নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ব্যতীত যে কোন প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, ছড়া, ছবি পোস্ট করা হতে বিরত থাকবেন।
ইতিহাসে বঙ্গদেশ। স্বাধীন সুলতানী আমল, ইলিয়াস শাহী বংশ। (পর্ব ০৮)
সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, বাংলার ইতিহাসের দুইশত বছর (১৩৩৮-১৫৩৮ খ্রিঃ) মুসলমান সুলতানদের স্বাধীন রাজত্বের যুগ। তথাপি এ দুইশত বছরের মাঝামাঝি অল্প সময়ের জন্য কিছুটা বিরতি ছিল। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সাইফুদ্দিন হামজা শাহ সিংহাসনে বসেন। কিন্তু এ সময় অভিজাতদের মধ্যে ক্ষমতা দখল নিয়ে ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। তিনি এক বছর শাসন করার পর ১৪১২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ক্রীতদাস শিহাবউদ্দিনের হাতে নিহত হন। শিহাবউদ্দিন সুলতান হয়ে নিজের নাম নেন ‘শিহাবউদ্দিন বায়াজিদ শাহ’। কিন' দুই বছরের মাথায় ১৪১৪-১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনিও ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নিহত হন। এ সুযোগে হিন্দু অভিজাত রাজা গণেশ বাংলার ক্ষমতা দখল করেন।
রাজা গণেশ
১৯-শতকের একটি বাংলা কর্ম "রাজা গণেশ" এর প্রচ্ছদে রাজা গণেশের স্কেচ।
রাজত্ব ১৪১৪–১৪১৫ ও ১৪১৬–১৪১৮
বাংলার সুলতানরা অনেক উচ্চপদেই হিন্দুদের নিয়োগ করতেন। আজম শাহের একজন উচ্চপদস' অমাত্য ছিলেন রাজা গণেশ। জানা যায়, গণেশ প্রথমে দিনাজপুরের ভাতুলিয়া অঞ্চলের একজন রাজা ছিলেন। তিনি সুলতানের দরবারে চাকরি নেন। চাকরি নিয়েই তিনি গোপনে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল মুসলমানদের হটিয়ে পুনরায় হিন্দু শক্তির ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যেই তিনি ইলিয়াস শাহীর বংশ উচ্ছেদ করে নিজে ক্ষমতায় বসেন। গণেশ অনেক সুফী সাধককে হত্যা করেন। মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য দরবেশদের নেতা নূর কুতুব-উল-আলম জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শর্কির নিকট আবেদন জানান। ইব্রাহিম শর্কি সসৈন্যে বাংলায় উপসি'ত হলে গণেশ ভয় পেয়ে যান। অবশেষে তিনি আপোস করেন দরবেশ নূর কুতুব-উল-আলমের সাথে। শর্ত অনুযায়ী গণেশ তাঁর ছেলে যদুকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন এবং ছেলের হাতে বাংলার সিংহাসন ছেড়ে দেন। মুসলমান হওয়ার পর যদুর নাম হয় জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ। সুলতান ইব্রাহিম শর্কি জামালউদ্দিনকে সিংহাসনে বসিয়ে ফিরে যান নিজ দেশ জৌনপুরে।
গণেশ দু’বার সিংহাসনে বসেছিলেন। প্রথমবার কয়েক মাস মাত্র ক্ষমতায় ছিলেন। ১৪১৫ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি ইব্রাহিম শর্কি জালালউদ্দিন মাহমুদ শাহকে সিংহাসনে বসান। ইব্রাহিম শর্কি ফিরে গেলে নিজেকে নিরাপদ মনে করেন গণেশ। তখন জালালউদ্দিনকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দিয়ে পুনরায় নিজে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। অনেক আচার-অনুষ্ঠান করিয়ে ছেলেকে আবার হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনেন। গণেশ ১৪১৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
