![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতার ছন্দ : কেন জানা দরকার ?
এই প্রশ্নের উত্তর উক্ত পোস্টে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন ব্লগার এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল । পোস্টের কিছু অংশ এখানে তুলে আনলাম।
সকল গুনীই একটা কথা মেনে নিয়েছেন,
"ভাব দিয়ে কবিতা লেখা হয় না। কথা দিয়ে তাকে সাজাতে হয়।" (কবিতার কথা/সৈয়দ আলী আহসান)
বিখ্যাত ইংরেজ কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ গদ্য আর পদ্যের কার্যকর একটা সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাঁর বিবেচনায়__
গদ্য বা Prose হচ্ছে ‘Words in the best order’ অর্থাৎ শব্দের শ্রেষ্ঠতম বিন্যাসই গদ্য।
আর কবিতা বা Poetry হচ্ছে ‘Best words in the best order’ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠতম শব্দের শ্রেষ্ঠতম বিন্যাসই কবিতা।
এর মাধ্যমে কবিতা বা গদ্য কি তা বোঝা কঠিন। কিন্তু গদ্য বা কবিতা কিভাবে লিখতে হবে সেটা খুব ভালো করেই বোঝা গেলো।
কথা হলো প্রথমেই কি কবি ছন্দ শেখেন ? শেখেন না। শেখেন তখনই যখন সত্যি সত্যি কবি হবার সিন্ধান্ত নেন। রবীন্দ্রনাথও ’জল পড়ে পাতা নড়ে’ ছন্দ শেখার আগেই লিখেছেন। কিন্তু সেখানে থেমে যাননি বলেই তিনি রবীন্দ্রনাথ। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকও অবলীলায় স্বীকার করেছেন, ’পেছনের দিকে তাকিয়ে এখন শিউরে উঠি যে লেখার কৌশল কতখানি কম জেনে -- আরো ভালো, যদি বলি কিছুই না জেনে, একদা এই কলম হাতে নিয়েছিলাম।’ সৈয়দ হক আরেকটা গুরুতর কথা মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি-’ লেখাটা কোনো কঠিন কাজ নয়, যে কেউ লিখতে পারেন, কঠিন হচ্ছে, লেখাটিকে একটি পাঠের অধিক আয়ু দান করা।’ (মার্জিনে মন্তব্য)
এখন সরাসরি মূল আলোচনায় যাবো।
▓▒░░ বাংলা ছন্দ ░░░▒▓
✪ ছন্দ : কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ্র সিংহরায়)
অর্থাৎ, কবি তার কবিতার ধ্বনিগুলোকে যে সুশৃঙ্খল বিন্যাসে বিন্যস্ত করে তাতে এক বিশেষ ধ্বনিসুষমা দান করেন, যার ফলে কবিতাটি পড়ার সময় পাঠক এক ধরনের ধ্বনিমাধুর্য উপভোগ করেন, ধ্বনির সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাসকেই ছন্দ বলা হয়।
বিভিন্ন প্রকার ছন্দ সম্পর্কে জানার পূর্বে ছন্দের কিছু উপকরণ সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। আর ছন্দ সম্পর্কে পড়ার আগে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার- ছন্দ সর্বদা উচ্চারণের সাথে সম্পর্কিত, বানানের সঙ্গে নয়।
✪ অক্ষর : (বাগযন্ত্রের) স্বল্পতম প্রয়াসে বা এক ঝোঁকে শব্দের যে অংশটুকু উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর বা দল বলে। এই অক্ষর অনেকটাই ইংরেজি Syllable-র মত। যেমন-
শর্বরী- শর, বো, রী- ৩ অক্ষর
চিরজীবী- চি, রো, জী, বী- ৪ অক্ষর
কুঞ্জ- কুন, জো- ২ অক্ষর
অক্ষর দুই ধরণের-
১) মুক্তাক্ষরঃ যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের প্রবহমান বাতাস জিভের কোনো বাধা ছাড়াই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে তাদের মুক্তক্ষর বলে। যেমন: হা, না, কা, চা, দি, দা, বা, বু ইত্যাদি।
২) বদ্ধাক্ষরঃ যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ মুখের প্রবহমান বাতাসকে আটকে দেয় তাদের বদ্ধাক্ষর বলা হয়। যেমন : কর, ধর, হায়, পাক, আঁক, ঝাঁক, থাক, দিন, বীন, হই, ইত্যাদি।
সংক্ষেপে-
মুক্তাক্ষর = ১ মাত্রা
বদ্ধাক্ষর = ২ মাত্রা
যেমন,
শর্বরী = শর্ + বো + রী = ২+১+১= ৪ মাত্রা
চিরজীবী = চি+র+জী+বী = ১+১+১+১ = ৪ মাত্রা
কুঞ্জ= কুন্ + জো = ২+১ = ৩ মাত্রা
✪ যতি বা ছন্দ-যতি : কোন বাক্য পড়ার সময় শ্বাসগ্রহণের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর অন্তর যে উচ্চারণ বিরতি নেয়া হয়, তাকে ছন্দ-যতি বা শ্বাস-যতি বলে।
যতি মূলত ২ প্রকার- হ্রস্ব যতি ও দীর্ঘ যতি। অল্পক্ষণ বিরতির জন্য সাধারণত বাক্য বা পদের মাঝখানে হ্রস্ব যতি দেওয়া হয়। আর বেশিক্ষণ বিরতির জন্য, সাধারণত বাক্য বা পদের শেষে দীর্ঘ যতি ব্যবহৃত হয়।
✪ পর্ব : বাক্য বা পদের এক হ্রস্ব যতি হতে আরেক হ্রস্ব যতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলা হয়। যেমন-
একলা ছিলেম ∣ কুয়োর ধারে ∣ নিমের ছায়া ∣ তলে ∣∣
কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
( ∣ - হ্রস্ব যতি ও ∣∣ - দীর্ঘ যতি)
এখানে একলা ছিলেম, কুয়োর ধারে, নিমের ছায়া, তলে- প্রতিটিই একেকটি পর্ব; মানে প্রতিটি চরণে ৪টি করে পর্ব।
✪ মাত্রা : একটি অক্ষর উচ্চারণে যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে মাত্রা বলে। বাংলায় এই মাত্রাসংখ্যার নির্দিষ্ট নয়, একেক ছন্দে একেক অক্ষরের মাত্রাসংখ্যা একেক রকম হয়। মূলত, এই মাত্রার ভিন্নতাই বাংলা ছন্দগুলোর ভিত্তি। বিভিন্ন ছন্দে মাত্রাগণনার রীতি বিভিন্ন ছন্দের আলোচনায় দেয়া আছে।
✪ শ্বাসাঘাত : প্রায়ই বাংলা কবিতা পাঠ করার সময় পর্বের প্রথম অক্ষরের উপর একটা আলাদা জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত জোর দিয়ে পাঠ করা বা আবৃত্তি করাকেই বলা হয় শ্বাসাঘাত বা প্রস্বর। যেমন-
আমরা আছি ∣ হাজার বছর ∣ ঘুমের ঘোরের ∣ গাঁয়ে ∣∣
আমরা ভেসে ∣ বেড়াই স্রোতের ∣ শেওলা ঘেরা ∣ নায়ে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
এখানে প্রতিটি পর্বের প্রথম অক্ষরই একটু ঝোঁক দিয়ে, জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত ঝোঁক বা জোরকেই শ্বাসাঘাত বলে।
✪ পদ ও চরণ : দীর্ঘ যতি বা পূর্ণ যতি ছাড়াও এই দুই যতির মধ্যবর্তী বিরতির জন্য মধ্যযতি ব্যবহৃত হয় । দুই দীর্ঘ যতির মধ্যবর্তী অংশকে চরণ বলে, আর মধ্য যতি দ্বারা চরণকে বিভক্ত করা হলে সেই অংশগুলোকে বলা হয় পদ। যেমন-
তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ⊥ দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣∣
তোমাতে আমাতে ∣ রত ছিনু যবে ⊥ কাননে কুসুম ∣ চয়নে∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
(এখানে ⊥ দ্বারা মধ্যযতি চিহ্নিত করা হয়েছে।)
পূর্ণযতি দ্বারা আলাদা করা দুইটি অংশই চরণ; আর চরণের মধ্যযতি দিয়ে পৃথক করা অংশগুলো পদ। এরকম-
যা আছে সব ∣ একেবারে ⊥
করবে অধি ∣ কার ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
✪ স্তবক : অনেকগুলো চরণ নিয়ে একটি স্তবক গঠিত হয়। সাধারণত, একটি স্তবকে একটি ভাব প্রকাশিত হয়।
