![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্টালিন সরকারের লেখাটি ভাল লাগলো তাই ব্লগের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলামঃ
ছেলেবেলায় গ্রামে মহররম মাসে পুঁথিপাঠ শুনেছি ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিলো’। ঘোড়ার পিঠে উঠে মানুষ কেমন করে পায়ে হেঁটে চলে! পুঁথির এই পংক্তির সেই রহস্য বুঝিনি; বোঝার চেষ্টাও করিনি। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির যুগে রাজধানী ঢাকার মানুষের চলাফেরা দেখে মনে হচ্ছে ছোটবেলায় শোনা পুঁথিবিদ্যা চোখের সামনে বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই উপলব্ধি করছি সত্যিই প্রাণী ঘোড়া না হলেও যান্ত্রিক যান ব্যবহার করেও মানুষকে পায়ে হেঁটে পথ চলতে হচ্ছে। কর্মস্থলে যেতে বাস-কার ছেড়ে পায়ে হাঁটতে হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় নিত্যদিন যে যানজট তাতে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রাইভেটকার, সিএনজি, বাসের চেয়ে পায়ে হেঁটে আগে যাওয়া যায়। মগবাজার মোড়, মালিবাগ মোড়, কাকরাইল, পল্টন, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল, মিরপুর রোড, মহাখালী বাসটার্মিনাল, জাহাঙ্গীর গেইট বংশাল রোড, যাত্রাবাড়ী সর্বত্রই যানজট। আগে বিকালে যানজট হতো; এখন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত একই অবস্থা। যেদিকে যাবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাধ্য হয়েই মানুষ পায়ে হেঁটেই চলাফেরা করছে। রাজধানী ঢাকা এখন কার্যত পায়ে হাঁটা পথে পরিণত হয়েছে। এক ঘণ্টায় পায়ে হেঁটে যত পথ অতিক্রম করা যায়, বাসে ও সিএনজিতে সে পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন রুটে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। ঢাকায় যারা বসবাস করেন তারা দেশের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী মানুষ। এই সুবিধাভোগীদের দুর্দশার অন্ত নেই। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা থেকে যে পরিমাণ জ্বালানী তেল খরচ হয়, কর্মজীবী মানুষের যে পরিমাণ শ্রমঘণ্টা বিনষ্ট হয় তার আর্থিক ক্ষতির হিসাব বিপুল। মাঝে মাঝেই সংবাদপত্রে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা এই ক্ষতির হিসেব তুলে ধরেন। এ হিসেব কয়েক হাজার কোটি টাকার নিচে নয়। ঢাকায় প্রতিদিন যানজটে আটকে থাকা গাড়ির তেল অপচয়ের অর্থ দিয়ে তৈরি করা যাবে অনেক সেতু-ব্রিজ-কালভাট। বহুদিন ধরে শোনা পাতাল রেল, উড়াল সেতু, মনোরেল, টানেল ইত্যাদি বানানো হবে। কিন্তু কয়েকটি উড়াল সেতু ছাড়া উন্নয়নের কোনো চিহ্ন মানুষ দেখছে না। কেবল বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যায়, একদিন অভিমান করে ‘পরি’ উড়ে চলে যায়, পড়ে থাকে ‘কল্পনা’। ঢাকার এই যানজট সমস্যা আজকের নয়, একদিনে সৃষ্টিও হয়নি। আমাদের নগরবিদরা, ব্যাস্টিক অর্থনীতির পরিকল্পনাকারীরা কী করছেন?সোমবার সকাল ১১টা। পল্টনের বেসরকারি একটি অফিসের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ও জাহিদ অফিসের কাজে রাজধানীর গুলশান গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার ফিরছিলেন পল্টন। গুলশানে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর সিএনজি পাননি। অতঃপর জোর-জবরদস্তি করে একটি বাসে উঠেন। না বেশিদূর যেতে পারেননি। চেয়ারম্যান বাড়িতে এসেই যানজটে পড়েন। অগত্যা বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটেই মহাখালী আসেন। আবার বাসে উঠলেন দু’জনেই। কিন্তু দু-এক মিনিট যাওয়ার পর থমকে দাঁড়াল বাস। মহাখালী থেকে বিজয় সারণি পার হতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যায়। রাস্তায় থমকে আছে শত শত বাস-প্রাইভেটকার। যেদিকে চোখ যায় শুধু গাড়ি আর গাড়ি। অফিস থেকে বড়কর্তা ফোন করেছেন দ্রুত আসার জন্য। অথচ গাড়ি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। রাগে-ক্ষোভে বিরক্ত হয়ে নেমে পড়লেন দু’জনেই। পায়ে হেঁটে ফার্মগেট পৌঁছেন। ফার্মগেইটে বাসে উঠে কয়েক গজ এগিয়ে আসার পর কারওয়ানবাজারে এসে যানজটে পড়েন। বাস থেকে নেমে একজন পায়ে হেঁটে পল্টন আসার সিদ্ধান্ত নেন। অপরজনের শরীর একটু খারাপ থাকায় বাধ্য হয়েই বাসে বসে ঝিমুতে থাকেন। কারওয়ান বাজার, এফডিসি, মগবাজার মোড়, মিন্টু রোড, বেইলি রোড, শান্তিনগর, কাকরাইল হয়ে সোজা মতিঝিলে পৌঁছতে সময় লাগল সোয়া এক ঘণ্টা। কিন্তু অসুস্থ সহকর্মী বাসে দীর্ঘ যানজট ঠেলে শাহবাগ হয়ে পল্টনে পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়।