নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুশাসনের জন্য চেতণার উন্মেষ ঘটানোর প্রচেষ্টা।

সামসুল আলম

জনসেবার পাশাপাশি সত্য ও সুন্দরকে নিয়ে প্রচুর সময় নিয়ে ভাবনা চিন্তায় ডুবে থাকার ও কল্যাণের জন্য সাধ্যমত কাজ করার চেষ্টা নিয়েই বেঁচে থাকবো।

সামসুল আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানব জীবনে বৈষম্য সংকট এবং আমাদের বাংলাদেশ

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:০৩

মানুষে মানুষে পার্থক্য বা ভিন্নতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। সমাজ, জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ, শিক্ষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, স্বাস্হ্য এসবের ণীরিখে ওসব পার্থক্য বা ভিন্নতা নির্দেশিত হয়ে থাকে। কিন্তু মানুষের জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো এবং জীবন মানের ন্যূণতম সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবস্হাগূলো বিধানের ক্ষেত্রে যখন কোন সমাজে, জাতিতে, দেশে বা বিশ্ব-ব্যবস্হায় ভিন্নতা বা পার্থক্য প্রকট হয়ে দেখা দেয় তখন তাকে বলা যায় মানবতার সংকট। এ নিষ্ঠুর বৈষম্য সৃষ্ঠির হোতা এক শ্রেণীর বা গোষ্ঠীর মানুষেরাই -যারা ক্ষমতা ও প্রাচুর্যে বলীয়ান। তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও শোষণ যুগে যুগে মানবতাকে বিপর্যস্ত করেছে। বিশ্বে জন্ম নিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আর দেশ, জাতি বা সমাজের অভ্যন্তরে জন্ম নিয়েছে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর। মানবতার এ শত্রুদের চিহ্নিত করা, ঘৃণা ও বয়কট করা, তাদের রুখে দাঁড়ানো আজ সময়ের দাবী এবং প্রতিটি সচেতন মানুষের মহান কর্তব্য।

কাজ বা শ্রমের যথাযথ মূল্য পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। মানুষের মৌলিক চাহিদা ও সুযোগ সুবিধা গুলো অবারিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু রাষ্ট্র যখন কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর পক্ষাবলম্বন করে বা খপ্পরে পড়ে শ্রেণী বৈষম্যকে জিঁইয়ে রাখে বা বাড়িয়ে দেয়ার পক্ষে ভূমিকা নেয় এবং পূঁজিবাদকে উস্কে দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর উপর শোষণের পথ সুগম করে দেয় তখনি নেমে আসে মানবতার সবচে বড় বিপর্যয়। যুদ্ধ বিগ্রহের চেয়েও তা মানবতাকে অনেক বেশী ক্ষতি করে; কিন্তু সুচতুর প্রচারণা ও দৃষ্টি ঘুড়িয়ে দেয়ার কৌশলের মাঝে তা নিভৃতই থেকে যায়। যুদ্ধ বিগ্রহ বা যেকোন সম্মুখ নির্যাতনের ঘটনা সামসামনি বুঝে ও মোকাবেলা করে নির্দ্দিষ্ট ফলাফল অর্জন সম্ভব; কিন্তু পূঁজিবাদ ও শ্রেণী শোষণের সূক্ষ্ম, চাতুর্যপূর্ণ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশ্রিত ও কৌশলী কুবিধি-কুযোগ গুলো নিরবে নিভৃতেই কতিপয় মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ অবারিত করার জন্য অধিকাংশ মানুষকে মানবেতর জীবন-যাপনে বাধ্য করে।সৌভাগ্যবান ঐ শ্রেণীকূল, যারা নিজেদের ‘এলিট’ ভাবতে পছন্দ করেন, তাদের অলক্ষ্যের এ সাধন বা সাধনতন্ত্রে যদি কেহ খোঁচা মারার দুঃসাহস দেখাতে যায় তাহলে সে দূর্ভাগাকে শায়েস্তা করার জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও বিচারালয় গুলোকে নির্লজ্জভাবে তারা ব্যবহার করে থাকে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লংঘণের অপরাধে তখন রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি গুলো মানব চৈতণ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়ে পড়ে। চাপা ক্ষোভ, অনাস্হা জনিত অস্হিরতা, অবিশ্বাস-চেতণায় বিরাজিত এসবের বঃহিপ্রকাশ মূলক আচরণ ও ঘটনা পরম্পরায় রাষ্ট্র হয়ে পড়ে অকার্যকর।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার ছত্রিশ বছর পরও মানুষের মাঝে বিদ্যমান শ্রেণী বৈষম্য ও জীবন মাণের পার্থক্যের বিশালতা ঘুঁচাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে শ্রমের মূল্য বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে কম। সরকারের কর্ম-কাঠামোয় কুড়িটি বেতনস্তর! যেনো রাষ্ট্রের সেবকবর্গ নিজেদের মাঝে কুড়িটি শ্রেণী বৈষম্যের দীক্ষা নিয়ে সেভাবেই জনগণের মাঝে সেবাকর্ম চালাতে পারেন! যারা এ সেবাকর্মে এসে বৈষম্যের নির্মম শিকার হয়ে অন্তর্ণিহিত অবিচারের চিত্রটি পরিষ্কারভাবে দেখতে পারেন তাদেরও মুখ খুলে কিছু বলার সুযোগ নেই। অভাবে স্বভাব নষ্ট করে বা হতাশায় কুঁকড়ে অদক্ষ যান্ত্রিকতায় নিপতিত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। আর যারা ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধায় তুঁঙ্গে, প্রভুর কৃপাধন্য থেকে তারা অনায়াসে দেশের নব্বই ভাগ (৯০%) সহজ সরল মানুষের রক্তঝড়া ফসল ভোগ করতে পারছেন। এ মোক্ষম সুযোগ অবারিত রাখার জন্যেই আজো স্বাধীন বাংলাদেশে বৃটিশদের সেই নিপীড়ণ ও শোষণ মূলক আইনগুলো বহাল রাখা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ধরে দেশ স্বাধীন করেছেন কিন্তু রাষ্ট্র যন্ত্রটাকে পরজীবি বা ভাইরাস মূক্ত করতে পারেননি। বৃটিশদের সংক্রামিত ‘এলিট ভাইরাস’ এ মাটির সোনার তন্তুগুলোকে আজো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। তাই সোনার বাংলা এখনো সোনার মুখ দেখেনি। দেশের সম্পদ ও সুযোগ সুবিধা গুলো যেনো পাকিস্তানীদের হাত পার হয়ে আজো বৃটিশের প্রেতাত্মাদের হাতেই রয়ে গেছে।যে দেশে পঁচাশি ভাগ (৮৫%) মানুষের দুবেলা পেট ভরে খাবার জোটেনা সেদেশে কোন্ আত্মার মানুষগুলো কীভাবে কোটি টাকা দামের গাড়ী, বিলাস বহুল বাড়ী, রাজকীয় পোষাক পরিচ্ছদ ও ইংরেজী বচনভারী হয়ে এলিট সাজার প্রতিযোগীতায় নেমে পড়তে পারেন তা যেকোন সচেতন মানুষকে না ভাবিয়ে পারে না। একজন সূস্হ্য, বিবেকবান ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের কাছে সেই অদ্ভূত ক্লাউনগুলোর রক্তের পরিচয় নিয়ে তখন প্রশ্ন জাগে।

