নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হোসেন মৌলুদ তেজো

লিখতে ভালোবাসি

হোসেন মৌলুদ তেজো › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতঃপর ২০ বছর পর আর কিছু কথোপকথন

১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৫


অবশেষে সকাল হলো! উফ: কি বিরক্তিকর ছিল এই অপেক্ষার রাত। ২০ বছর পর আরো একটা দিনের জন্য অন্যজীবন। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে সবাইকে একটা দিনের জন্য রাজী করানো গেল। হাত মুখ ধুয়ে এক কাপ চা বানিয়ে তাতে চুমুক দেয় নির্মাণ আর ভাবে আজকের দিনের কথা। শেষ কবে সবাই, সব বন্ধুরা একসাথে আড্ডা দিয়েছিলো মনে নেই। সব সময়ই সবারই কিছু না কিছু সমস্যা ছিলোই। কারো স্ত্রী অসুস্থ, কারো শালীর বিয়ে, কারো বাচ্চারা অসুস্থ তো কারো আবার পারিবারিক সফর। অবশেষে আজকের এই দিনটা স্থীর হয়। কথা হয় সবাই আসবে ২০ বছর আগের সত্তা নিয়ে। এক সাথে কাটাবে, যা ইচ্ছা তাই করবে, যা ইচ্ছা তাই খাবে। জায়গা ঠিক করা হয় নির্মানের এই বাসা, কারণ আপাতত কয়েকদিন বাসাটা ফাঁকা। বাসার সবাই বাড়িতে গেছে। নির্মান আপাতত কয়েকদিন একা থাকবে। নির্মান একা একা বসে সবার জন্য অপেক্ষা করে আর এক এক করে সবার ছবি আঁকে। কল্পনা করে ২০ বছর আগের সেই আড্ডা, রাতুলের মেস, ধানমন্ডি লেকের সবুজ ঘাস, মোসলেম মামার দোকানের দা, ফুটপাতের বাদাম আড্ডা। সময় সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো করে দেয়। আজ কেমন করবে সবাই, আসলেই কি তারা ফিরে যেতে পারবে ২০ বছর আগে অন্তত একটা দিনের জন্য হলেও। আজ সারা দিন একসাথে কাটানোর কথা। খাওয়া-দাওয়া নির্মানের দায়িত্ব.... আর আড্ডার রসদ জোগার করবে আবীর, সাজু, মৃনাল এবং নিপু। চা-টা শেষ করে একটা সিগারেট ধরায় নির্মান। সিগারেটের ধোয়া বাতাসের সাথে মিশে যেতে থাকে অল্প অল্প করে, আর নির্মানের সময় কাটে অপেক্ষায়.... বধির শ্রবনে।

নির্মান তার এ্যালবাম বের করে, সেই সব সময়ের ছবিগুলো উল্টে-পাল্টে দেখে। প্রতিটি ছবি এক একটি গল্পের মতো মনে হয় নির্মানের কাছে। ছবির মানুষগুলো আজ অচেনা প্রতিবিম্বে বড়ো বেশি চেনা কেউ। স্মৃতিগুলোকে তার কেন যেন বনসাই বাস্তবতার মতো মনে হয়। এই সময়ে কলিং বেল বেজে উঠে, কোন রকম এ্যালবামটা বন্ধ করে নির্মান উঠে দাঁড়ায়... মুচকি হেসে চিন্তা করে কে হতে পারে? নিপু? - না ও আসলেতো গাড়ির শব্দ পেত। রাতুল, হাবিব... প্রশ্নই ওঠে না, ওদের সময়জ্ঞান এতো ভালো হওয়ার কথা না। হ্যাঁ, আবীর হতে পারে.... ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে মেজাজটাই বিগড়ে যায় সলো পেপার ওয়ালা, বিল নিতে এসেছে। বিলটা দিয়ে দরজা বন্ধ করবে এই সময়ে সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পাওয়া যায়। কেউকি আসলো তাহলে.... হ্যাঁ তবে আবীর নয় হাসান আর রিয়াদ এসেছে। নির্মান হেসে দরজায় এসে দাঁড়ালো, কিন্তু কেমন যেন অস্থীর লাগছে... এতো দিন পর দেখা, কিন্তু আগের সেই উচ্ছাসটা নেই। করমর্দন, অর্ভ্যৎনা বড়ো বেশি শালীন আর মার্জিত লাগে নির্মানের আছে। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে হাসান বলে :
- কেমন আছেন নির্মান সাহেব?
- নামের শেষে “সাহেব” শব্দটা কেমন গালির মতো শুনাচ্ছে...। গালাগালি না করলে হয় না।
রিয়াদ অল্প একটু হাসে আর বলে, “সময় লাগবে... তা কেমন আছো?”
- যেমন ছিলাম তেমনই আছি। চেষ্টায় আছি ভালো থাকার। নিজের কাছে নতজানু।
- ভাব প্রকাশ আর শব্দ নির্বাচনে তোর সৌখিনতা এখনও গেল না।
- কি করবো নামা, এই একটা সৌখিনতায় টাকা লাগে না।

