নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“Those who have the privilege to know have the duty to act.”― Albert Einstein

মোস্তফা কামাল পলাশ

"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"

মোস্তফা কামাল পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব ৬ (আবহাওয়া পূর্বাভাষ ও গবেষণার সাথে সম্পর্কিত যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত হওয়া: যন্ত্রের নাম আরগো ফ্লোট (Argo floats))

০৯ ই জুন, ২০২১ রাত ২:০১



৮ ই জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবস তাই "মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা" সিরিজের আজকের পর্বে সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণায় ও সমুদ্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের অন্যতম প্রধান একটি যন্ত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই সবাইকে।



সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক, ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলো পরিমাপ করা হয় আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক একটি যন্ত্রের মাধ্যমে। আরগো ফ্লোট (Argo floats) যন্ত্রটা কাজ করে কিছুটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমি এর মতো। নীল তিমি যেমন বেশিভাগ সময় সমুদ্রের পানির নিচে অবস্থান করে ও নির্দিষ্ট সময় পর পর সমুদ্র পৃষ্ঠে উঠে নিঃশ্বাস ছাড়ে যে সময় তিমি মাছের শরীরের উপরিভাগে অবস্থিত নাক দিয়ে পানি উপরের দিকে নির্গত হয় ঠিক তেমনি করে আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি বেশিভাগ সময় পানির নিচে অবস্থান করে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে নিচের দিকে বিভিন্ন গভীরতায় পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক পরিমাপ করে ও ক্ষেত্র ভেদে ১ থেকে ১০ দিন পর-পর পানির উপরে ভেসে উঠে সংগৃহীত তথ্য বিভিন্ন কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আরগো ফ্লোট (Argo floats) থেকে সংগৃহীত তথ্য সেই কৃত্রিম উপগ্রহগুলো পরবর্তীতে ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত কৃত্রীম ভূ-উপগ্রহের তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্রে (গ্রাউন্ড স্টেশন নামে পরিচিত) পাঠিয়ে দেয়।



প্রত্যেকটি আরগো ফ্লোট (Argo floats) এ একটি করে জিপিএস থাকে যার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় আরগো ফ্লোট (Argo floats) টি কোন দিক থেকে কোন দিকে যাচ্ছে ও সমুদ্রের কোন স্থানের পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক পরিমাপ করতেছে। আমরা মোবাইল দিয়ে দূরবর্তী কাউকে ফোন দিলে প্রথমে সিগনালটি আমাদের নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারে যায়। এর পরে আমাদের নকটবর্তী টাওয়ার থেকে যে ব্যক্তিকে ফোন করছি তার স্থানের মোবাইল টাওয়ারে যায় ও সর্বশেষে ঐ টাওয়ার থেকে সিগনালটো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে যায়। উপরে বর্ণিত আরগো ফ্লোট (Argo floats) যন্ত্রটিও প্রায় একই ভাবে সিগনাল আদান-প্রদান করে। তবে মোবাইলের সাথে একটি পার্থক্য আছে। মোবাইল দিয়ে তথ্য পাঠানো ও গ্রহণ করা যায়; পক্ষান্তরে আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি শুধুমাত্র তথ্য প্রেরণ করতে পারে (তথ্য গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় না)।



বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রে প্রায় ৪ হাজার আরগো ফ্লোট (Argo floats) সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক পরিমাপ করতেছে। এই ৪০০০ আরগো ফ্লোট (Argo floats) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমুদ্রে ছেড়েছে। আমাদের পাশের দেশ ভারত ১২৪ টি আরগো ফ্লোট (Argo floats) ছেড়েছে সমুদ্রে। অবাক হই নাই যে আমাদের বাংলাদেশের নিজের এত বড় সমুদ্র এলাকা থাকার পরেও ১ টিও আরগো ফ্লোট (Argo floats) যন্ত্র ছাড়ে নাই সমুদ্রে। নিচে সংযুক্ত চিত্রে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের কোন সমুদ্র এলাকায় কি পরিমাণ আরগো ফ্লোট (Argo floats) বিচরণ করে তথ্য আহরণ করছে। নিচে সংযুক্ত চিত্রে বিস্তারিত ভাবে দেখানো হয়েছে আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি কিভাবে কাজ করে। একই সাথে নিম্নোক্ত ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাবে বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন আরগো ফ্লোট (Argo floats) এর নিয়ার রিয়েল টাইম অবস্থান।



Ocean Observation Networks (OON)

আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি দ্বারা সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা, ও পূর্বাভাষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামুদ্রিক জাহাজ চলাচলেও এই তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই ভাবে এই তথ্য বিশ্লেষণ করে সমুদ্রের বিভিন্ন স্থানে মৎস্য সম্পদের জন্য অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেষ সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।

ছবি কৃতজ্ঞতা: NOAA Office of Oceanic and Atmospheric Research


বিশেষ দ্রষ্টব্য: আবহাওয়া পূর্বাভাষ ও গবেষণার সাথে সাধারণ মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ও "আবহাওয়া পূর্বাভাষ নিজেরা করি" উদ্যোগ (Making Bangladeshi people weather smart) সিরিজ এর এটি ষষ্ঠ পর্ব। পূর্বের পূর্বগুলো আমার ফেসবুক টাইমলাইনে ও সামহোয়ারইন ব্লগে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।

ইতালির The Abdus Salam ICTP: International Centre for Theoretical Physics থেকে Earth System Physics বিষয়ে ১ বছর মেয়াদী যে Post Graduate Diploma (মাস্টার্সের সমমান) করেছি সেখানে Physical Oceanography ও Oceanographic Modelling নামক দুইটি কোর্স পড়তে হয়েছিল। বায়ুমণ্ডলের আবহাওয়া বিশেষ করে বাংলাদেশের আবহাওয়া নির্ভর করে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপরে যেমন সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, লবনাক্ততা, বায়ুপ্রবাহের দিক ইত্যাদি। তাই আগামী দিনগুলোতে সমুদ্র বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হবে আমার চলমান এই সিরিজে। আশা করছি আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী সবাই সাথে থাকবেন ও এই সিরিজটি নিয়মিত অনুসরণ করবেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:০১

শেরজা তপন বলেছেন: আরগো ফ্লোট-এর ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।
আপনার নিবন্ধ পাঠ করে অনেক কিছুই জানলাম- ধন্যবাদ

১০ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:১৮

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ পড় মন্তব্য করার জন্য।

২| ০৯ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:০২

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটি পোস্ট দিয়েছেন।

১০ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:১৯

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: রাজীব ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.