নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

না জানা অনেক কিছু কথা।

মতিউর সাইফুল

সাধারন ছাএ

মতিউর সাইফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং- আর নয় তাচ্ছিল্য......!!!

২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৫

একটি সাধারণ ঘটনা :-কী পড়ো ?-ইঞ্জিনিয়ারিং ।(জবাব শুনে প্রশ্নকর্তা বেশ ইম্প্রেসড…)-কোন সাবজেক্ট ?-টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং !(এই পর্যায়ে প্রশ্নকর্তার নাকটা কয়েক ইঞ্জি উঁচু হয়ে যায় আর তার চেহারা থেকে ইম্প্রেসড ভাবটা সরে গিয়ে তাচ্ছিল্যের ভাব ফুটে ওঠে…)আমি নিশ্চিত, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা বস্ত্রপ্রকৌশলে যাঁরা পড়েছেন এবং পড়ছেন তাদের প্রায় সবাইকেই কোন না কোন সময় এই ঘটনাটার সম্মুখীন হতে হয়েছে । মিথ্যে বলবোনা, আমার পরিচিত এক ভাই যেবার বস্ত্রপ্রকৌশলে ভর্তি হলো তখন আমি নিজেই ফ্যাঁকফ্যাঁক করে হেসে তাকে বলেছি, “দাদা তুই অবশেষে দর্জি হতে যাচ্ছিস !”ক্লাসের অনেককেই বলতে শুনি, তারা পরিবারের চাপে অথবা অন্যকোন উপায় না দেখে বস্ত্রপ্রকৌশলে ভর্তি হয়েছে । কিন্তু আমার সামনে “কী পড়বো” এই প্রশ্নটা আসার পরই আমি “কী পড়লে সবচে ভালো হয় আমার জন্য” তা নিয়েই অনেকদিন অনেক পড়াশুনা করেছি । তাই আমার সামনে যখন অস্টের ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টগুলো সাজিয়ে দেয়া হলো বেছে নিতে,তখন আমি নিজেই বস্ত্রপ্রকৌশল বেছে নিলাম ।কী পড়ানো হয় বস্ত্রপ্রকৌশলে ?এখানে পড়ানো হয় মূলত চারটা ভাগ,১. আঁশ বা ফাইবার থেকে সুতা তৈরির প্রক্রিয়া(yarnmanufacturing)২. সুতা থেকে কাপড় তৈরির প্রক্রিয়া (fabric manufacturing)৩. বস্ত্র বা সুতা রং করার প্রক্রিয়া (wet processing)৪. বস্ত্র থেকে পোশাক তৈরি করার প্রক্রিয়া (garments manufacturing)এদের প্রত্যেকটা ভাগ এতো বেশি বিস্তৃত এবং সম্ভাবনাময় যে আলোচনা করে আসলে শেষ করা যাবে না !বস্ত্রপ্রকৌশলে কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে যদি অনেকেই ভাবেন যে বস্ত্রপ্রকৌশলে পড়লে বোধহয় গার্মেন্টসে চাকরি করা ছাড়া আর কিছু করা যায় না । এ ধারণা ভুল । বস্ত্রপ্রকৌশলে কাজের ক্ষেত্র অনেক বেশি বিস্তৃত । কয়েকটা উদাহরণ দেয়া যাক…১. টেক্সটাইল মিল আর গামেন্টর্স ফ্যাক্টরিরভেতরেই তো শতেক সেক্টর আছে বস্ত্রপ্রকৌশলীদের । ল্যাব, সুতা বুনন (spinning), বস্ত্র তৈরি (Fabric), রং করা (dyeing), পরিকল্পনা, R&D, পোশাক উত্পাদন, মাননিয়ন্ত্রণ, কারিগরি দিক, ফেব্রিক টেকনোলজি, ওয়াশিং, (uman resources, Industrial engineering, compliance, sample section…ইত্যাদি!২. মন্ত্রণালয়, ব্যাংক, কাস্টমস, বিসিক, বিজিএমইএ, ইপিজেড, বেপজা, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, পাট গবেষণা কেন্দ্র, রেশম বোর্ড, ডিজাইন, টেস্টিং এন্ড কোয়ালিটি এসুয়েরেন্স কোম্পানি, বায়িং হাউজ, মার্চেন্টাইজিং…ইত্যাদি তো আছেই ।৩. যদি আগ্রহ থাকে গবেষণায়, তবে ? উদাহরণ হাতের কাছেই । বাংলাদেশের তারান্নুম আফরীন,বাংলাদেশ টেক্সটাইল থেকে পাশ করে অস্ট্রেলিয়ার Deakin university এর অধীনে গবেষণা করছেন । ২০১১ সালে তাঁর এক গবেষণা বেশ প্রশংসিত হয় । তিনি বাঁশ থেকে ফাইবার বের করার এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন । বাঁশের ফাইবার তুলার বিকল্প হিসেবে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়াও তিনি আবিষ্কার করেন । কিছু দিক থেকে বাঁশের ফাইবারে যে তুলার চে অনেক অনেক উন্নত গুণ আছে (অতিবেগুনী রশ্মিরোধী, ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী, তাত্ক্ষণিক আদ্রর্তা শোষণ ইত্যাদি) তাও তিনি দেখান । খুব মজার, তাই না ? ব্যাক্তিগতভাবে আমি এই ব্যাপারটা পড়ার পরই সিদ্ধান্ত নেই যে আমি বস্ত্রপ্রকৌশলে পড়বো কেননা আমার সবসময়কার আগ্রহ ছিলো গবেষণায় নিজেকে নিযুক্ত করা ।৪. যদি আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহ থাকে তবে বস্ত্রপ্রকৌশলেরএক অন্যরকম মজা পাওয়াযাবে ন্যানোটেক্সটাইলে । ন্যানোটেক্সটাইলব্যাবহার করে সার্জারির জন্য উন্নত সুতা, লিগামেন্ট জোড়া দেয়ার জন্য ফাইবার, জীবাণুরোধী কাপড়, ক্যান্সার চিকিত্সার ক্যাপসুল ইত্যাদি আবিষ্কার করা হচ্ছে । এছাড়াও নাসায় মহাকাশচারীদের পোশাক, মহাকাশযানের আবরণ আর যন্ত্র ইত্যাদি নানাকিছু তৈরি করা হচ্ছে । ক্রীড়াবিদদের পোশাক, জুতা, টেনিস রেকেট, গলফ বল, স্কিন ক্রিম ইত্যাদি তো ন্যানোটেক্সটাইলেরই অবদান ।কী মনে হচ্ছে ? বৈচিত্র্যময় না টেক্সটাইলদুনিয়া ?বস্ত্রপ্রকৌশলে পড়ে বাংলাদেশের পাট-তুলা-রেশম শিল্পকে উন্নত করে দেশের জন্য অবদান রাখা যায়; উচ্চতর গবেষণা করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা যায়; গার্মেন্টস শিল্পের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে দেশকে স্বাবলম্বী করা যায় । কেবল “আমাকে কিছু করতেই হবে” এই ইচ্ছাটা প্রবল হতে হবে । ব্যাস…বস্ত্রপ্রকৌশলী হয়ে সুতায় স্বপ্নগুলো ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা থাকলে আসতেই পারো এই জগতে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.