নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর বুকে ছাঁপ রেখে যেতে চাই।

মোস্তারিক

পৃথিবীটা হোক কাব্যময়।

মোস্তারিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিক্ষুক কবি

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১২

ভেলু বুঝতে পারছে না তার আজ দিনটা কেমন যাবে? সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে তিন বার টয়লেট যেতে হয়েছে। ওরস্যালাইনের প্যাকেট খুঁজে না পাওয়ায় সে এক চিমটি লবন এক মুঠো চিনি মিশিয়ে (ঘুটা পদ্ধতিতে) স্যালাইন তৈরি করচ্ছে আর চিন্তা করছে – জীবনে সব স্যালাইন নিজেকেই ঘুটে খেতে হল! কোন সুন্দরী নারী কাঁচের চুড়ি হাতে তার জন্য স্যালাইন বানালো না। সে হিসাব করে মিলানোর চেষ্টা করে ৩৮ বছরে কতবার ডাইরিয়ায় আকরান্ত হয়েছ? নিজ হাতে তৈরি এক গ্লাস বিস্বাদ ওরস্যালাইন পান করে, বিছানায় শুয়ে খবরের কাগজ "দৈনিক উল্টা আলোত" মনযোগি হয়।

ভেলু আভ্যাস বসতো খবরের কাগজে প্রথমে রাশি ফলের দিকে নজর দেয়, তার রাশি কন্যা। কন্যা রাশির আজকের গননা – "শরীরের প্রতি য়ত্ন নিন। প্রিয় মানুষের সাথে দখা হবে এবং অর্থ যোগ আছে।" প্রথম ও শেষ ব্যপারটা বিশ্বাস করা যেতে পারে কিন্তু প্রিয় মানুষের সাথে দখা ? সেটা কি ভাবে সম্ভব? সেতো এখনও ব্যাচেলর। প্রেম বা বিয়ে কোনটাই ঘটেনি।

আর এক পর্ব ওরস্যালাইন পান করে ভেলু লম্বা ঘুমের প্রস্তুতি হিসাবে ঘর আন্ধকার করে বিছানায় শুয়ে পরে। গান শুনতে শুনতে ঘুমানো তার অভ্যাস। নতুন কেনা ৫৬ ইঞ্চি ওয়াইফাই অ্যান্ড্রয়েট টিভি চালু করার লক্ষে মাথার বালিসের পাসে হাত দিয়ে বুঝতে পারে রিমোট সঠিক জায়গায় নাই। এই বস্তুটি হারানো নতুন কিছু নয়। সে বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালায় এবং সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে রিমোট পায়না। ভেলু নিশ্চিত রিমোট আশে পাশেই আছে। সে আঙ্গুল দিয়ে ২০ মিনিট নানা বোতামে চেপে ইউটিউবে কাঙ্খিত "জয় গোস্বামীর" লেখা “বেনি মাধব” গানটি চালু করতে ঘেম একাকার। এই শরীরে বিছানায় যাওয়া অসম্ভব বিধায় গোসলের নিমিত্তে টয়লেটে প্রবেশ করে দেখতে পায় বেসিনের উপর টিভি রিমোট! ভেলু বুঝতে পারে পুরুষের জন্য নারী কতটা প্রয়োজনীয়! যতটা টিভির সাথে রিমোট কন্টোরল।গোসলের পর ভেলু আন্ধকার ঘরে শুয় চোখ বন্ধ করে গান শুনছে –

বেণীমাধব, বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাব
বেণীমাধব তুমি কি আর আমার কথা ভাব?


বাসর রাত ভেলু বরের সাজে! সামনের বিছানায় ঘমটা দেওয়া এক কনে! সারা ঘর তাজা ফুলে সাজানো। কিন্তু ভেলু ফুলের কোন গন্ধ পচ্ছে না! তার মেয়েটার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে। কোন বাক্যই খুঁজে পাচ্ছে না কি ভাবে শুরু করবে? আনেক সাহস সঞ্চার করে বলেই ফেলে "তুমি কি সারা জীবন আমার পাশে থাকবে"? কিন্ত তার গলা দিয়ে বেরিয়ে গেল আন্য বাক্য – পেট ব্যাথা করছে? বলেই ভেলু বেকুব! এ কথা কানে যেতেই কনে বিছানা ছেড়ে ব্যাস্ত হাতে ঘুটা পদ্ধতিতে স্যালাইন বানাতে শুরু করে। যখন সে ঘুটা দিচ্ছে তার হাত ভরা কাঁচের চুড়ি রিম-ঝিম, রিম-ঝিম শব্দ করছে। ভেলু সকল সংকচ ত্যগ করে পেছন থেকে কনের ঘারে হাত রাখে। কনে চমকে উঠে ভেলুর চোখে চোখ রাখতেই ভেলু দেখে এতো নীলা! সে পরম আদরে নীলাকে বুকে জড়িযে ধরে। এসময় ভেলুর মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। সে ফোনটা ধরার জন্য পকেটে হাত দিতেই পিঠে ব্যথা আনুভত করে। চোখ খুলে সে নিজেকে আবিষ্কার করে শক্ত মেঝেত! আসলে সে এতক্ষন স্বপ্ন দেখেছে! স্বপ্নের কথা ভেবে ভেলু লজ্জায় লাল। কিন্তু তার মোবাইল ঠিকই বেজে চলছে।