✪ মিল : একাধিক পদ, পর্ব বা চরণের শেষে একই রকম ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের ব্যবহারকে মিল বলে। অলংকারের ভাষায় একে বলে অনুপ্রাস। সাধারণত, মিল পদের শেষে থাকলেও শুরুতে বা মাঝেও মিল থাকতে পারে। পদের শেষের মিলকে অন্ত্যমিল বলে। যেমন-
মুখে দেয় জল ∣ শুধায় কুশল ∣ শিরে নাই মোর ∣ হাত ∣∣
দাঁড়ায়ে নিঝুম ∣ চোখে নাই ঘুম ∣ মুখে নাই তার ∣ ভাত ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
এখানে, প্রথম চরণের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের শেষের পদদুটিতে অন্ত্যমিল (অল) আছে; দ্বিতীয় চরণের প্রথম দুই পদের শেষেও অন্ত্যমিল আছে (উম)। আবার দ্বিতীয় চরণের প্রথম দুই পদের শেষের ধ্বনি (ম) তৃতীয় পদের শুরুতে ব্যবহৃত হয়ে আরেকটি মিল সৃষ্টি করেছে। আর দুই চরণের শেষের পদেও অন্ত্যমিল আছে (আত)।
এবার, সুকান্ত ভট্টাচর্যের আঠারো বছর বয়স- কবিতার প্রথম দুটি স্তবকের ছন্দের এসব উপকরণ নিয়ে আলোচনা করলে বুঝতে সুবিধা হতে পারে।
আঠারো বছর বয়স
সুকান্ত ভট্টাচার্য
আঠারো বছর ∣ বয়স কী দুঃ ∣ সহ ∣∣
স্পর্ধায় নেয় ∣ মাথা তোলবার ∣ ঝুঁকি, ∣∣
আঠারো বছর ∣ বয়সেই অহ ∣ রহ ∣∣
বিরাট দুঃসা ∣ হসেরা দেয় যে ∣ উঁকি। ∣∣∣
আঠারো বছর ∣ বয়সের নেই ∣ ভয় ∣∣
পদাঘাতে চায় ∣ ভাঙতে পাথর ∣ বাধা, ∣∣
এ বয়সে কেউ ∣ মাথা নোয়াবার ∣ নয়- ∣∣
আঠারো বছর ∣ বয়স জানে না ∣ কাঁদা। ∣∣
উপরে কবিতাটির ছন্দ যতির স্থান নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এর পর্ব, পদ ও চরণ একরকম নির্দেশিত হয়েছে। প্রতিটি চরণে তিনটি পর্ব রয়েছে; প্রথম দুটি পর্ব ৬ মাত্রার, শেষ পর্বে ২ মাত্রার (মাত্রা গণনা নিচে ছন্দ অনুযায়ী আলোচনা করা আছে)। অর্থাৎ শেষ পর্বটিতে মাত্রা কম আছে। কবিতায় এরকম কম মাত্রার পর্বকে অপূর্ণ পর্ব বলে।
কবিতাটির প্রতি চারটি চরণে কোন বিশেষ ভাব নির্দেশিত হয়েছে। এগুলোকে একেকটি স্তবক বলে। যেমন, প্রথম স্তবকটিকে কবিতাটির ভূমিকা বলা যেতে পারে, এখানে কবিতাটির মূলভাবই অনেকটা অনূদিত হয়েছে। আবার দ্বিতীয় স্তবকে আঠারো বছর বয়সের, অর্থাৎ তারুণ্যের নির্ভীকতা/ভয়হীনতা বর্ণিত হয়েছে। এভাবে কবিতার একেকটি স্তবকে একেকটি ভাব বর্ণিত হয়।
আবার কবিতাটির চরণের অন্ত্যমিলের দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, প্রতি স্তবকের প্রথম ও তৃতীয় চরণের শেষে এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণের শেষে অন্ত্যমিল আছে। এছাড়া চরণগুলোর ভেতরেও খুঁজলে মিল পাওয়া যাবে।
✪✪ বাংলা ছন্দের প্রকারভেদ
বাংলা কবিতার ছন্দ মূলত ৩টি-
১) স্বরবৃত্ত,
২)মাত্রাবৃত্ত ও
৩)অক্ষরবৃত্ত ।
তবে বিংশ শতক থেকে কবিরা গদ্যছন্দেও কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। এই ছন্দে সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাস না থাকলেও ধ্বনিমাধুর্যটুকু অটুট রয়ে গেছে, যে মাধুর্যের কারণে ধ্বনিবিন্যাস ছন্দে রূপায়িত হয়।
নিচে সংক্ষেপে ছন্দ ৩টির বর্ণনা দেয়া হল।
✿ স্বরবৃত্ত ছন্দ : ছড়ায় বহুল ব্যবহৃত হয় বলে, এই ছন্দকে ছড়ার ছন্দও বলা হয়।
• মূল পর্ব সবসময় ৪ মাত্রার হয়
• প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে শ্বাসাঘাত পড়ে
• সব অক্ষর ১ মাত্রা গুনতে হয়
• দ্রুত লয় থাকে, মানে কবিতা আবৃত্তি করার সময় দ্রুত পড়তে হয়
উদাহরণ-
বাঁশ বাগানের ∣ মাথার উপর ∣ চাঁদ উঠেছে ∣ ওই ∣∣ (৪+৪+৪+১)
মাগো আমার ∣ শোলোক বলা ∣ কাজলা দিদি ∣ কই ∣∣ (৪+৪+৪+১)
(যতীন্দ্রমোহন বাগচী)
এখানে bold হিসেবে লিখিত অক্ষরগুলো উচ্চারণের সময় শ্বাসাঘাত পড়ে, বা ঝোঁক দিয়ে পড়তে হয়। আর লাইনের শেষ শব্দ (ওই, কই) এর ই অক্ষরগুলোতে মিল বা অনুপ্রাস পরিলক্ষিত হয়।
এরকম-
রায় বেশে নাচ ∣ নাচের ঝোঁকে ∣ মাথায় মারলে ∣ গাঁট্টা ∣∣ (৪+৪+৪+২)
শ্বশুর কাঁদে ∣ মেয়ের শোকে ∣ বর হেসে কয় ∣ ঠাট্টা ∣∣ (৪+৪+৪+২)
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
✿ মাত্রাবৃত্ত ছন্দ :
• মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়
• অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়; আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে (য় থাকলেও) ২ মাত্রা গুনতে হয়; য় থাকলে, যেমন- হয়, কয়; য়-কে বলা যায় semi-vowel, পুরো স্বরধ্বনি নয়, তাই এটি অক্ষরের শেষে থাকলে মাত্রা ২ হয়
• কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত
উদাহরণ-
এইখানে তোর ∣ দাদির কবর ∣ ডালিম-গাছের ∣ তলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
তিরিশ বছর ∣ ভিজায়ে রেখেছি ∣ দুই নয়নের ∣ জলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
(কবর; জসীমউদদীন)
কবিতাটির মূল পর্ব ৬ মাত্রার। প্রতি চরণে তিনটি ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব আছে।
এখন মাত্রা গণনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম চরণের-
প্রথম পর্ব- এইখানে তোর; এ+ই+খা+নে = ৪ মাত্রা (প্রতিটি অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); তোর = ২ মাত্রা (অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় ২ মাত্রা)
দ্বিতীয় পর্ব- দাদির কবর; দা+দির = ১+২ = ৩ মাত্রা; ক+বর = ১+২ = ৩ মাত্রা
তৃতীয় পর্ব- ডালিম-গাছের; ডা+লিম = ১+২ = ৩ মাত্রা; গা+ছের = ১+২ = ৩ মাত্রা
চতুর্থ পর্ব- তলে; ত+লে = ১+১ = ২ মাত্রা
✿অক্ষরবৃত্ত ছন্দ :
• মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়
• অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়
• অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, এমন অক্ষর শব্দের শেষে থাকলে ২ মাত্রা হয়; শব্দের শুরুতে বা মাঝে থাকলে ১ মাত্রা হয়
• কোন শব্দ এক অক্ষরের হলে, এবং সেই অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে, সেই অক্ষরটির মাত্রা ২ হয়
• কোন সমাসবদ্ধ পদের শুরুতে যদি এমন অক্ষর থাকে, যার শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, তবে সেই অক্ষরের মাত্রা ১ বা ২ হতে পারে
• কবিতা আবৃত্তির গতি ধীর হয়
উদাহরণ-
হে কবি, নীরব কেন ∣ ফাগুন যে এসেছে ধরায় ∣∣ (৮+১০)
বসন্তে বরিয়া তুমি ∣ লবে না কি তব বন্দনায় ∣∣ (৮+১০)
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি- ∣∣ (১০)
দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? ∣∣ (১০)
(তাহারেই পড়ে মনে; সুফিয়া কামাল)
কবিতাটির মূল পর্ব ৮ ও ১০ মাত্রার। স্তবক দুইটি পর্বের হলেও এক পর্বেরও স্তবক আছে।
এখন, মাত্রা গণনা করলে দেখা যায়, প্রথম চরণের,