রাজধানীতে যানজটের এই চিত্র নতুন নয়; কয়েক মাস থেকে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। মাঝেমধ্যে ট্রাফিক জ্যাম এমন অবস্থায় দাঁড়ায় যে, রাস্তায় দীর্ঘসময় রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকে পড়ে করুণ সুরে সাইরেন বাজালেও কিছুই করার থাকে না। অথচ অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনে মানবিক কারণে জায়গা করে দিতেন পথচারী, বাসের ড্রাইভার বা ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা করে থাকেন। এখন মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর রোগীর জন্য মায়া হলেও কিছুই করার থাকে না। যানজট নামক এই মহাঅশান্তির কারণে অনেকে রাজধানীকে বসবাসের অনুপযোগী হিসেবে সার্টিফিকেট দেন। কয়েক মাস আগে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে ভোট নামের প্রহসন হলেও মেয়র প্রার্থীরা যানজট নিরসনের হাজারো প্রতিশ্রুতি দেয়। অথচ এখন দুই মেয়রের কারো দেখা নেই যানজটে নিরসনে। ঢাকায় যানজট নতুন কোনো সমস্যা নয়। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ না করায় সবাই ঢাকামুখী হন। প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষকের সামান্য কাজের জন্যে পঞ্চগড়-কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসতে হয়। দেড়-দুই কোটি মানুষের নগরী এই ঢাকাতে যানজট প্রতিদিনের চিরচেনা ঘটনা। পথে বের হলেই ভোগান্তি হবে এ প্রস্তুতি নিয়েই ঘর থেকে বের হতে হয়। যানজট নিরসনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা প্রচার করা হয়। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। যানজট নিরসনের দোহাই দিয়ে কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান ফ্লাইওভার এমনভাবে করা হয়েছে যে নিচ দিয়ে একটির বেশি গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না। আর এ রাস্তার যা অবস্থা! ফলে ফ্লাইওভারের সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। ফ্লাইওভারের গোড়ায় বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানোর কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এক সহকর্মী জানালেন, গতকাল দুপুরে মিরপুর থেকে বাসে করে মতিঝিল এসেছেন। একইসঙ্গে তার ছোট ভাই মোটরসাইকেলে করে রওয়ানা দিয়েছেন নেত্রকোনা। যে সময়ে তিনি (সহকর্মী) মতিঝিল পৌঁছেন তার আধা ঘণ্টা আগে ছোটভাই ভালুকা পৌঁছে যান। আরেকজন জানান, শনির আখড়া থেকে একই সময়ে দুইভাইয়ের একজন চাঁদপুর আর অন্যজন শাহবাগ রওয়ানা দেন। এক ভাইয়ের শাহবাগ পৌঁছিতে যে সময় লাগে অপর ভাই সে সময়ের মধ্যে কুমিল্লা ছাড়িয়ে যান। কলকাতা থেকে বিমানে কেউ ঢাকায় আসলে তার সময় লাগবে দুই ঘণ্টা, অথচ ঢাকার মতিঝিল থেকে বিমানবন্দরে বাসে যেতে তিন ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যায়। নবাবপুর থেকে কেউ যদি বিমানবন্দর রওনা করে তাহলে তার আগে সিঙ্গাপুর থেকে রওনা দিয়ে ঢাকার বিমানবন্দরে পৌঁছে যাবে। এই হলো রাজধানীর অবস্থা। সুবিধাভোগী আমরা ঢাকায় থাকি! ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন উঠে গেছে অনেক আগেই। ঘোড়ার গাড়ির যায়গা দখল করেছে যন্ত্রে টানা গাড়ি। যন্ত্রচালিত বাস-ট্রাকের গতি অতীতে ঘোড়াদের লজ্জিত করত। এখন রাজধানী ঢাকায় চলছে উল্টো স্্েরাত। এখন যন্ত্রচালিত গাড়িতে চড়েও ঢাকার নগরবাসীকে হেঁটেই যেতে হয়। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি-বাসের ভেতর বসে থাকতে হয়। সিগনাল বাতি একবার লাল হলে সবুজ হতে ভুলে যায়। ট্রাফিক পুলিশ অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। গতকাল দুপুরে দেখা গেল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোনালী ব্যাংকে এসেছেন। ৮-১০টি পিক-আপ গাড়িতে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য সঙ্গে এসেছেন। আশপাশে যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন তারাও ছুটে যাচ্ছেন শাপলা চত্বরের দিকে। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পাহারা দিতে এতগুলো জনবল ব্যস্ত; অথচ ট্রাফিকের লোকবলের অভাবে শহরের অনেক এলাকায় যানজট ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকে। রাজধানী ঢাকা শহরে দেখার কেউ নেই; নাগরিকের কষ্ট শোনার কেউ নেই। যানজটে নাকাল নগরবাসী যেন সেই ছোটবেলার পুঁথিপাঠের পংক্তি ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাটিয়া চলিলো’ অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। সুত্রঃ http://www.dailyinqilab.com/details/23517/
Copyright Daily Inqilab
০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮
মোস্তাক_আহম্মদ বলেছেন: ঘোড়া তো বোরাক নয় যে উড়িয়া চলিবে- ইহা বুঝিলাম। কিন্তু পড়ের অংশতো মাথার উপর দিয়া চলিয়া গেল
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:২৯
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিলো’।
ঘোরায় চড়ার পরতো ঘোড়া হাঁটিয়াই চলা আরম্ভ করে নাকি ঘোড়া বোড়াক'এর মতো উড়িয়া চলে?
তাই ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিলো’। ঠিক আছে!!