নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তো মানুষ। আর কি কোন পরিচয় থাকে নাকি?

নেফার সেটি

আকাশের অসীম প্রান্তরে তাকিয়ে থাকো। কখনো নিরাশ হয়ে যেও না। হয়তো একটা বাজপাখিও উড়ে আসতে পারে......

নেফার সেটি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্ত্র যখন সম্ভ্রম!!!

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৪৮

টেকনাফের রাখাইন মেয়ে প্রিনছা। সত্তরের জ্বলোচ্ছ্বাসে পরিবারের সবাই শেষ। অসম্ভব রূপবতী প্রিনছা।

প্রিনছা যোগ দেয় এক মেডিকেল টিমের সাথে। আর্তের সেবা করাই এদের কাজ। টিমটা একাত্তরের ফেব্রুয়ারিতে আসে বরিশাল, সাথে প্রিনছা।

সুরেন বাবু। চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুট করার জন্য ইংরেজরা তাকে বরিশালে নির্বাসনে পাঠায়। সেখানেই থেকে যায় সুরেন বাবু।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা চালিয়ে যা রোজগার করতো সবই ব্যয় করতো জনসেবায়। প্রিনছাকেও মেয়ের মতোই কাছে টেনে নেয় সুরেনবাবু।

১৯৭১ এর জুলাই মাস....
পাথরঘাটা থানায় পাকিস্তানিরা নৃশংসভাবে হত্যা করে সুরেন বাবুকে। প্রিনছা হয়ে যায় ভোগের এক অতুলনীয় সামগ্রী।

নাহ, প্রিনছা ভেঙে পড়লো না!!! ভাবতে লাগলো কিভাবে প্রতিশোধ নেওয়া যায়। নিজেকে সঁপে দিলো তাদের হাতে!!!
ক্যাম্পে একের একের পর এক হাত বদল হতে লাগলো। পতিতাদের মত শয্যাসঙ্গী হতে লাগলো পাকিস্তানীদের। পুরো বিশস্ত হয়ে গেল তাদের। এবার যোগ দিল রান্নাঘরে। অতুলনীয় সব রান্না করে জয় করলো পাকিদের মন, সাথে নারীস্পর্শ। পাকিরাও আনন্দিত।

প্রিনছাকে ছাড়া একপ্রকার অচল হলো পাকিরা। পূর্ণ আস্তা অর্জন করলো। এটাই চাচ্ছিলো প্রিনছা।

এবার শুরু আসল খেলা। পাকিদের বললো সে গর্ভবতী। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। দুইজন সৈনিকের সাথে গেল ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারকে গোপনে শাসালো প্রিনছা। বললো বিষাক্ত ঔষধ দিতে। যেটা খাবারে মেশালে গন্ধ বের হবে না কিন্তু কাজ হবে তাড়াতাড়ি। ডাক্তারকে আবারো শাসালো এটা ফাস করলে সে নিজেই মরবে। ডাক্তার বললো কিছুদিন দেরি হবে। ঐষধ আনতে হবে বাইরে থেকে।

প্রিনছা প্রতিনিয়ত আসতে থাকলো ডাক্তারের কাছে। পাকিরা দেখলো প্রিনছা পালানোর চেষ্টাও করছে না। এভাবেই আরো বিশ্বস্ত হয়ে গেল।

ঐষধ পেয়ে গেলো। সন্ধ্যার সময় খুব যত্ন করে রান্না করলো ভাত, মাছ, রুটি, সবজি, ভুনা গরুর মাংস, ডাল। সব খাবারে মেশানো হল বিষ। সব সৈনিকদের একসাথে বসিয়ে নিজ হাতে যত্ন করে খাওয়ালো। ব্যাস কাজ শুরু হয়ে গেল। আস্তে আস্তে সবাই অচেতন হয়ে গেল। এটাই চাইছিলো প্রিনছা।

পালিয়ে গেলো নাজিরপুর। ইচ্ছা ছিলো মুক্তিদের সাথে যোগ দেবে। কিন্তু মুক্তিদের খোজ পেল না।

খবর শুনে জ্বলে উঠলো প্রিনছা। ক্যাম্পের ৪২জনের মধ্যে ১৪জন মারা গেছে আর বাকিরা হাসপাতালে।
তার মানে ঐষধ পুরোপুরি কাজ করে নি। ডাক্তার কি তাহলে বেঈমানি করেছে!!! ডাক্তারকে হত্যা করতে হবে। ভেজাল ঐষধ দিয়েছে সে। কিন্তু পারলো না প্রিনছা। পাকিরা কুত্তার মতো খুজতে থাকলো প্রিনছাকে। পালিয়ে গেল ঢাকা। বিজয়ের পরে ফিরে আসলো ঢাকায়।

আচ্ছা, প্রিনছা কি খারাপ মেয়ে? সে কি পতিতা? তার কি সংসার হবে না? সে কি খারাপ কাজ করেছে?
নাহ, সে ঠিকই করেছে। সে তার সম্ভ্রমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। সেও মুক্তিযোদ্ধা। সে যে বীরাঙ্গনা মা। আমি তাকে মা হিসেবে পেতেও রাজি। এমন মা কজন পায়??? আমরা পেয়েছি!!!
কিন্তু নাহ!!! আমরা গর্ববোধ করতে পারি না....
আমরা যে এখন লিটনের ফ্লাটে যাওয়া মা চায়, যুদ্ধে সম্ভ্রম হারানোরা যে ব্যাকডেটেড কিন্তু লিটনের ফ্লাটে সম্ভ্রম হারানোরা যে আধুনিক!!!

[কৃতজ্ঞতা: জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা- মেজর কামরুল হাসান ভূইয়া]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩৫

এস কাজী বলেছেন: অসাধারণ!! প্রিনছা কে নিয়ে আর কোন লেখা নেই? জানতে ইচ্ছে করছে। ভাল লেগে গেছে।

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৬

নেফার সেটি বলেছেন: না ভাইয়া, আর কোন লেখা পাই নি।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:০৬

প্রতিবাদী আর যুক্তিবাদি বলেছেন: আমি গর্বিত এই মহান বীরের জন্য। তিনি আমাদের বীর জাতীর গৌরবের প্রতীক। যিনি মাথানোয়াবার নয়।

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:০৯

প্রতিবাদী আর যুক্তিবাদি বলেছেন: আপনার হেডিংটা ভুল হয়েছে। এটা হওয়া উচিত ছিল অস্ত্র যখন মনোব।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এই অসামান্য লেখার জন্য। আর কৃতজ্ঞতা এই বীরের প্রতি যাঁর জন্য আজ আমরা স্বাধীন জাতী।

৪| ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:১২

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
প্রিনছা সম্পর্কে এই প্রথম জানলাম।

ধন্যবাদ আপনাকে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।

তাকে শ্রদ্ধা জানাই হৃদয়ের গভীর থেকে।

৫| ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩৫

জেন রসি বলেছেন: এই বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত করছি।

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: মহান বীর প্রিনছাকে সালাম। তিনি এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন আমরা সেই খোঁজ রাখি কি?

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০৫

নেফার সেটি বলেছেন: না। সময় কই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.