্র, মঞ্চ, বিজ্ঞাপণ, ব্লগ - লেখার যতো মাধ্যম সবখানেই লিখতে হবে। পৃথিবী পাল্টে গেছে - এখন আমরা দুহাতের দশ আঙুলেই লিখি।

মুম রহমান

পেশাদার ও নেশাদার লেখক, মাঝে মাঝে কবি

মুম রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক হালি ছোট ছোট ছোটগল্প

২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ৮:১৭

নতুন পাঠক, প্রথমেই আপনাকে স্বাগতম জানাই, ছোট ছোট ছোটগল্পের জগতে। ধারাবাহিকভাবে এখানে ছোট ছোট ছোটগল্প প্রকাশিত হবে। প্রতি পর্বে ৫টি করে গল্প থাকবে। প্রতিটি গল্প ২০০ শব্দে লেখা। প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, এই পরিমাপ নির্ধারণের মূল কারণ গল্পের আকারকে একটা নির্দিষ্ট সীমায় বাঁধা। ছোট ছোট ছোটগল্প ঠিক কী মাপের হবে, কতটুকু আকৃতি হলে একটি গল্পকে ছোটগল্পের চেয়েও ছোট বলবো - এইসব ভাবনা থেকেই ২০০ শব্দের সীমানায় গল্প লেখার প্রয়াস। কবিরা ছন্দের অনেক সীমানায় মেনেও মহত্তম কবিতা লিখেছেন, সনেট তো একদম কঠিন নিয়মেই আঁটা! কাজেই ছোট ছোট ছোটগল্পের ২০০ শব্দের সীমারেখা স্বচেষ্ট নিরীক্ষায় নিজের লেখনীকে যাচাই করার প্রবণতাও বলা যেতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে চাই ‘ছোট ছোট ছোটগল্প’-এর ধ্বণিগত বৈচিত্র আমার ভাল লাগে। তাছাড়া এমন লোভও হয়, একদিন হয়তো এই রকম সহস্র গল্প লিখে ‘ছোট ছোট ছোটগল্প’-এর আঙ্গিকটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। কাজেই, ‘অনুগল্প’, ‘ক্ষুদ্র গল্প’ ইত্যাদি কোন শিরোনাম নয়, আমার এ গল্পগুলোর ‘ছোট ছোট ছোটগল্প’ শিরোনামটি গৃহীত হোক সে আশা করি।



০১. সরল রেখা

আমাদের মামুন ছোটবেলা থেকেই আঁকতো। একবার আমার টেবিলে বসে একটা স্ট্যাপলার এঁকেছিলো। মামুনকে ক্ষ্যাপানোর জন্য অনেকে সেটাকে ঢেকি বললেও আসলে তা স্ট্যাপলার মেশিনের মতোই ছিলো। আরেকদিন লাবনীর একটা ছবি এঁকেছিলো সে। লাবনীর পাঁচজন প্রেমিকও সে ছবি দেখে লাবনীকে চিনতে পারেনি, তবু ছবির মেয়েটি যে লাবনীর চেয়ে সুন্দর সে বিষয়ে সবাই একমত হয়েছিলো।

এই মামুন ঘোষণা দিয়ে একদিন আর্স্টিস হয়ে গেল।

আমাদের বন্ধু মহলে এমন ঘটনা এই প্রথম। অতএব আমরা দল বেঁধে মামুনদের বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখি মামুনের মা কাঁদছেন। তার ধারনা ছেলে তার পাগল হয়ে গেছে। মামুনকে দেখলাম আমরা। দাঁড়ি কামায়নি, একটা চশমা চোখে লাগিয়েছে, চোখের নিচে কালি, দাঁত না-মাজা মুখ থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে। ঘরে সত্যিকার আর্টিস্টদের মতো রঙ, তুলি, ক্যানভাস, তেলের বোতল ইত্যাদি ছড়ানো ছিটানো।

আমরা সমবেতভাবে বললাম, এ কি চেহারা হয়েছে তোর!

সে হাসি মুখে বললো, আমি আর্টিস্ট হতে যাচ্ছি, এই আমার স্টুডিও।

ওর মা বললো, তিন দিন ধরে ঘর থেকে বেরোয় না, নাওয়া-খাওয়ার ঠিক নেই।

আমি বললাম, তা কি আঁকলি তুই?

কিছু না।

কেন?

হচ্ছে না।

খুব কঠিন কিছু আঁকছিস!

