নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঝিনুক নীরবে সহো,ঝিনুক নীরবে সহো ঝিনুক নীরবে সহে যাও, ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ভদ্রলোক পাকিস্তান আমলে কাজ করতেন পাকিস্তান ডিফেন্সের সিভিলিয়ান কর্মচারী হিসেবে । কাঁচা গৌর বর্ণ , টিকালো নাক, লম্বায়
ছ'ফুটের কাছাকাছি ছিলেন।নিম্নপদে কাজ করবেন না বলে , কাজের ফাঁকেফাঁকে পড়া শুনা করছিলেন। বিয়ের ব্যাপারে ও উনার চিন্তা ভাবনা ছিলোনা-বাচক । অন্তত ভালো চাকুরির আগে বিয়ে না । পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি এক শরতের ,শুভ্র সকালে টেলিগ্রাম এলো , Mother Serious , Come Sharp ' উনি মাকে খুব ভালো বাসতেন ।সে দিন ই রওনা দিলেন। বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলেন ।বিয়ে বাড়ীর সজ্জিত গেট ।
তার বিয়ে আজকে । মায়ের দূর সম্পর্কের আত্মীয়া হচ্ছেন বিয়ের পাত্রী । মা বললেন কোনো কথা শুনতে চাইনা ,
এ বিয়ে না হলে উনি আত্মঘাতী হবেন । কি আর করা ! পাঁচ ভাইয়ের দ্বিতীয় এই ভাই বাসর রাতেই প্রথম স্ত্রীকে এক ঝলক দেখলেন । দেখেই বের হয়ে চন্দ্রালোকিত সেই বাসর রাতের বাকী অংশ উনি পুকুর ঘাটে কাটালেন । এটা হয়তো এমন এক চাঁদের আলোয় আলোকিত রাত ছিলো , যে রাতে জীবনানন্দ দাশও আত্মঘাতী হতে চেয়েছিলেন ।
স্ত্রীকে উনার পছন্দ হয়নি । এখন শিক্ষিত সমাজে হয়তোবা কালো ধলোর খুব একটা পার্থক্য করা হয় না, তবে সেকালে এটা খুব হতো ।
ভদ্রলোকের মা সকালে মেয়ে দেখে নিজে ও খুব অবাক হয়ে গেলেন, কারণ তাকে যে মেয়ে দেখানো হয়েছিলো , সে মেয়ে তার ছ ফুট লম্বা , ফর্সা ছেলের সাথে
খুব মানিয়ে যেতো ,যাকে দেখানো হয়েছিলো , তাকে দেয়া হয়নি ।
কিন্ত যে এসেছেন তাকে তো মেনে নিতেই হবে , বিশেষত এ কালো মেয়ের বাবা খুব প্রভাবশালী ছিলেন।
ভদ্রলোকের জীবনের গতিপথ হয়তো সেখান থেকে পরিবর্তন হয়ে গেলো । ভদ্রলোক উনার এই কালো বর্ণের , লম্বায় বেশ খাটো ভদ্রমহিলার সাথে বছর চল্লিশেক
সংসারও করলেন , কিন্ত তাকে মেনে নিতে পারেন নি । ভদ্রলোকের ইন্সপারেশন , জীবনের লক্ষ্য সব হয়তো এই না মেনে নেওয়ার মাঝে বিলীন হয়ে গেলো।
ভদ্রমহিলা ৪০ বছরের সংসার জীবনের শেষের কুড়ি বছর খুব অসুস্থ অবস্থায় কাটিয়ে দিয়েছিলেন।ভদ্রলোকের জমানো টাকা পয়সা এ সময়ে ফুরিয়ে যায় ।
এ সময় বছরে দু -এক বার ভদ্রলোকের সাথে আমার দেখা হতো , আমি তখন কৈশোর পাড়ি দিচ্ছি ।
যে পুকুর পাড়ে উনি বাসর রাতে বসে ছিলেন , সে পুকুর পাড়ে উনি চোখের মোটা চশমার ফ্রেম খুলে মুছতে মুছতে আমাকে বলতেন ,লক্ষিন্দরের লোহার ঘরে
সাপ ঢুকে গেছে , তাকে কে বাঁচাবে ?