নির্মানের মুখে মামা শুনে রিয়াদ মুখ তুলে তাকায়। তার দৃষ্টিতে কেমন যেন একটা মায়া ছিলো। হাসান একটি নেটের ব্যাগ হাতে দিয়ে বলে এগুলো আমাদের আনার কথা, বাকীটা ওরা আনছে নির্মান ব্যাগটা খুলে দেখে Soft Drinks - এর কয়েকটা বোতল, কিছু বিপস আর চানাচুর আছে ব্যাগে। সেগুলো টেবিলে রেখে ওদেরকে এই রুমে বসতে বলে। এই সময় আবার কলি, বেল বাজে। নির্মান মনে মনে বলে এবার নিশ্চয়ই আবীর এসেছে। দরজা খুলে একটা প্রশান্ত হাসিতে হাত বাড়ায় আবীরের দিকে আবীর ভিতরে ঢুকে বাকী দুইজনকে দেখে একটা হাসি দেয়... অবশ্যই নি:শব্দ আর....। নির্মান তিনজনকে বসতে বলে চা বানাতে যায়। চা বানানোর সময় ভাবে তবে কি সময় গ্রাস করে নিল সেই উচ্ছাস আর অবাধ উচ্ছৃক্সখলতাকে। কোথায় সেই নষ্ট শব্দের ছড়াছড়ি। কোথায় সেই বাধ ভাঙ্গা উল্লাস। পিছন থেকে আবীর বলে।
- কিরে মামা, অনেক দিন পর দেখা, কেমন যাচ্ছে?
- ও.... আবীর ধন্যবাদ।
- কেন?
- মামা, শব্দটা শুনতে খুব ইচ্ছে করছিলো, ভুলতে বসেছিলাম প্রায়।
- হ্যাঁ... আজকাল এই শব্দটা কেন যেন সবার কাছে গালির মতো শুনায়।
- বড়ো বেশি বদলে গেছি মামা... গোছানো জীবনের আশায় মনের দিক থেকে অনেক বেশি অগোছালো। কেন্দ্রীভূত হওয়ার নামে নিজের জীবন থেকে একটু একটু করে অনেক বিচ্ছিন্ন আজ।
পিছন থেকে হাসান বলে উঠে, “কথাগুলোতো আরো সহজ করেও বলা যায়... মামা... এতো কঠিন করার কি দরকার।”
- কিরে সবাই কখন এসে দাঁড়ালি পিছনে।
এর মধ্যে হাছানকে পাশকেটে রিয়াদ এসে দাঁড়ায় নির্মান আর আবীরের কাছে। হাছান এসে হাত বাড়ায়... চারজনের সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে। চায়ের কেটলিতে গরম পানির বুদবুদ ওঠে... নির্মানের চঞ্চল হাত চা পাতির দিকে হাত বাড়ায় আর আবীরের বিশ্বস্ত হাত কাপ গুলো ধুয়ে চায়ের জন্য সাজাতে থাকে। ভিতর থেকে হাসান বলে ওঠে মামা এখানে আসরের আয়োজন করছো?
- হু, কেমন হবে? ... না Change করবো?
- না ঠিক আছে।
- তুই কি এখনও দেখেই মজা নিচ্ছিস....?
- হ্যাঁ, তোরা খাবি আর আমি দেখবো, কেউ বেসামাল হলে সামলাবো...