ইব্রাহীম শাহ শার্কি ও তার সৈন্য বাহিনী ফিরে যাওয়ার কিছুদিন পরে রাজা গণেশ তদীয় পুত্র থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন। সাথে কি উপায়ে যদুকে পুনঃ হিন্দুতে রুপান্তর করা যায় এ বিষয়ে ব্রাহ্মণদের পরামর্শ চান।ব্রাহ্মণরা সম্মিলিত হয়ে পরামর্শ দিল,’স্বর্ণ ধেনু’ ব্রতের মাধ্যমে যদুকে হিন্দুতে রূপান্তর করা সম্ভব। স্বর্ণ দ্বারা গাই গরুর একটা বড় মুর্তি তৈরি করে স্বর্ণ ধেনু’ ব্রতের আনুষ্ঠানিকতা সারতে হবে এর পর সোনার গাভীটির সমস্ত অংশ ব্রাহ্মণদের মাঝে ভাগ করে দিতে হবে।
রাজা উক্ত শুদ্ধি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জালালুদ্দিনকে পুনরায় হিন্দু বা যদুতে পরিণত করেন। রাজা গণেশ ১৪১৮ সালে মারা গেলে রাজা গণেশের মৃত্যুর পর হিন্দু আমাত্যগণ গণেশের পুত্র মহেন্দ্রদেবকে বঙ্গে সিংহাসনে বসান। কিন' অতি অল্পকালের মধ্যেই মহেন্দ্রদেবকে অপসারিত করে জালালউদ্দিন দ্বিতীয়বার বঙ্গের সিংহাসনে আরোহণ করেন। এ পর্যায়ে তিনি একটানা ১৪৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। এ সুযোগ্য শাসকের সময় বাংলার রাজ্যসীমা অনেক বৃদ্ধি পায়। প্রায় সমগ্র বাংলা এবং আরাকান ব্যতীত ত্রিপুরা ও দক্ষিণ বিহারেরও কিছু অংশ অন্তত সাময়িকভাবে তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজ্যের বিভিন্ন টাকশাল হতে তাঁর নামে মুদ্রা প্রকাশিত হয়েছিল।
আরবীয় রৌপ্য মুদ্রা যা জালালুদ্দিন এর সময়কালে মুদ্রিত
পান্ডুয়া হতে তিনি গৌড়ে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। জালালুদ্দিন যদু নামে সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনের বসার সময় ও পরবর্তিতে যদু ব্রাহ্মণদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েন।জাত কুল খুইয়ে মুসলমান হওয়া যদুকে মেনে না নিতে ব্রাহ্মণরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের মানুষদের উস্কানী দিতে থাকেন। এমতাবস্থায় রাজ্যে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে থাকা যদু এক ভোজ সভার আয়োজন করে রাজ্যের সমস্ত ব্রাহ্মণদের ভোজ সভায় আমন্ত্রণ জানান।
যথা সময়ে ভোজ সভা শুরু হয়, ভোজে সকলকে একটা মাত্র তরকারী পরিবেশন করা হয়,’গরুর মাংস’।
ততোক্ষণে ভোজ গৃহের ফটক বন্ধ করে দিয়েছে প্রহরীরা। রাজা যদু সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, আপনারা আমাকে আধামন ওজনের স্বর্ণধেনু বানিয়ে শুদ্ধাচারের মাধ্যমে হিন্দুতে রূপান্তর করিয়েছেন।এখন আপনারাই আমার বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন ধর্মত্যাগী ম্লেচ্ছ বলে। আমি যদি ম্লেচ্ছই থেকে গেলাম, স্বর্ণের ধেনূটা আপনারা খেলেন কেন?যারা স্বর্ণধেনু ভাগ করে খেতে পারে তারা আসল ধেনু খেতে পারবেনা কেন? এখন আপনাদের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। হয় আপনারা গোমাংস খাবেন অথবা গর্দান দেবেন।