ভেলু ফোন হাতে নিয়ে দেখে আচেনা নম্বর, রিছিভ করেতেই আপর প্রান্ত থকে দুটি বাক্য যেন ঝড়ের মত ভেসে এল ১ম টি বাসায় থাক, ২য় টি আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি। ফোন দিয়েছে ভেলুর সবচেয়ে বউন্ডলে কর্ম হীন বন্ধু হাবলু। জীবনে একটাই লক্ষ কবি হওয়া। প্রতিদিন একটা করে কবিতা ফেবুতে পোষ্ট দেয়। দু এক জন ছাড়া বন্ধু বান্ধব কেহই লাইক বা কমেন্ট করে না। তবে কিছু ব্যাঙ্গাত্যক কমেন্টস্ আসে। এ নিয়ে হাবলু কোন আক্ষেপ নেই। বন্ধুরা তাকে আড্ডয় ভিক্ষারি কবি বলে উপহাস করে।

হাবলুর সাথে বন্ধুদের কালে ভদ্রে দখা হয়। ভেলুর স্কুল বন্ধুরা মাসে ১বার হলেও একএ হয়ে ম্যারাথন আড্ডা দেয়, শুধু হাবলু ছাড়া। সে অকারনে সারা দেশ একা একা ঘুরে বেড়ায়। তাকে জিজ্ঞাস করলে সংক্ষেপে উত্তর দেয় কবিতা লিখতে শুরু কর নিজেই উওর পাবি।

ভেলু হাবলুর জন্য আপেক্ষা করে আর সময় কাটানোর জন্য ফেবুতে প্রবেশ করে তার বন্ধুদের গ্রুপ পেজে যায়। একটা নতুন পোষ্ট দেখে মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করে। হাজার সেলফির ফাঁকে লেখা একটা পোষ্ট বিরল। পোষ্ট করেছে ডাঃ টাওর, বন্ধুদের মাঝে যার ভাষা সবচয়ে অশ্লিল। পেশায় ডাক্তার হলেও অশ্লিল শব্দ প্রয়োগকে সে একটা আনন্য মাত্রা দিতে সক্ষম হয়েছে। রাস্তার হিজরারাও ডাঃ টাওর এর অশ্লিল বাক্য বান শুনেও নিশ্চিত লজ্জা পাবে।

পোষ্টটা তাকে অর্থাৎ ভেলুকে নিয়েই লেখা! লেখাটার সার সংক্ষেপ - "ভেলুর বিবাহ হয়নি বিধায় পুরুষ অঙ্গ কোন কাজে লাগছে না! তাই তার পুরুষ অঙ্গ কোন বৃদ্ধ ব্যাক্তিকে দান করা হক, বাকি জীবন বৃদ্ধ যেন যৌবনের স্বাদ উপভোগ করতে পারে আর ডাঃ টাওর পৃথিবীতে প্রথম পুরুষ অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্ট করে বিখ্যাত সার্জন হবে।"

লেখা পড়ে ভেলু স্তম্ভিত হয়ে গেল! বিয়ে হয়নি বলে তাকে নিয়ে এমন উপহাস করা হচ্ছে? আর এই লেখার নিচে আনেক কমেন্টস্, সব গুলো কমেন্টস্ই আরও ভয়াবহ। ব্যাপোরটা এমন যে, ভেলুর অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্ট ও ডাঃ টাওর এর বিখ্যাত সার্জন হওয়া সময়ের বেপার মাএ। ভাবতে খুব কষ্ট হয় এই বন্ধুদের সে নিজের জীবনের মতই ভালবাসে। উল্লেক্ষ কোন বন্ধু ভেলুর বিয়ের সামান্য তম চেষ্টা টুকুও করেনি। ভেবে আজান্তে দুচোখে কান্নার বান ডাকে।