আবার কলিংবেল বেজে ওঠে। এবার একসাথেই ঢুকে হাবিব, নিপু, মৃনাল, সাজু। বোঝাই যাচ্ছে আয়োজনের সবই ওরা নিয়ে বসেছে। তখন দুপুর প্রায় বারোটা। ওরা ঢুকেই সব সরগরম হয়ে যায়। নিপুর সেই চিরচেনা গলা... নিষিদ্ধ শব্দের ফুলঝুড়ি, দাদার রিয়াদের বিরুদ্ধে হাজারটা অভিযোগের আতশবাজি আর হাবিবের সৌজন্য করমর্দনের পাশাপাশি হাতের জলন্ত সিগারেটের হাত বদল। আবীর সব খুলতে শুরু করে। নিপু বলে পর্যাপ্ত আছে দাদা....চিন্তার কোন করেন নেই। এক বোতল রাম, এক বোতল ভদ্কা, ৮টা বিয়ার আর কি একটা বিদেশী বোতল। বিদেশীটা অবশ্য নিপু ছাড়া মুঠোমুটি সবারই অচেনা। এই সব নিয়েই কথা হচ্ছিল এই সময় হাছানের মোবাইল বেজে ওঠে এবং ... যথারীতি হাছান কথা বলতে অন্য ঘরে। সবাই একসাথে নিপুর দিকে তাকায় আর নিপু বলে... আসুক। হাছান কথা শেষ করে রুমে ঢুকে.... নিপু তার MP4 চালু করে....!

সবাই চলে এসেছে - যাদের আসার কথা দিলো। নির্মান লক্ষ্য করে যতো সময় যাচ্ছে সবার বয়স কমছে... ধীরে ধীরে সবাই স্বাভাবিক হচ্ছে। সৌজন্যতার মোড়ক ছেড়ে বেড়িয়ে আসছে সবাই। নির্মান খুশি হয়... একটু একটু করে উল্টো পথে হাটে... ২০ বছর আগের সময়ের দিকে তীর্থ যাত্রার প্রস্তুতি নেয় সবাই। দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর একজন একজন করে আসরে আসতে আসতে থাকে। গোল হয়ে বসে, বোতলগুলো নাড়ে চাড়ে... সিগারেটের প্যাকেট হাত বদল করে হাটে এক হাত থেকে অন্য হাতে। আসর শুরুর আগে নির্মান বলে -
- গত কয়েক বছর ধরে আমাদের যখনই দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, আমরা একে অন্যের পারিবারিক জীবনের হালচাল জানতে চেয়েছি, চাকরী-ব্যবসার খোঁজ নিয়েছি, আমি চাই আজকে সেই কাজ আমরা করবো না। কারণ আগে যখন আমরা আড্ডায় বসতাম এগুলো কোন এজেন্ডার মধ্যে ছিলো না.... সবাই একমত?
নিপু একটা বিয়ার খুলে আর বিয়ার খুলার শব্দে সবাই একসুরে বলে উঠে-
- একমত... CHEERS!
তখন নির্মান বলে-
- সেজন্য আমার একটি অনুরোধ.... সবার মোবাইল বন্ধ করে দিতে হবে... এখনই।
সবাই তাই করে। মোবাইল বন্ধ করে আক্ষরিক অর্থেই সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নিপু বোতলগুলো খুলে প্যাক সাজায়। প্যাক রেডি হয়ে গেলে হাছান ছাড়া সবার হাত চঞ্চল হয়ে ওঠে.... সবাই CHEERS বলে গ্লাসে চুমুক দেয় আর হাসান মুচকি হেসে মুখে পটেটো চিপ্স পুড়ে দেয়। সেটা দেখে নিপু বলে ওঠে-
- পারলাম না, তুই হুমু...হুমুই থাকলি এবং যাবতীয় অন্যসব বিরতীহীনভাবে নিঃসৃত হতে থাকে হাসানের উদ্দেশ্যে।

