| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন
মানুষের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়নো আমার শখ। মানবতা আমার ধর্ম। কোন অভৌত সম্পর্কে আমি অনুগামী ভক্ত নই। আমার ভালো লাগা রক্ত-মাংসের মানুষের সম্পর্কায়নে। আমি সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।
মঞ্চ শব্দের আভিধানিক অর্থ একটি অবকাঠামো, একটি ভিত্তি। আর সে মঞ্চ যদি হয় নারীর; তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় নারীর কাঠামো বা নারীর ভিত্তি। আসলেই কি তাই? আজকাল পত্র-পত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, অধিকার/উন্নয়ন ভিত্তিক সরকারি-বেসরকারি সংগঠনগুলো বড্ড বড়-বড় কথায় তৃপ্ত হয়ে পক্ষান্তরে সক্রিয় লেজুড় বৃত্তির দ্বিধাহীন প্রমাণ দেন। মঞ্চ যদি হয় নারীর অর্থ্যাৎ নারীর অধিকারের ভিত্তি; তাহলে বাস্তবিক পক্ষে তা হওয়া উচিত সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রের, প্রতিটি প্রেক্ষাপটের নারীর। বড়ই হাস্যকর ঠেকে যখন নারীর মঞ্চ কথা বলে শুধুই মঞ্চের সাজ-সজ্জার তথা মঞ্চের ধরনের, মঞ্চের চাকচিক্য, রঙ্গ ও ঢংয়ের; উপেক্ষা করে নারীর ধরনকে, নারীর প্রকৃতিকে।
নারীকে যদি সাধারণতই বলা হয় মানুষ; তাহলে স্বভাবতই ইঙ্গিত পাওয়া যায় সকল শ্রেণির মানুষের। নারী বলতে সকল প্রকৃতির নারীর সন্নিবেশ হওয়া আবশ্যক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমাদের নারী মঞ্চ সমূহ যেমন- মহিলা উন্নয়ন বিষয়ক সংগঠন গুলো, অধিকার / উন্নয়ন ভিত্তিক সরকারি-বেসরকারি সংগঠন গুলো কথা বলে না প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য। এদের গলাবাজি শুধুই সক্ষম অপ্রতিবন্ধী নারীদের মঞ্চের জন্য। মূলত সংগঠনগুলো লেবাসের অন্তরালে নিজ স্বার্থ চরিতার্থে নিজ বস্তা বোঝাই করে নিতে ব্যস্ত। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে নারীর মঞ্চ আদতে কী নারীর মঞ্চের কথা বলে, না শুধুই মঞ্চের কথা বলে লোক দেখানো খ্যাতি পাবার আশায়। এই প্রশ্নের প্রকৃত উত্তর তাই অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ‘সুশীল সমাজ’ নামে কলা খেতে ভালোবাসে ‘গোপাল’ নামের ভালো ছেলেটির কাছে জিজ্ঞাসিত।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বর্তমানে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৮ জন। সে তুলনায় দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৭ ভাগেরও অধিক প্রতিবন্ধী। এই প্রতিবন্ধীব্যক্তিদের একটা বিরাট অংশ নারী। জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত এক সমীক্ষায় প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৭০ লক্ষ ৫০ হাজার নারী প্রতিবন্ধী রয়েছেন বলে অনুমান করা হয় (সূত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৫)। আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন সমাজ ব্যবস্থার কারণে জন্ম থেকেই নারীরা কোণঠাসা। এ চিত্র পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র।
