![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বার্থপর মানুষ
১৯ অক্টোবর ২০১৪ রবিবার রাত্র ১:৪৮ ৩৫ প্লামরোড টরন্টো, কানাডা
বিষয়টি প্রথমেই বলে নেয়া ভালো। আমার এই লেখাটির বিষয়বস্তু মোটেই কোনো 'খটমট' আইন নিয়ে গুরুগম্ভীর বিশ্লেষণী আলোচনা নয়। আমি জানি আইন বরাবরই নীরস সাবজেক্ট। তারপর আইনের উপর আলোচনা আরো বিরক্তিকর। তারচেয়ে বরং আমি কিছু গল্প বলি। গল্পগুলো মোটেই বানানো নয়। একদম সত্যি। অধিকাংশই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া।
উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা এসেছি। মাস ছয়েক হয়ে গেলো। কানাডা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ, বাংলাদেশের চেয়ে ৬৭ গুণ বড়ো। অথচ কানাডার মোট জনসংখ্যা বাংলাদেশের পাঁচভাগের এক ভাগ। কিন্তু কানাডার সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশ, ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের অপূর্ব সমাহার। আর দেশটি অতি চমৎকারভাবে টিকে আছে আরেকটি সৌন্দর্যের জন্য। সৌন্দর্যটি পরে বলছি। চলুন গল্পগুলো শোনা যাক।
কানাডা আসার পর আমার নিত্য যাতায়াত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাস-ট্রেনে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের জন্য চমৎকার একটি ওয়েবসাইট আছে। সেখানে প্রতি মুহূর্তে তথ্য আপডেট করা হয়। যাত্রীরা মূলত কোথাও যাবার আগে ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন বাস-ট্রেনের সময়সূচিগুলো দেখে নেয়। বাসগুলো যত্রতত্র থামে না; সুনির্দিষ্ট স্টপ আছে। সেখান থেকেই মানুষ তুলে নেয়, সেখানেই মানুষকে বাস থেকে নামতে হয়। মাঝপথে নামিয়ে দেয়ার জন্য বাসড্রাইভারকে অনুরোধ করারই কোনো সুযোগ নেই।
তো এরকম একদিন আমার ল ফার্মে যাবার জন্য বাসে উঠেছি। এমনিতেই সেদিন আমি দেরি করে বাসা থেকে বের হয়েছি। যথাসময়ে কর্মস্থলে যেতে পারব না কিনা, তা নিয়ে উৎকন্ঠা কাজ করছে। কারণ, সেদিন বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ ছিল ফার্মে। সিনিয়র আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। যাই হোক, এমন উৎকন্ঠার মধ্যেই একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো। ষাটোর্ধ্ব একজন যাত্রী বাসে উঠতে গিয়ে নিচে পড়ে গেলেন। তেমন আহামরি কোনো ব্যথাও পাননি। ড্রাইভার তাকে জিজ্ঞেস করলেন কোনো স্ক্রাচ পড়েছে কিনা। তিনি জানালেন যে, তিনি একদম ঠিক আছেন। কোনো সমস্যা নেই। ড্রাইভার তারপরও নিশ্চিত হবার জন্য প্যান্টের কাপড় হাটুর উপর ওঠাতে বললেন। দেখলেন সামান্য একটু স্ক্রাচ পড়েছে। ড্রাইভার তখনি কর্তৃপক্ষের কাছে ফোন দিলেন। পুরো ঘটনা খুলে বললেন। ফোনটা রেখেই ঘোষণা দিলেন, সবাইকে বাস থেকে নেমে যেতে হবে। কারণ, ওই ব্যক্তির জন্য মেডিকেল টিম আসবে। সুতরাং এতক্ষণ যাত্রীদের অপেক্ষা করিয়ে রাখার কোনো অর্থ নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটো বাস এসে হাজির। আমরা সবাই নতুন বাসগুলোতে উঠে পড়লাম। আগের বাসটি রয়ে গেলো সেই যাত্রীকে নিয়ে।
যদিও আমার পনেরো মিনিট দেরি হয়েছিল সেদিন ফার্মে পৌঁছতে, কিন্তু পুরো ঘটনাটিতে আমি মুগ্ধ। তবে তাই বলে ভাববেন না যে, আহা! এরা কত মানবিক! ব্যাপারটি কিন্তু আসলে তা নয়। ব্যাপারটি অন্য জায়গাটিতে। ভয়। কীসের ভয়? আইনের ভয়। চাকরি যাবার ভয়। মামলার ভয়। প্রতিটি বাসে ক্যামেরা থাকে। ক্যামেরাতে সব কিছু ধারণ করা হয়। আঘাতপ্রাপ্ত যাত্রী বারংবার নিশ্চিত করার পরও ড্রাইভার ফোন দিয়েছে কর্তৃপক্ষকে। কারণ, সে তার দায়িত্বের অবহেলা করার রিস্ক নেয়নি। চাকরি চলে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া আহত মানুষটিও মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে দিতে পারে। হ্যাঁ, এটাই হলো আইনের শাসন। যেখানে বাঘা-বাঘা রাজনীতিবিদরা পর্যন্ত অসহায়! বেআইনী কিছু করে পার পাবার সুযোগ নেই।
এবার আরেকটি ঘটনার উদাহরণ দেই। সেটিও বাস ড্রাইভার সংক্রান্ত। সবদেশের ন্যায় কানাডায়ও নিয়ম হলো লাল আলো জ্বলার সাথে সাথে সকল পরিবহনকে সম্পূর্ণ থেমে যেতে হবে। তবে লাল আলো জ্বলার আগে একবার হলুদ আলো জ্বলে। হলুদ আলো দেখলে থামানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। তো বাসটি হলুদ আলো দেখেও আর থামলো না। সজোরে টান দিয়ে চলে গেলো। রাস্তা ফাঁকা। কোনো সমস্যাও হবার কথা না। কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধলো অন্য জায়গায়। ঠিক সেই সময়ই একজন পথিক লাল আলো দেখে রাস্তা ক্রস করার জন্য সামনে পা বাড়িয়েছিলো। বাসটি সাঁই করে তার পাশ দিয়ে চলে যায়। আর পুরো ঘটনাটি বাসের ভিডিওতে রেকর্ড হয়ে ছিলো। ফলাফল কী? ড্রাইভার চাকরি থেকে বরখাস্ত।
©somewhere in net ltd.