নিপুর উস্কানিতে শুরু হয়ে যায় শব্দ চয়নে সবার শালীনতার বর্জনের তীব্র প্রতিযোগীতা। অবশ্য এইসব ক্ষেত্রে কারো কারো সাথে পেরে ওঠা কঠিন না অসম্ভব, যেমন নিপু আর হাবিব বলা শুরু করলে মনে হয় যেন অনন্তকাল ধরে চলবে। এর মধ্যে এই কথা বলাবলির মধ্যে নিপু আরেক প্যাক তৈরি করে অন্য বোতল থেকে। সবাই আরেক প্যাক গিলে... হাসান চানাচুরের প্যাকেট ছিড়ে সামনে রাকে, হাছানকে গালির মাধ্যমে ধন্যবাদ জানিয়ে সবাই চানাচুর মুখে দেয়। এবার অবশ্য বেশি কথা হয় না। বিরতীহীনভাবে আরো তিন প্যাক সবাই পেটে পুড়ে তবে নিপু শুধু বিয়ার খাচ্ছে তাই অন্যদের চেয়ে একটু স্বাভাবিক। একটু হালকা ঝিমানি ধরে সবার... কেউ কেউ হেলান দিয়ে বসে আছে এর মধ্যে হাবীব নড়ে চড়ে ওঠে... তাই দেখে আবীর বড় বড় চোখ করে তাকায় আর চিৎকার দিয়ে বলে... শালা বাতরুমে যা। ব্যাস.... যা হওয়ার তাই হলো। এদিকে আবীরের বাথরুমের শব্দ শুনে বিয়াদ মাথা চাপা দিয়ে চিৎ হয়ে চিৎকার করতে করতে বলে।
- Ooo Shit……Shit! শালা তোর অভ্যাস এখনও গেলো না এখনও মাল খেয়ে বমি করস।
তখন নির্মান বলে ওঠে
- তোরওতো .... বমির শব্দ শুনে উপুত হয়ে Shit বলার অভ্যাস যায়নি।