প্রথম পর্ব- হে কবি, নীরব কেন; হে কবি- হে+ক+বি = ৩ মাত্রা (তিনটি অক্ষরের প্রতিটির শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); নীরব- নী+রব = ১+২ = ৩ মাত্রা (শব্দের শেষের অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় সেটি ২ মাত্রা); কেন- কে+ন = ১+১ = ২ মাত্রা; মোট ৮ মাত্রা
আবার দ্বিতীয় চরণের,
দ্বিতীয় পর্ব- লবে না কি তব বন্দনায়; লবে- ল+বে = ২ মাত্রা; না কি তব = না+কি+ত+ব = ৪ মাত্রা; বন্দনায়- বন+দ+নায় = ১+১+২ = ৪ মাত্রা (বন- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলেও অক্ষরটি শব্দের শেষে না থাকায় এর মাত্রা ১ হবে; আবার নায়- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি- য় থাকায়, এবং অক্ষরটি শব্দের শেষে থাকায় এর মাত্রা হবে ২); মোট ১০ মাত্রা
এরকম-
আসি তবে ∣ ধন্যবাদ ∣∣ (৪+৪)
না না সে কি, ∣ প্রচুর খেয়েছি ∣∣ (৪+৬)
আপ্যায়ন সমাদর ∣ যতটা পেয়েছি ∣∣ (৮+৬)
ধারণাই ছিলো না আমার- ∣∣ (১০)
ধন্যবাদ। ∣∣ (৪)
❂❂ অক্ষরবৃত্ত ছন্দের রূপভেদ বা প্রকারভেদ : অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আবার অনেকগুলো রূপভেদ বা প্রকার আছে-
পয়ার, মহাপয়ার, ত্রিপদী, চৌপদী, দিগক্ষরা, একাবলী, সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। নিচে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল-
✪ সনেট মূলত ৩ প্রকার-
১)পেত্রার্কীয় সনেট,
২)শেক্সপীয়রীয় সনেট ও
৩)ফরাসি সনেট;
এই ৩ রীতির সনেটের প্রধান পার্থক্য অন্ত্যমিলে। এছাড়া ভাব, বিষয় ও স্তবকের বিভাজনেও কিছু পার্থক্য আছে (তা ব্যাকরণের ছন্দ প্রকরণের আলোচ্য নয়)।
নিচে ৩ প্রকার সনেটের অন্ত্যমিলের পার্থক্য দেখান হল-
পেত্রার্কীয় রীতি
ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক ।। চ+ছ+জ চ+ছ+জ
শেক্সপীয়রীয় রীতি
ক+খ+ক+খ । গ+ঘ+গ+ঘ । চ+ছ+চ+ছ জ+জ
ফরাসি রীতি
ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক ।। গ+গ চ+ছ+চ+ছ
উদাহরণ-
হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব ∣ বিবিধ রতন;- ∣∣ (৮+৬) ক
তা সবে, (অবোধ আমি!) ∣ অবহেলা করি, ∣∣ (৮+৬) খ
পর-ধন-লোভে মত্ত, ∣ করিনু ভ্রমণ ∣∣ (৮+৬) ক
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি ∣ কুক্ষণে আচরি। ∣∣ (৮+৬) খ
কাটাইনু বহু দিন ∣ সুখ পরিহরি। ∣∣ (৮+৬) খ
অনিদ্রায়, অনাহারে ∣ সঁপি কায়, মনঃ, ∣∣ (৮+৬) ক
মজিনু বিফল তপে ∣ অবরেণ্যে বরি;- ∣∣ (৮+৬) খ
কেলিনু শৈবালে, ভুলি ∣ কমল-কানন। ∣∣ (৮+৬) ক
(অষ্টক)
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী ∣ কয়ে দিলা পরে,- ∣∣ (৮+৬) গ
ওরে বাছা, মাতৃকোষে ∣ রতনের রাজি ∣∣, (৮+৬) ঘ
এ ভিখারী-দশা তবে ∣ কেন তোর আজি? ∣∣ (৮+৬) ঘ
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, ∣ যা রে ফিরি ঘরে। ∣∣ (৮+৬) গ
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; ∣ পাইলাম কালে ∣∣ (৮+৬) ঙ
মাতৃভাষা-রূপ খনি, ∣ পূর্ণ মণিজালে । ∣∣। (৮+৬) ঙ
(ষটক)
(বঙ্গভাষা; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)
কবিতাটিতে দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮ ও ৬ চরণ নিয়ে মোট ১৪টি চরণ আছে। প্রতিটি চরণে ৮ ও ৬ মাত্রার দুই পর্ব মিলে মোট ১৪ মাত্রা আছে।
সনেট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ
সনেটের অন্ত্যমিল ও পঙ্ক্তি-বৈচিত্র্য - সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই
❂ অমিত্রাক্ষর ছন্দ :
• বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
• অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাবের প্রবহমানতা; অর্থাৎ, এই ছন্দে ভাব চরণ-অনুসারী নয়, কবিকে একটি চরণে একটি নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করতেই হবে- তা নয়, বরং ভাব এক চরণ থেকে আরেক চরণে প্রবহমান এবং চরণের মাঝেও বাক্য শেষ হতে পারে
• বিরামচিহ্নের স্বাধীনতা বা যেখানে যেই বিরামচিহ্ন প্রয়োজন, তা ব্যবহার করা এই ছন্দের একটি বৈশিষ্ট্য • অমিত্রাক্ষর ছন্দে অন্ত্যমিল থাকে না, বা চরণের শেষে কোন মিত্রাক্ষর বা মিল থাকে না
• মিল না থাকলেও এই ছন্দে প্রতি চরণে মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ১৪) এবং পর্বেও মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ৮++৬)
উদাহরণ-
তথা জাগে রথ, রথী, গজ, ∣ অশ্ব, পদাতিক ∣∣ (৮+৬)
অগণ্য। দেখিলা রাজা ∣ নগর বাহিরে, ∣∣ (৮+৬)
রিপুবৃন্দ, বালিবৃন্দ ∣ সিন্ধুতীরে যথা, ∣∣ (৮+৬)
নক্ষত্র-মণ্ডল কিংবা ∣ আকাশ-মণ্ডলে। ∣∣ (৮+৬)
(মেঘনাদবধ কাব্য; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)
এখানে কোন চরণের শেষেই অন্ত্যমিল নেই। আবার প্রথম বাক্যটি চরণের শেষে সমাপ্ত না হয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি চরণের শুরুতেই সমাপ্ত হয়েছে (তথা জাগে রথ, রথী, গজ,। অশ্ব, পদাতিক অগণ্য।)
এই অন্ত্যমিল না থাকা এবং ভাবের বা বাক্যের প্রবহমানতাই অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য।
❂ গদ্যছন্দ :
• এই ছন্দে বাংলায় প্রথম যারা কবিতা লিখেছিলেন তাদের অন্যতম-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
• মূলত ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী শিল্পমুক্তির আন্দোলনের ফসল হিসেবে এর জন্ম
• গদ্য ছন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- গদ্যের মধ্যে যখন পদ্যের রঙ ধরানো হয় তখন গদ্যকবিতার জন্ম হয়
• পর্বগুলো নানা মাত্রার হয়, সাধারণত পর্ব-দৈর্ঘ্যে কোন ধরনের সমতা বা মিল থাকে না
• পদ ও চরণ যতি দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত হয়; এই বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন উচ্চারণের সুবিধার্থে নয়, বরং অর্থ প্রকাশের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও তা পড়ার সময় এক ধরনের ছন্দ বা সুরের আভাস পাওয়া যায়
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও এর পদবিন্যাস কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও পুনর্বিন্যাসিত হতে হয়
উদাহরণ-
আমার পূর্ব-বাংলা এক গুচ্ছ স্নিগ্ধ
অন্ধকারের তমাল
অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায়
একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ
সন্ধ্যার উন্মেষের মতো
সরোবরের অতলের মতো
কালো-কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো
বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি ।
(আমার পূর্ব বাংলা; সৈয়দ আলী আহসান)
____________________________________
✪✪✪ অলংকার ✪✪✪
____________________________________
✪ অলংকারঃ
