নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভু-কম্পন

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৫




আমি ঘোরতর ব্যস্ত। সমস্ত মনোযোগ ব্যস্ততায়। হঠাৎ মনে হল বিছানাটা কাঁপছে। একটু পর আর মনে হওয়া-হওয়ির কোন ব্যাপার নাই, বিছানাটা দুলছে। উঁহু তাও নয়, পুরো বাড়িটাই দুলছে। জিনিসপত্র আছড়ে পড়ছে।

শান্তা গভীর ঘুম থেকে ধরমড় করে উঠে বসল। আমার কাঁধ ধরে জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, 'এই ! কি হয়েছে !!'
আমি বললাম, 'ভুমিকম্প হচ্ছে'। শান্তা আতঙ্কিত দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইল খানিকক্ষণ। তারপর ছুটে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হল। আমি ওকে ধরে ফেললাম। বলা যায় না, আতঙ্কে সদর দরজায় না গিয়ে ব্যালেকনি থেকে লাফিয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া তখন আর ছুটোছুটি করে লাভ নেই। ভুমিকম্প থেমে গেছে।

কিন্তু ততক্ষণে মানুষজন বেরিয়ে এসেছে। কম্পনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছে। শান্তাও বেরিয়ে অভিজ্ঞতার বর্ণনায় যুক্ত হতে চাইল। আমি শান্তাকে বোঝালাম, ভুমিকম্পর অভিজ্ঞতা তো আমাদের নিজেদের হয়েছে। অন্যদের অভিজ্ঞতা ধার করার দরকার কি !
শান্তা সহমত হল কিনা বোঝা গেল না, তবে বেরুল না। চুপ করে শুয়ে রইল। বেচারির ঘুমটা নষ্ট হল।

কিছুক্ষণ পর আমার ফোন বেজে উঠল। সিদ্ধেশ্বরী থেকে রাসেলের ফোন। রাসেল খুবই উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইল আমার এখানে ভুমিকম্প হয়েছে কিনা। হয়েছে, জানালাম। তারপর রাসেল তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে লাগল। আমি কিছুক্ষণ শুনে প্রশ্ন করলাম, 'ডরাইছস?'
রাসেল ততোধিক উত্তেজিত হয়ে বলল, 'ডরামু না?' আরও কিছু কথার পর রাসেলকে ঘুমাতে বলে ফোন রাখলাম।
একটু পর আবার ফোন বেজে উঠল। দেখি নতুন বাজার থেকে জাকির ভাই। এতদূর ছড়িয়েছে কম্পন !!

রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে জাকির ভাই বললেন, 'মুবিন, ভুমিকম্প দেখছ?'

'-জ্বী জাকির ভাই টের পাইছি।'বললাম।
জাকির ভাই মনে হল বিস্মিত হলেন। বিস্মিত কন্ঠে বললেন, 'বলো কি ! পুরা ঢাকা শহরের মানুষ রাস্তায় নাইম্যা গেছে আর তুমি টের পাইছ !!

আমার একটু লজ্জা লাগল। ঘটনার গুরুত্ব না বুঝে আমিই হাল্কাভাবে নিয়েছি। বোঝা গেল জাকির ভাই ঘটনার গুরুত্বকে অবজ্ঞা করেন নি। নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করলাম, 'আপনিও রাস্তায় নাকি?'

জাকির ভাই বললেন, 'হ্যাঁ, ভুমিকম্পর পরবর্তী ধাক্কার অপেক্ষায় আছি। একবার হলে তার কিছুক্ষণ পরে আরও একবার হওয়ার কথা। তার অপেক্ষা।'

আমি সশব্দে হেসে ফেললাম। জাকির ভাই বললেন, 'শোন, এক লোকের বাড়িতে আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে গেছে। সে লোক গেল আরেকজনের কাছে সাহায্য চাইতে, যে ভাই আগুন লেগে তো আমার সর্বস্ব পুড়ে গেছে। আমাকে সাহায্য করেন। তখন যার কাছে সাহায্য চাইল সে বলে, যে ভাই এখন কিছু নাই। এর পরের আবার আগুন লাগুক তখন দেবো নে।'

আমার হাসির মাত্রা বাড়লো।
জাকির ভাই তখনও বলে চলেছেন, 'আমিও আরেকবার আগুন লাগার অপেক্ষায় আছি। দেখি ভুমিকম্প আরেকটা আসো কিনা।'

'-এখন আর আসবে না জাকির ভাই। আসলে দুই একদিন পরে আসবে। ঘুমায় থাকেন গিয়ে।'

'-আচ্ছা আমি দেখি একটু। তুমি ঘুমাও'
বলে ফোন রাখলেন।

শান্তার আতঙ্ক তখনও কাটে নি। আমি ওকে ঘুমাতে বলে ভাবতে লাগলাম পরের বারের আগুনটা সত্যিই লাগবে ? কতটা ভয়ঙ্কর হবে সেই আগুন ? আমাদের ঢাকা শহরের মেয়াদ উত্তীর্ণ ভবনগুলো সইতে পারবে তো সে ধাক্কা ?
জানুয়ারি ৪, ২০১৬

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


সঠিক রিয়েকশন, আমাদের মানুষ কিছু একটা পেলে, সেটার কথা বলে শেষ করতে পারে না; ভুমিকম্পে ঢাকার দিগন্ত প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.