নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোস্তফা জামাল সোহেল

মোস্তফা জামাল সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নে মৃত এক আত্মার ফরিয়াদ

২০ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:১৮

স্বপ্নে মৃত এক আত্মার ফরিয়াদ
মোস্তফা জামাল সোহেল

জীবনে স্বপ্ন দেখেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু সেই স্বপ্নের হিসাব কেউ কি রাখে? কারণ স্বপ্ন তো স্বপ্নই। জীবনে অসংখ্য স্বপ্ন দেখেছি, প্রয়োজন হলে সকালে উঠে সকলকে সেই স্বপ্নের কথা বলেছি, আর প্রয়োজন না হলে বলিনি। কিন্তু মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা মনে রাখতে না চাইলেও মনে থেকে যায়। ঠিক সে রকম একটি স্বপ্নের কথা ভুলতে পারছি না, আর ভুলবোই বা কি করে? আজ সেই স্বপ্নের কাহিনীটা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করছি।

বছরের প্রায় শেষের দিক, এমনিতেই সালটা আমাদের দেশের জন্য খুব একটা শুভ ছিল না। বছরের শেষের দিকে ব্যবসায়ীদের মত সাধারণ মানুষও হিসাব-কিতাব মেলাতে ব্যস্ত থাকে। আর এ ব্যাপারে আমি বরাবরই উদাসীন ছিলাম। দুনিয়াতে যা কিছু ঘটে সবই মহান রাব্বুল আলামীনের মর্জিতে, আর এই দর্শনে বিশ্বাস করলে কিসের এত হিসাব-নিকাশ? আমার কাজ হাজিরা দেওয়া, আমি নিয়মিত তা দিয়ে যাচ্ছি। এতসব চিন্তা-ভাবনার মাঝে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা বলতেও পারবো না। ঘুমে স্বপ্ন দেখলাম আমি মরে গেছি আর আমার মৃত দেহটা পরে আছে ৪০ বছরের পুরানো সেই বিছানায়। আমার স্ত্রী হয়তো এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। একটু পরেই সে আমাকে মৃত আবিষ্কার করে আঁৎকে উঠবে, খুব জোরে চিৎকার করে বলবে হায়রে আমার কি হলোরে? ওরে দেখ তোদের বাবা আর নেই। রাত তখন প্রায় শেষের দিকে, সকাল হতে কিছু সময় বাকী। প্রতিদিনের মতই এই সময়টা আমার স্ত্রী নামাজের উদ্দেশ্যে ওযু করার জন্য ওঠে এবং আমাকেও ডাকে। কিন্তু আজ আমার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে গায়ে হাত দিয়ে সজোরে ধাক্কা মারলো। কিন্তু মরা মানুষকে জাগায় কে? মুহুর্তের মধ্যে চারিদিকে কান্নার রোল পরে গেল। কান্নার আওয়াজ শুনে প্রথমে আশপাশের বাড়ি এবং পরে এলাকার লোকজন আসতে শুরু করলো। আমার মৃত্যুর সংবাদ শুনে দূর থেকে যারা আসবে তারা হচ্ছে আমার বড় ও ছোট মেয়ে এবং আমার দেশের বাড়ির আত্মীয়-স্বজন। দুই মেয়ে আর ছেলের ঘরের নাত-নাতনী আমার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। শেষবারের মত ওদের দেখে যেতে না পারলে বেহেশতে গিয়েও আমার আত্মার শান্তি মিলবে না। জীবনে অনেক ফরিয়াদই জানিয়েছি মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে। আজ বিদায়ের এ ক্ষনে এটাই আমার আখেরী ফরিয়াদ।