প্রতিবন্ধী নারী মানেই মনে করা হয় সমাজের বা পরিবারের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী যারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সর্ব সাকুল্যে সকল প্রকার মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত। বাস্তবতা বরাবরই প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য শৃঙ্খলিত প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সবচেয়ে বড় কথা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেই নারী। তাই ওই বিপুল সংখ্যক (প্রায় ৭০ লক্ষ) প্রতিবন্ধী নারীকে বাদ দিয়ে নারী উন্নয়ন তথা দেশের সার্বিক উন্নয়ন আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। আমাদের দেশে মনে করা হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মানে অসুস্থ ব্যক্তি। তাই সমাজ থেকে তাদের জন্য বাধা তৈরি করে রাখা হয়। একবারও মনে করা হয় না যে, এই প্রতিবন্ধীতা তার শরীরের একটি অংশ মাত্র।
তাই এই মঞ্চের মঞ্চায়নে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে আমি এমন এক নারী সামাজের কথা বলতে চাই- মূলতঃ এমন একটি (প্রতিবন্ধী) নারী গোষ্ঠী যা কখনও কোন সমাজের, কোন মঞ্চের বিবেচ্য হয়নি। আজ অবধি কোন নারী সংগঠন, কোন অধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা একটিবারের জন্য ভুল করে হলেও তাদের কথা উচ্চারণ করেনি, তাদের অধিকারের কথা ভাবেনি। এতটুকু চিন্তা করারও যেন প্রয়োজন নেই তাদের। অথচ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অদক্ষ বাউলের মতো হাঁক ছাড়েন আমাদের অনেক নারী নেতা/নেত্রী। মাঝে মাঝে দু’একটি কথা বলে, দু’একটি ফিচার ছেপে আদতে আমরা নিজ অবস্থানকেই শক্ত করি।
আমাদের গলাবাজি করা নারী মঞ্চগুলো তাদের কথা বলে না, তাদের নারী-ই মনে করে না। নারী উয়নের নামে ধনবান কর্তার ধনবতী গৃহকর্তীরা ‘নারী ও/বা সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন’ নামের প্রভৃতির ব্যানারে আদতে ‘গোপাল ভাঁড়ের গল্পই’ আমাদের শুনিয়ে যাচ্ছেন। শুধু বড় বড় মিষ্টি কথায় চিড়া ভিজিয়ে সমাজ কর্মী হিসেবে নিজেকে জাহির করাতেই আমাদের সীমাব্ধতা।
‘‘এরা প্রজাতীতে নারী, জন্মগতভাবেও নারীর প্রতিরূপ। শুধূ এতটুকুই পার্থক্য। সাধারণ নারীর চেয়ে তাদের চলন, বলন, অঙ্গ-ভঙ্গি, দৈহিক গঠন ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন। হরমোনের অভাবে এদের কারো জনন ইন্দ্রিয়ের অভাব, কারো বা সবই আছে শুধু কথা বলা বা চলার ধরন পুরুষের মতো। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে এদেরও আছে মাতৃ মমতা তথা মাতৃত্ব, কামনা-বাসনার স্বাদ, ভালোবাসা পাবার ও দেবার প্রগাঢ় আবেদন। কিন্তু এদের নেই সামাাজিক, রাষ্ট্রীয় ও পারিবারিক স্বীকৃতি। অবজ্ঞা, উপহাস ও ব্যঙ্গোক্তিতেই সবসময় বিদ্ধ তারা। অধিকারহীনতায়, অমানবিকতায় মানবেতর জীবনযাপন তাদের। তারা সর্বদাই নির্যাতিত, নিগৃহীত, অপমানিত সাধারণ লোকের চোখের ভাষায়, শব্দে ও ব্যঙ্গোক্তিতে। এই নির্যাতন, এই সন্ত্রাস কোন অংশেই ‘এসিড সন্ত্রাস’ থেকে কম নয়। একজন মানুষ হিসেবে, একজন নারী হিসেবে যার বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব নেই সমাজে; ব্যক্তি মনে তিনি নিশ্চয় ‘‘মর্যাদাহীন সন্ত্রাস’’ এর শিকার।
