নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চক্ষে আমার তৃষ্ণা

না বলা কথা... [বি:দ্র: এই ব্লগটি কাউকে না পড়ার জন্য অনুরোধ করিছ। এটি একান্তই ব্যক্তিগত ব্লগ। ধন্যবাদ। ]

পপকর্ণ

স্বার্থপর মানুষ

পপকর্ণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্তমান রাজনীতির হালচাল

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪২

১৮ নভেম্বর ২০১৩ সোমবার বিকেল ০৪:৪৬ এয়ারটেল অফিস পিঙ্কসিটি গুলশান-২ ঢাকা



প্রিয় মৃন্ময়ী,



সকাল থেকে একটানা কাজ করলাম। এখন একটু বিশ্রাম নিবো। আর এই ফাঁকেই লিখব ব্লগ। আজকে শুধু রাজনীতি নিয়ে লিখব।



বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজকে নতুন মেরুকরণ হল। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এরশাদ মহাজোট থেকে বের হলেন এবং একই সাথে শেখ হাসিনা-প্রস্তাবিত সর্বদলীয় সরকারে যোগদান করলেন। নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন। বিএনপিকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার উদাত্ত আহ্বান জানালেন।



অন্যদিকে, বঙ্গভবনে আট সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনকালীন 'সর্বদলীয়' মন্ত্রীসভা শপথ নিলো আজ। সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাই থাকবেন। নবনিযুক্ত ৬ জন মন্ত্রী হলেন আওয়ামী লীগ থেকে তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু; জাতীয় পার্টি থেকে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রওশন এরশাদ ও রুহুল আমীন হাওলাদার, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে রাশেদ খান মেনন; ২ জন প্রতিমন্ত্রী হলেন জাতীয় পার্টি থেকে মুজিবুল হক চুন্নু ও সালমা ইসলাম। শীঘ্রই তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনও যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রতীয়মাণ হয়।



এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে আছেন। বিএনপি পুরোপুরি ধরাশায়ী। আজতক এটুকু স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকারের অধীনে একটি 'ফেয়ার' নির্বাচন করবেন এবং বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসবেন। এবং সত্যিই যদি সেটা করতে তিনি সক্ষম হন, তাহলে সেই সরকারকে উৎখাত করার মত রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির নেই বলেই প্রতীয়মাণ হয়। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের বড় দাগে বেশ কিছু ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর আন্দোলন বিএনপি গড়ে তুলতে পারেনি। অবশ্য এটি পারারও কথা না। কেননা, যেসব রাজনীতিক বিএনপি করেন, অধিকাংশই করেন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির আশায়। সেখানে আদর্শের ন্যূনতম বালাই নেই। সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের নিয়েই বিএনপির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সেই ধারা থেকে বের হতে পারেনি। দলের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন গড়ে তুলবে, পুলিশের মার খাবে, জেলে যাবে--- এমন নেতা বিএনপিতে বিরল! বরং তারা আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঘরে বসে থাকে। যার কারণে যেসব কর্মী-সমর্থক সত্যিকারার্থেই জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে কিংবা আওয়ামী বিরোধিতার কারণে বিএনপি করে, তারাও মাঠে নামতে সাহস পায়না।



বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দুটি শক্তির প্রভাব মারাত্মক পর্যায়ের। একটি হল সশস্ত্রবাহিনী, অন্যটি বিদেশী শক্তি। দুটি শক্তির কাছেই আমাদের প্রধান দুই দল বিভিন্ন সময়ে ধর্না দেয়। কিন্তু হালে এই শক্তির কাছে বিএনপি পাণি পাচ্ছে না। ভারত ইতোমধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না; শুধু তা-ই নয়, তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করার পক্ষে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা দৌড়ঝাপ করলেও ভারতের অনড় অবস্থানের কারণে বিশেষ কিছু করতে পারছে না। ড. ইউনূসের সাথে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক। ড. ইউনূসকে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে অপমান করেছে, সেটা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ড. ইউনূসও শেখ হাসিনা সরকারের উপর নিদারুণ ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন বিবৃতি দিয়ে সময়-সময়ে পরোক্ষভাবে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভাবা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করে তিনি শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা করবেন বিএনপিকে। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে তেমন কিছু প্রতীয়মাণ হচ্ছে না; আর সেটা ড. ইউনূস করে থাকলেও দৃশ্যত কোনো সফলতা পায়নি এখন পর্যন্ত। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা দিল্লিতে গিয়ে মনোভাব পরিবর্তনের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়ে তিনি ফিরে এসেছেন।



বিদেশী শক্তি শেখ হাসিনার উপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করছে না কিংবা করতে পারছেনা। এর পিছনে কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে।

প্রথমত, শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। জঙ্গিদের মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়নি। নির্মূল করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। বিশেষ করে ভারত এক্ষেত্রে হাসিনা সরকারের উপর শতভাগ সন্তুষ্ট। অ্যামেরিকাও এ ব্যাপারে হাসিনার উপর সন্তুষ্ট।