মূলতঃ ভাব এবং শব্দের খেলা। ব্যাকরণের পরিভাষায় এদের বিভিন্ন নাম আছে।
ক) শব্দালংকার--> শব্দের খেলা
১। অনুপ্রাসঃ একই ধ্বনি বার বার বিভিন্ন শব্দে আসতে থাকে। যেমনঃ চাচা চা চায় এইখানে চ এর অনুপ্রাস হচ্ছে।
২। যমকঃ একই শব্দ দুইবার দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৩। শ্লেষঃ একই শব্দ যখন দুইধরণের অর্থ প্রকাশ করে।
৪। বক্রোক্তিঃ এমন বাক্য যাতে দুইধরণের অর্থ থাকে।
৫। পুনরুক্তবদাভাসঃ ২টি একি অর্থের শব্দ পাশাপাশি বসে।
৬। ধ্বন্যুক্তিঃ অনুকার শব্দ ব্যাবহার।
খ) অর্থালংকার--> ভাবের খেলা
✪ সাদৃশ্য খোজা
... ...১) উপমাঃ কোন কিছুর কোন বৈশিষ্ট্য কে অন্য কোন কিছুর বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা।
... ...২) রূপকঃ কোন কিছুকে অন্য কোন কিছুর সাথে তুলনা।
... ...৩) উৎপ্রেক্ষাঃ কোন কিছুকে অন্য কোন কিছু বলে সন্দেহ করা।
... ...৪) অতিশয়োক্তিঃ কোন কিছুর কোন বৈশিষ্ট্য কে অন্য কোন কিছুর সাথে তুলনা।
... ...৫) ভ্রান্তিমানঃ কোন কিছুকে অন্য কোন কিছু বলে ভুল করা অর্থে।
... ...৬) সমাসোক্তিঃ আকাশ কুসুম কল্পনা। অসম্ভব কে সম্ভব ভাবা অর্থে।
✪ বিরোধ খোজা
... ...১) বিরোধাভাসঃ দুটি বিপরীত অর্থের সংযোগে কিছু বলা।
... ...২) বিষমঃ কার্য এবং কারণের মধ্যে বিরোধ।
... ...৩) বিভাবণাঃ কারন ছাড়াই কিছু ঘটছে এমন অর্থে।
... ...৪) বিশেষোক্তিঃ কারণ থাকা সত্ত্বেও যখন ঘটে না।
... ...৫) অসংগতিঃ কারণ ও কার্যের মধ্যে সংযোগ ছাড়াই যখন কাজ হচ্ছে।
✪ শৃংখলা খোজা
... ...১) কারণমালাঃ কারণ-কার্য(কারণ)-কার্য এইভাবে ধারাবাহিক চলতে থাকে, যেখানে প্রতিটা কাজের ফলে আরেকটা কারণ তৈরী হচ্ছে।
... ...২) একাবলিঃ একই শব্দ যখন বিভিন্ন পদ হিসেবে কাজ করে।
... ...৩) সারঃ বাক্যের শেষের দিকে যখন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে।
✪ ন্যায় খোজা
... ...১) অর্থান্তরঃ যৌক্তিক কারণ খোজা।
... ...২) কাব্যলিঙ্গঃ অযৌক্তক কারণ খোজা।
✪ গূঢ়ার্থ খোজা
... ...১) ব্যাজস্তুতিঃ লেখা থাকে যা তার বিপরীত অর্থ বোঝানো হয়।
... ...২) অর্থাপত্তিঃ কোন কিছুকে প্রতিষ্টা করা এবং সাথে আরো অন্য কিছুকেও প্রতিষ্টা করা।
... ...৩) সূক্ষঃ খুব অল্প সংকেত দেয়া।
... ...৪) স্বভাবোক্তিঃ দার্শনিক কোন বক্তব্য তুলে ধরা।
... ...৫) অপ্রস্তুত প্রশংসাঃ পরোক্ষভাবে কিছু বলা।
... ...৬) আক্ষেপঃ সত্য প্রকাশ এবং পরে এমন কিছু লেখা যাতে সেটা ঢাকা পড়ে।
__________________________________________
সহায়ক পোস্ট
✪ ছন্দের ক্লাস: যারা কবিতার ছন্দ শিখতে চান তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য
✪ ধ্বনি, ছন্দ ও অলংকার বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান
✪ কবিতার কথা: তিন প্রকার ছন্দ
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৭
এম মশিউর বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় মামুন রশিদ ভাই।
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১১
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: পড়ে বুঝিলাম যে আমি আর কবিতা লিখিব না ।
মামুনভাইয়ের সাথে একমত । ধন্যবাদ এর চেয়েও বেশি কিছু প্রাপ্য আপনি ।
ভাল থাকুন ।
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৯
এম মশিউর বলেছেন: কবিতা লিখবেন না কেনো? আপনি আপনার নিজের গতিতে লিখে যান।
মনে রাখবেন, কবিরা আগে কবিতা লিখেছেন, পরে সেখান থেকে এই সব নিয়ম-কানুন বেরিয়েছে। তাছাড়া বর্তমানের কবিরা তো সম্পুর্ণ গদ্য ছন্দে তাদের কবিতা লেখেন। পোস্টে (আমার পূর্ব বাংলা; সৈয়দ আলী আহসান) কবিতাটি দেখুন।।
তবে 'ছন্দ না জেনে কবিতা লেখা, আর গভীরতা না জেনে সমুদ্রে নামা' একই কথা।
আপনার জন্য একটা জাপানি ছন্দ 'হাইকু (Haiku) ৫+৭+৫ মাত্রার ত্রিপদী বন্ধ। রবীন্দ্রনাথ একে 'অসমান মাত্রার তিন লাইনের কবিতাকণা' বলেছেন___
ক.
পুরোনো পুকুর,
ব্যাঙের লাফ,
জলের শব্দ।
খ.
পচা ডাল,
একটা কাক,
শরৎ কাল।
গ.
স্বর্গ এবং মর্ত হচ্ছে ফুল,
দেবতারা এবং বৃদ্ধ হচ্ছেন ফুল-
মানুষের হৃদয় হচ্ছে ফুলের অন্তরাত্মা।
ভালো থাকবেন।।
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১২
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: ওত্তেরিক্কি !
ব্যাপক পোষ্ট মশিউর , সময় করে এসে তোমার ক্লাসে বসবো !
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৮
এম মশিউর বলেছেন: স্বাগতম সব সময়।
লজ্জা বলিল, "হবে
কি লো তবে,
কতদিন পরাণ রবে
অমন করি।
হইয়ে জলহীন
যথা মীন
রহিবি ওলো কতদিন
মরমে মরি"।। (স্বপ্নপ্রয়াণ)
৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৫
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মশিউর ভাল পোস্ট দিয়েছেন প্রিয়তে নিলাম।
২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৮
এম মশিউর বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৩+২+৪ এর লয়___
আসন দিলে অনাহূতে,
ভাষণ দিলে বীণাতানে;
বুঝি গো তুমি মেঘদূতে
পাঠায়ে ছিলে মোর পানে।
বাদল রাতি এল যবে
বসিয়াছিনু একা একা,
গভীর গুরু গুরু রবে
কি ছবি মনে দিল দেখা।
পথের কথা পুবে হাওয়া
কহিল মোরে থেকে থেকে;
উদাস হয়ে চলে-যাওয়া,
খ্যাপামি সেই রোধিবে কে।
আমার তুমি অচেনা যে,
সে কথা নাহি মানে হিয়া;
তোমারে কবে মনোমাঝে
জেনেছি আমি না জানিয়া।
ফুলের ডালি কোলে দিনু,
বসিয়াছিলে একাকিনী;
তখনি ডেকে বলেছিনু,
তোমারে চিনি, ওগো চিনি।।
প্রতিটি লাইনে কত মিল! রবি ঠাকুরের কবিতায় মুগ্ধ!
৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২০
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন:
চমৎকার কাজ...
ধন্যবাদ নেন আন্তরিক...
আর +সহ শোকেজে...
২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫
এম মশিউর বলেছেন: কৃতজ্ঞতা।
৩+৩+২ লয়ে
আঁখিতে মিলিল আঁখি,
হাসিল বদন ঢাকি।
মরম-বারতা শরমে মরিল,
কিছু না রহিল বাকি।।
ছন্দের মিলটা সুন্দর না?
৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৫
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: ছোট বেলায় যখন নতুন বই পেতাম তখন বই মলাট দিতাম যাতে সহজে পুরাতন না হয়। মলাট গুলো হতো খুব সুন্দর আর একটু শক্ত যাতে সহজে ছেড়ে। এই পোস্টটাকে তেমনি একটি মলাট দিয়ে মুড়িয়ে দিতে মনে চাইছে। নিয়ে গেলাম। সময়ে অসময়ে মলাট খুলে দেখবো। শিখবো।
ভালো থাকবেন, মশিউর ভাই। সব সময়।
২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮
এম মশিউর বলেছেন: সজীব ভাই, কমেন্টে নস্টালজিক করে দিলেন। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল!
