নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসার খোলা চিঠি ২

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৬:০৭




প্রিয় মৃত্তিকা,
কেমন আছ? ভালই বোধহয় । আমারও সেটাই প্রত্যাশা। রবীন্দ্রনাথ থেকে মহাদেবেরা পর্যন্ত যে সে কথাই বলাবলি করে। আমার কথা জানতে চাইবে তো? আমিও আছি তোমার ওই রবীন্দ্রনাথের ‘বাঁশি’র হরিপদ কেরানীর মতই আছি । হরিপদ কেরানী খুব খেপে উঠে বলেছিল,’হঠাৎ খবর পাই মনে/ আকবর বাদশার সঙ্গে/ হরিপদ কেরানির কোনো ভেদ নেই।‘ মনে আছে তোমার ? আহা! বেচারা হরিপদ! ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার। করবেই বা কি বলো। তারও যে বাঁচতে হয়। আর বাঁচতে গেলে স্বপ্নেরা ভিড় করে। ছেঁড়াছাতা মেলে রাজছত্রে, বিলাসী হয়ে উঠতে ইচ্ছে করে। অনেকে হয়ে ওঠেও বটে। আমিও যেমনটা হয়েছিলাম।
কীসব এলোমেলো লিখছি বলতো। যা লিখলাম আমি নিজেই কিছু বুঝি নি। তুমি কি বুঝেছ কিছু ? তবু, মুছে ফেলছি না, লিখেছি যখন, কি বলো? আজ আমার খুব মন খারাপ হয়েছে। মন খারাপ হলে আপনদের সঙ্গে বলতে হয়। কিন্তু তোমার সঙ্গেও তো কথা বলার জো রাখো নি। অযুত মাইল দূরে পাঠিয়ে দিয়েছ আমায়। তাই আবারও প্রাচীন পদ্ধতিটিই অবলম্বন করলাম। প্রথম চিঠিটির প্রথম বর্ষ পূর্তির কিছুকাল পর আরেকটি খোলা চিঠি।
এবার মন খারাপের কথাটা বলি। গেল পয়লা জুলাইয়ে মানুষের মত দেখতে কিছু গা ঘিনঘিন করা প্রাণী গুলশানের রেস্তোরাঁয় যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, সেটা তো নিশ্চয়ই ভুলে যাও নি? ভুলে কি যাওয়া যায়? আমি সেদিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলাম। খুব কেঁদেছিলাম। তুমি সান্ত্বনা দিয়েছিলে। একটু আগে কাগজে দেখলাম সেই গা ঘিনঘিন করা প্রাণীগুলোর শিক্ষক হাসনাত করিমই ছিলেন গুলশান হামলার অন্যতম পরিচালক ! একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের পৃথিবীর নিকৃষ্টতর ঘৃণিততম কুৎসিত ও নৃশংস প্রাণীতে পরিণত করেছেন! এই কষ্ট আমি কোথায় রাখি মৃত্তিকা ? আরও ভয়াবহ ব্যাপার হল তোমার সর্বাঙ্গ জুরে নাকি ওরকম গা ঘিনঘিন করা প্রাণীগুলোর মত আরও অনেক ছড়িয়ে রয়েছে। নিত্যই এগুলোকে খুঁজে বের করা হচ্ছে কিন্তু তবু ফুরাচ্ছে না। কোন মিশমিশে মন্ত্রবলে তারা বিভ্রান্ত আর পথচ্যুত হয়? কোন স্বার্থ তাদের এমন পাষাণ বানায়? আমি তো জানি, তোমার মানুষগুলোর এমন হওয়ার কথা নয়। তুমি যে আগাগোড়া ভালোবাসায় মোড়া।
তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই, বেশী দিন আগের কথা তো নয়, একটা অসভ্য মানুষ, যে কিনা সংসদ সদস্য, একজন শিক্ষককে খুব অপমান করেছিল। সে অপমান যে কেবল ওই শিক্ষককে নয়, আমাদের সকলকে করা হয়েছিল, সে কথা আমরা সবাই বলেছিলাম।এই ফেসবুকের দেয়াল সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কান ধরা লজ্জাবনত মানুষের ছবিতে ছেয়ে গিয়েছিল। অবশ্য কিছু প্রতিক্রিয়াশীলেরা এর মাঝে আদিখ্যেতা খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু তুমিই বলো তো, ওই কান ধরা ছবিগুলো কি ওই শিক্ষকটির মনে সামান্যতম আনন্দের উদ্রেকও করে নি ? একটুখানি অহংকার অথবা তৃপ্তিতে কি ভরে ওঠেন নি তিনি ? চোখের কোণে কি জমে নি ঈষৎ অশ্রু জল ? অথচ দেখ, কাল কাগজে এসেছে ওই শিক্ষককে কান ধরিয়ে সেলিম ওসমান নামে যে অসভ্য লোকটি লাঞ্ছিত করল, পুলিশ নাকি তার কোনো সম্পৃক্ততা পায় নি। তবে যে সে সময় তিনি নিজেই বললেন, কান ধরিয়ে শাস্তি দিয়ে তিনি জনরোষ থেকে শিক্ষককে রক্ষা করেছেন! কোনটাকে সত্য বলে ধরে নেব বলো তো ?
সেভেন ওয়ান্ডারস্ অব নেচারে আমাদের সুন্দরবনের নাম লেখাতে পৃথিবীর সকল বাংলাভাষী মানুষের কি অসম্ভব উৎসাহ আর উদ্দীপনা আমায় এখনও খুব নাড়া দেয়। এই এত এত ভালোবাসা কি তোমাকে অহংকারী করে তোলে না ? উঁহু, না। হতে নেই। দেখছ না, তোমার অহংকার গুঁড়িয়ে দেয়ার পায়তারা চলছে। বলছে,’ক্ষতি হলেও সরবে না রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র।’ তোমার সুন্দরবনকে অসুন্দরেরা গ্রাস করতে চাইছে। যারা গ্রাস করতে পারে তারা ক্ষমতাবান। এরা সংখ্যায় নগণ্য হয়েও তাই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারে। আর যারা ভালোবাসে তারা ঠিক আমার মত, নিরীহ, ক্ষমতাবিহীন, ভীতু। জ্ঞানের বড় অভাব এদের। এরা কেবল ‘ ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখে ভিতরের রাস-উৎসব।’ আর আপন মনে বিলাসীতায় মত্ত হয়। যদি বা কখনও বেশ কজন একসঙ্গে রাজপথে দাঁড়িয়ে রামপাল চুক্তি বাতিলের শোর তোলে,তখন শিক্ষক লাঞ্ছনায় অসভ্যর সম্পৃক্ততা খুঁজে না পাওয়া মানুষেরা এসে তাদের হাড়গোড় ভেঙে দেয়।
বাসস্থানে দেবতার প্রতিষ্ঠা দেখছ? অথচ তোমার খুব ভালো করেই জানা আমি একজন আদর্শ উদ্বাস্তু। কোন বাসস্থান নেই আমার। তখনও ছিল না, আর এখন তো নেই-ই। কোনদিন যে হবে সেই সম্ভাবনাটাও উবে গেছে সম্প্রতি। হয়ত সে কারণেই চরিত্রে হরিপদ কেরানী আজকাল বড় প্রকট হয়ে উঠেছে। বিলাসিতা তাই খুব সন্দিহান করে তুলেছে। তবু ছাড়ি নি তো। বিড়বিড় করে আবৃত্তি করছি,
... আঙ্গিনাতে
যে আছে অপেক্ষা ক'রে, তার
পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর ।
ইতি
তোমারই
মুবিন
০৬ জুলাই ২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.