আজকাল ‘হিজড়া’ নামে খ্যাত এই জনগোষ্ঠীর লোকজনকে খুব বেশি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মার্কেটে, দোকানে, হাটে-বাজারে। এর আগে এদের উপদ্রব এমনটি আর দেখা যায়নি। নানারকম অশোভনীয় অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে, হাত পা ছুঁড়ে, নেচে-গেয়ে দোকানি ও লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেয় এরা। হঠাৎ তাদের বেশি বেশি দেখতে পাবার কারণ জিজ্ঞেস করলে এক হিজড়া মহিলা বলেন, ‘‘কি করবো ভাই, কেউতো আমাদের চাকরি-বাকরি দেয় না, কোনো হাতের কাজও করতে দেয় না, এমনকি ইটের ভাটায় ইট ভাঙ্গতেও না। সবাই আমাদের হিজড়া বলে, অচ্ছুত বলে, অপবিত্র বলে ঘেউ ঘেউ করে খেদিয়ে দেয়। আগে দুই-এক বেলা না খেয়ে থাকতাম এখন দ্রব্যমূল্যেও উধ্র্বগতির কারণে তিন বেলাই এমনকি কখনো কখনো দু’ তিন দিন কিছুই পেটে পড়ে না। তাই বাধ্য হয়ে সকল ব্যঙ্গ্যোক্তি, অবজ্ঞা, টিসকুনি সব কিছু সত্ত্বেও বেশি বেশি বের হতে হচ্ছে আমাদের।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে মাস্টার্স করা চাকরিরতা এক হিজড়াকে হিজড়া হওয়ার অপরাধে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে। তাই শেষতক উপায়ান্তরহীন ঔ ভদ্র মহিলা এখন জীবন যাপন করছেন আমাদের সুশীল সামাজের ধরা ছোঁয়ার বাইরে আমাদের অচ্ছুত করে অনেক দূরে হিজড়াদের সাথে হিজড়া পল্লীতে। যেখানে কোনো প্রাণীরও ইচ্ছা জাগে না একটি রাত্রি অবকাশের।
তাই নারীকে পুঁজি করে যারা নারী উন্নয়ন সংগঠন, নারী অধিকার সংগঠন, নারী মঞ্চ ইত্যাদি নামে শুভঙ্করের ফাঁকির ন্যায় নিজেদের স্বার্থই হাসিল করছেন তাদের কাছে হাত জোড় করে মিনতি করছি- দয়াকরে আপনারা সত্যিকার অর্থে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত নারীদের কথা বলুন, ভাবুন। শুধু একবার ভাবুনতো এদের মতো উপেক্ষিত শ্রেণির ন্যায় এমন আর কেউ প্রান্তিক হতে পারে কি না। কি নিদারুণ নিষ্ঠুর জীবন ও সমাজব্যবস্থা তাদের!
নিজের জন্মের জন্য একটি সভ্য সমাজে কেউই দায়ী হতে পারে না। তাহলে কেন আমরা সভ্য, শিক্ষিত সুশীল সমাজ এখনও সুচিন্তা, সুদৃষ্টি, সুসত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছি না। কেন আমরা তাদেরকে হিজড়া, অচ্ছুত, অস্পৃশ্য অপবিত্র না বলে প্রতিবন্ধী বা ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তি বলতে পারি না? অনুতাপের বিষয় একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে উন্নয়নের ধারায় আমরা এখনও সকল মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখিনি, একজন নারীকে দিতে পারিনি নারীর পূর্ণমর্যাদা।
লেখক : কলামিস্ট।
(সুত্রঃ মতামত । http://www.jagonews24.com । ৮ মার্চ ২০২১ । সোমবার )
https://www.jagonews24.com/opinion/article/648945
০৯ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২৬
মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: রাজীব ভাই
ভয়ের ভয়াবহ কথা বলেছেন।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
২|
২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০২
Whopuld বলেছেন: Thank you for being with 99 nights in the forest
৩|
২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪
Whopuld বলেছেন: Thank you for being with [url=https://99-nightsintheforest.io]99 nights in the forest[/url]
৪|
২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৬
Whopuld বলেছেন: Thank you for being with https://99-nightsintheforest.io
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: এই আধুনিক যুগে এসেও একজন মাস্টার্স পাশ করা নারী একা ইন্টারভিউ দিতে যেতে ভয় পায়।