আমার অপেক্ষারা আজ যে তোমার প্রতীক্ষায় আছে

১১ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:২৮

আমি সত্যি বলছি... আমি তোমাকে মিস করছি। বুঝতে পারছি একটু একটু করে তোমাকে মিস করার পাল্লাটা ভারী হচ্ছে দিনদিন। তবুও... এ আমার আমি-র আমিত্ব, এ আমার ভীরু কাঁপন। একটা সময় ছিল যখন সব কিছুই সাধারণ ছিল। সাধারণ ছিল মুক্ত হাওয়া, সাধারন ছিল কিছু আহ্লাদ আর সাধারণ ছিল আমার চেনা পৃথিবী। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব কিছু আর এক রকম নেই। কোথায় যেন কিছু একটা বিষয় সুনিপনভাবে বদলে দিচ্ছে সবকিছু। বদলে দিচ্ছে অবচেতন মন, বলদে দিচ্ছে রোদ-মাতাল পরিবেশ। ঝুম-বৃষ্টিরা আজ বদলে যাচ্ছে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে। শ্রাবণের অঝোর ধাঁরা আজ একটু একটু করে আমার চারিপাশ বদলে দিচ্ছে অদ্ভুত এক অনিশ্চিতের দিকে। যে চারিপাশে একসময় আকাশ ছিল, জোছনা রাতে প্রান্তর রাঙানো রুপালী জোছনা ছিল, যে জোছনা রাঙিয়ে দিতো আমার মায়ার পৃথিবী। সে মায়ার পৃথিবী আজ এক সিন্দাবাদের ভূত হয়ে আঁকড়ে ধরে আছে সবকিছু। এ ভূতের আরেক নাম অপেক্ষা। এ ভূত অদৃশ্য, এ ভূত হতে পারে এক পাগলামো, হতে পারে আমার আপন মায়া, আর হতে পারে একচিলতে আকাশের খোঁজে স্বপ্ন বাজীকরের অস্থির উড়াউড়ি।



তোমার জন্য অনেক অপেক্ষায় থেকেছি। অপেক্ষায় থেকেছি নিঝুম রাতের দ্বিপ্রহরেও। অপেক্ষায় থেকেছি মাথার উপর কাঠফাটা রোঁদটাকে ভালোবাসায় জড়িয়ে। শীতের কনকনে বাতাসেও আমার আমিকে অপেক্ষায় রেখেছিলাম কিছুটা উষ্ণতার আশায়। অনেক শ্রাবণ জলধারার এসে আমার সময়গুলোকেও ধুয়ে নিয়ে গেছে চুপিসারে। আর তুমি বল “সবুর করো, সবুরের ফল মিষ্টি হয়”। আমি আর কতটা কাল অপেক্ষা করবো বলতে পার? আর কতো ধৈর্য্য পরীক্ষা নিবে তুমি? আমার অপেক্ষারা আজ যে তোমার প্রতীক্ষায় আছে।



আচ্ছা, অপেক্ষা আর প্রতীক্ষা কি এক? একতো না, তাই না? অপেক্ষা শব্দটার সাথে অধৈর্য্য নামক শব্দটার একটা সুনিপুণ মিল আছে। অপেক্ষা করতে ভালো লাগে না। অল্প অপেক্ষা মনকে অস্থির করে, অধিক অপেক্ষায় হতাশা। কে যেন বলেছিলো প্রতীক্ষা অসীম সময়ের জন্য হতে পারে। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গেও প্রতীক্ষা করা চলে। পিয়নের জন্য, রিকশাওয়ালার জন্য বা ছুটির জন্য অপেক্ষা করা যায়। কিন্তু প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করা যায় না; প্রেমিকার জন্য প্রতীক্ষা করতে হয়। রমজানের ইফতারির জন্য প্রতীক্ষা করতে হয়। সোজা কথায় যার প্রতি টান নেই, ঘটনাটা হলে বাঁচা যায় এমন কোনো কিছুর আশায় থাকা অপেক্ষা। আর যার প্রতি মনের টান আছে, যার জন্য দিনের পর দিন বসে থাকা যায়, তার জন্য বসে থাকা হল প্রতীক্ষা।



আমি বরাবরই আশাবাদীদের দলে। তোমার প্রতীক্ষায় থাকবো বলেই হয়তো ভুল সময়ের স্রোতে ভেলা বাসাবো সমুদ্রজলে।



রফিক আজাদের “প্রতীক্ষা” কবিতাটা পড়েছ কখনো? আমি তাঁর কথাতেই বলতে চাই...





“...আমি তোমার জন্যে পথপ্রান্তে অশ্বত্থের মতো

দাঁড়িয়ে থাকবো-

ঐ বৃক্ষ অনন্তকাল ধ’রে যোগ্য পথিকের

জন্যে প্রতীক্ষমান,

আমাকে তুমি প্রতীক্ষা করতে বোলো

আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো অনড় বিশ্বাসে,

দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে

আমার পায়ে শিকড় গজাবে…

আমার প্রতীক্ষা তবু ফুরোবে না…”

৭ টি +১/-০