নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোস্তফা জামাল সোহেল

মোস্তফা জামাল সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চরিত্র গবেষণা কেন্দ্র !!!

০২ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১:২৬

আমি এক বন্ধুকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পথের পাশের বিরাট এক সাইনবোর্ড আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। সাইনবোর্ডের লিখাগুলো একটু অস্বাভাবিক বড়, যা শুধু আমাদেরই না যে কারো মনেই প্রশ্নের উদ্রেক করতে পারে। সাইনবোর্ডের বিষয়বস্তু ছিল আরো বিষ্ময়কর যা আমাদের কৌতুহলকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দিল। উভয়ে পরামর্শ করে সংশ্লিষ্ট সাইবোর্ডের মালিকের সাথে সাাৎ করতে মনস্থ করলাম। ভাবলাম যাওয়ার আগে একটু খোঁজ খবর নেওয়া দরকার। তাই নিকটবর্তী ছোট্ট একটা চায়ের দোকানে বসলাম। সাধারনতঃ এই সমস্ত দোকানে বসে মানুষের বিভিন্ন মুখরোচক আলাপ আলোচনা করে থাকে। আর এমন একটা বিষয়ে আলোচনা না হওয়ারতো কোন কারণই নেই। চা দোকানী আমাদের হাতে ২ কাপ চা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, আপনারা বোধহয় ঢাকা থেকে এসেছেন। আপনারা কি ভূইয়া সাহেবের বাড়ীতে যাবেন? চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম ভূইয়া সাহেবটা কে? দোকানী বললো, উনিই তো এই চরিত্র গবেষনা কেন্দ্রের মালিক। দোকানদার এবার ভূইয়া সাহেবের প্রশংসা করতে লাগলেন। দূর দূরান্ত থেকে বহু লোক আসে তাকে দর্শনের জন্য । বিষয়টি যদিও এখন পর্যন্ত এলাকার গন্ডী ছড়াতে পারেনি তবে খুব শীঘ্রই নাকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ ব্যাপারে আলাপ আলোচনা হতে যাচ্ছে। চা দোকানীর কথা শুনে আমাদের আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। আমরা ভূইয়া সাহেবের সঙ্গে সাাৎ করার জন্য তার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাড়ীর আঙিনায় পৌছানো মাত্র দু’জন ভদ্রলোক আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। আমরা বৈঠক ঘরে বসে উনার জন্য অপো করতে থাকলাম। উনি তখন ঘরের ভেতরে ব্যস্ত ছিলেন। কিছুন পরেই তিনি আসলেন। ছালাম দেওয়ার পর তিনি আমাদের আগমনের হেতু জানতে চাইলেন। কোন প্রকার ভনিতা না করেই আমরা তার কাছে ব্যতিক্রমধর্মী এই সাইনবোর্ডের ব্যাপারে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলাম। ভদ্রলোক একটু মুচকি হেসে বললেন, সকলের কাছ থেকে এই একই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি? অথচ এই সাইনবোর্ডের বিষয়বস্তু এমন আর কি আশ্চর্যের? সব মানুষের মনে এই একই প্রশ্ন কেন? আপনারা কি এই বিষয় নিয়ে একটু ভাবচ্ছেন না? আপনারা তথা গোটা সমাজ যদি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর চরিত্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে ব্যতিক্রমধর্মী এই সাইনবোর্ডের কোন প্রয়োজন নেই, এই ব্যাপারে কারো গবেষনারও দরকার নেই। আর যদি প্রয়োজন বোধ করেন, হ্যাঁ বর্তমনে এই চরিত্র স্খলনের যুগে এই সম্পর্কে গবেষনা দরকার আছে, তাহলে আপনাদের উদ্দেশ্যে আমার এই গবেষনা সম্পর্কে কিছু বক্তব্য রাখবো। ভদ্রলোকের কথায় দ্বিমত পোষন করার কিছুই দেখলাম না। তাই তার এই গবেষনা সম্পর্কে কিছু বলার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করলাম। তিনি তার বক্তব্য শুরু করলেন।


সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি চরিত্রই নাকি মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। চরিত্রহীন মানুষ নাকি পশুর সমান। আর এই চরিত্র শিা শুর হয় মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শী, শিক্ষাগুরু, ফ্রী স্কুল হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডী এবং ধর্মগুরুর কাছ থেকে। আর এতো সব আয়োজনের মধ্যে শিা গ্রহণ করার পরও যখন চরিত্র নামের বস্তুটি গঠিত হয় না তখন অবশ্যই অন্য ধারায় চেষ্টা করা দরকার। আর এ কথা বলার অপো রাখেনা, আজ সমাজ তথা রাষ্ট্রের যে অধঃপতন একমাত্র চরিত্রই এর জন্য দায়ী। সুতরাং এই ব্যাপারে আর কালপেনের সুযোগ নেই। এখনই এর একটা বিহীত করতে হবে। আর এই উদ্দেশ্যেই আমার এই ুদ্র প্রচেষ্টা। কেহ আমাকে এই মহতী উদ্যোগকে সমর্থন করুক বা নাই করুক আমি একাই এটা এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা বললাম আপনার এই উদ্দেশ্য সফল হউক আমরাও এ কামনা করি। খানিক পরে আমরা সেখান থেকে বিদায় নিলাম। পরের ঘটনা এরূপঃতিনি গভীরভাবে চিন্তা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বর্তমান শিা দীা দ্বারা যখন কোনভাবেই চরিত্র গঠন করা সম্ভব নয় তখন একমাত্র খাবার জাতীয় কোন জিনিস দ্বারাই ইহা গঠন করা যেতে পারে। সুতরাং তিনি এবার চরিত্র খাবার আবিষ্কারের দিকে নজর দিলেন। একদিন এক আগন্তুক তাকে আশার বানী শুনালেন। হিমালয় পর্বতের উত্তর পাশে নাকি ছোট একটা দেশ আছে। দেশটি এখনও অনাবিস্কৃত বললেই চলে। সভ্য জগতের মানুষেরা নাকি সেখানে যেতে ভয় পায়। কথিত আছে মহাজ্ঞানী বুদ্ধদেব নাকি ঐ অঞ্চলের কোন এক রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। সেই দেশে নাকি চরিত্র বৃরে বাগান আছে। কিন্তু সেখানে যাতায়াত অত্যন্ত বিপদ সংকুল। যে যাই হোক তাকে সেখানে যেতেই হবে। তিনি সে দেশে যাওয়ার সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। বহু কষ্টে প্রায় ৫ মাস পায়ে হেটে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তিনি সেখানে পৌঁছালেন। ওখানকার লোকজন ভূইয়া সাহেবকে দেখে বিস্মিত হলো। তিনি ওখানকার একজনকে ডেকে এই বিস্ময়ের হেতু জানতে চাইলেন। লোকটি উচ্চ শিতি বলেই মনে হলো। প্রথমতঃ লোকটি কিছু বলতে একটু ইতস্ততঃ বোধ করল। ভূইয়া সাহেব তাকে অভয় দিলেন। লোকটি বললেন আপনাদের দেশের মানুষেরা চরিত্র গাছের ভয়ে এ দেশে আসতে চায় না। তারা জানে চরিত্র বৃরে বাতাস যার গায়ে লাগবে সে কখনো কোন দূর্নীতি পাপাচার বা কোন খারাপ কাজ করতে পারবে না। আর যদি করে তবে সাথে সাথেই অসুস্থ হয়ে পরবে এমনকি মারাও যেতে পারে। আর চরিত্র ফল খেলেতো কথাই নেই। ভূইয়া সাহেব বুঝলেন তিনি প্রায় সাফল্যের দ্বার প্রান্তে এসে পৌছেছেন। বেশ কিছু চরিত্র গাছের চারা আর মন খানেক ফল নিতে পারলেই কেল্লা ফতে। এবার দুজন বাগান রী তাকে ষ্টেট অফিসারের কাছে নিয়ে গেলেন। অফিসার ভূইয়া সাহেবের আগমনের হেতু জানতে চাইলেন। ভূইয়া সাহেব তার দেশের সরকার এবং জনগনের চরিত্র স্খলনের কথা অফিসারকে বিস্তারিত খুলে বললেন এবং বললেন দেশের অবস্থা এতই ভয়াবহ যে দেশ এখন অধঃপতনের দ্বারপ্রান্তে। খুন-খারাবি, মারামারি, কাটাকাটি, চুরি-ডাকাতি আর ধর্ষনসহ হেন অপকর্ম নেই যা প্রতিদিন সংঘটিত হচ্ছেনা। আমাদের মানবাধিকার আজ চরমভাবে লুন্ঠিত, অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের পথে। প্রশাসনে চলছে নিরব দলীয়করণ, গণমাধ্যমগুলো আজ একচোখা। সুশাসন গিয়েছে বনবাসে আর দুঃশাসন বিরাজ করছে দেশের সর্বত্র। চরম বৈষম্য আর দুর্নীতিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি টাইফুনের গতিতে। হিংসা আর প্রতিহিংসার দাবানলে জ্বলছি আমরা সবাই। বর্ণিল রাজনীতি আর চরিত্রহীন নেতাদের দিক নির্দেশনায় আমরা পথভ্রষ্ট। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন আমাদের কাছে যেন এক অধরা স্বপ্ন। বলতে হয় দেশ এখন বসবাসের অযোগ্য। সুতরাং আসন্ন এই ধ্বংসের হাত থেকে দেশেকে রার উদ্দেশ্যে তিনি এই ‘চরিত্র গবেষনা কেন্দ্র’ স্থাপন করেন। আর এই গবেষনার ধারাবাহিকতায় তিনি মহান এই দেশ সম্পর্কে অবগত হন। আসলে চরিত্র গাছ ও চরিত্র ফল নেওয়ার উদ্দেশ্যেই তার এদেশে আগমন। ষ্টেট অফিসার খুব মনোযোগের সাথে ভূইয়া সাহেবের বক্তব্য শুনলেন এবং তার দেশের এই অধঃপতনের কাহিনী শুনে আফসোস করলেন। যাহাই হোক ষ্টেট অফিসার ভূইয়া সাহেবকে তাদের দেশটি ঘুরে দেখার জন্য অনুরোধ করলেন। দেশটি খুব ছোট বিধায় মাত্র ৭ দিনের ভ্রমন শেষে ভূইয়া সাহেব এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন। এই দেশের সব মানুষ পরম সুখে বসবাস করছে। এখানে হিংসা বিদ্বেষ নেই বললেই চলে। এখানে নেই কোন বৈষম্য নেই। এখানে কেউ মিথ্যা কথা বলে না, যা যা আছে তা নিয়েই সকলে সন্তুষ্ট। অপরের উন্নতিতে কেউ ঈর্ষা পোষন করে না। আর এখানার শাসকগোষ্ঠী ২৪ ঘন্টাই জণগনের খেদমতে ব্যস্ত থাকে। এবার তিনি ষ্টেট অফিসারকে দেশে ফেরত যাওয়ার কথা জানালেন। তিনি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার চরিত্র গাছের চারা এবং চরিত্র ফলের জন্য ডিমান্ড পেশ করলেন। ষ্টেট অফিসার বললেন আপনার দেশের সরকারের অনুমতি ব্যতীত চরিত্র গাছের চারা এমনটি একটি চরিত্র ফলও দেওয়া যাবে না। ভূইয়া সাহেব অনুরোধ করে বললেন, এই সামান্য গাছের চারা ও ফল নেওয়ার জন্য সরকারের অনুমতির কোন প্রয়োজন নেই। বরং আমাদের সরকার গাছ লাগানোর জন্য দেশবাসীকে যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করে যাচ্ছেন। ষ্টেট অফিসার বললেন আসলে আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন না। আপনাদের সরকার অন্যান্য গাছ লাগাতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন বটে কিন্তু আপনাদের দেশে চরিত্র গাছ লাগানো সম্পূর্নভাবে নিষিদ্ধ। আপনার আসার পূর্বেও অনেক বাংলাদেশী আমাদের কাছ থেকে চরিত্র গাছ ক্রয়ের চেষ্টা করেছিলেন। আপনাদের সরকার একটি চিঠির মাধ্যমে কোন বাংলাদেশীর নিকট চরিত্র গাছ বিক্রী না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমি আশা করি আপনি অসন্তুষ্ট হবেন না। আপনার অবগতির জন্য বলা প্রয়োজন বলে মনে করছি, গত বছর সুদুর আফ্রিকার নাইজেরিয়া থেকে এক ভদ্রলোক এসেছিলেন উনার উদ্দেশ্য ছিল ঠিক আপনারই মতো। ভদ্রলোক আমাকে মোটা অংকের ঘুষও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দেশে ঘুষ খেলে মানুষ সাথে সাথে অসুস্থ হয়ে পড়বে। এমনকি মারাও যেতে পারে। হয়তো এ ব্যাপারে আপনি পূর্বেই অবগত হয়েছেন। সুতরাং ঘুষ খেয়ে মরতে যাবে কে? কথায় কথায় অফিসার আরো বললেন কোন বৃহৎ শক্তি নাকি তাদের সরকারকে শাসিয়েছে এমনকি তারা আক্রমনের হুমকিও দিয়েছিল, তারা যেন বাহিরের কোন দেশের কাছে চরিত্র গাছের চারা বা ফল বিক্রী না করে। স্টেট অফিসার আরো বললেন এক একটি চরিত্র গাছের মূল্য একটি দেশের মূল্যের চাইতেও নাকি অনেক বেশী। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই অমূল্য সম্পদের অধিকারী করেছেন সেজন্য আবারও তার শুকরিয়া আদায় করছি। আমরা চাই দুনিয়ার সব মানুষই সুখী হোক। এই চরিত্র গাছের ছোয়ায় এবং এর পবিত্র ফল খেয়ে দুনিয়ার সব মানুষই যেন চরিত্রবান হয়ে ওঠে। কিন্তু এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী, লোভী ও চরিত্রহীন গোষ্ঠীর জন্য আমাদের এই স্বদিচ্ছা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যাই হোক দেশের প্রতি আপনার এই গভীর ভালোবাসা দেখে আমি অনেক খুশী হয়েছি। আপনার এই মহতী উদ্যোগের জন্য আমার দেশের সরকার ও জণগনের প থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আপনার কাছে চরিত্র গাছ ও চরিত্র ফল বিক্রি করতে অম হওয়ায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।











(মোস্তফা জামাল (সোহেল) মোবাইল ঃ ০১৯১৪৩৯৭৪১৯, ০১৭১৫৫৬১৪২৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.