এদেশে অবাক বিস্ময়ের সাথে প্রায়সঃই দেখতে হয়, কর্ণাধারগণ নিজেরা দামী গাড়ী, বাড়ী, অফিস আদালতে অত্যধিক বিদ্যু ব্যয় সর্বস্ব শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (এ.সি) ব্যবহার করে অন্যদের পরামর্শ দিচ্ছেন বা নিয়ম করে বাধ্য করছেন বিদ্যূৎ ব্যবহারে কৃচ্ছতা অবলম্বনের। নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে অবস্হিত এদেশের মাটিতে গ্রীষ্মের গরমে গায়ে কোট চাপিয়ে, গলায় ফাঁসের রশি ঝুঁলিয়ে অত্যন্ত অযৌক্তিকভাবেও তারা ইংরেজদের সংক্রমিত রীতি এবং আচার আনুষ্ঠানিকতাগুলোকে রক্ষা ও লালন করে চলেছেন। এটা কী সে কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই উৎসারিত -যা আমাদের পূর্ব ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এদেশেরই হীন স্বার্থাণ্বেষী শ্রেণীর কিছু লোক লুটেরা ইংরেজদের দালালী করে দেশ মাতৃকার সম্ভ্রম সম্পদ তাদের হাতে তুলে দিয়ে ঊচ্ছ্বিষ্ট ভোগে পরিতুষ্ট হয়েই নিজেদের এলিট মনে করতো? বিষদ ব্যাখ্যায় না যেয়ে এখানে উল্লেখ করা যায় যে, অতি উর্বর, সহজ, সরল, সুষম প্রকৃতির এ সোনার বাংলায় সৃষ্ট সেই দাদাল বিশ্বাসঘাতকদের অস্তিত্ব এলিট বেশে টিকে থাকার প্রয়াস চালাচ্ছে। বিলম্ব না করে তাদের মুখোশ খুলে দিয়ে রাশ টেনে ধরতে হবে। যারা আজো এ মাটির সম্পদ ও স্বার্থ তুচ্ছ কিছুর বিনিময়ে ভিনদেশীদের হাতে তুলে দেয় এবং ক্ষমতার মুকুট লাভের আশায় ভিনদেশীদের পাশে বসে বা গোপণ আঁতাত করে নিজেদের এলিট বা ক্ষমতাশালী ভাবে ও জনগণকে ধোঁকা দেয়ার প্রয়াস চালায় -এখন সময় এসেছে সেসব ধোঁকাবাজ ভন্ডদের আবর্জনার গর্তে ছূঁড়ে ফেলার।

