নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অস্তিত্বকে ছাড়তে নেই,ভুলতে নেই...

মৃত্তিকামানব

আজীবন মাটির মানুষ হয়ে থাকতে চাই।হিংসা, অহংকার,ভন্ডামী এই তিন শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে জিততে চাই

মৃত্তিকামানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

লকডাউনে জীবন ও বাস্তবতা

৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৫৮


১.লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে...

নাসিমা খাতুন।আমার পিতার বোন,সম্পর্কে আমার ফুফি।রূপনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক অঁজপাড়াগাঁয়ে বাস করেন।ধারদেনা করে নিজের বড় ছেলেটিকে সৌদিআরবে পাঠিয়েছেন একমাসও হয়নি।প্রায় একবছরের মত বেকার থাকা স্বামী নতুন চাকরী পেয়েছেন এক সপ্তাহও পেরোয়নি।করোনার প্রকোপ সবাইকে হাত পা গুটিয়ে গৃহবন্দি করে রেখেছে।জীবনে কারো কাছে সাহায্যের হাত পাতেননি ফুফি।উত্থাল পাতাল জীবনের তাল মেলানোর জন্য সমানভাবে হাত পা ঘুরিয়েছেন সেলাই মেশিনের তালে তালে।করোনার এই দিনে চারিদিকে জনজীবন যখন স্থবির,স্কুল-কলেজ,দোকানপাট,ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান সবকিছুতে যখন তালা ঝুলছে,সেখানে নিত্যনতুন কাপড় সেলাইয়ের মত বিলাসিতা করবেনা কেউ নিশ্চয়।ভাতের যুদ্ধে বিরানীকে পরিত্যাগ করতে হয়, তাই বন্ধ হয়ে গেছে সেলাই মেশিনের চাকাও।দীর্ঘদিনের উপার্জনের সম্বলে চলে এসেছে চরম নীরবতা।

উপজেলা সদরে আমাদের বসবাস।লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে ফুফি আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলেন,সদরে কোন স্বর্ণের দোকান খোলা আছে কি না। করোনার এই অকালে স্বর্ণ খরিদ করার মত বিলাসিতা স্বয়ং বিল গেটসের স্ত্রীও দেখাবেন কিনা সন্দেহ।গ্রামাঞ্চলের স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণ বাদে বাকী সব ধাতুর গয়না পাওয়া যায়।পুরো বছরজুড়ে এদের অন্যতম একটি কাজ স্বর্ণ বন্ধক নেয়া। সুতরাং,ফুফি যে স্বর্ণ বন্ধক রেখে কিছু টাকা নিতে চান, এটা বুঝতে আমার আইনস্টাইন হওয়া লাগেনি।

আমি খবর নিয়ে দেখলাম, অন্য সব দোকানের মত জুয়েলার্সগুলোতেও তালা ঝুলছে।তাছাড়া এই করুণ মূহুর্তে তারা স্বর্ণ বন্ধক নিতে রাজী নন।কারণ,স্বর্ণ গলিয়ে বা চিবিয়ে খাওয়া যায় না।


২.লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহে....

রুবিনা সুলতানা আমার চাচাত ভাইয়ের বউ।সম্পর্কে আমার ভাবী।করোনা আসার দুই মাস আগে এ বাড়ীতে বধু বেশে এসেছিলেন।ছেলেপক্ষ কোন দাবীদাওয়া না করলেও মেয়ের প্রবাসী পিতা স্থানীয় ঐতিহ্য রক্ষার্থে একমাত্র মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন শোবার খাট-বালিশ থেকে শুরু করে রান্নাঘরের কলসী পর্যন্ত। এ যেন " না চাহিলে যারে পাওয়া যায়"।ভ্যানভর্তি ফার্নিচারের ঢল সামলাতে বাদ দিতে হয়েছিল বিয়ের আগের রাতের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।বিয়ের পর সে সব ফার্নিচারের মধ্যে শোবার খাট খানা কয়েকদিন পর পর ভেঙ্গে যায়।সেই ভাঙা খাট মেরামত করতে কাঠমিস্ত্রীও নিয়ে আসেন ভাবীর মা।অদ্ভুত এক সংস্কৃতির আবর্তে আটকে আছে আমাদের এখানকার বৈবাহিক সম্পর্কগুলো।

আজিজুল হাকিম আমার ফুফির প্রতিবেশী।স্থানীয় বাজারে ছোট্ট একটি স্টেশনারি দোকান চালান।লকডাউন শুরু হবার দশদিন আগে দশহাজার টাকায় একটা খাট কিনেছিলেন। লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে খাট বিক্রি করে দিবেন।

খাট বেচাকেনার এই বিষয়টি নিয়ে লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফুফি ফোন দিলেন আমার চাচাকে।

আমার চাচা নবাবপুরের মাঝারী মানের কাপড়-ব্যবসায়ী।পুরো বছরের লাভ ক্ষতির খতিয়ান নির্ভর করে রমযান মৌসুমের উপর। রমযান মাসের এবারের লকডাউন সব হিসাব-নিকাশ উল্টে-পাল্টে দিয়েছে। অজানা আতঙ্কে ভরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করার জন্য কোন ভাল খাট বা ভাঙা খাটের প্রয়োজন পড়ে না বলে চাচা খাট কেনার প্রস্তাবটি না করে দেন।

দুইদিন পর জানতে পারলাম, যে খাট বিক্রি করার জন্য ফুফি আমার চাচাকে ফোন করেছিলেন সেটি কোন প্রতিবেশীর সদ্যকেনা খাট নই, সে খাট ফুফি নিজেই কিনেছিলেন বছরখানেক আগে।


৩.লকডাউনের তৃতীয় সপ্তাহে...

