নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নতুন বাঙ্গাল

নতুন বাঙ্গাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাচনপুর্ব সহিংস রাজনীতি এবং অন্তহীন 'তত্ত্বাবাধয়ক আন্দোলন' এর শেষ কোথায়?

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:২৯





গত দুই মাসের নানা ঘটন-অঘটন এর মধ্যে গতকাল বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জয়পুরহাট ও বগুড়ার শোক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, 'সেনাবাহিনীরও দেশের প্রতি কর্তব্য আছে। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না।সেনাবাহিনী সময়মতোই তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’

একজন গনতান্ত্রকামী নেত্রির মুখে এধরনের বক্ত্বব্য অপ্রত্যাশিত,অবান্তর হলেও, এদেশের রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে এটা অবাক হবার মত কিছু নয়।কারন ক্ষমতার জন্যই এরা কখনও গনতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রি সাজেন , আবার ক্ষমতার স্বার্থে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেন ।মোট কথা এরা যে কোন উপায়েই ক্ষমতায় যেতে আগ্রহী।



তাই ক্ষমতা পেতে বিরোধীদল কখনও 'তত্ত্বাবাধয়ক সরকারের দাবীতে' আবার কখনও 'একদফার' আন্দোলন এর নামে হরতাল ডেকে, নেতারা নিরাপদে এসি রুমে দিন কাটিয়ে , দেশব্যাপী 'ভাড়াটে' পিকেটার দিয়ে '৫ হাজার' টাকায় গাড়ি ভাংচুর ও '১৫ হাজার' টাকায় গাড়ি পুরানোর চুক্তির ত্রাস শেষে 'হরতাল সফল' হয়েছে বলে দিন শেষে টিভি ক্যামেরায় পোজ দেন।তাদের ভাষায় 'দেশরক্ষার আন্দোলন' এ সবার অংশ নিতে হবে।অথচ তারা নিজেরাই হরতালে অংশ না নিয়ে ,আরাম আয়েশে বাড়িতে কাটিয়ে ভাড়াটে পিকেটার লেলিয়ে দিয়ে 'দেশ রক্ষার' কর্মসুচি পালন করে।



এরপরও বিরোধীদলীয় নেত্রী সম্ভবত ভড়সা পাচ্ছেন না , সরকার পতনে কিংবা তার 'তত্ত্বাবাধয়ক' এর দাবী আদায় হবে কিনা।এজন্যই তিনি সেনাবাহিনীকে আমন্ত্রন জানাচ্ছেন তার কাজটি করে দেয়ার জন্য।কিন্তু উল্টো ঘটনাও যে ঘটতে পারে সেটা সম্ভবত তিনি ভুলে গেছেন। সেনাবাহীনি এসেই নির্বাচন দিবে আর বিএনপি ক্ষমতায় চলে যাবে এটা বোকাও বিশ্বাস করবে না।কারন ১/১১ এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে ঠিকই কিন্তু দুই বছর জেলের ঘানি সবাই টেনেছে।তাই সেনাবাহিনী এসেই খালেদা জিয়ার সব চাওয়া পুরন করে দেবে সেটা অবান্তর।তাই খালেদা জিয়া এখনও অনিশ্চিত ফলের আশায় ব্লাইন্ড খেলছেন।



আসলে এটা যে শুধু বিএনপি বা খালেদা জিয়ার বিষয় তা নয়।বিষয়টা এখন আমাদের রাজনৈতিক সাংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে।প্রতি পাচ বছর পর নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই শুরু হয় এই সব পাল্টাপাল্টি রংবাজি।দেশের সম্পদহানি , প্রানহানি কোন ক্ষতিই বিবেচনায় আসেনা ক্ষমতালোভীদের।



আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪২ বছর। এর মধ্যে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, অনেক ব্যার্থত্বার মাঝে এসেছে বেশ কিছু বড় অর্জন।এতে আমাদের রাজনৈতিক নেত্বৃতেরও কিছু অবদান রয়েছে।কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে আজ আমরা একটি সমস্যাকে কিছুতেই সমাধান করতে পারছি না সেটা হল আমাদের 'নির্বাচন ব্যাবস্থা' বা 'নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি' এটা আমি মনেকরি আমাদের সকল রাজনৈতিক দলের, রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি চরম ব্যর্থত্বা।