হ্যাঁ, একটা সরল রেখা।

আমাদের মধ্যে একজন বললো, এ আবার আঁকার জিনিস হলো।

আরেকজন বললো, এই তো কতগুলো এঁেকছিস।

হয়নি, একটাও সরল হয়নি, বলে মামুন আবার হাতে তুলি নিলো।

আমরা ঘরে আছি তা যেন দেখতেই পেল না।



০২. পরী ও রাখাল



পরী উড়ে যাচ্ছিলো আকাশ দিয়ে। যেতে যেতে তার কি মনে হলো, সে নিচের দিকে তাকালো। সে দেখলো, নিচে সবুজ এক পৃথিবী। সে নেমে এলো।

রাখাল বাঁশি বাজাচ্ছিলো বনের ওই নির্জন কোনটায়। তখন পরী নেমে এলো পৃথিবীতে।

তাদের দেখা হয়ে গেলো।

রাখালের কি হলো রাখাল তা জানে, সে শুনেছে বুকের মধ্যে এমন হলে তাকে প্রেম বলে। আর পরীর কী হলো পরী তা জানে না, তাকে প্রেমের কথা কেউ বলেনি।

সারারাত পরী শুয়ে রইলো রাখালের বুকে। রাখাল বাঁশি বাজালো, পরী শুনলো। আর একবার, কেবল একবারের জন্য পরীর মাথায় হাত বুলালো রাখাল।

তারপর কখন ভোর হলো, পরীরও খেয়াল হলো না, রাখালেরও হলোনা!

যখন খেয়াল হলো পরী বললো, আমাকে যেতে হবে।

রাখাল বললো, আমাকেও।

কিন্তু রাখালের যেতে মন চাইলো না। পরীও উড়তে গিয়ে দেখলো, সারারাতের শিশির আর পৃথিবীর সব মায়া ভর করেছে তার পাখায়।

পরী কেঁদে বললো, আমি এখন কী করবো।

রাখাল হেসে বললো, তুমি আমার কাছে থাকো।

পরী থেকে গেল।

তারপর অনেক বছর কেটে গেছে। পরীকেও আর চেনা যায় না, রাখালকেও না। রাখালের কাছে এসে পরী হারালো তার আকাশ আর পরীকে কাছে পেয়ে রাখাল হারালো তার মাটি। সেই থেকে আর কোন পরী আকাশে ওড়ে না, উড়লেও পৃথিবীর পানে তাকায় না। সেই থেকে আর কোন রাখাল বাঁশি বাজায় না, বাজালেও রাতের বেলা বনে যায়না।



০৩. মেঘ

ঘর থাইকা বাইর অইতেই বাতাস আমারে কইলো, আমার পিছন পিছন আয়।

আমি কইলাম, ধুর যা, আমি কারো ধার ধারি না। আমি চলি আমার মতোন।

শুইনাই বাতাস আমারে দিলো এক থাবড়।

আমি বাতাসের চড় খাইয়া আগাইতে থাকি। যাইতে যাইতে বকুল গাছের লগে দেহা। গাছ কইলো, ঘামায়া গেছোস, একটু বয় আমার কাছে।

আমি কইলাম, নাগো, আমার বওনের টাইম নেই। আমারে যাইতে অইবো মেলা দূর।

শুইনাই কয়েক বকুল সুন্দরী আমার কোলে লাফ দিয়া পড়লো।

কইলো, আমরাও যামু তোমার লগে।

আমি কইলাম, না, যাইও না আমার লগে, শুকায়া মরবা।

তবু সুন্দরীরা আমারে ছাড়লো না। মুঠোর মধ্যে অগরে নিয়া আবার আমি হাঁটতাম থাকি। তারবাদে একটু যাইতেই এক উদাম নদীর লগে দেখা। নদী তার উড়না খুইলা কইলো, আসো আমার বুকে, তুমারে কিছু মাছ দিমু।

আমি কইলাম, নাগো, আমার কিছু লাগতো না। তুমি তোমার রাস্তায় যাও, আমি যাই আমার রাস্তায়।

কোন কথা না-শুইনাই পাগলী নদী একটানে আমারে ভাসায়া নিলো।

তারবাদে ভাসতে ভাসতে আমার মাথা গিয়া ঠেকলো আসমানে।

আসমানের রাজা লক্ষ তারার চক্ষু খুইলা কইলো, কে রে, কে তুই, কী চাস এইখানে?

আমি কইলাম, মহারাজ, আমি ঘুরতে ঘুরতে চইল্যা আসছি, কিছু চাই না।

শুইনা আসমানরাজ মুচকি হাইসা আমার দিকে চাইলেন। কইলেন, হু, তৈরিই আছস্, খাঁড়া তবে তোরে মেঘ কইরা দেই।

সেই থাইক্কা আমি মেঘ হইয়াই আছি।



০৪. মিছিলের মুখ

মিলি পরিচয় করিয়ে দেয়, ওর নাম রুমা, এনথ্রো-তে পড়ে। আমি একটু আগেই তাকে দেখেছি মিছিলের প্রথম সারিতে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, কেন তোমরা ক্লাস বদ্ধ করে মিছিল করছো ?

রতন মারা গেছে।

তাতে কী? পার্টির একজন মারা গেলেই মিছিল মিটিং করে ক্লাস বন্ধ করতে হবে? এ কেমন রাজনীতি!

এটা রাজনীতির ব্যাপার নয়, স্যার। আপনার সামনে এখন যদি কেউ আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে আপনি তার প্রতিবাদ করবেন না!