হাসান উঠে বাথরুমের দিকে যায় আর বিয়াদের উপুত হওয়া শরীরের দিকে তাকিয়ে সবাই হেসে ওঠে। একটু পরে আবীর এসে বসে.... আরো এক প্যাক চায়। সবাই না করে... কে শুনে কার কথা। এর মধ্যে আরো এক প্যাক খায় সবাই তবে একটু কম করে আর ধীরে ধীরে। সবাই স্মৃতিচারণ করে... চোখাচোখি করে... নিস্তেজ শরীরে মনটা সতেজ হয়ে ওঠে। ওরা কথা বলে অতীত নিয়ে, কথা বলে সংসার নিয়ে, কথা বলে জীবন-মৃত্যু নিয়ে, কথা বলে সমাজ-সভ্যতা, রাজনীতি নিয়ে। তাদের নিস্তেজ শরীর সময় উপেক্ষ্যা করে, সমসাময়িক বাস্তবতা, বেঁচে থাকা সব কিছু হয়ে ওঠে অপার্থিব। সবাই বিচ্ছিন্ন ভাবে, বিচ্ছিন্ন বিষয় তুলে যুক্তি-অযুক্তির দেয়াল ভেঙ্গে কথা বলে বেসামাল বেহিসেবী শব্দের গঠনে। বিষয় থেকে বস্তু আলাদা করে, বস্তুকে অবস্তুর আবরণে ব্যাখ্যা করে... ঠিক আগের মতো তবে কিছুটাও হলে পরিবর্তিত আচরণে, বদলে যাওয়া সময়ের আবহে।
হাসানঃ ভাবতেই পারছিনা যে, আমরা আজ এই সময়ে এখানে এভাবে...
নির্মানঃ না ভাবার কি আছে....
হাসানঃ না তারপরও .... আমরা কি আমাদের খোলস ভেঙ্গে দিলাম না আপাতত কিছু সময়ের জন্য বেড়িয়ে এলাম।
আবীরঃ সব সময় সব কিছু ব্যাখ্যা করা যায়... কিছু কিছু সময় শুধু যা ঘটছে তাই মেনে নিতে হয়। আমরা সেই মেনে নেওয়া আর সমঝোতার জীবনের বাইরে একটা দিন কাটাচ্ছি... সেই পুরনো স্রৃতিকে জাগাতে।
নিপুঃ সবাই সবার প্রয়োজনে বদলায়, আবার প্রয়োজনেই নিজের রূপে ফিরে আসে। আমরা সবাই দৌড়াচ্ছি... এই দৌড় সাময়িক সময়ের জন্য থাকে... শেষ হয় না।
নির্মানঃ দোস্ত, জীবনের যাই ঘটুক না কেন... আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক ঘটনার একটা সুনিশ্চিত কারণ আছে। হয়তো সব করেন আমরা জানি না, তাই সব ঘটনা আমরা মানতে চাই না।
রিয়াদঃ মামা... আর কিছু বলার নাই।
হাবীবঃ এ্যা শালা... রিয়াদ মামা দেখি Facebook এর মতো Like মাইরা দিলো।
নিপুঃ কতো ঘাট দেখলাম... কতো উত্থান-পতন দেখলাম। দোস্ত পৃথিবীতে একটাই সত্য আছে আর সে সত্য হলো স্বেচ্ছাচারিতা, অন্তত আম তাই মানি।
নির্মানঃ আরেকটা সত্য আছে... টাকা। টাকা কথা রাখে মামা, টাকাটাই শেষ কথা। The Second GOD!
হাসানঃ এভাবে বলিস না মামা... টাকা কি সব পারে?
নির্মানঃ সব পারে না... কিন্তু এই সবের ৭৫ ভাগ সরাসরি টাকা পারে আর বাকী ২৫ ভাগ এই ৭৫ ভাগের ধাক্কায় হয়ে যায়।
আবীরঃ সত্য....সত্য। টাকা দিয়ে অমরত্ব পাওয়া যায় না। এই একটা ছাড়া বাকী সব পাওয়া যায়।
হাবীবঃ টাকা...টাকা কি শুরু করলি... আরেক প্যাক বানা আর Topic বদলা।
নিপুঃ তোর Topic তো কি নিয়ে হবে আমরা জানি!!
হাবীবঃ কি নিয়ে?
নিপুঃ টুত...টুত... সেন্সর!
হাবীবঃ পুরুষ সবে ব্যভিচারে, নারীর কোন দোষ নাই... না দোস্ত ভালো হয়ে গেছি।
হাসানঃ ভালো হয়ে গেছস না বাধয় হইছস?
রিয়াদঃ ভাই, এখনতো ভালো...!!
মৃনালঃ একটা ভালো সম্পর্ক কারো সাথে তৈরি হলে মানুষ ভালো হয়ে যায়।
নিপুঃ সম্পর্কের ভালো মন্দ কেমনে বুঝবি দাদা।
আবীরঃ সম্পর্ক ব্যাপারটা তৈরি করে নেওয়ার মতো। এটা নির্ভর করে নিজের উপর।
নির্মানঃ মামা... কথাটা পুরোপুরি ঠিক না মনে হয়।
আবীরঃ কেন?
নির্মানঃ সম্পর্কতো তৈরি হয় উপরে, মানুষ শুধু সে সম্পর্কের একটা নাম দেয়, সেটা বয়ে নিয়ে বেড়ায়।
নিপুঃ এটা অবশ্য ঠিক।
হাবীবঃ এটা সবাই মেনে নিলে অনেক সমস্যা মিটে যেত, প্রতিশোধের স্পৃহা অনেক কমে যেত।
নির্মানঃ হয়তো.... তবে এটা ঠিক সম্পর্কে ন্যায় বিচার ব্যাপারটা আক্ষরিক অর্থে অনুপস্থিত।
আবীরঃ ন্যায় বিচার বলে আসলে কিছু নেই। ন্যায় বিচারে বিশ্বাস ব্যাপারটা অনেকটা বাতাসের মতো... এই বিশ্বাস কখনও ভাঙ্গে না আবার কারো কাছে ধরাও দেয় না।
নিপুঃ ওই শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।
হাসানঃ ভাগ্যকি ন্যায় বিচার করে মামা...
নির্মানঃ ভাগ্যের ন্যায় বিচারের ধরন পুরোপুরি আলাদা মামা।
হাবীবঃ একটা অস্বীকার করার উপায় নাই দোস্ত। একটা সময় যাদের টিটকারীতে অস্থীর থাকতাম এরা এখন দেখা করার জন্য Appointment চায়।
মৃনালঃ কারো কারো ক্ষেত্রে অবশ্য উল্টোও হয়।