কারন আজ এত বছর পরেও প্রতিটি নির্বাচনের সময় হলেই নানা ধরনের শংকা, সংকট শুরু হয়ে যায়, এইদল বলে এটা চাই, ও বলে ওটা চাই, এ যদি বলে এটা হবে, তো আরেকজন বলে মানিনা ইত্যাদি, ইত্যাদি। মাঝখানে দেশের এবং মানুষের বারোটা বাজে।



অতীতের ক্যু , পাল্টা ক্যু ,সামরিক শাষন, ক্ষমতা দখল ইত্যাদি পেরিয়ে ৯০ পর থেকে গনতান্ত্রিক ধারা বহাল থাকলেও ৯৬ তত্বাবাধায়ক এর দাবিতে আন্দোলন, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পেরিয়ে 'নির্দলীয় সরকার' পদ্ধতি প্রতিষ্টিত হলেও সংকট কিন্তু থামেনি। ২০০১ এর নির্বাচনে লতিফুর রহমানের ভুমিকা নিয়ে আওয়ামি লিগের অভিযোগ পরবর্তিতে সংকটে রুপ নে্য় যখন বিএনপি উদ্দেশ্যমুলকভাবে সংবিধান সংশোধন করে কে এম হাসান কে প্রধান উপদেষ্টা বানানোর জন্য।পরবর্তীতে সংঘাত, সংঘর্ষের পথ ধরে ওয়ান ইলেভেন আসে।তিন মাসের 'তত্বাবাধায়ক সরকার' দুই বছর ধরে নানমুখি কর্মকান্ড করে, যার মধ্যে দুর্নীতিবিরোধি অভিযানকে সবাই সমর্থনকরলেও বিরাজনৈতিকিকরন সমালোচিত হয়।পরিশেষে ২০০৮ এ নির্বাচনে আওয়ামি লীগ বিজয়ী হলেও বিএনপি নানামুখী অভিযোগ করে 'তত্বাবাধায়ক সরকার' ও জেনারেল মইনের কর্মকান্ড নিয়ে।



এরমধ্যেই আদালতের রায়ের অজুহাতে ২০১১ সালে সরকার 'তত্বাবাধয়ক' ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করে।এখন বিএনপি সহ অন্য বিরোধিদল গুলো এই 'তত্বাবাধায়ক সরকার' ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করছে।যদিও সেই আন্দোলনে এখনও পর্যন্ত কোন গনজোয়ার তারা সৃষ্টি করতে পারেনি, তবে ভবিষত্যের অবশম্ভাবি সংকট সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। সবাই এখনই ভাবতে শুরু করছে,শেষ পর্যন্ত কি কোন সমঝোতা হবে?নাকি আওয়ামি লিগ কি সত্যি সত্যি তাদের অধিনে নির্বাচন করবে? যদি বিএনপি না যায় সেই নির্বাচনে তাহলে কি হবে? আবার কি ওয়ান ইলেভেন এর মত পরিস্ঠিতি হবে? নাকি বিএনপি কিছুই করতে পারবে না? নাকি সেনাবাহিনী কিছু করতে পারে? ইত্যাদি নানা শংকা মানুষের মাঝে।





আমার অভিযোগ সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যাবস্থা এবং নেতৃত্বের ওপর যারা একটি স্থায়ি ও গ্রহনযোগ্য সমাধান বের করতে পারেননি আজ এত বছরেও। যারা যখন বিরোধি দলে থাকে তখন 'নিরপেক্ষ সরকারের' অধিনে নির্বাচন চায়, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে নানা ফন্দিফিকিরে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রভাবিত করার ধান্দায় থাকে।ফলাফল, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নামে দেশের বারোটা বাজে।



আজকে দেখুন বিএনপি 'নির্দলীয় সরকার' এর দাবিতে আন্দোলন করলেও জাতিকে তারা স্পষ্ট করে বলতে পারছেনা আসলে তারা কি চায়? তারা যদি আগের 'তত্বাবাধায়ক সরকার' চায় তাহলে তার উপদেস্টা হবেন বিচারপতি খায়রুল হক, তাকে কি তারা মানবেন? আচ্ছা যদি না মানেন তাকে তাহলে বিকল্প কে হবেন প্রধান উপদেস্টা? যদি আওয়ামি লিগ বিকল্প কাউকে না মানে তাহলে সমাধান কি?তাহলে পুরনো 'তত্বাবাধয়ক' ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনলেও তো তাদের সংকট দুর হবে না।তাহলে বিএনপি আসলে কিসের বা কোন ধরনের 'তত্বাবাধয়ক' ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করছে? আমার মনে হয় বিএনপির নেতারা নিজেরাও জানে না বিকল্প কি? তারা নিজেরাও জানেনা আসলে তারা কি চায়।তারা আজকে একদফার কথা বলে তো কালকে সেনা মোতায়েন এর দাবী নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যায়।



