নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোস্তফা জামাল সোহেল

মোস্তফা জামাল সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওরা বোবা জানোয়ার, আমরা তো মানুষ!

০২ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫

সম্প্রতি মধুপুর বনাঞ্চলে যন্ত্রদানবের চাকায় পিষ্ট হয়ে মা হনুমান ও তার বাচ্চা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে শত শত হনুমান টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে রাখে। প্রত্যদর্শীরা জানায়, অবরোধকালে তাদের আক্রমণাত্মক অঙ্গ-ভঙ্গির কারণে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিকাল সাড়ে ৬টা দিকে একটি শিশু হনুমান পাকা সড়ক পাড়ি দিয়ে জঙ্গলে যাওয়ার সময়ে একটি টেম্পুর আঘাতে গুরুতর আহত হয়। তাকে রার জন্য সড়কের অপর পাশ থেকে মা হনুমান এগিয়ে আসে। শিশু হনুমানকে বুকে তুলে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই অপর একটি মিনি ট্রাক মা ও শিশু হনুমানকে একসাথে চাপা দেয়। ঘটনার পর বন থেকে দল বেঁধে বেড়িয়ে আসে শত শত হনুমান আর তার সাথে যোগ দেয় বানরকুল। দলে বলে ভারী হয়ে এরা ব্যস্ততম সড়ক অবরোধ করে। তাদের এই আচরণের জন্য ৩৫ মিনিট যান চলাচল বন্ধ থাকে। স্বজাতির মৃতুতে হনুমান আর বানরকুলের এই আর্তনাদ সত্যিই হৃদয়বিদারক এবং দৃষ্টান্তমূলক। বিচারের দাবীতে বোবা এই জানোয়ারদের পশুবন্ধন, সড়ক অবরোধ, আক্রমনাত্মক অঙ্গ-ভঙ্গি, তাদের এই বোবা আকুতি টনক নড়াতে পেরেছে কি আমাদের সরকার তথা রাষ্ট্র নামক ঐ বৃহৎ যন্ত্রের?

রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দূর্ঘটনা আজ মহামারীর রূপ ধারণ করেছে। এমন কোন দিন নেই যেদিন বাংলাদেশে কোন না কোন স্থানে সড়ক দূর্ঘটনা ঘটছে না। আর দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রতিদিন যেন তারই স্যা বহন করছে। অনাকাঙ্খিত এই সব দূর্ঘটনায় বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা আবার কেউ কেউ পঙ্গুত্ববরণ করছে সারাজীবনের জন্য। দেশের সড়কগুলো যেনো এক মৃত্যুফাঁদ, যেখানে পা রাখলেই মৃত্যু অনিবার্য। বিগত বছরগুলো থেকে শুরু করে অদ্যাবধি আমাদের সড়কগুলোতে চলছে হত্যার মহোৎসব যার ভয়াল ছোবল থেকে আমরা কেহই মুক্ত নই। প্রতিদিনই সড়কগুলো কেড়ে নিচ্ছে অনেকগুলো মূল্যবান জীবন, পঙ্গু করে দিচ্ছে অনেক সুপ্ত প্রতিভাকে। আর এতে করে মারাত্মকভাবে তিগ্রস্থ হচ্ছে একটি পরিবার, একটি সমাজ তথা রাষ্ট্র। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একটি জরিপে দেখো গেছে এসব দূর্ঘটনায় প্রতিবছর আমাদের দেশে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। অপ্রতিরোধ্য এসব দূর্ঘটনার পিছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের খামখেয়ালী, প্রশাসনিক নির্বিকারত্ব, আইন ও বিধি-বিধান যুগোপযোগী না হওয়া, ট্রাফিক আইন অমান্যকরণ ও নিয়ন্ত্রণহীন ট্রাফিক ব্যবস্থা, চালকের অদতা, বেপরোয়া ও প্রতিযোগী মনোভাব, যথাযথ প্রশিণ ও পরীা ছাড়াই লাইসেন্স প্রাপ্তি, অপরিপক্ক কিশোরদের গাড়ী চালানোর সুযোগ প্রদান, ফিটনেসবিহীন গাড়ী চালনা, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, অনেক সময় যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতা, শ্রমিক সংগঠনগুলোর আশ্রয় ও প্রশ্রয় এবং পরিবহন নেতাদের দৌরাত্ম, একদিকে দূর্বল আইন ব্যবস্থা অন্যদিকে আইনের যথেষ্ট ফাঁক-ফোকর, চালকদের জন্য নির্দিষ্ট কোন পোশাক বরাদ্দ না থাকা, গাড়ী চালানোর সময় মোবাইল ফোনের ব্যবহার, যত্র-তত্র যাত্রী ওঠা-নামা করানো, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অপরিকল্পিত নগরায়ন, দ্রুত মোটরযানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, দ্রুত গতিতে গাড়ী চালনা, রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা ও অপরিকল্পিতভাবে যানবাহন রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, হেলমেট ও সীটবেল্ট ব্যবহার না করা, ফুটওভার ব্রিজ এড়িয়ে চলা, দেশে কোন হাইওয়ে পরিকল্পনা না থাকা, দেশের সর্বত্র অপ্রশস্ত ও ভাঙ্গাচোরা সর্বোপরি নাজেহাল সড়ক ব্যবস্থাই মূলত এসব দূর্ঘটনার জন্য দায়ী। অপরিরোধ্য এসব সড়ক দূর্ঘটনা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় লেখা-লেখি, টিভির বিভিন্ন চ্যানেলগুলোতে টকশো ও সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর দৌড়-ঝাঁপ পেরেছে কি লাগামহীন এই ঘোড়ার পায়ে শাসনের বেড়ি পরাতে? আসলে সরকারের প্রত্য ও পরো হস্তপে ছাড়া কোনভাবেই এই মহামারীর হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রা করা সম্ভব নয়। লেখার টেবিলে বসে শ্রদ্ধাভরে আজ স্মরণ করতে হচ্ছে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এর ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের কথা। স্ব-উদ্যোগ এবং অর্থায়নে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে তিনি যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। স্বাধীনতার পর পরিবহন খাতে বিভিন্ন আইনের সংশোধন, সংস্কার, জামিনঅযোগ্য অপরাধের শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধিসহ বিবিধ দাবীতে তিনি ছিলেন সোচ্চার। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণে উদ্যোগটি আজ হারাতে বসেছে স্বীয় কর্মচঞ্চলতা। আর কত অপমৃত্যু, আর কত পঙ্গুত্বের অভিশাপ আমরা বহন করব? আর কত জ্ঞানী-গুণী, মহান ব্যক্তিত্ব, আর কত স্বনামধন্য চলচিত্রকার ও সাংবাদিক ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হবে ঐ সড়কগুলো? আর কতদিন স্বজন হারানোর কান্নায় ভারী হবে এদেশের আকাশ-বাতাস?

স্বজন হারানোর ব্যথা যে কত তীব্র, এ ব্যথা যে কত বেদনাদায়ক, একমাত্র স্বজনই তা বোঝেন। স্বজাতির মৃত্যুতে বোবা ঐ জানোয়ারদের আর্তনাদ কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙাতে পারেনি, পারেনি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যথাযথ কর্র্তৃপরে। কিন্তু আমরা তো মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব, আমরা কি পাবনা আততায়ী রূপী ঐ সড়কে খুন হওয়া আমার স্বজনের বিচার? আমরা কি পাব না নিরাপদ একটি সড়ক ব্যবস্থা?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.