উনার স্ত্রী ও বাচেননি , উনি এক সময় মারা গেলেন । দাফনের সময় আমি ছিলাম, ভদ্রলোককে খুব কাঁদতে দেখেছিলাম।
ভালো হতো বাসতে পারেন নি , কিন্ত এতোদিনের অভ্যাসের জন্য ও তো মায়া পড়ে যায় ।
পরের দু বছর উনাকে খুব সুখী দেখেছিলাম, ছেলেদের বিয়ে হয়ে গেছে , ঢাকায় ঘন ঘন আসতেন , আম্মার সাথে খুব গল্প করতেন , উনি আম্মার খুব আপন মুরুব্বী ছিলেন ।
এ সুখ উনার ভাগ্যে সইলো না , উনার বড় ছেলে বলে দিলেন, সংসারে সমস্যা হচ্ছে , ছোট ভাইকে মানুষ করতে হবে , সেটার জন্য বাবাকে আবার বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে। উনি রাজী ছিলেন না । এটা নিয়ে বিস্তর দৌড় ঝাপ হলো ঢাকা আর গ্রামে - আমার মা তার কুড়ি পচিশ জন কাজিন মিলে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন ভদ্রলোককে আবার বিয়ে করতে হবে ।
বিষয় টা এমন পর্যায়ে গড়িয়ে গেলো উনি রাজী হতে বাধ্য হলেন, পাত্রী উনার বড় ছেলে পছন্দ করলেন , আর কেউ সেই পাত্রী দেখলো না ।
এই পাত্রীও উনি বাসর রাত্রে প্রথম দেখলেন , তবে পুকুর পাড়ে আর রাত কাটাতে পারলেন না , বাড়ী ভর্তি লোকজন ছিলো , বাসর রাতে সেই পুকুর পাড়ে
আমার মা খালাদের খুব আনন্দ ফূর্তি হচ্ছিলো ।
ভদ্রলোকের দ্বিতীয় স্ত্রী প্রথম স্ত্রী হতে আরো কৃষ্ণবর্ণ এবং এক চোখে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছিলেন । পরে শুনা গেছে উনার বড় ছেলে এই বিয়ের বাবত, পাত্রী পক্ষ হতে ছ গন্ডা জমি বুঝে পেয়ে ছিলেন।
বন্ধ্যা এই মহিলা অনেক ভালো ছিলেন, আমি বাড়ীতে গেলে আমাদের খুব যত্ম আত্তী করতেন , ভদ্রলোককে কিন্ত ঘরে পেতাম না , উনি হয় পুকুরের পাড়ে
কিংবা উনার বাবার কবর স্থানের পাশে পাটি বিছিয়ে তাল পাতার বাতাস খেতেন ।
উনার এই দ্বিতীয় স্ত্রীও খুব বেশী দিন বাচেননি , বিয়ের ১২/১৩ বছরের মধ্যেই মারা যান ।
ভদ্রলোক মারা যান তার ও ৬ বছর পর ।
তবে এই ছয় বছর উনি দৃষ্টি হীনতা আর বার্ধক্যজনিত সমস্যার জন্য খুব কষ্ট পেয়েছিলেন । দু বছর আগে আমি , নানা বাড়ীতে যাই , আমার ছেলের সাথে উনার অনেক ছবি তুলি । সে ছবি প্রিন্ট করে উনাকে পাঠাইনি , কারণ উনি শেষের দিকে দেখতে পেতেন না ।
বাড়ী থেকে চলে আসার রাত টি ছিলো মন পোড়া জোছনার রাত । সে রাতে আমার আর আমার ছেলের মুখে হাত দিয়ে কি জানি বুঝার চেষ্টা করেছিলেন,
এশার নামাজ শেষে পুকুরের পাড়ে উনি বসে ছিলেন।আমি কাছে গিয়ে বসতেই , বিড়বিড় করে আপন মনে বলছিলেন
'I dreamt my lady came and found me dead '
এ বছর উনি মারা যাবার পর , আমি আর নানা বাড়ী যাইনি , ইন ফাক্ট খবর ও পেয়েছিলাম কদিন পরে , গ্রামের কবরে এপিটাফ দেওয়া যায় না ,দেয়া গেলে আমি হয়তো জুলিয়েটের প্রতি রোমিও র এই অমর বাণী খোদাই করে, একটি মার্বেল পাথর তার অন্তিম শিয়রে রেখে দিতাম ।
পছন্দের মানুষগুলো কোথায় যে হুট করে চলে যায় , চাইলেও একটু দুটি ছোট পার্শেল তাদের পাঠানো যায় না , পাঠানো গেলে আমি ভদ্রলোককে আমার জীবনের অল্প প্রাপ্ত সুখগুলো থেকে , অল্প কিছু সুখ পাঠিয়ে দিতে চাইতাম।
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১৭
নিমচাঁদ বলেছেন: হয়তো!
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
কষ্টে শিষ্টে মিলে কষ্টের কাহিনী
৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৬
মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: কিছূ কিছূ মানুষের জীবন এমন হয় ক্যান, বলতে পারেন ? আমার এক মামা আছেন,এই কাহিনী না হলেও এটার চাইতেও কম না....
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১৬
নিমচাঁদ বলেছেন: আপনার সেই গল্পটি শোনার আগ্রহ থাকল
৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৯
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: গোপন চাহিদাটাকে খুব গোপনে রাখার নামই সংসার জীবন।।
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৩
নিমচাঁদ বলেছেন: আমি আসলে সেরকম কিছু ভাবি না--বরং একটু আফসুসের সাথে ভাবি - 'এ জীবনে হয়নাকো তার সাথে দেখা '
৫| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪২
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: হয়তো ভাবার অবকাশ আছে বলেই..।
৬| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১২
ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: এটাই জীবন
৭| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩১
হুমায়রা হারুন বলেছেন: চমৎকার লেখা।
৮| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৪০
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আহা! জীবন...
৯| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৫৮
এম ডি মুসা বলেছেন: দীর্ঘ শ্বাস জীবন !
১০| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৩
সুমন কর বলেছেন: লেখা হৃদয় ছুঁয়ে গেল। এরই নাম হয়তো, বেঁচে থাকা...........
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৬
নিমচাঁদ বলেছেন: মানুষের জীবন টা এমনই ,রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতোন । আপনি যাহা চাইবেন তাহা পাইবেন না , আবার -- না চাহিলেই জীবনে অনেক কিছু পেয়ে যাবেন---
আমরা বেঁচে থাকি কিছু পাওয়ার আশায় -- কিন্ত আমরা মরে যাই সেই আশাকে এপিটাফের পাথর বানিয়ে
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৯
ঢাকার লোক বলেছেন: জীবন তবুও থেমে থাকেনা , "এ পথ যে চলার, এখানে ফিরার পথ নেই !"