![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(গল্প এক).................
এক বড় ভাইয়ের সাথে কথা
খুব ভালবাসেন তাই না?
ভালতো বাসতাম।
রিলেশনটা তাহলে ভাঙ্গল কিভাবে? ওনার জন্য?
রিলেশন.... উম....অনেকগুলো কারণ ছিল। বলতে বলতে এটা নিয়ে উপন্যাস লেখা হয়ে যাবে।
(গল্প দুই)....................
বন্ধুর সাথে কথা-
তোদের প্রেম দেখে আমার হিংসে হয়!
হা হা হা। হিংসে হয় কেন?
এইযে তোদের কত আন্ডারস্টান্ডিং ভাল, দুজন দুজনকে তোরা এত ভালবাসিস, কত সহজে সুখে আছিস তোরা। আমারতো এসব কিছু নাই। হিংসে হবে নাতো কি হবে?
নারে। সুখে নাই। আমার খালি উপরটাই দেখিস। অনেক সমস্যা আছে। সিনেমা তৈরি করা যাবে এসব নিয়ে।
(গল্প তিন)....................
বান্ধবীর সাথে কথা-
আমার মত হ্যান্ডসাম ছেলেকে বাদ দিয়ে ওই টেম্পুর হেলপারের মত দেখতে ছেলেটার সাথে রিলেশন করলিতো, দেখিস তোর ব্রেকাপ হবে। রোজার ঈদের আগেই হবে।
শকুনের দোয়ায় গরু মরে না কথাটা জানিস তো?
আমি শকুন? রিলেশন করেই বন্ধুকে পর করে দিলি! ওই দুই দিনের টেম্পু ড্রাইভার তোর আপন হল!
ওকে টেম্পু ড্রাইভার বলবি না।
একশ বার বলব, টেম্পু ড্রাইভার, টেম্পু ড্রাইভার, টেম্পু ড্রাইভার, টেম্পু....
চুপ কর। তুই যতই খোটা দে আমাদের ব্রেকআপ হবে না, ও আমাকে ছেড়ে কোনদিনো যাবে না বুঝলি ।
কেন? খাজা বাবার পানি পড়া সকাল বিকাল খাওয়াচ্ছিস নাকি?
আমাদের রিলেশনের শুরু থেকে এত ঝড় গেছে তুইতো জানিস না। এত ঝড়ের মাঝেও আমরা দুজন একসাথে আছি। আমি ওকে ছেড়ে যাইনি, ও আমাকে ছেড়ে যায় নি। আমার মনে হয় না আর অন্যকোন রিলেশনে এত সমস্যা থাকে, এত কাহিনী হয়। আমাদের এসব নিয়ে গল্প উপন্যাস লেখা হয়ে যাবে জানিস।
(গল্প চার)...........................
পরিচিত বড় ভাইয়ের সাথে কথা-
হুম ভাই, ভাল আছি। আপনি ভাল আছেন?
হুম ভাল ভাল। পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার?
জ্বি ভাই চলছে।
ফেসবুকে তোমার লেখা দেখলাম। ভালইতো লেখ।
কি যে বলেন। অল্পস্বল্প চেষ্টা করি ওই।
শোন, তুমিতো লেখালেখি কর, আমার কাছে একটা গল্প আছে। তুমি যদি সেটা লিখতে পারো আমার মনে হয় ভালই হবে।
কি বিষয়ে ভাই?
তুমি তো বড়ই হইছো। খুলেই বলি। জানত তোমার অমুক আপুর সাথে আমার একটা সম্পর্ক ছিল। সেটা এখন নাই। তোমরা হয়ত কিছু কিছু জানছো। আমি ভেবে দেখলাম আমাদের রিলশনে যত ট্রাজেডি আছে ভেতরে, এটা দিয়ে একটা সুন্দর গল্প হবে। পরে চাইলে সিনেমাও বানানো যাবে।
জ্বি ভাই তা হবে মনে হয়।
তুমি সময় করে একদিন আমার এখানে আসো তাহলে।
আচ্ছা ফ্রি হলে ফোন করব।
......................................................
উপরের চারটা গল্প সত্যি। আমার ফ্রেন্ডলিষ্টেই আছে এই চারজন। শুধু এই চারজন না প্রায় সবার কাছেই শুনেছি যে তাদের রিলেশন নিয়ে গল্প উপন্যাস হয়ে যাবে ।
যা বুঝলাম প্রতিটা মানুষই নিজের রিলেশনকে সিন্দাবাদের দুঃসাহসীক অভিযান হিসেবে ভাবে। রিলেশনে ঘটা ঘটনাগুলোর হিরো হিসেবে নিজেকে চিন্তা করে। তার রিলেশন পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন এবং এক্সেপশনাল রিলেশন। এমন ঘটনাবহুল রিলেশন মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসর যুগে একবার পাতি ডাইনোসর ও মিনি ডাইনোসরের রিলেশনে দেখা গিয়েছিল আর এত বছর পর এবার তাদের হল।
শুনতে তিতা লাগতে পারে কিন্তু সত্যিটা হল আমার দেখা সব রিলেশনই প্রায় একই রকম। সব আবেগ, অনুভূতি, চাওয়া পাওয়া, সুখ দুঃখ, ভালবাসার যন্ত্রণা এক। শুধু পার্থক্য হল পরিবেশের। কেউ ধনী, কেউ গরীব, কেউ ভাল ছাত্র, কেউ খারাপ ইত্যাদি। যারা এই ব্যাপারটা অনুভব করতে পারে যে রিলেশন মানেই গতবাঁধা কিছু সুখ দুঃখের নাটক তাদের কাছে রিলেশনের গুরুত্ব উবে যায়।
কেউ যদি ভাবে যে সে এক্সেপশনাল কিছু করছে, জীবনে তার ভালবাসার মানুষকে ছাড়া আর সে কিছুই চায় না, সমস্যা হলেই হাত পা কাটা বা ও আমার সব কিছু ছিল, ও এখন নাই, আমার জীবন রেখে কি লাভ বা বড় কিছু হবার চেষ্টা করার আর মানে হয় না বা সিগারেট মদ খেয়ে ওকে ভুলে থাকার চিন্তা এসব ভাবলে বুঝে নিতে হবে তার বাবাও একসময় এই চিন্তাটা করেছে, তার মাও একসময় এই চিন্তাটা করেছে। তার বাবা যদি এই চিন্তা করে পড়ে থাকত সে এই পৃথিবীতেই আসত না।
সমস্যা হল রিলেশন ব্যাপারটা পুরোটাই আবেগের। আর আবেগ থাকলে যুক্তি টেকে না। যার যেমন ইচ্ছা সে সেভাবেই নিজেকে হিরো বানিয়ে নেয়।
©somewhere in net ltd.