আরম্ভিছে শীতকাল, পড়িছে নীহারজাল,
শীর্ণ বৃক্ষশাখা যত ফুলপত্রহীন;
মৃতপ্রায় পৃথিবীর মুখের উপরে
বিষাদে প্রকৃতিমাতা শুভ্র বাষ্পাজালে-গাথা
কুজ্ঝটি-বসনখানি দেছেন টানিয়া।
পশ্চিমে গিয়েছে রবি, স্তব্ধ সন্ধ্যাবেলা,
বিদেশে আসিনু শ্রান্ত পথিক একেলা।
(দুই দিন- গিরিশচন্দ্র)
ভালো থাকবেন।
৭| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: এ ই পোস্ট পড়ে সনেট লিখেছি। তাই আবারো ধন্যবাদ।সনেট সমগ্র বেড় করবো
২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩২
এম মশিউর বলেছেন: আপনার 'অপসরা' (সনেট) টি পড়লাম। বেশ ভালো লেগেছে। তবে আরেকটু ভালো হতে পারতো।
ভালো থাকবেন সব সময়।
৮| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ওরে বাপরে বাপ, এ দেখি দুর্দান্ত পোস্ট!!! শিক্ষানবিশ নির্বিশেষে সবার জন্যই অবশ্যপাঠ্য পোস্ট এটি। ছন্দের উপর কোনো লেখা দেখলেই আমি পড়ি। কিন্তু যতোই পড়ি ততোই ভুলে যাই আমার কাছে ছন্দের উপর ৪-৫টা বই আছ। পড়তে পড়তে মাথা ব্যথা করে
তার চেয়ে এ পোস্ট পড়লে অতি দ্রুত ছন্দ সম্বন্ধে বেশ জানা হয়ে যায়।
‘চরণ’ আর ‘পঙ্ক্তি’র সংজ্ঞা আমি যা জানি তা একটু ভিন্নতর। কবিতায় একটা বাক্য হলো একটা চরণ, আর একেকটা লাইন হলো একেকটা পঙ্ক্তি। এ ডেফিনিশন দেয়া আছে কবি আব্দুল কাদিরের ‘ছন্দ-সমীক্ষণ’ বইটিতে (বইটির নাম সঠিক হলো কিনা জানি না। ওটি এখন ড্রয়িং রুমে
কয়েকটা ডেফিনিশিনের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি ‘অক্ষর’কে Syllable-এর সাথে তুলনা করেছেন; আমার মনে হয় Syllable-এর সাথে তুলনীয় হলো ‘স্বর’, অক্ষর নয়।
এই | খা | নে | তোর | দা | দির| ক | বর | ডা | লিম | গা | ছের| ত | লে
তি | রিশ | ব | ছর | ভি | জা | য়ে | রে | খে | ছি | দুই | ন | য় | নের | জ | লে
এখানে ‘তোর’, ‘দির’, ‘বর’, ‘লিম’, ‘ছের’ হলো একেকটা স্বর, কিন্তু একেকটা অক্ষর নয়। আর অক্ষর হলো একেকটা বর্ণ, বা সংযুক্ত বর্ণ।
হে | ব | ঙ্গ | ভা | ণ্ডা | রে | ত | ব ∣ বি | বি | ধ | র | ত | ন
এখানে ১৪টি অক্ষর রয়েছে, যার মধ্যে ‘ঙ্গ’(ঙ+গ) ও ‘ণ্ড’ (ণ+ড)-ও একটি করে অক্ষর।
সহজ কথায় মাত্রা হলো একেকটা বর্ণ। ‘ঙ্গ’ এক অক্ষর হলেও এখানে মাত্রা আছে দুটি, তদ্রূপ ‘ণ্ড’-তেও দুটো মাত্রা রয়েছে (ণ+ড)
এভাবে, স্বর, অক্ষর বা মাত্রা গুনে যে ছন্দ নির্ণিত বা সিদ্ধ হয় তাকে যথাক্রমে স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বলে। যে ছন্দ স্বর বা অক্ষর উভয় দ্বারাই সিদ্ধ তাকে স্বরাক্ষরবৃত্ত ছন্দ বলে। তদ্রূপ আছে মাত্রাক্ষরবৃত্ত বা স্বরমাত্রাবৃত্ত ছন্দের উপস্থিতি।
এবার আপনাকে একটা কবিতা দিচ্ছি; বিশ্লেষণ করে বলুন এটি কোন ছন্দে রচিত
তুমি আর কোনোদিন নাম বলো নি
পাখি
তুমি আর কোনোদিন গান করো নি
নদী
তুমি আর কোনোদিন হাত ধরো নি
পথে
তুমি আর কোনোদিন চোখ রাখো নি
চোখে
আমরা দুজন এক আকাশে
উড়ি
আমরা দুজন এক ঘরেই
থাকি
ক্লু দিচ্ছিঃ এটি স্বর, অক্ষর ও মাত্রা এই তিন প্রকার ছন্দ দ্বারাই সিদ্ধ
লেখাটা আমারই
****
তবে ছন্দ সম্বন্ধে ঘাঁটাঘাঁটি করতে যেয়ে সামান্য অভিজ্ঞতা যা হয়েছে তা থেকে বুঝেছি কবিতা লিখবার জন্য ছন্দ জানাটা জরুরি নয়। প্রসিদ্ধ কবিরা সবাই ছন্দবিশেষজ্ঞ ছিলেন না; কবিতা লিখতে জানলে ছন্দ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কবিতায় ঢুকে যাবে।
আর আবৃত্তি করা ছাড়া ছন্দের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।
***
মূল্যবান পোস্টটি আমার প্রিয় তালিকায় যুক্ত হয়ে যাবে।
শুভেচ্ছা মশিউর ভাই।
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৬
এম মশিউর বলেছেন: প্রিয় সোনাবীজ ভাই,
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যের জন্য।
'বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র' র 'ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি' থেকে রবীন্দ্রনাথের 'ছন্দ' বইটি নিয়েছিলাম; বইটি পড়েই এই পোস্ট দেওয়ার সাহস পেয়েছিলাম।
***
অক্ষর ও Syllable এর মিলের ব্যাপারে ব্লগার সোমহ্যাপি একটি চমৎকার মন্তব্য করেছেন। উনার মন্তব্যটিই আমি তুলে দিলাম,
কবিতাতে সিলাবল আর অক্ষর সমার্থক। এখানে অক্ষর কিন্ত্ত লেটার বা বর্ণ না।
একটি মাত্র প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনিই হলো অক্ষর'
যেমন, বঙ্গ> বঙ+গ)
বঙ> বদ্ধ আর গ> হলো মুক্ত অক্ষর।
হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন
লাইনটিতে
হে/ বঙ/ গ/ ভাণ/ডা/ রে/ ত/ব বি বি ধ র তন
১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ =৮ ১ ১ ১ ১ ২ =৬
অক্ষরবৃত্তে বদ্ধাক্ষর -একক ভাবে /শব্দের মাঝে /এবং শব্দের শেষে হলে ২ মাত্রা পায়।
উপরের লাইনটিতে বঙ= শব্দের প্রথমে হোয়া সত্বেও ১ মাত্রা কিন্ত্ত তন= শব্দের শেষে হোয়াতে ২ মাত্রা পেয়েছে।
***
ছন্দ শিখছি মাত্র, এখনিই কি এতো কিছু পারি? তবে যেটুকু জানলাম সেখান থেকে কিছুটা বলতে পারি,
স্বরবৃত্ত ছন্দে সাধারণত ছড়াগুলো লেখা হয়, এবং দ্রুত পড়তে হয়;
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতাগুলো স্বরবৃত্তের চেয়ে একটু ধীরে ধীরে পড়তে হয়,
আর অক্ষরবৃত্ত ছন্দের লেখাগুলোর মধ্যে ভাবগম্ভীর্য থাকে, শব্দগুলো অনেক কঠিন ও পড়তে কাঠখোট্টা টাইপের।
এর বেশি বলতে পারবো না।
তবে আপনার কবিতাটি সম্ভবত মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা।
***
আমি বেশি কিছু জানি না; তবে জানার ইচ্ছে অনেক। আর আপনার মন্তব্যে অনেক খুশি হয়েছি।
ভালো থাকবেন সব সময়।
৯| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩০
শাবা বলেছেন: খুব সুন্দর একটি পোস্ট, বেশ যত্ন করে লিখেছেন। তবে আমি ব্লগার সোনাবীজ যে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, আমিও তার সাথে একমত।
মূল্যবান পোস্টটি আমি ইতোমধ্যে প্রিয়তে নিযেছি।
আমার কবিতা কতটুকু সঠিক ছন্দে হচ্ছে একটু দেখে দিলে প্রীতি বোধ করতাম।
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০১
এম মশিউর বলেছেন: আপনার কবিতাগুলো দেখলাম। আপনি তো কবিতার জাহাজ!
এরপর থেকে নিয়মিত আপনার কবিতা পড়ে আসবো।
তবে একটা কথা বলে রাখি, কবিতা অনেক ভালো লাগে; তাই বলে কবিতা-বিশারদ হয়ে যায় নি!
