![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বার্থপর মানুষ
যাদের সাথে আমার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব, আজাদ অন্যতম। সব কিছু ছাপিয়ে বর্তমানে তাঁর প্রধান পরিচয় কবি। কবি আজাদের লেখাকে মূল্যায়ন করার দু:সাহস আমার নেই। কেননা, আমার ধারণা কবি হতে হলে ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ হতে হয়, তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণক্ষমতা থাকতে হয়, স্মৃতিশক্তি হতে হয় সুতীব্র; সর্বোপরি নিজের অনুভূতিকে, নিজের চিন্তাশক্তিকে ভাষায় রূপান্তরিত করার সক্ষমতা থাকতে হয়। এগুলোর কোনোটাই আমার নেই; বিস্ময়করভাবে আজাদের মধ্যে সবগুলো গুণেরই দারুণ সমন্বয় রয়েছে। আরো যুক্ত হয়েছে তাঁর অনন্যসাধারণ শব্দভাণ্ডার এবং স্যাটায়ার করার সহজাত প্রবৃত্তি। তাই তাঁর লেখালেখিকে মূল্যায়ন করার যোগ্য মানুষ নিজেকে মনে করছি না; বরং বন্ধু হিশেবে আজাদ সম্পর্কে লেখার সুযোগটা আমি হাতছাড়া করতে চাইনা।
কারো সম্পর্কে লিখতে হলে নাকি তাঁর গুণগান গাইতে হয় বেশি। তবে আমি সে পথ মাড়াচ্ছি না। বরং আমি যতটুকু ওকে চিনি, অনুভব করি, সেটুকু বলি। যে কথাটা অসংখ্যবার সবার কাছে বলেছি তা হলো, আমার সময়ে দেখা সবচেয়ে মেধাবি মানুষ আজাদ। আমি সৌভাগ্যবান যে, একজন 'সুকান্ত'কে আমার বন্ধু হিশেবে পেয়েছি। তাঁর সততা প্রশ্নাতীত, যা আমাকে আকৃষ্ট করে। যখন যা অনুভব করে, নির্দ্বিধায় বলে ফেলার এক আশ্চর্য গুণ আছে ওর! এমনকি আমার অপ্রিয় অনেক বিষয়ও আমাকেই মুখের উপর বলে বসে! সে যা বলে সবই যে আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়, তা নয়! কিন্তু ওর যে ভণিতাহীন প্রকাশের দুরন্ত সাহস, সেটার তারিফ না করার সুযোগ নেই। ওর আরেকটি সহজাত গুণ আছে। স্যাটায়ার। স্কুল জীবনে আজাদের স্যাটায়ারের হাত থেকে ক্লাশমেট-শিক্ষক নির্বিশেষে কারো মুক্তি মিলেছে কিনা সন্দেহ আছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে একজন শিক্ষককে তাঁর সামনেই স্যাটায়ার করার দু:সাহসিক ঘটনার জন্ম আজাদ দিয়েছে।
আজাদ এখন ভীষণ জনপ্রিয় একজন লেখক। আমার ধারণা ওর তিনটি গুণের কারণে মানুষজন ওর লেখা পছন্দ করে। প্রথমত, নিজস্ব ভাবনাকে প্রকাশ করার সঙ্কোচহীন দু:সাহস। দ্বিতীয়, সহজাত স্যাটায়ারের মাধ্যমে লেখাকে উপভোগ্য করে তোলা। তৃতীয়ত, সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার; বিশেষত নতুন শব্দ সৃষ্টির ক্ষমতা লেখার মাণকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।
আজাদের কী কোনো নেতিবাচক দিক নেই? আছে। অন্যতম হলো বদমেজাজ বা যাকে বলে শর্ট টেম্পার। আরেকটি নেতিবাচক দিক আছে যেটা আমার কাছে ক্ষমার অযোগ্য মনে হয়। সমালোচনা সহ্য করতে না পারা। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি কারো সমালোচনা কেন যেন ওকে বিচলিত করে তোলে! কিন্তু একজন লেখকের যদি সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে কীভাবে চলবে!
আর হ্যাঁ, আজাদের আরেকটি কাণ্ডকে আমি 'বিপ্লব'ই বলি। সেটির কথা না বললেই নয়; ওর যাবতীয় ফেসবুকিং/ লেখালেখি খুব সাধারণ একটি মোবাইল থেকে। ওর জীবনকেও বদলে দিয়েছে সম্ভবত ফেসবুক। আজাদ একজন ভীষণ ভালো বক্তা এবং উপস্থাপক। ইদানিং গানের লিরিক লেখাও শুরু করেছে। ফিল্মের জন্য সেসব গান রেকর্ড করাও হয়েছে। ক্রমেই আমরা বহুমাত্রিক আজাদকে আবিষ্কার করছি।
আজাদের তথ্যগত কিছু বিষয় বোধহয় একান্তই জানানো প্রয়োজন। ১৯৮৮ সালে বরগুনাতে আজাদের জন্ম। বরগুনা জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পড়াশুনা শেষ করেছে যথাক্রমে ২০০৪ ও ২০০৬ সালে। উচ্চশিক্ষা শেষ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ২০১১ সালে।
আজাদ সম্পর্কে আরো অনেক কিছু লেখা যায়। কিন্তু সেসব থাক এখন। যদি কখনো সুযোগ হয়, অন্যকোনো দিন, অন্যকোনে সময়ে। আজাদের জন্য সর্বদাই শুভ কামনা রইল।
(লেখাটি আজাদের বইয়ের প্রকাশিতব্য বইয়ের ফ্ল্যাপের জন্য লেখা হয়েছিলো। কিন্তু আজাদের পছন্দ না হওয়ায় আর প্রকাশ করা হয়নি। আজাদের মতে, ফ্ল্যাপে এতখানি লেখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।)
©somewhere in net ltd.