![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০৪৬ সালের এক বৃষ্টিস্নাত পড়ন্ত বিকেলে মেঘলী তার ইউনিভার্সিটির ২য় সর্বশেষ পরীক্ষার পর মাথা থেকে আত্নহননের কারন ও প্রতিকার বিষয়ক ভাবনা বিতারীত করার বৃথা প্রচেষ্টা শেষে রিকশা খুজতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করল ২১ মিনিট পেরিয়ে গেছে। গত ৩ মাসে আত্নহনন জনিত কারনে এই ব্লকে ১৫ জন রিকশা ড্রাইভারের মৃত দেহ পাওয়া গেছে। কারন অনুসন্ধানে দেখা গেছে বেকারত্ব এবং হঠাৎ উন্নত জীবন থেকে অব্যহতি।
শেষ বয়সের বৃদ্ধ নজরুলের মত দেখতে এক বৃদ্ধ কর্দমাক্ত রাস্তার অপর প্রান্তে তার ভাবনায় হঠাৎই উঠে এলো।
-এই যে যাবেন?
-কোথায়?
-এ-ব্লক?
-না।
-এপোলো যাবনে?
-হুমম।
বৃদ্ধের নিঃস্পৃহ ভাষা এবং কম্পমান হাতের আঙগুল মেঘলীর মনে গত সপ্তাহে দেখা আত্নহনন বিষয়ক পরিসংখানটির ধাক্কা দিয়ে গেল।এই বৃদ্ধ আর এক সপ্তাহ টিকে গেলে সর্বশেষ পরীক্ষার দিন হয়তবা আর ঝাকি পোহাতে হবে না।
ব্যগের ডেইরীমিল্ক না বাসার সামনের চটপটি কোনটা দিয়ে পটানো যায় ভাবতে ভাবতে দেখল রিক্সার চেইন পড়ে গেছে। কাজী নজরুল তার কম্পিত হাতে চেইন ঠিক করার বৃথা চেষ্টা আব্যহত রাখল।তারপর হটাৎই জানিয়ে দিল,
-যাব না।
কর্দমাক্ত রাস্তায় কাদাসিক্ত কম্পমান বৃদ্ধকে দেখে মনে হল তার খুব ঘুম পেয়েছে কিংবা তার দাড়িয়ে থাকার জন্য সক্রিয় নিউরন গুলো নিস্প্রান হয়ে আসছে।
মেঘলীর একটা নিউরনের আত্নহনন বিষয়ক পরিসংখ্যানের বার্তা তাৎক্ষনিকভাবে ভীতির নিউরনে রুপান্তরিত হল। রিক্সা থেকে নামলে কাদায় মাখামাখি হতে হবে- বার্তা নিয়ে আসা নিউরন খুব ক্ষীন সময় স্থায়ী হল। জায়গা করে নিল লোকটার আজই আত্নহনন-এর সম্ভাব্যতা বিষয়ক বার্তা।
মেঘলী টুপ করে নেমে শক্ত হাতে রিক্সার চেইনটা ঠিক করে ফেলল।
-আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে, আপনি আমাকে আমেরিকান বার্গার পর্যন্ত পৌছে দিন প্লিজ।
লোকটির মুখ নিঃস্পৃহ থেকে নিঃস্পৃহতর হল।
-যাব না।
লোকটা কদামাখা রাস্তার গায়ে চাকার নক্সা তুলে চলে গেল।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৯
মৌ রি ল তা বলেছেন: এই ফিকসানটা যখন লিখেছিলাম তার কয়েকটা দিন আগে আমার খুব প্রিয় এক আপু আত্নহত্যা করেছিল । আপু প্রচণ্ড ভালো একজন মানুষ ছিল এবং প্রচণ্ড মেধাবী । impossible টাইপ ভালো ছাত্রী ছিল সে । যে সব কোর্সে ক্লাসের সবাই ৬০% মার্ক পেয়ে পাশ করাতে পাগল সেখানে সে ১০০ তে ১০০ পেত । অন্যান্য আরও অনেক ক্ষেত্রে যে ছিল অতুলনীয় , অনুকরনীয়। সে সময় আরও কিছু আত্নহত্যার কেইস দেখে মনে হচ্ছিল একসময় হয়ত এই বিষয়টা উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে যেতে পারে । আমরা এতকিছু এত্ত এত্ত কিছু পাওয়ার মাঝে শুধুমাত্র একটা না পাওয়ার জন্য জীবন শেষ করে দেই । কিন্তু আমাদের খুব পাশেই প্রতিদিন দেখা হওয়া অসীম মনের জোরের অধিকারী মানুষেরা যাদের জীবনে কিছুই নেই তারা ঠিক কজন আত্নহত্যার প্রচেষ্টা করে !!! জর্জ বারনার্ড স এর 'আর্মস অ্যান্ড ম্যান' এর একটা কোট ছিল ''It is our duty to live as long as we can" । শুধু যুদ্ধে নয় সব সময়ই It is our duty ।
২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: ''It is our duty to live as long as we can" । শুধু যুদ্ধে নয় সব সময়ই It is our duty । -- এই চমৎকার উদ্ধৃতিটুকু পড়ে সত্যিই খুব মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
জীবনের প্রতি আপনার কমিটমেন্ট দেখেও মুগ্ধ ও অভিভূত।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০০
খায়রুল আহসান বলেছেন: শেষ বয়সের বৃদ্ধ নজরুলের মত দেখতে বৃদ্ধ রিকশাওয়ালার মেজাজ মর্জিটাকে যেভাবে তুলে ধরেছেন, সেটা কি কোন কিছুর রূপকার্থে?
এতদিন পর আপনার প্রথম লেখাটা পড়ে গেলাম। পাঠকের কোন মন্তব্য পেলাম না, আমিও বোধ হয় আঁচ করতে পারলাম না লেখাটার গুঢ় বক্তব্য। তবে মনে হয়েছে, লেখাটিতে বিশেষ কিছু বলতে চেয়েছেন, যা বর্ণিত ঘটনাটুকুর চেয়ে অনেক বড়।