নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
উৎপলকুমার বসু।
হ্যাঁ, তার সম্মন্ধে একথা বলাই যায় যে তিনি যতবড় কবি, তত কম খ্যাতি নিয়েই যাপন করেছেন তার কবি জীবন। এবং গাণিতিক হারে ক্রমবর্ধমান পাঠক রেখে তিনি আজ চলেই গেলেন তার কবিতাকে সংকটের মুখে ফেলে রেখে। সংকট? কারণ তিনি জানতেন কবিতার ভাষা বদলায়। তাঁর আবিস্কৃত পথও উল্টে যাবে একদিন। বোনের সাথে তাজমহল আর কবুতরের বিষ্ঠা উভয়ই চন্দ্রতাপে উড়ে যেতে চায় মূর্খ-শূন্যতায়। চাতুর্যে ভারা আমাদের আমরতার আশা তাকে ঠিক ধরে রাখতে চায় আগের মত, চির-কামানের ছায়ায় বসে দেখি দমকল ছুটে যাচ্ছে ধ্বংস রুখতে, ছাই কমাতে, সভ্যতার না বাড়ুক কার্বন মনোক্সাইড। কবি উৎপরকুমার বসু এই চির-কবিতার ফর্মটাকেই ভেঙে দেখেছেন। শিল্প বা কবিতা যে শেষ অব্দি ফর্মের ডিলিং, এর থেকে বেশি কিছু নয় তারই অগনন উদাহরণ তার সবকটি বই, লেখাপত্র। ‘ধূসর আতাগাছ’ বা ‘নরখাদক’এর মত লেখাতে ভাংচুরের ঝনঝন। অতিব্যবহারের আড়ষ্ঠতা কবিকে কাটিয়ে তুলেই লিখতে হয় নতুন কবিতায়। আর ভাষা যে বদলায়, সেই বদলের শেষতম উজ্জ্বল উদাহরণও কিন্তু তিনি নন; কেননা তিনি যে নভোছক আর নভোযান রেখে গেছেন ভাবী কবি আর পাঠকের জন্য, সেই অশ্রুত নব লেখনী কবিতাকে বদলে দেবার জ্বালানী দেবার জন্য যথেষ্ট। এভাবেই তিনি ভাষার শাসক। তার কবিতার মধ্যে তিনি রেখে গেছেন রেজারেকশনের সূত্র আর শক্তি। সজীব প্রাণকোষ যেভাবে নিজেকে ক্ষয়ের সাথে সাথে নতুন ভাবে সৃষ্টির যে রহস্য নিয়ে বয়ে চলে যুগের পর যুগ, উৎপলকুমার বসুর কবিতা তেমনি জীবন্ত প্রাণ, ক্ষণে ক্ষণে ক্ষয়, বৃদ্ধি, সদা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। কবিতাশিল্পে রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ পরবর্তী হেভিওয়েট মোহাম্মদ আলী তিনি, মুষ্ঠি এঁটেছেন ট্র্যাডিশনাল ফর্ম আর সিনট্যাক্সের বিরুদ্ধে, রিং-য়ের বাইরেই তিনি একে একে ধারাসাই করেছেন বাংলা কবিতার পেলবতা, মধুরতা, বসস্ত যামিনী-যাপন। তার বাংলা কবিতার ভাষা, ভাব, ডায়ালগ যদি ট্র্যাডিশনাল বাংলায় আপনি অনুবাদ করতে বসেন তো ভুল হয়ে গেছে ডেয়ার! এই ভাষা, ভাব আর ভঙ্গী অতীব নতুন বাংলা ভাষায়। তবে ইউরোপীয় কবিতার সাথে যাদের পরিচয় আছে তারা হয়তো বলতেই পারেন বিশ্বকবিতায় এ আর তেমন কী নতুন সংযোগ। হাবা যুবকের হাসি দুশো বছরের পুরানো রেকর্ড। এমন অনেক স্ফূলিঙ্গ তিনি আমদানী করেছেন ইউরোপীয় কবিতা জগৎ থেকে। এমন অনেক বিষয় তারা অনুসন্ধান করে আবিষ্কার করেছেন। এই ইউরোপীয় কানওয়ালা গাধার পিঠে বসা কাব্য সমালোচক হয়তো জেনে থাকবেন রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দের কপি-শিল্পের বিরুদ্ধে উৎপলকুমার বসুই প্রথম কবিতা মিউট্যান্ট তৈরি করেছেন। মানে বাংলাভাষা আর ইউরোপীয় ভাবের সঠিক ছহি মিশ্রণে গড়া তার কাব্য কলা। মানে বসুর কবিতা অনেক বেশি ইন্দো-ইউপরোপীয় রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দের চেয়ে। যেখানে বলা যায় রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ উভয়েই ইউরোপীয় ভাব-চোরা বাংলাভাষী, যাদের একজন এই বাংলা লিখিত ভাষা আর ভাবের চিরন্তন একটা ম্যাপ এঁকেছেন ইউরোপীয় ভাষা-সাহিত্যের আদলে আর অপরজন সেই ম্যাপের ডিটেলিং আর রং চং করেছেন সেই একই রঙে। এই দুইজনই বাংলা ভাষার সাহিত্য কলার জন্য অবধারিত, উপেক্ষাহীন। রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দ ছাড়া কবিতা বলতে আমরা আজ অব্দি যে ট্রেন্ড বুঝি তা তৈরিই হতো না। আর আমরা যেনো ভুলে না যাই আমাদের বাংলা কবিতা বলে আমারা যা বুঝে থাকি, যা আমাদের কবিতা বলে প্রচলিত, যার ধারাবাহিকতা বহমান তা ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডে গড়ে ওঠা একটা শব্দানুভূতির মাধ্যম। রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ কেউই শব্দানুভূতিতে ইউরো ধারার বাইরের কেউ না। সেই অর্থে ল্যাটিন বা আফ্রিকান সাহিত্য বলে আমরা যা আন্তর্জাতিকভাবে পড়ে থাকি তাও ল্যাটিন বা আফ্রিকার সাহিত্য নয়। তাই বিশ্বে সাহিত্য বলে যা পঠিত, হিতকর, আরামদায়ক তা ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডে গড়া মাল সামানা। এই কথা মেনে নেওয়ার মধ্যে হীনমন্যতার কিছু নাই যে বাংলা কবিতা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে তা ইউরোপীয় কবিতার এক্সটেনশন। ইউরো স্ট্যান্ডার্ড বাংলা সাহিত্যের মূলত আমাদের জন্যই। দীর্ঘ চর্চার ভিতর দিয়ে তা বাংলাভাষী একটা রূপ পেয়েছে। উৎপলকুমার বসুও এর বাইরের কেউ নন। শুধু উৎপলই নন হাল আমলে যাদের বলা হয় তরুণ কবি তারাও এই স্ট্যান্ডার্ডের বাইরে নন। চলমান বাংলা কবিতা বলে যা প্রচলিত সেই প্রচলনটাকে চূড়ান্ত নৈর্ব্যত্তিক জায়গা থেকে দেখার সুযোগতো উৎপরকুমার বসুই তৈরি করে দিলেন। বহুদিনের চর্চায় গড়ে ওঠা আমাদের ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা সাহিত্যে উৎপলকুমার বসু সেই নাম যিনি অন্তত একশ বছর নতুর লেখার প্রেরণা দিবেন নতুন কবিদের যে শিল্পের ইতিহাস প্রতিনিয়ত তৈরি হয় চলমানতা বা ট্র্যাডিশনের বাইরে। রবীন্দ্রনাথের প্যাস্টোরাল পোয়েট্রির মধ্যযুগী চনমনে ভাব বা গুনগুন সঙ্গীত মুখরতা, মুগ্ধতা আর জীবনানন্দীয় এলিয়টী বাংলা কবিতার ইতিহাস বা ‘কবিতার কথা’র ট্র্যাডিশন এন্ড ইন্ডিভিজ্যুয়ালিটির যে সংবিধান তার বাইরে দাঁড়ানো উৎপলকুমারের হাবা হাসি। সেই হাসির শব্দ দিনকে দিন প্রবল হবে। জীবনানন্দ পরবর্তীতে এমন কবিতায় অনুপ্রেরণা বিরল। সজহ কথায়, উৎপল পরবর্তী বাংলা কবিতা আন্তজার্তিক বাংলায় রচিত হবে। তিনি এই আগুন জ্বেলে গেছেন। এমন কত কত খাপছাড়া ফর্মে যে কবিতা অপেক্ষা করে বসে আছে এই কথা নতুনের জন্য তা তিনি দেখিয়েছেন। সাহিত্যজীবনে এর চেয়ে বেশি আর কিছু তার কি আর করার দরকার ছিলো।
উৎপলকুমার বসুর উচ্চতা ভালো বা মন্দ কবি হিসাবে নয়। বা তার টেক্সের পাশে নম্বরিং করার দরকারও নাই। তিনি হলেন সেই হিরো, যাকে দেখে এন্টি-হিরোরাও হিরো হবার জন্য বড় রাস্তায় দাঁড়ায়ে শীস দিচ্ছেন। তার কবিতা এক একটা খাদ, পরিখা। তাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা শিখে নতুন লেখাটি লিখে নিতে হবে। তিনি এমনই ইনেস্পাইরেশন, ফ্যাশন, প্যাশন-জাগানিয়া, ইনক্রিডেবল।
২.
বাংলা কবিতার পাঠ্যক্রম কিন্তু এমন হতে চলেছে : জীবনানন্দ, উৎপল, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য। এইটা একটা সম্ভাবনা, চূড়ান্ত কিছু নয়।
৩.
বিদায় মায়েস্ত্রো! উৎপলকুমার বসু! ♦
http://m.banglatribune.com/tribune/single/111498
২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪০
রুদ্র জাহেদ বলেছেন:
বাংলা কবিতার পাঠ্যক্রম কিন্তু এমন হতে চলেছে : জীবনানন্দ, উৎপল, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য। এইটা একটা সম্ভাবনা, চূড়ান্ত কিছু নয়।
লেখা পড়তে ভালো লাগছে।তবে সব কথার সাথে নিজের মত মিলতেছে না
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২০
মৃদুল মাহবুব বলেছেন: না মেলাটাই স্বাভাবিক। সব মত কী আর মিলবে! আপনার অমিলগুলো জানতে পারলে ভালো হতো। আমার নতুন করে ভাবার অবকাশ তৈরি হতো। ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২৬
আহসানের ব্লগ বলেছেন: বাংলা কবিতার পাঠ্যক্রম কিন্তু এমন হতে চলেছে : জীবনানন্দ, উৎপল, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য। এইটা একটা সম্ভাবনা, চূড়ান্ত কিছু নয়।