![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বার্থপর মানুষ
৮ জানুয়ারি ২০১৫ বৃহস্পতিবার রাত্র ৬:৩৩ ৩৫ প্লামরোজ বুলেভার্ড টরন্টো
কিছু কিছু ঘটনার মনের পলিমাটিতে দাগ কেটে যায়! হয়তো সময়ের ব্যবধানে দাগটা হালকা হয়ে যায় বা স্মৃতি থেকে মুছে যায়! কিন্তু যখন দাগটা কাটে, তখন তা অবস্থাভেদে তীব্র আনন্দ বা যন্ত্রণার উৎস হয়। গতকাল বেদনার দাগকাটা একটা ঘটনা ঘটেছে।
মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। ব্যারিস্টার, সলিসিটর ও নোটারি পাবলিক। তার ফার্মের নাম 'এমারাল্ড লিগ্যাল প্রোফেশনার করপোরেশন'। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৯তম ব্যাচের ছাত্র। লন্ডন থেকে মাস্টার্স করেছেন। ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের চেম্বারে কাজ করেছেন প্রায় ৫ বছর। ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ভীষণ অমায়িক, নম্র ও ভদ্র একজন মানুষ। চোখে কিছুটা সমস্যা আছে তার। সম্ভবত জন্মগত। তারপরও একান্ত নিজের ইচ্ছা আর পরিশ্রমে এতদূর এসেছেন। তার স্ত্রীও একদম অন্ধ। দুটো সন্তান রয়েছে। রূপন্তি ও আহনাফ--- দুজনেই বেশ চমৎকার।
কানাডাতে আসার পর আমি সাবওয়েতে কাজ করছিলাম তখন। হঠাৎ করেই আমার মনে হলো সাবওয়ের জন্য আমি প্রস্তুত না। বরং কোনো ল ফার্মে কাজ করতে পারলে তা আমার ভবিষ্যতের জন্য ভালো হতো। নিজাম হাশমি ওরফে রানা ভাইর সাথে যোগাযোগ করলাম। তাকে আমি ফেসবুক সূত্রে চিনি। তিনিও ঢাবির ১৯তম ব্যাচের। আমাকে মুগ্ধ করে দিয়ে একদিন প্রায় দুই ঘন্টা কথা বললেন। আমার কাজ ছিলো বিধায় আমি ফোন রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। নতুবা আমি নিশ্চিত আরো কথা চলত। কথাচ্ছলে যখন আমি তাকে কাজের ব্যাপারে বললাম, তখন তিনি রাজ্জাক ভাইর কথা বললেন। তার ফার্মে কাজের জন্য লোক প্রয়োজন। আমি রাজ্জাক ভাইর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলাম। তিনি আমাকে ইমেইলে সিভি পাঠাতে বললেন। আমি কানাডিয়ান ফরম্যাটে সিভি বানিয়ে ওনাকে পাঠিয়ে দিলাম। ইন্টারভু নিলেন। যোগদান করতে বললেন। তবে শর্ত হলো এটা ভলান্টিয়ারিং হবে। ভবিষ্যতে পেমেন্টের ব্যাপারে ভাববেন। আমি রাজি হলাম। বিরক্তিকর ব্যাপার হলো ইন্টারভু নেয়ার সময় প্রায় ২ ঘন্টা আমার অপেক্ষা করতে হয়ছিলো।
যাই হোক, আমি ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে যোগদান করি। প্রায় প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা সময় দিয়েছি। এমনকি মাঝে-মধ্যে ১০-১২ ঘন্টা কাজ করেছি। রাত্র ১টায়ও বাসায় এসেছি। আবার ভোররাত্রেও কখনো বাসা থেকে বের হতে হয়েছে। তবে হ্যাঁ, মাঝে-মধ্যে ক্লাশের জন্য গ্যাপও দিতে হয়েছে। আমাকে কোনো পেমেন্ট দেয়া হয়নি। তারপরও নিজেকে যতটুকু উৎসর্গ করা যায়, আমি করেছিলাম। একবার শুধু ৪টি চিঠি বাবদ ১২০ ডলার দিয়েছিলেন। এভাবেই চলছিলো। তাছাড়া রাজ্জাক ভাইর বিনয়ী আচরণও আমার ভালো লেগেছিলো। এখনো ভালো লাগে।
এদিকে সাবওয়ে থেকে কাজ করে যা অর্থ জমিয়েছিলাম, তা ফুরিয়ে আসে। উপায়ন্তর না পেয়ে আমি রাজ্জাক ভাইর সাথে কথা বলি। তিনি আমাকে টিম হর্টনে কাজ করার পরামর্শ দিলেন। শাহিনা নামে একজনের কাছে রেফার করে দিলেন। আমি শাহিনার সাথে যোগাযোগ করলাম। পার্টটাইম জবের জন্য অ্যাপ্লাই করলাম। কোনো রেসপন্স পেলাম না। রাজ্জাক ভাইকে জানালাম। তিনি বললেন কথা বলে দেখবেন। আমাকে আর কিছু জানাননি। এদিকে আমার প্রত্যাশা ছিলো আরবিসিতে আমার লোনটা হয়ে যাবে। কিন্তু তিনবার আমাকে ডিক্লাইন করা হয়। তারপর আমি রানা ভাইর সাথে কথা বলি। সব কিছু শুনে তিনি বিস্মিত হয়ে যান! তার ধারণা ছিলো আমাকে অন্তত এক হাজার ডলার দেয়া হয়। যাই হোক, আমাকে পরামর্শ দিলেন যে, তুমি স্ট্রেইট বলে দিবে তোমাকে ১২শ থেকে ১৫শ ডলার না দিলে তুমি কাজ করবে না! আমি তখন বললাম ভাইয়া মাত্র ৪-৫শ ডলারের সাপোর্ট চেয়েছি। তাই তিনি দিচ্ছেন না! আর আপনি বলছেন ১২শ থেকে ১৫শ! তখন তিনি একদম হতবাক হয়ে যান! বললেন এটা রীতিমত অমানবিক! যাই হোক, তার পরামর্শ অনুযায়ী রাজ্জাক ভাইকে আরেকদিন জিজ্ঞেস করলাম যে, আমার ব্যাপারে আপনার ভাবনা কী! তিনি নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারলেন না! তবে কিছুটা আবেগপ্রবণ হলেও আমি স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বললাম যে, ভাইয়া, আমার মাত্র ৪-৫শ ডলারের একটা সাপোর্ট দরকার। তিনি সব কিছু শুনলেন মনোযোগ দিয়ে। বললেন দেখা যাক কী করা যায়!