অন্যদিকে আওয়ামি লীগ নিজেরা আন্দোলন করে তত্বাবাধয়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলেও এখন তা বাতিল করে নিজেদের(মতান্তরে অন্তর্বতিকালিন সরকার) অধিনে নির্বাচনের কথা বলছে।আমি মনে করি দেশের মানুষ আওয়ামি লীগের এই অবস্থান ভালো ভাবে নেয়নি।কারন নির্বাচন,সরকার পরিচালনা এদিক দিয়ে আওয়ামি লিগের গনমুখি একটা ভাবমু্র্তি ছিল যেটা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে।মানুষ বলতে শুরু করেছে আওয়ামি লিগ ১৫ ফেব্রুয়ারি বা মাগুরা মার্কা নির্বাচন করতে চায়।কিন্তু আমার কাছে মনে হয় বর্তমান সময়ে সেটা আওয়ামি লিগের দ্বারা পুরোপুরি সম্ভব নয় যেটা বিএনপি করেছিল মাগুরাতে বা ১৫ ফেব্রুয়ারি কিংবা ঢাকা-১০ উপনির্বাচনে।তাই আমার মনে হয় এই ১৫তম সংশোধনি অনুসারে নির্বাচনে হলে ভবিষত্যে আওয়ামি লিগই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।কারন যদি মিনিমাম একটা ফেয়ার নির্বাচন হয়, মানুষ যদি ভোট দিতে পারে, এবং বিএনপি যদি অংশ নিয়ে জয়ী হয় ।তবে আওয়ামি লিগের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। কারন বিএনপি তখন তাদের অধিনে নির্বাচন করবে এবং যার মাধম্যে আওয়ামি লিগ কখনওই জয়ী হতে পারবে না, কারন বিএনপি এ বিষয়ে সিধ্ব হস্ত(অন্তত অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে)তখন আওয়ামি লীগকি পারবে আবার 'তত্বাবাধয়ক ব্যবস্থা' ফিরিয়ে আনার কথা বলতে?যদি বলে তাহলে দেশের মানুষ কিভাবে নিবে? তাদের প্রয়োজন হলে 'তত্বাবাধয়ক' দরকার ,প্রয়োজন না হলে দরকার নাই এই অবস্থান কি গ্রহনযোগ্য হবে?এই সংশোধন/বাতিল/সংযোজন কি চিরকাল চলতে পারে?



অনেকে বলেন দেশের মানুষ 'তত্বাবাধয়ক সরকার' চায়, আমি বলবো না, দেশের মানুষ আসলে 'নিরপেক্ষ নির্বাচন' চায়, দেশের মানুষ চায় তার মতের প্রতিফলন সঠিকভাবে প্রকাশ করতে।তাই 'তত্বাবাধয়ক' বলুন 'অন্তর্বতি' বলুন দেশের মানুষ চায় যেকোন উপায়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন, তাই আওয়ামি লিগ বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দলের উচিত একটি স্থায়ী নির্বাচন পদ্ধতি বের করা যার মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হয়।তাই ৫ বছর পর পর ধান্দাবাজির আন্দোলন/সংশোধন বাদ দিয়ে সমাধানের পথ বের করলে তার নিজেরাও যেমন উপকৃত হবেন , তেমনি জাতিও পরিত্রান পাবে অনাকাংখিত, অযাচিত সংকট থেকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৩৬

তোমোদাচি বলেছেন: এই চক্র থেকে সহজে মুক্তির সম্ভাবনা দেখছি না :((

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪২

নতুন বাঙ্গাল বলেছেন: আসলেই আমাদের এই চক্র থেকে মুক্তি খুব জরুরী হয়ে গেছে।নয়ত আমাদের সকল প্রচেস্টাই ভন্ডুল করে দেবে এই রাজনৈতিক সহিংসতা। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.