বলা বাহুল্য গর্দান হারনোর ঝুঁকি নাকি কেউ নেন নি। এই ঘটনার পরে যদু পুনর্বার ইসলাম গ্রহন করেন এবং পুর্ব নাম জালাল উদ্দীন মোহাম্মদ শাহ ধারন করে রাজ্য শাসন করেন। জালালউদ্দিন মাহমুদ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শামসুদ্দিন আহমদ শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেন। ১৪৩৩ খ্রিস্টাব্দে আহমদ শাহ আমাত্যবর্গের ষড়যন্ত্রে সাদি খান ও নাসির খান নামক ক্রীতদাসের হাতে নিহত হন। এভাবে রাজা গণেশ ও তাঁর বংশধরদের প্রায় ত্রিশ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটে। শামসউদ্দীন আহমেদ শাহ মৃত্যুবরণ করলে শামসউদ্দীন ইলিয়াস শাহের উত্তরশুরী নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ পুনরায় ইলিয়াস শাহী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তী ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন
শামসুদ্দিন আহমদ শাহের মৃত্যুর পর তার হত্যাকারী ক্রীতদাস নাসির খান বাংলার সিংহাসনে বসেন। কিন' আহমদ শাহকে হত্যা করার ব্যাপারে যে সকল অভিজাতবর্গ নাসির খানকে ইন্ধন দেন তারা নাসির খানের সিংহাসনে আরোহণকে খুশি মনে গ্রহণ করতে পারলেন না। সম্ভবত ক্রীতদাসের আধিপত্যকে তারা অপমানজনক মনে করেছিলেন। তাই তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নাসির খানকে হত্যা করেন।
নাসির খান নিহত হওয়ার পর গৌড়ের সিংহাসন কিছু সময়ের জন্য শূন্য অবস্থায় পড়ে রইল। আহমদ শাহের কোনো পুত্র সন্তান ছিলনা। অতপর অভিজাতবর্গ মাহমুদ নামে ইলিয়াস শাহের এক বংশধরকে ১৪৫২ খিস্টাব্দে গৌড়ের সিংহাসনে বসান। ইতিহাসে তিনি নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ নামে পরিচিত। ইলিয়াস শাহের বংশধরগণ এভাবে পুনরায় স্বাধীন রাজত্ব শুরু করেন। তাই এ যুগকে বলা হয় ‘পরবর্তী ইলিয়াস শাহী যুগ’। নাসিরউদ্দিন একজন দক্ষ সেনাপতি ও ন্যায়পরায়ন শাসক ছিলেন। যশোর ও খুলনা অঞ্চল নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালে মুসলমান সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল। পশ্চিম বঙ্গ, পূর্ববঙ্গ, উত্তরবঙ্গ ও বিহারের কতকাংশ তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। তিনি নিজ নামে মুদ্রাও জারি করেছিলেন।
১৪৫৯ খ্রিষ্টাব্দে নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর পুত্র রুকনউদ্দিন বরবক শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেন। পিতার রাজত্বকাল থেকেই বরবক শাহ শাসক হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তখন তিনি ছিলেন সাতগাঁওয়ের শাসনকর্তা। তাঁর রাজত্বকালে বাংলার রাজ্যসীমা অনেক বৃদ্ধি পায়। বরবক শাহের সহিত কামরূপ রাজ্যের সংর্ঘষের কথা জানা যায়। কিন্তু ফলাফল কি হয়েছিল তা সঠিক বলা যায় না। গঙ্গা নদীর উত্তরাংশ তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। ভাগলপুর তাঁর শাসনকালে মুসলমান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। কিন্তু মুঙ্গেরের পশ্চিমে অবসি'ত জেলাগুলো জৌনপুরের শাসনকর্তা মাহমুদ শার্কীর অধীনে ছিল। তাঁর সময়ে এ অঞ্চল জয় করা হয় বলে মনে হয়। চট্টগ্রামের কর্তৃত্ব নিয়ে গোলযোগ ছিল। বরবক শাহের রাজত্বকালের প্রথম দিকে ইহা আরাকান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। কিন' শেষ দিকে বরবক শাহ ইহা পুনরুদ্ধার করেন। যশোহর ও খুলনা তাঁর অধিকারে ছিল। তিনি দক্ষিণ দিকেও তাঁর রাজ্য বিস-ৃত করেছিলেন।