এর মধ্যেই ভাবি আসা শুরু করলেন ফার্মে। তিনি আমাকে জানালেন রাজ্জাক ভাই একজন ফুল টাইম এমপ্লয়ি নিয়োগ করতে চান। আমাকে কাজ শিখে ফেলার পরামর্শ দিলেন। জানুয়ারি মাস থেকে একজন ফুলটাইম এমপ্লয়ি লাগবে। আমাকে রাজ্জাক ভাই সকাল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত অফিস করতে বললেন। আমি যথারীতি করলাম। ডিসেম্বরের শেষে এসে অ্যাসাইনমেন্ট করার জন্য দুদিন যেতে পারিনি। তাছাড়া এমনিতেও ফার্মে তেমন কাজ ছিলো না তখন। তারপরও ভাবি আমাকে ফোন দিলেন। রাজ্জাক ভাইর সাথে কথা হলো। জানালাম যে, আমি তিন জানুয়ারি থেকে আবার নিয়মিত অফিস করব। তিনি আর কোনো কিছু বললেন না। 'আচ্ছা' বলে ফোনটা কেটে দিলেন।
জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ আমি অফিসে গেলাম। যেহেতু ৩/৪ তারিখ শনি-রবিবার ছিলো। তারপর তিনি আমাকে ফোন দিলেন পরশুদিন। আমি তার সাথে কোর্টে যেতে পারব কিনা। আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না! কিন্তু যেহেতু রাজ্জাক ভাইর চোখে সমস্যা আছে, তার অসুবিধার কথা চিন্তা করে আমি যাবার কথা বললাম। সকালবেলা উঠে কোর্টে গেলাম। তিনটার সময় ফিরলাম। তিনি আমাকে সামান্য লাঞ্চ করার কথাও বললেন না! যাই হোক, ফার্মে ঢুকেই আবিষ্কার করলাম তিনি নতুন একজন এমপ্লয়ি নিয়েছেন ফুলটাইম কাজ করার জন্য। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। একইসাথে অনুরোধ করলেন আমি যেন অন্তত সপ্তাহে দুইদিন ভলান্টিয়ারিং করি!
আমার ভীষণ কষ্ট লাগছিলো! এতদিন তিনি আমাকে বলেছেন আমাকে অ্যাকমোডেট করার মতো যথেষ্ট ইনকাম তার নেই। অথচ এখন তিনি একজন ফুলটাইম এমপ্লয়ি নিয়ে নিলেন। আমাকে পার্টটাইম কাজ করার ব্যবস্থাটুকুও করলেন না! অথচ মানুষটার জন্য আমি কী না করেছি!
মোহনার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলাম! মোহনা অবাক হয়ে বলল, তোর ক্ষেত্রে কেন এমন হয় সব সময়! ওমিকনের মেহেদী ভাইর কথাও মনে করিয়ে দিলো।
আসলেই তো! মেহেদী ভাইর কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম! কেন এমন হচ্ছে আমার ক্ষেত্রে! মোহনা আরেকটা চমৎকার কথা বলল। তুই প্রয়োজনের অতিরিক্ত করিস। নিজের গুরুত্বটা ধরে রাখতে পারিস না। নিজের ভার নিজেরি রাখতে হয়!
শামীম আরা সুমি আপুকে জানালাম। তিনিও আমাকে বললেন, তুমি কেন নিজের মতো অন্য সবাইকে ভাবে? তোমার তো এরকম প্রত্যাশা করাই উচিৎ না! লার্ন!
আসলেই তো! মানুষের জন্য বেশি করি! কী বলব!
©somewhere in net ltd.