দ্বিতীয়ত, হাসিনা সরকারের অধীনে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার (সঠিক সংখ্যাটি জানিনা) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু-একটি বাদে সব নির্বাচন দৃশ্যত কারচুপিবিহীন ও সুষ্ঠ হয়েছে। অধিকাংশগুলোতেই আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে, বিএনপি জয়ী হয়েছে।

তৃতীয়ত, খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রস্তাব ছিল সম্পূর্ণ, অপরিপক্ব এবং শিশুসুলভ একটি প্রস্তাব। তুলনামূলকভাবে শেখ হাসিনার 'সর্বদলীয় সরকার'-এর প্রস্তাব অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার সাথে সাজুয্যপূর্ণ।

চতুর্থত, শেখ হাসিনার সরকার একটি প্রগতিশীল সরকার। বিএনপি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এলে জঙ্গীবাদের উত্থান ও বিস্তারের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এই ভীতিটা মারাত্মকভাবে ভারত তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাজ করে।



এবার দ্বিতীয় শক্তি অর্থাৎ সশস্ত্রবাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে আলোচনা করা যাক। তৃতীয় বিশ্বে তথা বাংলাদেশ-পাকিস্তানে সেনাবাহিনী সবসময়ই বিশাল ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানে নামেমাত্র গণতান্ত্রিক সরকার থাকলেও সেনাবাহিনীই পর্দার অন্তরালে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশেও জন্ম থেকে অদ্যবধি ১৭ বছর সামরিকতন্ত্র ছিল। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সাল থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হলেও ১৯৯৬ ও ২০০৭ সালে বড় ধরনের ধাক্কা খায়।



তবে বর্তমানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা কম। এর পিছনেও কিছু কারণ রয়েছে।

প্রথমত, সশস্ত্রবাহিনীর নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী ঘরানার কর্মকর্তারা নিযুক্ত রয়েছেন বর্তমানে। তাদের দ্বারা অঘটন ঘটার সম্ভাবনা বেশ কম।

দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনী মারাত্মক ক্ষুব্ধ ছিল তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায়। কিন্তু এই সরকারই সেই বিদ্রোহের বিচার করায় বিশেষ করে কিছুদিন আগে রায় ঘোষিত হওয়ায় সেনাবাহিনীর ক্ষোভ খানিকটা প্রশমিত হয়েছে। হাসিনার প্রতি আস্থা বেড়েছে।

তৃতীয়ত, এটাই সত্য যে, তুলনামূলক বিচারে আওয়ামী সরকারের সময়েই সশস্ত্রবাহিনী বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। এবারো হাসিনা সরকার সশস্ত্রবাহিনীকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন।

চতুর্থত, সংশোধিত সংবিধানে কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করায় সশস্ত্রবাহিনী কিছুটা হলেও অনুৎসাহিত হয়েছে।



সার্বিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনাই এগিয়ে আছেন। খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত ধরাশায়ী অবস্থায় রয়েছেন। দৃশ্যত এটাই মনে হচ্ছে যে, আজকে শপথ নেয়া নির্বাচনকালীন 'সর্বদলীয়' মন্ত্রীসভার সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে আবারো সরকার গঠন করবে; জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসবে। নির্বাচন প্রতিহত করা বিএনপির জন্য কঠিন হবে; আরো কঠিন হবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে নতুন সরকার গঠন করে ফেললে সেই সরকারকে উৎখাত করা। এটাই প্রতীয়মাণ সত্য যে, প্রচুর জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করার মত কার্যকর নেতৃত্ব বিএনপিতে নেই। তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করতেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, হচ্ছে।



আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল সর্বদলীয় সরকারে বিএনপির যোগদান করা উচিৎ; নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিৎ। যদি সত্যিই বিএনপি তাই করে, আওয়ামী লীগের জন্য খুবই কঠিন হবে কারচুপি করে ক্ষমতায় আসা। বর্তমানে মিডিয়ার জয়জয়কার। অসংখ্য টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, সাংবাদিক রয়েছে। এমতাবস্থায় কারচুপি করে ক্ষমতায় আসা বা টিকে থাকা খুবই কঠিন। শেখ হাসিনার তেমন মনোভাব নেই বলেই আমি বিশ্বাস করি।



আরেকটি সম্ভাবনার কথাও বলে রাখি। এমনও হয়ে যেতে পারে যে, বিএনপির সকল ভোট জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রতীক পেয়েছে এবং নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। তেমনটা হলে অবাক হবো না!



সর্বদলীয় সরকার গণতান্ত্রিক হলেও ব্যক্তিগতভাবে আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষপাতী। এটা ঠিক যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও কারচুপিবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষপাতী অন্য একটি কারণে। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। আর এরকম উত্তম-মধ্যম মাঝে-মাঝে অসৎ, নিকৃষ্ট রাজনীতিকদের প্রাপ্য।



তবে আমার শেষ কথা হল আমি চাই শেখ হাসিনার সরকার অন্তত আরো দুবছরের জন্য হলেও ক্ষমতায় থাকুক। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শেষ হোক এবং মামলার রায় কার্যকর হোক। বাংলাদেশের শহীদদের আত্মা শান্তি পাক, শহীদদের আত্মীয়-স্বজনরা ন্যায় বিচার পাক। ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধের সুবিচার নিশ্চিত হোক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.