১০| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫১
সোমহেপি বলেছেন: অ.ট.সোনা ভাই
কবিতাতে সিলাবল আর অক্ষর সমার্থক। এখানে অক্ষর কিন্ত্ত লেটার বা বর্ণ না।
একটি মাত্র প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনিই হলো অক্ষর'
যেমন, বঙ্গ> বঙ+গ)
বঙ> বদ্ধ আর গ> হলো মুক্ত অক্ষর।
হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন
লাইনটিতে
হে/ বঙ/ গ/ ভাণ/ডা/ রে/ ত/ব বি বি ধ র তন
১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ =৮ ১ ১ ১ ১ ২ =৬
অক্ষরবৃত্তে বদ্ধাক্ষর -একক ভাবে /শব্দের মাঝে /এবং শব্দের শেষে হলে ২ মাত্রা পায়।
উপরের লাইনটিতে বঙ= শব্দের প্রথমে হোয়া সত্বেও ১ মাত্রা কিন্ত্ত তন= শব্দের শেষে হোয়াতে ২ মাত্রা পেয়েছে।
তবে আপনি যেভাবে নিকাষ করেছেন সেভাবে সব কিছু বিবেচনা করা হলে কেমন হবে বুঝতে পারছি না।
লেখক কে অনেক ধন্যবাদ। ছন্দ নিয়ে সামান্য কৌতূহল কাজ করে। তাই মাঝে মাঝে পড়া যাবে।
আমার কাছে মনে হয় ছন্দ হলো এক ধরনের বিন্যাস যার মাঝে একটা স্পন্দন থাকে। এটা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্নো হতে পারে। এটা কবিতার জন্য খুব প্রয়োজন নাই অনেকে বললেও আমি মাঝে মাঝে একটু ভিন্ন চিন্তা করি। কবিতা গলে গলে যেভাবে তরল হয়ে যাচ্ছে তাতে সব একটি রেখায় মিশে যাবে বলে আশংকা হয়। মাঝে মাঝে বোরিং ও লাগে।
অবশ্য বোধ কবিতার ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার হতে পারে ....কি জানি এতকিছু বুঝি না।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৫
এম মশিউর বলেছেন: কৃতজ্ঞতা এমন বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যের জন্য।
আপনার সাথে সম্পুর্ণ একমত।
আমি কবিতা লিখি না; তবে ছন্দ নিয়ে আমারও কৌতুহল কাজ করে। কবিতা পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে আটকে যায় কবিতার ছন্দে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছন্দ' বইটি পড়তে গিয়ে আরো অনেক কিছু জানতে পারলাম।
আগে কবিতা পরে ছন্দ এসেছে। তাই ছন্দ মেনে কবিতা লিখতে হবে এমনটি মোটেই সমর্থন করি না। তবে ছন্দ জানা না থাকলে দেখা যাবে, আপনি নতুন যে ছন্দ আবিষ্কার করলেন, তা অনেক আগেই আরেকজন আবিষ্কার করে গেছেন। তাই ছন্দ জানাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ইমন ভাই,
আপনি বলছেন, ‘অক্ষর’ আর ‘সিলেবল’ সমার্থক, আমি বলছি ‘স্বর’ আর ‘সিলেবল’ সমার্থক। এছাড়া স্বর বা মাত্রা বা অক্ষর সম্পর্কিত বিশ্লেষণে আমি, আপনি বা মশিউর ভাই মূলত একই কথা বলেছি।
কবি আবদুল কাদির তাঁর ‘ছন্দ সমীক্ষণ’ বইটিতে লিখেছেনঃ
‘সংস্কৃতে ‘অক্ষর’ অর্থে ‘সিলেবল’ বুঝায়। কিন্তু বাংলায় পণ্ডিত লালমোহন বিদ্যানিধি, রাখালরাজ রায় ও প্রবোধচন্দ্র সেন ‘সিলেবল’ অর্থে ‘স্বর’ শব্দ ব্যবহার করেন এবং এই ব্যবহারই বাংলাদেশে সুপ্রচলিত। পশ্চিম বঙ্গের মনীষী-মহলে ‘সিলেবল’ স্থানে শব্দ-পাঁপড়ি, ‘পদাংশ’, ‘দল’, প্রভৃতি শব্দ ব্যবহারের প্রশ্নও উঠেছে। কিন্তু আমি ‘সিলেবল’ অর্থে ‘স্বর’ ও ‘ধ্বনি’, এই দুটি শব্দ ব্যবহারই যুক্তিযুক্ত মনে করছি।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমি মাত্রাবৃত্তে মাত্রাকলা (moric unit), স্বরবৃত্তে স্বরকলা (syllabic unit) এবং অক্ষরবৃত্তে অক্ষরকলা (literal unit) ধ্বনি-পরিমাপক ব্যষ্টি ধরে, এই তিন রীতির ত্রিবিধ ছন্দলক্ষণ নির্ণয় করেছি।’ এখানেও ‘স্বর’-এর সাথে ‘সিলেবল’-এরই সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে।
আমার বাবার খাবার দাবার সাবাড় করেছেন।
উপরের লাইনে অক্ষর হলো ১৯টি, এবং কোনো যুক্তবর্ণ না থাকায় বর্ণও ১৯টি। কিন্তু ওখানে স্বর সংখ্যা কয়টি? নিচে আলাদা করে দেখাচ্ছিঃ
আ | মার | বা | বার | খা | বার | দা | বার | সা | বাড় | ক | রে | ছেন = ১৩টি স্বর রয়েছে এখানে ‘মার’, ‘বার’, ‘বাড়’, ‘ছেন’ একটি মাত্র প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি। এগুলোতে স্বর রয়েছে একটি করে, কিন্তু প্রতিটিতে অক্ষর ও মাত্রা রয়েছে ২টি করে।
ছন্দ শ্রেণিকরণের সহজবোধ্য পন্থা হলো- অক্ষর গুনে অক্ষরবৃত্ত, স্বর গুনে স্বরবৃ্ত্ত এবং মাত্রা গুনে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ নির্ণয় করা। আমার উদ্ধৃত লাইনটিতে ১৯টি অক্ষর, ১৩টি স্বর এবং ১৯টি মাত্রা রয়েছে। প্রতিটা বর্ণই হলো একেকটি অক্ষর, স্বর বা মাত্রা- গণনার সহজতম উপায় হলো এটা। ‘অক্ষর’ ও ‘মাত্রা’ গণনার জন্য ৯০% ভাগ ক্ষেত্রেই এটা খাটবে, কিন্তু ‘স্বর’ গণনার ক্ষেত্রে এটা খাটবে না। ‘অক্ষর’ গণনার ব্যতিক্রম হিসাবে যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রে, যেমন ‘বিশ্বস্ত’- এখানে ৩টি অক্ষর রয়েছে, যদিও বর্ণসংখ্যা ৪ (ব-ফলা বাদ দিয়ে)। ‘মাত্রা’ গণনার ব্যতিক্রম আসবে ক্ষেত্রে ‘বিশ্বস্ত’ উচ্চারণকালে যেসব ধ্বনি মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছে, তাই মাত্রা, যেমন, এখানে উচ্চারিত ধ্বনি হলো ব, শ, স, ত, অতএব মাত্রা সংখ্যা ৪। ‘বিশ্বস্ত’ শব্দে স্বর বা সিলেবল হলো বিশ+শস্+ত=৩টি।
কবিতা লিখবার জন্য ছন্দ শিখবার প্রয়োজন নেই লালন ফকির বা শাহ আবদুল করিম- এঁরা ছন্দ সম্পর্কে কিছু জানতেন না, কিন্তু তাঁদের রচিত গানের আমরা ছন্দ বিশ্লেষণ করি। অল্পবিস্তর লেখালেখি করি ছোটোবেলা থেকেই, এখন সেসব লেখা বিশ্লেষণ করলে অবাক হতে হবে বইকি। আমার উপরের কমেন্টে যে কবিতাটি উদ্ধৃত করেছি, লিখবার কালে মনের ভিতরে আবগে ছাড়া আর কিছু ছিল না, কিন্তু ১ মার্চ ২০১২-এর এই পোস্টটিতে (২২ নম্বর কমেন্টের উত্তর) প্রসঙ্গকর্মে এই কবিতাটির বিশ্লেষণ করতে যেয়ে নিজে নিজেই অবাক হয়ে যাই।
ছন্দের ব্যাপারে কোনো এক ছন্দবিশেষজ্ঞ বলেছেন (নাম মনে পড়ছে না), ছন্দ বুঝবার জন্য নিজের কান হলো সবচেয়ে বড়। পড়তে যদি কানে না ঠেকে, অর্থাৎ, কোথাও কোনো হোঁচট না পড়ে, তাহলেই ছন্দ ঠিক আছে। অন্যত্র পড়েছি, কবির কাজ ছন্দ মেনে লেখা নয়, কবির কাজ আপন আনন্দে লেখা- ছান্দসিকরা বিশ্লেষণ করে বের করবেন কবি কোন্ ছন্দে তাঁর কবিতা লিখছেন। আমি কবিতাটি হুট করে ফেইসবুক স্ট্যাটাস হিসেবে লিখেছিলাম। কবিতাটির ছন্দ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম এর সুশৃঙ্খল ছন্দ-গাঁথুনি দেখে। নিজের কবিতার ছন্দ বিশ্লেষণ করলে পক্ষপাতদুষ্ট হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তবুও করছি। লক্ষ করুন:
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেইদিন হবো শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না।
উপরের কবিতাংশে বোল্ড করা শব্দ দুটো পঙ্ক্তি দুটোর শুরুতে দু মাত্রার অতিরিক্ত পর্ব হিসেবে যুক্ত হয়েছে। কবিতাটির মূল ছন্দপর্ব হলো নিম্নরূপ। এখানে '।' দিয়ে পর্ব বা ছেদ বা স্বল্পযতি নির্দেশ করা হলো, এবং অতিরিক্ত পর্বটি ছেঁটে দেয়া হলো :