নিপু আরো একটা প্যাক তৈরি করে গ্লাসগুলো সবার দিকে বাড়িয়ে দেয়। সবাই এই প্যাক শেষ করে সিগারেট ধরায়। আড্ডা শুরুর সেই প্রাঞ্জলাতা, উচ্ছ্বাস থাকে না। একটা একটা করে সবার পাওয়া না পাওয়ার গল্প বেরিয়ে আসে। কারো চাটুকারীতার অভাবে পদন্নতি না হওয়া, কারো ব্যবসার ধস, কারো পারিবারিক অশান্তি। সবাই সবাইকে বুঝায় কিন্তু নিজের বেলায় সবাই অবুঝ! একটু একটু করে বোতল খালি হয় আর খালি হয় সবার মনের কথা। কেউ হেলান দেওয়ার ভান করে জমে থাকা চোখের পানি আড়াল করে, কেউ ঝিমুনির ভাব ভবে গালের চামড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে। বন্ধ ঘরের মধ্যে ভধকার গন্ধ, সিগারেটের ধোয়ার গুমোট এই পরিবেশ সবার নীরবতায় আরো গুমোট হয়ে ওঠে। কেউ কারো দিকে তাকায় না হয় সবাই নীরবে প্রার্থনা করে একে অন্যের জন্য। সবাই জানে আজকের পর সবাই আবার ফিরে যাবে সেই আগের জীবনে ... পরিবার, সমাজ আর সভ্যতার চাপে সবাই এক একটা বনসাই জীবন। নিজের মনের আতুড় ঘরে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা প্রসব করে চলা ক্রীতদাস জীবন।

হাসান ওঠে দাঁড়ায় জানালা খুলে দেয়। বাহিরে তখন শেষ বিকেলের আবছা আলো। সন্ধ্যা নামছে দিনের শেষের সনদ পত্র নিয়ে। সবাই এলোপাতারি শুয়ে আছে। হাসান বাহিরে তাকায় সামনের বিল্ডিংয়ের বাসার ব্যাস্ত সন্ধ্যা আয়োজন দেখে তার বাসার কথা মনে পড়ে। খোঁজ নিতে ইচ্ছে করে কিন্তু ফোন করে না। সবার চেহারা একবার করে দেখে আর বদলে যাওয়া জীবনের ছাপ সবার চেহারায় খুঁজে বেড়ায়। এভাবেই চলে জীবন। শিশু কিশোর হয়, কিশোর যুবক হয়, যুবক প্রবীণ হয়, কিন্তু জীবনের এইসব কোন স্থর খালি যায় না। একদল গেলে আরেকদল আসে। হাসান গিয়ে সোফায় বসে। সোফায় কোশলনের উপর মাথা রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। খালি বোতলগুলো এলোমেলো পড়ে থাকে... হাজার টাকা দিয়ে কিনে আনা বোতলগুলো একটু পরে ডাস্টবিনে যাবে কারণ খালি বোতলের দাম নেই... দাম সব পানির, লাল পানি, কালো পানি ইত্যাদি। হাসান ভাবে আমরাতো এগুচ্ছি বাতলদের মিছিলের দিকে... আমরাওতো ধীরে ধীরে খালি হচ্ছি... ক্ষমতাহীন, শ্রহীন, মূল্যহীন জড় পদার্থের মিছিলে শামিল হচ্ছি। হাসান আর ভাবতে পারে না। চোখ বুঝে থাকার চেষ্টা করে। তার বন্ধ চোখের সামনে ফিরে ফিরে আসে ২০ বছর আগের জীবনে খন্ড চিত্র.... স্থির চিত্র... অস্থীর আর এলোমেলো ভাবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৩

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: অনেক বড় হয়ে গেছে,
ভালো++

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: নিউটন নয়, ওই আপেল গাছটিই আমার শিক্ষক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.