বরবক শাহই প্রথম অসংখ্য আবিসিনীয় ক্রীতদাস (হাবসী ক্রীতদাস) সংগ্রহ করে সেনাবাহিনী ও রাজপ্রাসাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করেন। নিয়োগকৃত এ হাবসী ক্রীতাদাসের সংখ্যা ছিল আট হাজার। তিনি সম্ভবত রাজ্যে একটি নিজস্ব দল গঠনের উদ্দেশ্যে এ সকল হাবসীদের নিয়ে বাহিনী গঠন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এ ব্যবস্থা ভবিষ্যতে সাম্রাজ্যের জন্য বিপদ ডেকে নিয়ে আসে।
সুলতান রুকনউদ্দীন বরবক শাহ একজন মহাপন্ডিত ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন শিলালিপিতে নিজ নামে এবং বিভিন্ন রাজকীয় খউপাধির সঙ্গে ‘আল-ফাজিল’ ও ‘আল-কামিল’⎯ এ দুটি উপাধির উলে- দেখতে পাওয়া যায়। এ হতে প্রমাণিত হয় যে, বরবক শাহ শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উপাধি লাভ করেছিলেন। তিনি শুধু পণ্ডিতই ছিলেন না, তিনি বিদ্যা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মেরই বিদ্বান ও পণ্ডিত ব্যক্তি তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। বৃহস্পতি মিশ্র ছিলেন গীতগোবিন্দটীকা, কুমারসম্ভবটীকা, রঘুবংশটীকা প্রভৃতি গ্রনে'র লেখক। ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ নামক বিখ্যাত বাংলা কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসু এ সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন। বাংলা রামায়ণের রচয়িতা কৃত্তিবাস বরবক শাহের অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন। বাসুদেবও সম্ভবত বরবক শাহের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। এ সময়ের মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে ইব্রাহিম কাইয়ুম ফারুকী, আমীর জয়েনউদ্দীন হারাভী, আমীর শিহাবউদ্দীন কিরমানী ও মনসুর শিরাজীর নাম বিশেষভাবে উলে- যোগ্য। বরবক শাহ বিভিন্নভাবে কবি ও সাহিত্যিকদের সাহায্যখ করেছিলেন। তিনি যে একজন উদার ও অসামপ্রদায়িক মনের নরপতি ছিলেন তা হিন্দু কবি-পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতা ও বহু হিন্দুকে উচ্চ রাজপদে নিয়োগ হতে বুঝা যায়। এ দিক দিয়ে বরবক শাহের ন্যায় উদার মনোভাবাপন্ন শাসক শুধু বাংলার ইতিহাসে নহে, ভারতবর্ষের ইতিহাসেও দুর্লভ।
বরবক শাহ একজন প্রকৃত সৌন্দর্যরসিক ছিলেন। গৌড়ের ‘দাখিল দরওয়াজা’ নামে পরিচিত বিরাট ও সুন্দর তোরণটি বরবক শাহ্ই নির্মাণ করেছিলেন। এ আমলে চট্টগ্রামে এবং পটুয়াখালী জেলার মীর্জাগঞ্জে দুটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। এ সমস্ত কার্যাবলী বিবেচনা করলে বঙ্গের সুলতানদের মধ্যে বরবক শাহ্কে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলা যায়।
১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে বরবক শাহ পরলোক গমন করেন। পরে তাঁর পুত্র সামসুদ্দিন আবু মুজাফফর ইউসুফ শাহ (১৪৭৪- ১৪৮১ খ্রিঃ) বাংলার সুলতান হন। পিতা ও পিতামহের গড়া বিশাল সাম্রাজ্য তাঁর সময় অক্ষুণ্ন ছিল। তাঁর রাজ্য পশ্চিমে উড়িষ্যা এবং পূর্বে সিলেট পর্যন্ত বিস-ৃত ছিল।