কলিং বেলের শব্দে ভেলু চোখ মুছে দরজা খুলে হাবলুকে ঘরে আনে। ভেলু হাবলুকে প্রথম যে বাক্য উচ্চারন করে তা - ফেবুতে ঢুকেছিলি? হাবলুর উওর - না। সে হাবলুকে লেখাটা দেখাল। হাবলু পড়ে কোন রকম হাসি আটকায়। ভেলু হাবলুকে আভিযোগের স্বরে বলে টাওরর গায়ের রং মহিষের মত কালো। আমি তো কোন দিন ওকে কলো বানর বলেছি। হাবলু মনোযোগ সহকারে ভেলু কথা শোনে।

কয়েক মিনিট পর হাবলু নিরবতা ভঙ্গ করে সরাসরি বলে ২০০০ টাকা দে সমুদ্র দেখতে যাব। ভেলু আমতা আমতা করে বলে - তোর কছে আগের ৮০০০ পাব। আবার টকা ধার চাচ্ছিস? হাবলু হুঙ্কার দিয়ে বলে ৮০০০ পাবি আরও ২০০০ দে মোট ১০০০০ হবে। তোর বউ বাচ্চা নেই তোর টাকার কি দরকার? আমাকে ২০০০ দিলে কাল সমুদ্রে পাশে একটা মহান কবিতা রচিত হতে পারে।

টাকা খরচ করে যখন লিচু খেতে যখন দিনাজপুর যাস, তখন টাকার ময়া হয়না? ভেলু আর কথা না বাড়িয়ে হাবলুর হাতে ২০০০ টাকা দয়। হাবলু টাকাটা এমন ভাবে পকেটে রাখে যেন টাকাটা তার প্রাপ্য। ভেলু সহস করে বলে টাকা কবে ফেরত দিবি? হাবলুর চোখ বন্ধ করে পদ্মা আসনে বসে উওর দেয়।আমার প্রথম কবিতার বই তোকে উৎসর্গ করবো। ভেলু আর এই নিয়ে কথা না বাড়িয়ে ডাঃ টাওরকে গালাগাল শুরু করে। ফেবুতে এমন পোষ্ট টাওর কিভাবে দিতে পারল? এই গ্রুপে আরও দুই তিন জন এখনও অবিবাহিত আছে। সরাসরি তার নাম কেন?

হাবলু চোখ না খুলে জবাব দেয় ঐ হাতুরে ডাক্তারের লেখায় তুই মন খারাপ করিস না। ওর চিকিৎসা বিদ্যার প্রথমিক জ্ঞান সামন্য। ভেলু আবাক চোখে জানতে চায় কেন? হাবলুর যুক্তি- টাওর কি ভাবে তোর পুরুষাঙ্গ বিনা পরিক্ষায় দান করতে চায়? ধর অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্টের পর দেখা গেল বৃদ্ধার আর উত্থলিত হচ্ছে না। পরে বৃদ্ধা ক্ষতি পুরনের মামলা করলে বিপদ হতে পারে। আমার মনে হয় যে কোন বিশেষ আঙ্গ ট্রান্সপ্লান্টের পূর্বে ডোনারের ধযভঙ্গ আছে কি না পরীক্ষা করা দরকার। তুই পারলে ডাঃ টাওর এর নার্সদের কাছে পরিক্ষা করাতে পারিস।

মনে রাখবি টাওর তার শরীরের যে অঙ্গ ব্যবহার করে সে মনের ভাব প্রকাশ করে তার নাম মুখ না ঐ অঙ্গের নাম "ভগমতির গুহ্বদ্বার"। ভেলু আরো আবাক হয়ে বলে "ভগমতির গুহ্বদ্বার" কি? হাবলু বলে ভগমতির হল মূঘল আমলের এক কুৎসিত নোংরা হিজরার নাম।

হাবলু পদ্মাসন থেকে উঠে ভেলুর কাঁধ চাপড়িয়ে বলে - কোন সময় তুই যদি টাকা পয়সা ট্রান্সপ্লান্ট করতে চাস আমাকে খবর করিস। কবিরা তোকে যুগে যুগে স্মরন করবে। সকল অর্থ কবিতার কল্যানে ব্যয় হবে। এই বলে হাবলু কোন উওরের আপেক্ষা না করে উল্কার মত বিদায় নেয়। তাকে সমুদ্র ডাকছে।

ভেলু বুঝতে পারলনা ভিক্ষুক কবি তাকে সান্তনা দিল না উপহাস করলো? কবিরা বড়ই রহস্যময়!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.