ওর আকস্মিক প্রশ্নে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই।

আসলে মিছিল ব্যাপারটা ঠিক ভালো নয়, মানে এতো লোক, চিৎকার, হৈ চৈ।

সে খুব কেটে কেটে উ””ারণ করে, মিছিল নাটক সিনেমা নয়। এটা প্রতিবাদ, ভালো লাগার জন্য প্রতিবাদ করা হয়না। অবশ্য মিছিল আমার ভালো লাগে। আচ্ছা স্যার, আসি।

ঝড়ের বেগে চলে যায় রুমা।

ওভাবে না বললেই পারতেন। মেয়েটি ভালো। খুব একটিভ ওয়ার্কার।

তখনই গুলির শব্দ হয়। মিলি আমাকে টান দেয়, শুয়ে পড়–ন, গুলি হচ্ছে।

যেমন হঠাৎ শুরু হয়েছেলো তেমনি হঠাৎ থেমে যায়। ক্যাফেটেরিয়ারের সামনে জটলা। মিলি আমার আগে ছুটে যায়, উত্তেজিত হয়ে ফিরে আসে।

ওরা রুমাকে গুলি করেখে। রুমা স্পট ডেড।

কি বলছো!

আমরা রুমার লাশ নিয়ে মিছিল করবো। ওরা বাধা দেবে, কিন্তু আমরা করবোই। আমি যাই।

মিলি, দাঁড়াও, আমি যাবো তোমার সাথে।

আপনি!

হ্যাঁ, আমি মিছিলে যাবো।

নিজের কন্ঠের দৃঢ়তায় আমি অবাক হই।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ৮:৪৫

সকাল রয় বলেছেন:

নাইস

২| ২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ৮:৫১

সাদিক সাদাত বলেছেন: ভাল লাগল। প্রতিটা গল্পের বক্তব্যই জোরালো। চালিয়ে যান। :)

৩| ২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ৮:৫৮

খোশনবীশ বলেছেন: আইডিয়াটা চমৎকার, গল্পগুলোও ভাল। পড়ে মজা পেয়েছি। যেহেতু একাধিক গল্প একসাথে আছে তাই ছোট ছোট ছোটগল্প শিরোণাম ঠিকই আছে। কিন্তু যদি আপনি কিংবা অন্য কেউ এরকম একটি গল্প পোস্ট করে তখন এই শিরোণাম অচল হবে। তখন অনুগল্পই লিখতে হবে। কিংবা লিখতে হবে অতি ছোট গল্প। ইংরেজিতে যাকে বলে very short story.

২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ৯:৪৫

মুম রহমান বলেছেন: যুক্তিটা বুঝি নাই। সর্ট মানে ছোট আর স্টোরি মানে গল্প, এখানে আবার `অতি' আসলো কোথা থেকে? ছোট ছোট ঢেউ, ছোট ছোট দুঃখ কথার মতো ছোট ছোট ছোটগল্প বললে অসুবিধা কী? ছোট ছোট এখানে বহুবচন নয়, আকৃতির বিশেষণ হিসাবে ব্যবহৃত।

৪| ২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ৯:১৫

ঐশীকা বলেছেন: ভাল লাগলো।

২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ৯:৪৫

মুম রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ১০:০২

শিকল বলেছেন: অনেক সুন্দর +

৬| ২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ১১:১৩

খোশনবীশ বলেছেন: আমি একটি গল্পের কথা বুঝাতে চেয়েছি। যেমন, আপনি এখানে চারটি গল্প সংযুক্ত করেছেন। প্রতিটি গল্পই আলাদা। সেক্ষেত্রে ছোট ছোট ছোটগল্প ঠিক আছে। কিন্তু মাত্র একটি যদি পোস্ট করা হয় তখন 'ছোট ছোট' শব্দটি ত্রুটিযুক্তই হবে বলে আমার মনে হয়েছে। কারণ এটি বিশেষ্যর বহুবচনই নির্দেশ করে। আর যদি আপনি এই চারটির একটি গল্প পোস্ট করেন তবে তা হয়ে যাবে 'একটি অতি ছোটগল্প' বা 'একটি অনুগল্প'। যাকে ইংরেজিতে বলা হয়, A very short story. এ ছাড়াও আরো একটি শব্দ ১৯৮০ থেকে প্রচলিত ছিল। সেটা হলো short-short story অর্থাৎ ছোট ছোটগল্প। এ বিবেচনায় আপনি একটি 'ছোট' বেশি লিখেছেন।

২৮ শে জুন, ২০১০ রাত ৯:২৯

মুম রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ মতামতের জন্য। তবু আমার কেন জানি, ছোট ছোট ছোটগল্পই বলতে ইচ্ছা করছে। সব যুক্তির পরো আমার আকাশ আমার কাছে আমার মতো থাক, সেটাই তো শিল্পীর সামান্য সাধ। আমাকে আমার মতো ভাবতে দিন, আমি আপনাকে নতুন আরো কিছু দেবো ইনশাল্লাহ।

৭| ২৭ শে জুন, ২০১০ রাত ১১:৪২

ইসতিয়াক আহমদ আদনান বলেছেন: চমৎকার। খুব ভাল হচ্ছে আপনার ছোট ছোট ছোট গল্প। চালিয়ে যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.