ইউসুফ শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সিকান্দার শাহ সিংহাসনে বসেন। কিন' তিনি অসুস' হয়ে পড়লে তাঁকে অপসারণ করা হয়। বরবক শাহের ছোট ভাই হুসাইন ‘জালালউদ্দীন ফতেহ শাহ’ উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন (১৪৮১-১৪৮৭ খ্রিঃ)। তিনি নিজ নামে মুদ্রা জারি করেন। কিন্তু এ সময় রাজদরবারে দুর্যোগ দেখা দেয়। হাবসী ক্রীতদাসরা এ সময় খুব ক্ষমতাশালী হয়ে উঠে। এদের প্রতাপ কমানোর জন্য জালালউদ্দীন ফতেহ শাহ চেষ্টা করেন। এতে সমস্ত হাবসী ক্রীতদাস একজোট হয়ে সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। সুলতান শাহজাদা ছিলেন প্রাসাদ রক্ষীদলের প্রধান। ক্রীতদাসগণ প্রলোভন দ্বারা সুলতান শাহজাদা ও তার অধীনস' পাইকদের নিজ দলভুক্ত করে। শাহজাদা রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে ফতেহ শাহ্কে হত্যা করে। ফতেহ শাহ নিহত হলে বাংলার সিংহাসনে ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনকালের পরিসমাপ্তি ঘটে। বাংলায় হাবশিদের রাজত্বের সূচনা হয়।
হাবসী শাসন
বাংলার হাবসী শাসন মাত্র ছয় বছর (১৪৮৭-১৪৯৩ খ্রিঃ) স্থায়ী ছিল। এ সময় এদেশের ইতিহাস ছিল অন্যায়, অবিচার, বিদ্রোহ, ষড়যন্ত্র আর হতাশায় পরিপূর্ণ। এ সময়ে চারজন হাবসী সুলতানের মধ্যে তিনজন হাবসী সুলতানকেই হত্যা করা হয়।
হাবসী নেতা সুলতান শাহজাদা ‘বরবক শাহ’ উপাধি নিয়ে প্রথম বাংলার ক্ষমতায় বসেন। কিন' কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি হাবসী সেনাপতি মালিক আন্দিলের হাতে নিহত হন। মালিক আন্দিল ‘সাইফুদ্দিন ফিরুজ শাহ’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। একমাত্র তাঁর তিন বছরের রাজত্বকালের (১৪৮৭-১৪৯০ খ্রিঃ) ইতিহাসই কিছুটা গৌরবময় ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন দ্বিতীয় নাসিরউদ্দিন শাহমুদ শাহ। কিন্তু কিছুকাল (১৪৯০-১৪৯১ খ্রিঃ) রাজত্ব করার পরই তিনি নিহত হন। এক হাবসী সর্দার তাঁকে হত্যা করে ‘শামসুদ্দিন মুজাফফর শাহ’ নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন (১৪৯১-১৪৯৩ খ্রি। অত্যাচারী ও হত্যাকারী হিসেবে তার কুখ্যাতি ছিল। ফলে গৌড়ের সম্ভ্রান্ত লোকেরা মুজাফফর শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেন মুজাফফর শাহের উজির সৈয়দ হোসেন। অবশেষে মুজাফফর শাহ নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বাংলায় হাবশি শাসনের অবসান ঘটে।
ইতিহাসে বঙ্গদেশ (পর্ব ০১)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, মৌর্য্য সাম্রাজ্য (পর্ব ০২)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, পাল সাম্রাজ্য (পর্ব ০৩)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, সেন সাম্রাজ্য (পর্ব ০৪)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, বাংলায় মধ্যযুগের শুরু (পর্ব ০৫)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, বাংলায় তুর্কী শাসন (পর্ব ০৬)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ, বাংলায় তুর্কী শাসন (পর্ব ০৭)
ইতিহাসে বঙ্গদেশ। স্বাধীন সুলতানী আমল, ইলিয়াস শাহী বংশ। (পর্ব ০৮)
চলবে.....