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
সেইদিন হবো শান্ত
উৎপীড়িতের । ক্রন্দন রোল । আকাশে বাতাসে । ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর । খড়গ কৃপাণ । ভীম রণভূমে । রণিবে না।
এবার আমার কবিতাটি পাঠ করুন এভাবে :
তুমি
আর কোনোদিন নাম বলো নি পাখি
তুমি
আর কোনোদিন গান করো নি নদী
তুমি
আর কোনোদিন হাত ধরো নি পথে
তুমি
আর কোনোদিন চোখ রাখো নি চোখে
আমরা দুজন এক আকাশে উড়ি
আমরা দুজন এক ঘরেই থাকি
এবার দুই মাত্রার অতিরিক্ত 'তুমি' ছেঁটে ফেলুন :
আর কোনোদিন নাম বলো নি পাখি
আর কোনোদিন গান করো নি নদী
আর কোনোদিন হাত ধরো নি পথে
আর কোনোদিন চোখ রাখো নি চোখে
আমরা দুজন এক আকাশে উড়ি
আমরা দুজন এক ঘরেই থাকি
তাহলে প্রতি পঙ্ক্তি হতে অতিরিক্ত 'তুমি' বাদ দেবার পর দেখুন প্রতি পঙ্ক্তিতে ১৩ অক্ষর, ১৩ মাত্রা এবং ১০টি স্বর রয়েছে। কবিতাটি মূলত মাত্রাক্ষরবৃত্ত ছন্দের, অর্থাৎ, এর প্রতি পঙ্ক্তিতে সম সংখ্যক মাত্রা ও অক্ষর রয়েছে। অধিকন্তু, প্রতি পঙ্ক্তিতে স্বরের সংখ্যাও সমান।
এবার মূল পঙ্ক্তির গঠন ঠিক রেখে বিশেষ শব্দ 'তুমি' সংযোজন করত প্রভাব বিস্তারকারী শব্দগুলোকে ভেঙে পরের পঙ্ক্তিতে ঠেলে দেয়া হয়েছে। যেগুলো হলো পাখি, নদী, পথে, চোখে, উড়ি এবং থাকি। পুনরায় দেখুন এর যতি/ছেদ/পর্ব বিভাজন সহ :
তুমি । আর কোনোদিন । নাম বলো নি
পাখি
তুমি । আর কোনোদিন । গান করো নি
নদী
তুমি । আর কোনোদিন । হাত ধরো নি
পথে
তুমি । আর কোনোদিন । চোখ রাখো নি
চোখে
আমরা দুজন । এক আকাশে
উড়ি
আমরা দুজন । এক ঘরেই
থাকি
প্রতি দীর্ঘ পঙ্ক্তিতে দুই মাত্রার অতিরিক্ত পর্ব, মূল ১ম পর্বে ৬ মাত্রা/অক্ষর এবং মূল ২য় পর্বে ৫ মাত্রা/অক্ষর। প্রতি ক্ষুদ্র পঙ্ক্তিতে ২ মাত্রা/অক্ষর।
***
আমার কমেন্টটা একটা বড় প্রবন্ধের মতো হয়ে গেলো দেখি
সাধারণ অর্থে ‘মাত্রা’ বলতে স্বরমাত্রা, অক্ষরমাত্রা বা মাত্রা’র মাত্রা বোঝায়- এটাও আমাদের মনে রাখা দরকার।
ছন্দের বইপত্র ঘাঁটলে আরো যে জিনিসটা চোখে ধরা পড়ে তাহলো, একই কবিতাকে কখনো অক্ষরবৃত্ত, কখনো স্বরবৃ্ত্ত, কখনো বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দের উদাহরণ হিসাবে দেখানো। তখন মনে হয়, ছন্দের জটিল আবর্তে ঢুকে মাথা খোয়ানোর কোনো দরকার নেই দরকার হলো একটা সার্থক কবিতা লিখতে পারা- যা কোনোদিন হবে কিনা, জানি না।
ভালো থাকুন ইমন ভাই, মশিউর ভাই, এবং এ কমেন্টের পাঠকগণ
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১১
এম মশিউর বলেছেন: কমেন্টটা পড়েই সত্যিই একটা সার্থক প্রবন্ধের মত মনে হল।
ছন্দ সম্পর্কে এতো কিছু জানতে পারবো পোস্ট দেওয়ার সময় ভাবি নি।
আপনি ও সোমহেপি এই পোস্টটিকে একটা মূল্যবান পোস্টে পরিণত করেছেন।
আপনাদের দুজনের যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। পোস্টটি দিয়েছিলাম মূলত ছন্দ সম্পর্কে কৌতুহল থেকে।
***
তবে আরেকটা তথ্য যোগ করি,
মাইকেল মধুসুদন দত্ত প্রথম গৎবাঁধা এই ছন্দের আবর্তের বাইরে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি পুরোনো ছন্দের বাইরে নতুন অমিত্রাক্ষর ছন্দ আবিষ্কার করেছিলেন। পূর্বে যেমন মাত্রায় মাত্রায় মিল থাকাটা জরুরি ছিল; মাইকেল সেটাকে না মেনে অমিত্রাক্ষর অর্থাৎ মাত্রায় মিল না রেখেও এক ধরণের ছন্দ পাওয়া যায়, সেইটাই দেখিয়েছেন।
আর এ জন্যই মাইকেল এতো বিখ্যাত। শুধু তাই নয়, মাত্র ৬-৭ বছরের লেখার মধ্য দিয়ে মাইকেল বাংলা সাহিত্যকে কয়েকশ বছর এগিয়ে দিয়েছেন।
>পরবর্তী কমেন্টে দেখি।
১২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
ইউনিকোডে লিখতে গেলে অটো-কপি-পেস্টের সমস্যায় পড়তে হয়, এরকম কিছু বিভ্রাট ঘটেছে উপরে। নিচের প্যারাটা এভাবে পড়তে হবেঃ
ভুলে ভরা - ছন্দ শ্রেণিকরণের সহজবোধ্য পন্থা হলো- অক্ষর গুনে অক্ষরবৃত্ত, স্বর গুনে স্বরবৃ্ত্ত এবং মাত্রা গুনে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ নির্ণয় করা। আমার উদ্ধৃত লাইনটিতে ১৯টি অক্ষর, ১৩টি স্বর এবং ১৯টি মাত্রা রয়েছে। প্রতিটা বর্ণই হলো একেকটি অক্ষর, স্বর বা মাত্রা- গণনার সহজতম উপায় হলো এটা। ‘অক্ষর’ ও ‘মাত্রা’ গণনার জন্য ৯০% ভাগ ক্ষেত্রেই এটা খাটবে, কিন্তু ‘স্বর’ গণনার ক্ষেত্রে এটা খাটবে না। ‘অক্ষর’ গণনার ব্যতিক্রম হিসাবে যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রে, যেমন ‘বিশ্বস্ত’- এখানে ৩টি অক্ষর রয়েছে, যদিও বর্ণসংখ্যা ৪ (ব-ফলা বাদ দিয়ে)। ‘মাত্রা’ গণনার ব্যতিক্রম আসবে ক্ষেত্রে ‘বিশ্বস্ত’ উচ্চারণকালে যেসব ধ্বনি মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছে, তাই মাত্রা, যেমন, এখানে উচ্চারিত ধ্বনি হলো ব, শ, স, ত, অতএব মাত্রা সংখ্যা ৪। ‘বিশ্বস্ত’ শব্দে স্বর বা সিলেবল হলো বিশ+শস্+ত=৩টি।
------
কারেক্টেড -- ছন্দ শ্রেণিকরণের সহজবোধ্য পন্থা হলো- অক্ষর গুনে অক্ষরবৃত্ত, স্বর গুনে স্বরবৃ্ত্ত এবং মাত্রা গুনে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ নির্ণয় করা। এটি কিন্তু আমার কথা নয়, কবি আবদুল কাদির তাঁর বইয়ে এরকম হিসাবের কথা বলেছেন অন্য এক গবেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে আমার উদ্ধৃত লাইনটিতে ১৯টি অক্ষর, ১৩টি স্বর এবং ১৯টি মাত্রা রয়েছে। প্রতিটা বর্ণই হলো একেকটি অক্ষর, স্বর বা মাত্রা- গণনার সহজতম উপায় হলো এটা। ‘অক্ষর’ ও ‘মাত্রা’ গণনার জন্য ৯০% ভাগ ক্ষেত্রেই এটা খাটবে, কিন্তু ‘স্বর’ গণনার ক্ষেত্রে এটা খাটবে না। ‘অক্ষর’ ও মাত্রা গণনার ব্যতিক্রম হবে যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রে, যেমন ‘বিশ্বস্ত’- এখানে ৩টি অক্ষর রয়েছে, যদিও বর্ণসংখ্যা ৪ (ব-ফলা বাদ দিয়ে)। উচ্চারণকালে যেসব ধ্বনি মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়, তাই মাত্রা, যেমন, ‘বিশ্বস্ত’ শব্দে উচ্চারিত ধ্বনি হলো ব, শ, স, ত, অতএব মাত্রা সংখ্যা ৪। ‘অক্ষর’ ও মাত্রা গণনার জন্য আরো কিছু ব্যতিক্রম থাকবে সংযুক্ত বর্ণের শব্দের শুরুতে, মধ্যস্থানে বা শেষে অবস্থানের উপর। ‘বিশ্বস্ত’ শব্দে স্বর বা সিলেবল হলো বিশ+শস্+ত=৩টি।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৯
এম মশিউর বলেছেন: দুটো একই রকম দেখতে পেলাম,
শুধু কারেক্টেডে এই টুকু যোগ করা
এটি কিন্তু আমার কথা নয়, কবি আবদুল কাদির তাঁর বইয়ে এরকম হিসাবের কথা বলেছেন অন্য এক গবেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে
আপনি মনে হয় রেফারেন্স হিসেবে আব্দুল কাদিরের নামটি দিতে ভুলে গিয়েছিলেন।
১৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৫
ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: বিশাল বিশাল উপকারী পোস্ট! এই উদ্যোগের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!