বক্তৃতা শুনে, দামী গাড়ী বাড়ী ব্যাংক ব্যালেন্স বা চেহারা দেখে নেতা যাঁচাই বাছাইয়ের সময় এটা নয়। নেতা হিসেবে চাই ভালো মানুষ। ভালো মানুষ চিনবো কীভাবে? এমন কোন চিরন্তণ সংজ্ঞা আছে কি যার সাহায্যে এ ভন্ডামীর যুগে ভাল মানুষ বেঁছে নেয়া যাবে? হ্যাঁ, ভাল মানুষ চেনার অতি সহজ ও সঠিক একটা সংজ্ঞা আছে যা অনেকেই জানেন।

আমরা জানি, প্রতিটি মানুষের অস্তিত্বের শুরু থেকে একটি শক্তি কাজ কাজ করে থাকে -যা হলো ঐ মানুষটির ‘বোধ’ শক্তি। এ বোধ শক্তি মূলতঃ দুপ্রকারঃ ১. স্ব-বোধ (Self-ego) ও ২. পরবোধ বা পরার্থিতা (Altruism)। একটি মানুষের মাঝে যখন স্ব-বোধ ও পরবোধের মাত্রা আনুপাতিক হিসেবে সমান সমান (৫০ ভাগঃ ৫০ ভাগ) থাকে তখন তাকে মোটামুটি (অতি সাধারণ মাণের) একজন মানুষ বলা যাবে। আবার যখন কোন মানুষের মাঝে স্ব-বোধের পরিমাণ পরবোধের চেয়ে বেশী মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন ঐ মানুষটির গুণগত মাণ পশুর স্তরের নিকটবর্তী হতে থাকে। অপরদিকে যখন কোন মানুষের স্ব-বোধের চেয়ে পরবোধের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন ঐ মানুষটি মহা মানবের স্তরের নিকটবর্তী হতে থাকে। পৃথিবীর সব মহা মানবদের জীবনী থেকেই সংজ্ঞাটির সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

উপরের সংজ্ঞা দিয়ে অতি সহজেই আমরা ভালো মানুষ চিনে নিয়ে আমাদের নেতা নির্বাচণ করতে পারি। তবে নেতাকে শুধু ভাল মানুষ হলেই চলবে না। তাঁর অবশ্যই নেতৃত্বের গুণাবলী থাকতে হবে; যেমন-বয়োঃজ্যেষ্ঠতা তথা অভিজ্ঞতা, জ্ঞাণ ও প্রজ্ঞা, সততা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও সক্ষমতা, সুদৃঢ় ও উন্নত চরিত্র, শক্ত মনোবল, পরিচ্ছন্ন জীবণাচার ইত্যাদি। আর এসব বৈশিষ্ট্যের ণিরীখে যদি আমরা নেতৃত্ব প্রার্থীদের অতীত, কর্ম, প্রতিপত্তি ও আচার আচরণ, শিক্ষা ও জীবনবোধ সম্পর্কে মূল্যায়ণ করি তাহলে অবশ্যই সঠিক নেতা চিনে নিতে পারবো। গুরুত্ব দিয়ে এ চেনার কাজটি যেমন অবশ্যই আমাদের করতে হবে তেমনি চারপাশের সবাইকে সঠিকভাবে চিনতে সহায়তা করতে হবে।

অন্ধভাবে আমরা আর নেতাদের পেছনে ঘুরে, মিছিল মিটিং হৈ-হুল্লোর করে জীবনের মূল্যবাণ সময় নষ্ট করতে চাই না। নেতাদের কাছে নয়; রাষ্ট্রের কাছে আমরা কাজ চাই, জীবনের নিরাপত্তা চাই। সুবিচার ও বৈষম্যহীন জীবন মাণের নিশ্চয়তা চাই। আমরা চাকুরী কাঠমোয় ২০-টি শ্রেণীভেদ এদেশে দেখতে চাই না। উপরের স্তরের ব্যক্তিটি যে দামে বাজার থেকে ঔষধ, খাদ্য বা পণ্য সামগ্রী কেনেন নীচের স্তরের ব্যাক্তিটিকেও স্বচ্ছন্দে একই দামে কেনার সুযোগ দিন। শ্রমিকের ণ্যায্য মজুরী না দিয়ে শিল্প বিপ্লবের সুনামের নামে একটি বিশেষ শ্রেণীকে ফুলে ফেঁপে উঠার সুযোগ দেয়া যাবে না। টাকা ছিঁটিয়ে নির্বাচণের ফল ঘরে উঠানোর এবং টাকার বিণিময়ে যাকে তাকে নেতৃত্বের আসণে বসানোর নিকৃষ্ট মণঃস্তত্ব ও রাজনৈতিক দর্শণের পরিণতি আমরা দেখেছি। এর পূণরাবৃত্তি আমরা চাই না। জাতীয় সংসদে প্রকৃত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ভালো মানূষেরাই যাতে আসেন; জাতীয় সংসদ যেনো পূণর্বার ব্যবসায়ীদের বিজনেস ক্লাবে পরিণত না হয়। কায়েমী স্বার্থবাদী ও দুর্বৃত্তদের দখলে পুলিশী রাষ্ট্র না হয়ে বাংলাদেশ পরিণত হোক আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্রে -এ প্রচেষ্টা বিবেকবান প্রতিটি মানুষের জেহাদে রূপ নিক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.