লকডাউনের তৃতীয় সপ্তাহে ফুফি আবারো ফোন দিলেন।এবার আর কোন রাখঢাক রাখলেন না।সরাসরি কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন, "তেরান-টেরান দিলে আমার লাইগা কিছু লইস"।

জীবনে কোন দিন সাহায্য গ্রহণ করেননি বলে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারের ত্রাণের লিস্টে ফুফির নাম নেই।সরকারী ত্রাণ জনপ্রতিনিধি আর রাজনৈতিক নেতাদের গুদাম পেরিয়ে হতদরিদ্র মানুষের ঘরে কতটুকু যায় এ ব্যাপারে এদেশের ইতিহাস সুখকর নয়।বিত্তবানদের ত্রাণ আত্মীয় স্বজন আর পরিচিতদের চৌহদ্দী পেরিয়ে কোন অঁজপাড়াগাঁয়ের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে পৌছাবে কি না জানা নেই। করোনা সবার সামাজিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে।নিম্নমধ্যবিত্তরা নেমে এসেছে দরিদ্রের কাতারে,উচ্চমধ্যবিত্তরা নেমে এসেছে কোন রকমে চলা নিম্নমধ্যবিত্ত নীতিতে।এক অদ্ভুত উভয় সংকটের গর্তে আটকে আছে তারা।না পারছে লাইনে দাঁড়াতে, না পারছে জীবন চালাতে।


৪.লকডাউন উঠে গেলে...

দীর্ঘ সময় পর অবশেষে লকডাউন তুলে নিয়েছে সরকার। সরকারি এ সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে ফেসবুক।নিজস্ব ফেসবুক পেইজে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি জরিপ পরিচালনা করে ফলাফলও প্রকাশ করেছেন, "৯০% মানুষ লকডাউন তুলে দেওয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন"।আমার বিভিন্ন প্রকারের বন্ধুরা মিনিটে মিনিটে বিদ্রোহী বিপ্লবী স্ট্যাটাস প্রসব করে চলেছেন। আমি এসব চেয়ে চেয়ে দেখি কেবল।আমার ফেসবুক আইডিতে কোন হকার নেই,নেই রিকশাওয়ালা, দিনমজুর,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এমনকি নেই আমার ফুফিও। তাই ফেসবুক দুনিয়ার এসব জরিপ, মতামতের সাথে বাস্তব দুনিয়ার চিত্রে আমি খুব একটা মিল খুঁজে পাইনা।লকডাউন তুলে নিলে প্রচুর মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে এবং মারা যাবে এসব তথ্য,তত্ত্ব বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমার জানা আছে তবুও আমার নিজস্ব কোন মতামত নেই।মানুষের জীবন আর বাস্তবতার মুখোমুখি সংঘাতে আমি কেবল নীরব দর্শক।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১১:২০

আমি সাজিদ বলেছেন: লক ডাউন তোলা ছাড়া দেশ বাঁচানো যাবে না।

৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫১

মৃত্তিকামানব বলেছেন: রিস্ক বনাম বেনিফিট রেশিও হিসেবের খেলা

২| ৩০ শে মে, ২০২০ রাত ১১:২২

আহমেদ জী এস বলেছেন: মৃত্তিকামানব,





কঠিন কিন্তু এই মূহূর্তের সবচেয়ে বড় বাস্তব। নিরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই আমাদের।

৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫১

মৃত্তিকামানব বলেছেন: হ্যাঁ,এটাই।আর কোন পথ নেই।

৩| ৩১ শে মে, ২০২০ রাত ১২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: লকডাউন তুলে দিয়ে ভালো করেছে।

৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫৩

মৃত্তিকামানব বলেছেন: অন্য কোন উপায়ও নাই সম্ভবত। ধন্যবাদ

৪| ৩১ শে মে, ২০২০ রাত ২:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

একসময় পরবর্তী জেনারেশন ইতিহাস হাতড়াবে আর
জানতে পারবে ২০২০ সালে ভয়াবহ করোনা মহামারীতে
মারা গিযেছিলো ৬ লাখ মানুষ আর দূর্ভিক্ষে না খেতে পেয়ে
মারা গিয়েছিলো ২০ লক্ষ মানুষ।

৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫৪

মৃত্তিকামানব বলেছেন: আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক।

৫| ৩১ শে মে, ২০২০ রাত ২:৪৯

ওমেরা বলেছেন: বাংলাদেশের লকডাউন দেয়া মোটেই উচিত হয়নি ।

৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫৬

মৃত্তিকামানব বলেছেন: প্রত্যাশিত ফলাফলের ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি।

৬| ৩১ শে মে, ২০২০ ভোর ৪:২৭

নিমো বলেছেন: অতীব রূঢ় বাস্তবকে আপনার nuance মাখা লেখায় তুলে এনেছেন। নিয়মিত লিখুন। ভালো থাকুন।

৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫৬

মৃত্তিকামানব বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ৩১ শে মে, ২০২০ ভোর ৫:৫৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: দেখা যাক কে মরে কে বাঁচে

৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫৭

মৃত্তিকামানব বলেছেন: অপেক্ষায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.