বেশ কিছুদূর পড়েছি, মন্তব্যে তুমুল আলোচনা চলছে, দাঁত ফোটানর জ্ঞান নাই বইলা গ্যালারীতে বসলাম!
আপনার ব্লগে একটা হামলা দিতে হবে, বেশ কিছু চমৎকার রসালো পোস্ট দেখছি, বিশেষ করে মঙ্গল কাব্যগুলো!
শুভকামনা!
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫
এম মশিউর বলেছেন: বাশের চেয়ে কঞ্চি বড়! পোস্টের চেয়ে মন্তব্যগুলোই অনেক মজার। মন্তব্য থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
ইফতি ভাই,
দেশে যে হারে অবরোধ হচ্ছে, আমার ব্লগে হামলা দিলে সব বিরোধী দলের অন্তর্ভুক্ত হবে!
১৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯
সোমহেপি বলেছেন: সোনা ভাই সময় হলে আবার ঢু মারব।
সিলেবল= শব্দাংশ ।এটাই কবিতার মাত্রা নিরীক্ষণে বদ্ধাংশ আর মুক্তাংশ মাত্র।
আপনার অক্ষর = স্বর হলে মনে হয় ল্যাঠা চুকে যায়্ ।
এটাই বুঝাতে চেয়েছি। আর বর্ণ= অক্ষর মানা অনুচিত। কবিতাতে প্রবোধ বাবুরা স্বরকেই অক্ষর নির্ধারণ করেছেন। এছাড়া ব্যতিক্রম ইতি উতি আছে।
এক্ষেত্রে মুক্তস্বর আর বদ্ধস্বর বলতে হবে।
আপনি শুধু অক্ষর শব্দটা ছেড়ে মুক্তস্বর আর বদ্ধস্বরে চলে আসুন।
যখন' কে বিবেচনা করলে য+খন= য =একটা অক্ষর একে মুক্তাক্ষর বলি কারণ একে টেনে যতদূর সম্ভব পড়া যায়। খন=বদ্ধাক্ষর। একে টেনে লম্বা করা যায় না।
আপনার বাবার খাবার দাবার সাবাড় করেছেন
এ লাইনটি যদি মাত্রাবৃত্ত ছন্দ গণনার রীতিতে ধরা হয় গতানুগতিক পর্ব বিভাগের ঝামেলা ছাড়া তাহলে মাত্রা সংখ্যা=১৯ টি। স্বর বা অক্ষর বা সিলেবল ।
আপ নার বা বার খা বার দা বার সা বাড় ক রে ছেন =স্বর ১৩ টি
স্বরবৃত্তে হিসাবে প্রত্যেক স্বর = ১ মাত্রা হলে ১৩ টি মাত্রা হবে।
অক্ষর বৃত্তে
শব্দের প্রথমে হলে বদ্ধস্বর ১ মাত্রা।
বদ্ধস্বর এককভাবে/ শব্দের মধ্যে/শেষে হলে=২ মাত্রা পায়।
এভাবে কিন্ত্ত
আপনার
হে/ বঙ/ গ/ ভাণ/ডা/ রে/ ত/ব বি বি ধ র তন
১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ ১ =৮ ১ ১ ১ ১ ২ =৬
=
হে | ব | ঙ্গ | ভা | ণ্ডা | রে | ত | ব ∣ বি | বি | ধ | র | ত | ন
এখানে ১৪টি অক্ষর রয়েছে, যার মধ্যে ‘ঙ্গ’(ঙ+গ) ও ‘ণ্ড’ (ণ+ড)-ও একটি করে অক্ষর।
সহজ কথায় মাত্রা হলো একেকটা বর্ণ। ‘ঙ্গ’ এক অক্ষর হলেও এখানে মাত্রা আছে দুটি, তদ্রূপ ‘ণ্ড’-তেও দুটো মাত্রা রয়েছে (ণ+ড)
ভুল হলে মুর্খতা ক্ষমা করবেন সোনা ভাই।
আপ্নার রিপ্লাই পুরোটা ভালো করে পড়ি নি। শুক্রবার /শনিবার হলে কথা ছিলো।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৪
এম মশিউর বলেছেন: সোমহেপি (ইমন ভাই),
আপনাদের মন্তব্যে আরো ইন্ধন যোগাতে চাই, আরো কিছু তথ্য জানতে চাই।
শুধু ছন্দ নয়, অলংকার ও রস সম্পর্কেও যদি আপনারা কিছু বলতেন, তবে উপকৃত হতাম।
অলংকার ও রস সম্পর্কে আপনার মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
১৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ইমন ভাই,
আমি আর আপনি একই কথা বলছি কিন্তু
শুধু পার্থক্য হলো আমি সিলেবলকে বলছি স্বর, আপনি বলছেন অক্ষর। সিলেবলকে ‘অক্ষর’ বলা আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন। কবি আবদুল কাদির, নরেন বিশ্বাস এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ (নামটা ভুল হলো কিনা)-এর ছন্দ বিষয়ক ৪-৫টা বই এবং এতদ্সংক্রান্ত আলোচনার সর্বত্রই আমি সিলেবলকে ‘স্বর’ হিসাবে পেয়েছি; এঁরা রবীন্দ্রনাথ, মোহিতলাল মজুমদার প্রমুখ প্রসিদ্ধ কবি ও ছন্দবিশেষজ্ঞদের মতামতসমেত এটাই বলেছেন।
আর ছন্দের মাত্রা বুঝবার সহজতম উপায়টা বলেছি মাত্র- শব্দস্থিত বর্ণকে ‘ইউনিট’ ধরে অক্ষর ও মাত্রা গুনলে ৯০% ভাগ ক্ষেত্রেই ল্যাঠা চুকে যায়, এরপর ব্যতিক্রমগুলোর জন্য বদ্ধস্বর, মুক্তস্বর, যুক্তাক্ষর সংক্রান্ত নিয়মগুলো বুঝলেই চলে।
কমেন্ট বড় হলে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে পাঠকের, কাজেই এখানে শেষ করছি
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯
এম মশিউর বলেছেন: প্রিয় সোনাবীজ ভাই,
আপনার কাছে আরো একটা বিষয়ে ধারণা পেতে চাই,
অলংকার ও রস বিষয়টা আমার কাছে তেমন পরিষ্কার নয়। এই বিষয়ে যদি একটা পোস্ট দিতেন অথবা এখানে বিষয়টা সংক্ষেপে জানাতেন; তবে খুব উপকৃত হতাম।
আশাকরি অনুরোধ টা রাখবেন।
১৬| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৭
সোমহেপি বলেছেন: অক্ষর বৃত্তে
শব্দের প্রথমে হলে বদ্ধস্বর ১ মাত্রা।
বদ্ধস্বর এককভাবে/ শব্দের মধ্যে/শেষে হলে=২ মাত্রা পায়।
এখানে একটু মিসটেক আছে।আসলে-
অক্ষর বৃত্তে
শব্দের প্রথমে ও মাঝে হলে বদ্ধস্বর ১ মাত্রা।
বদ্ধস্বর এককভাবে/ শব্দেরশেষে হলে=২ মাত্রা পায়।
৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৯
এম মশিউর বলেছেন: হুম, বুঝলাম।
ধন্যবাদ ভাই।
১৭| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০১
আদনান শাহ্িরয়ার বলেছেন: এই কারনেই কবি হওয়া হবে না আমার । না আমি ছন্দ বুঝি না আমি ছন্দ করতে পারি ।
আমার একটা কবিতা ( আমি বলি শব্দের জোড়াতালি ) দিলাম আপনাকে । পড়ে বলবেন এটা কি কবিতার নিয়মের মধ্যে পড়ে কিনা !
পোস্ট নিয়ে মন্তব্য করার সাহস নেই । শুধু শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম!
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮
এম মশিউর বলেছেন: আপনার কবিতাটি পড়লাম।
কোন বাধাধরা নিয়মের মধ্যে না থেকে কবিতা লিখে যান। নিয়ম নয়, আগে কবিতা এসেছে; পরে সেখান থেকে নিয়মের জন্ম হয়েছে।
আপনার কবিতাটি অনেকটা গদ্য ছন্দে রচিত। ভাষার ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
কবির প্রতি শ্রদ্ধা রইল। ভালো থাকবেন সব সময়।
১৮| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৮
শুঁটকি মাছ বলেছেন: এ দেখি পড়ালেখা!!!!!!!
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০০
এম মশিউর বলেছেন: হুম, জানার কোন শেষ নেই।
কবিতা___ লিখতে হলে, জানতে হবে!
১৯| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:০৭
সানড্যান্স বলেছেন: হ্যাটস অফ ভাই!! অসাধারন কাজ দেখিয়েছেন!!
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৮
এম মশিউর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৯
মামুন রশিদ বলেছেন: অসাধারণ কাজ করেছেন মশিউর ।
চমৎকার পোস্টে ভালোলাগা++