ইতিমধ্যেই চারিদিকে কুরআন পড়ার ধুম পড়ে গেছে, কেউ বা আবার দু’আ দরুদ পড়ে আমার চারপাশে ফুঁক দিচ্ছে। আমার বড় ছেলে ঈদের ছুটিতে এসেছিল, ওর আগেই কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার কথা, যেতে পারেনি হয়তো নাড়ীর টানেই রয়ে গেছে। ছোট ছেলেটা এদিক সেদিক ছুটোছুটি করছে আর ওর চোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝড়ছে। খুব ইচ্ছে হলো ওকে কাছে ডেকে একটু সান্ত্বনা দিই। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। আমার লাশটা এখনো ঘরের মেঝেতে, হঠাৎ পাশ দিয়ে ছোট একটি শিশুকে দৌড়ে যেতে দেখলাম। ঐতো বাচ্চাটা আবার এদিকে আসছে। মনে মনে ভেবেছিলাম তাই, ঐ তো আমার নাতনী আমার বড় ছেলের মেয়ে। প্রতিদিনের মত আজও খুব ইচ্ছে হলো ওকে একবার কোলে তুলে নিই, ওর ছোট গালে আলতো করে একটু চুমু খাই। আমার নাতনীটা খুব মিষ্টি আর চঞ্চল, বেঁচে থাকতে ওকে খুব একটা কাছে পাইনি, আজ বিদায়ের এ ক্ষণে শেষ ইচ্ছেটা যেন মৃত এ দেহে প্রাণের সঞ্চার করতে লাগলো। আমি সবই দেখছি, সবই বুঝতে পারছি, শুধু কোনো কিছু বলা বা করার ক্ষমতা আমার নেই। হঠাৎ একজনের কথা আচমকা বুকে এসে তীরের মতো বিধলো, লোকটি বললো, লাশ যত শীঘ্র দাফন করা যায় ততই মঙ্গল। লোকটির কথা শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। ফোনে আমার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর আমার মেয়েদের কি হবে তা ভাবতেই পারছি না? আমাদের তাড়াতাড়ি দাফন করার জন্য কেন ওদের এত মাথা ব্যাথা? আমি মরে গেছি তো কি হয়েছে? মরা মানুষের আপন বলতে কি কেউ নেই? ওদেরকে দোষ দিয়েই বা কি লাভ? আসলে আমি যে মৃত, প্রাণহীন একটা মাংসপিন্ড, একমাত্র কবরস্থানই আমার আসল ঠিকানা। আজ লোকগুলো এত নিষ্ঠুর হলো কী করে? এইতো বেশ কয়েক ঘন্টা আগেও একসঙ্গে জামাতে নামায আদায় করেছি, চা খেয়েছি, কত গল্প করেছি। আমাকে চার পাঁচ ঘন্টা বেশি সময় বাইরে থাকলে দিলে কি এমন আসে যায়? শেষ বিদায় বেলা প্রিয় জনদের এ ব্যবহার আমার কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার চাইতেও বেদনাদায়ক মনে হলো।

থাক এসব কথা। অনেক আগেই সকাল হয়েছে। নামায থেকে মুসুল্লীরা ফিরতে শুরু করেছে। মুসুল্লীদের মধ্যে হঠাৎ একজন মুরুব্বী কিছিমের লোককে বলতে শুনলাম ওনার মেয়েদের সরাসরি মৃত্যু সংবাদটা দেয়া ঠিক হয়নি, সংবাদটা পাওয়ার পর ওরা নাকি কেঁদেই চলেছে। এতক্ষনে ওরা বোধহয় রওয়ানা হয়ে গেছে। মেয়েদের কথা ভাবতে ভাবতে প্রাণহীন চোখে অশ্রুর বন্যা বইতে শুরু করলো। ইতিমধ্যেই আমার দেশের বাড়ি ও অন্যান্য জায়গায় অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আমার মৃত্যু সংবাদটা পৌছে গেছে। রাস্তায় লোক জনদের গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছি। এলাকার মসজিদগুলোতেও মাইকিং চলছে।সকলেই যেন আজ মহা ব্যস্ত। গোসলের লোক ঠিক করা, কাফনের কাপড় আনা, কবর খোড়া আর কত কি? অনেকটা সময় গড়িয়েছে এরই মধ্যে। হঠাৎ হৈ চৈ শোনা গেল, ভীর থেকে একজন বলে উঠলো ঐ তো ঐ তো ওনার ছোট মেয়ে এসেছে। গাড়ী থেকে নেমে এসে সোজা মেয়েটা আছড়ে পরলো আমার নিথর দেহের ওপর। আজ ওর মাথায় হাত বুলাতে পারলাম না, জিজ্ঞেস করা হলো না, মাগো তুমি কেমন আছ? নাতিটা ওর বাবার কোলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাঁকিয়ে আছে আমার দিকে।আসলে জীবন মৃত্যু সম্পর্কে ওর তো কোন ধারনা নেই। নাতিটাকে দেখে মনে হলো ঈদের চাঁদ দেখলাম, কি যে খুশি, কি আনন্দ তা ব্যক্ত করার ভাষা বা ভঙ্গি কোনটাই আমার নেই। আবার সেই আওয়াজটা কানে এলো, লোকটি বলে উঠলো এখনই গোসল করানো দরকার। এমনিতেই অনেক সময় হয়ে গেছে। লোকটির প্রতিটি কথা আমার শরীরে কাটার ন্যায় বিধতে লাগলো। বেঁচে থাকলে এতক্ষণে হয়তো দু-চার ঘা বসিয়ে দিতাম।