(তথ্য সূত্রঃ Click This Link)
৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪১
এম আর তালুকদার বলেছেন: যথার্ত বলেছেন।
২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৪
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ইব্রাহীম শাহ শার্কি ও তার সৈন্য বাহিনী ফিরে যাওয়ার কিছুদিন পরে রাজা গণেশ তদীয় পুত্র থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন। সাথে কি উপায়ে যদুকে পুনঃ হিন্দুতে রুপান্তর করা যায় এ বিষয়ে ব্রাহ্মণদের পরামর্শ চান।ব্রাহ্মণরা সম্মিলিত হয়ে পরামর্শ দিল,’স্বর্ণ ধেনু’ ব্রতের মাধ্যমে যদুকে হিন্দুতে রূপান্তর করা সম্ভব। স্বর্ণ দ্বারা গাই গরুর একটা বড় মুর্তি তৈরি করে স্বর্ণ ধেনু’ ব্রতের আনুষ্ঠানিকতা সারতে হবে এর পর সোনার গাভীটির সমস্ত অংশ ব্রাহ্মণদের মাঝে ভাগ করে দিতে হবে।
রাজা উক্ত শুদ্ধি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জালালুদ্দিনকে পুনরায় হিন্দু বা যদুতে পরিণত করেন।
রাজা গণেশ ১৪১৮ সালে মারা গেলে স্বাভাবিক নিয়মে যদু সিংহাসনে বসেন।সিংহাসনের বসার সময় ও পরবর্তিতে যদু ব্রাহ্মণদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েন।জাত কুল খুইয়ে মুসলমান হওয়া যদুকে মেনে না নিতে ব্রাহ্মণরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের মানুষদের উস্কানী দিতে থাকেন। এমতাবস্থায় রাজ্যে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে থাকা যদু এক ভোজ সভার আয়োজন করে রাজ্যের সমস্ত ব্রাহ্মণদের ভোজ সভায় আমন্ত্রণ জানান।
যথা সময়ে ভোজ সভা শুরু হয়, ভোজে সকলকে একটা মাত্র তরকারী পরিবেশন করা হয়,’গরুর মাংস’।
ততোক্ষণে ভোজ গৃহের ফটক বন্ধ করে দিয়েছে প্রহরীরা। রাজা যদু সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, আপনারা আমাকে আধামন ওজনের স্বর্ণধেনু বানিয়ে শুদ্ধাচারের মাধ্যমে হিন্দুতে রূপান্তর করিয়েছেন।এখন আপনারাই আমার বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন ধর্মত্যাগী ম্লেচ্ছ বলে। আমি যদি ম্লেচ্ছই থেকে গেলাম, স্বর্ণের ধেনূটা আপনারা খেলেন কেন?যারা স্বর্ণধেনু ভাগ করে খেতে পারে তারা আসল ধেনু খেতে পারবেনা কেন? এখন আপনাদের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। হয় আপনারা গোমাংস খাবেন অথবা গর্দান দেবেন।
বলা বাহুল্য গর্দান হারনোর ঝুঁকি নাকি কেউ নেন নি।
এই ঘটনার পরে যদু পুনর্বার ইসলাম গ্রহন করেন এবং পুর্ব নাম জালাল উদ্দীন মোহাম্মদ শাহ ধারন করে রাজ্য শাসন করেন। জালাল উদ্দীন মোহাম্মদ শাহ এর পরে তার পুত্র শামসউদ্দীন আহমেদ শাহ ক্ষমতায় বসেন।শামসউদ্দীন আহমেদ শাহ মৃত্যুবরণ করলে শামসউদ্দীন ইলিয়াস শাহের উত্তরশুরী নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ পুনরায় ইলিয়াস শাহী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
এখানে দেখতে পারেন
৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এম আর তালুকদার বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই অংশটুকু বাদ পড়েছিল। ইতিহাস সংগ্রহে এভাবেই সবার অংশগ্রহন কামনা করি।
আমি এই অংশটুকু সংযোজন করে দিচ্ছি।
৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৩
শামচুল হক বলেছেন: লিটন ভাই, আপনার এই ঘটনা এখানে উহ্য আছে, আপনি মন্তব্যে ঘটনাটি দেয়ায় খুশি হলাম। পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ
৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এম আর তালুকদার বলেছেন: আপনারও কিছু জানা থাকলে এখানে উল্লেখ করেন।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
৪| ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪৩
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: পোষ্ট দাতাকে ধন্যবাদ ধারাবাহিক লেখার জন্য।
আর লিটন ভাই কে ধন্যবাদ সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার জন্য।
৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ২:৩২
এম আর তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সময়! এক পলকে শত বছর উত্থান পতন পাঠ করা শেষ! অথচ বর্তমানতায় সে সময়গুলৌ কত দীর্ঘ ছিল!!!!
যেমন এখন আমরা অণুভব করছি। মহাকালে তাই হবে কারো পাঠৈর একপল মাত্র
+++