![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকাল থেকেই হাবলুর মাঝে খুব উত্তেজনা। আজ তার আনেক দিন পর স্কুল জীবনের বন্ধুদের সাথে সাক্ষাত হবে! মিলিত হবার স্হান ঢাকার আদূর কোন এক মনোরম অবকাশ কেন্দ্রে। হাবলু ও তার এক ধনী বন্ধু “নীরব” একসাথে অবকাশ কেন্দ্র যাবার কথা ঠিক হয়ে আছে। সকাল দশটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত হাবলু বাসার সামনে পায়চারী করছে কিন্তু ধনী বন্ধুর কাঙ্খিত ফোন আসে না! হটাৎ মোবাইলের শব্দ সে আসান্বিত হয়, নিশ্চয় এটি সেই কাঙ্খিত ফোন, কিন্তু না। এটা হাবলুর আর এক সফল বন্ধু ইসাসীনের ফোন। সে জানালো তুই প্রস্তুত থাক- নীরব তোকে নিয়ে রত্তনা হবে, আর আমি অবকাশ কেন্দ্রের পথে রওনা হলাম, রাতে দখা হবে। সে আরও ঘন্টা দুই নীরবের ফোনের আপেক্ষায় থেকে ঘরে ফেরে, এই ভেবে- নীরব ধনী ও ব্যস্ত নিশ্চয় কোন কাজে ফেঁসে গেছে যাবার পূর্বে আবশ্যই ফোন দিয়ে ডেকে নিবে। যেহেতু নীরবের ব্যাক্তিগত গাড়িতে যাওয়া হবে, দেরি হলেও সমস্যা নেই।
হাবলু বন্ধুর মিলন মেলা উপলক্ষে একটু বিলাসীতা করে ফেলেছে- দমী একটা খাঁদী পাঙ্জাবী, একটা নীল জিন্স ও লোটোর চটি সেন্ডল কিনেছে। পোষাক গুলো গায়ে চাপিয় বার বার আয়নার সামনে নিজেকে দেখেছে। সে নিজেকে মনে প্রানে কবি ভাবতে ভালোবাসে। তার সব কিছুই নতুন, শুধু লম্বা চুল ও খোঁচা খোঁচা দাড়ি ছারা। পকেটে দশটা পঁচশত টাকার নোট। আনেক দিন পর স্কুল বন্ধুদের সাথে দেখা হবে পকেটে টাকা না থকলে কেমন হয়?
কবিরা আপেক্ষা ঘৄণা করে। তবুও হাবলু বুঝতে পারছেনা এ আপেক্ষার পালা কখন শেষ হবে? সে গোছানো ব্যাগ রেখে, বাসা থেকে বেড় হতেই হীরো আলমের সাথে সাক্ষাৎ। হীরো আলমের নতুন রেসিং বাইক, হাবলু পাশে ব্রেক কষলো। হীরো আলম তাকে দেখে বলে- আপনে এখনও যান নই! হাবলুর সরল উওর ফোন আসলেই যাব। হীরো আলম বলে কবি ভাই নতুন রেসিং বাইক, চলেন আপনারে লইলা মহাস্হান ঘুরা আসি। আপনার বন্ধু ফোন দিলে বিশ মিনিটের মধ্যে পৌছা দিতে না পারলে আভিনয়ই ছাইড়া দিমু। হাবলু অনিচ্ছা সত্বেও বাইকের পিছনে সাওয়ার হয়ে মহাস্হানের উদ্দেশ্য রওনা হয়। মোবাইলটা পকেটে না রেখে হাতে নেয় এই আতঙ্কে - মোবাইলটা পকেটে থাকলে হয়তো বাইকের শব্দে নিরব ফোন করলে জানাও হবে না।
মহাস্হান গড়ে রাত দশটা পর্যন্ত বসে হাবলু নিরবের ফোনের আপেক্ষায় আর হীরো আলম ব্যাস্ত তার ভক্তদের সাথে ফোনালাপে। এমন সময় কলসী নিয়ে এক বৃদ্ধ হাজির হয়ে নীম্ন স্বরে হাবলুকে উদ্দেশ্য করে বলে –ভাই খাঁটি তালের রস। হাবলু তিন গ্লাস সাবার করে চোখে ঝাপসা দেখতে থাকে। সে আছে মহাস্হানে মন ছুটে গেছে বন্ধুদের আড্ডয়।
হীরো আলম ফোনালাপ শেষ করে হাবলুর পাশে বসে হাঁসতে হাঁসতে বলে- কবি ভাই আপনার বন্ধুর ফোনের আশা বাদ দেন, সে আপনারে ফোনেই দিব না, আপনারে ছাড়াই গেছেগা! আপনে যারে বন্ধু ভাবেন তার হয়তো- আপনার কথা চিন্তা করার সময়ই নাই। তাগো কবি নয়, দরকার টাকাওয়ালা ও ক্ষমতাবান বন্ধু। হাবলু টল টল পায়ে বাইকের পেছনে ওঠে।
পরদিন হাবলু জানতে পারে নীরব তাকে ফোন না দিয়েই অবকাশ কেন্দ্র চলে গেঝে।বন্ধুরা খুব আনন্দ করেছে। হাবলুর অনুপস্হিতি কোন শূন্যতাই সৃষ্টি করতে পারেনি। শত শত আনন্দের ছবিতে সামাজীক মাধ্যম আলোকিত।
সে বুঝতে পারে সমাজে সৃষ্টিশীল মানুষের প্রয়োজন এখন শূন্যের কোঠায়। বন্ধুত্ব বলে কিছু নেই। পুঁজী পতীদের হিংস্র থাবায় বন্ধুত্ব ক্ষত বিক্ষত, সকল প্রতিজ্ঞা অর্থ হীন।
©somewhere in net ltd.