এরই মাঝে শুরু হলো আমার গোসল পর্ব। কুসুম-কুসুম গরম পানি ঢালা হচ্ছে আমার সারা গায়ে আর সাবান ঘষা হচ্ছে সর্বাঙ্গে।আমার ছেলেরা আজ অতি যত্নে আমাকে গোসল করাচ্ছে, ওদের চোখের পানি আর গোসলের পানিতে সব যেন একাকার।গোসল শেষে আমাকে কাফন পরানো হলো, মাখানো হলো আতর, গোলাপ আর কত কি? বুঝলাম ক্ষানিক বাদেই শুরু হবে আমার শেষ যাত্রা। আর ইতি মধ্যেই খাটিয়াও এসে পরেছে।অজানা এক বাসনা মনের মাঝে উঁকি ঝুকি মারছে।এখনও বড় মেয়েটা এলোনা, তাহলে কি বড় নাতীটাকে আর দেখতে পাবোনা? আমার শেষ আশাটা কি অপূর্ণই থেকে যাবে? তীর্থের কাকের ন্যায় চেয়ে রইলাম ওদের পথপানে।

আমাকে যথারীতি খাটিয়াতে শোয়ানো হলো। চারদিকে অনেক লোক। সবাই তেড়ে আসছে আমার দিকে, কে প্রথম আমার খাটিয়ার ভার বহন করবে? কোত্থেকে একটা পাগল কিসিমের ছেলে ছুটে এলো। রীতিমতো সে জোর করেই আমার খাটিয়ার হাতল ধরে তার কাঁধে ভর নিলো।উপস্থিত অনেকেই বললো ও পারবেনা, আবার অনেকেই বললো থাক ও যখন চাইছে করুক না, ছেলেটিও নাছোড় বান্দা। যেইনা যাত্রা শুরু, অমনিই ছেলেটির হাত ফসকে আমার খাটিয়ার একাংশ আছড়ে পড়লো সোজা রাস্তার উপর। আর অমনি আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, চিৎকার করে সোজা উঠে বসলাম। বুঝলাম এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম, কি ভয়ানক স্বপ্নরে বাবা! আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করলো, তোমার কি হয়েছে? বললাম, বড় কুলক্ষনে একটা স্বপ্ন দেখেছি। এমন স্বপ্ন কেউ কি দেখে?

বিঃ দ্রঃ স্বপ্নের দ্রষ্টা আমার পিতাঃ মাষ্টার ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিব উল্যা (অবঃ)
মৃত্যু : ৩০/১০/২০১২ ইং।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সবচে কঠিন সত্য - যাকে সকলেই ভুলে থাকতে চাই
অথচ বাস্তবতা থেকে কেউই বাঁচতে পারিনা...

++++

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:০৯

ধ্রুবক আলো বলেছেন: স্বপ্ন তো স্বপ্নই।

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: কেমন আছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.