নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরর্থক

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৪৯




পাড়ার কলেজে এক সময় আমাদের আড্ডাটা খুব জম্পেশ ছিল। আমরা ছাড়াও পুরো শহরের সব জায়গা থেকে কেউ না কেউ রোজই এসে আড্ডাটায় অংশ নিত। অপু আসত রামপুরা থেকে। খুব ভালো গান করত অপু। চমৎকার গানের গলা ছিল ওর। গানের সঙ্গে আমারও বেশ হৃদ্যতা ছিল। কিন্তু অপুর গাওয়া গানগুলো প্রায়ই আমি চিনতে পারতাম না।

আমার ঘরানা ছিল হেমন্ত-মান্নাদে অথবা রবীন্দ্র-নজরুলেরা। কিছু আধাত্মিক গানের সঙ্গেও পরিচয় ঘটেছিল। ছিল হিন্দি গানের আধিপত্য। আর অপু গাইতো সব ব্যান্ডের গান। ও ছিল আমার আয়ত্বর বাইরে। তবে ও যখন গাইতো, তার থেকে কিছু কিছু গান বেশ ভালোও লাগত।

একদিন অপু গাইলো 'আমি নির্বাসনে যাব না।' গানের সুর আর গায়কীতে একটা ধ্রুপদী ব্যাপার আছে। গানের কথায়ও একটা নতুনত্ব আছে। বলা হচ্ছে বিরহে পড়ে সে ঋষি হবে না। দেবদাস হবে না। নিজে ভালোভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিয়ে বলছে প্রেয়সীর জন্যে পাগল হবে না। সেই সঙ্গে ভালোবাসার মূল্যটাও যে সে অনুধাবন করে, সে কথাও জানাচ্ছে। এই কথাগুলো ঠোঁটের কোণে কেমন একটা হাসি জাগায় যেন। গানটা আমার ভালো লেগেছিল। দেখা গেল এটা খুব জনপ্রিয় গান। আশপাশের আড্ডা থেকেও গানটা আবার গাওয়ার অনুরোধ আসতে লাগল অপুর কাছে।

আমি জানতে চাইলাম, 'এটা কার গান রে?'

অপু বলল, 'কুমার বিশ্বজিতের।'

কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। দুবার দেখাও হয়েছিল। ফোন নম্বর দিয়েছিল। কুমার বিশ্বজিতের প্রথম অ্যালবাম যখন এলো তখন আমি ছোট। সে অ্যালবামের একটা গানও এমনি জনপ্রিয় হয়েছিল। 'তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে।' আমার তখনও গানের দিকে, মানে বুঝে গান শোনার দিকটাতে ঝোঁক তৈরি হওয়ার বয়স হয় নি। তবু এই গানটা মনে পড়ার একটা কারণ তৈরি হয়েছিল। জনপ্রিয় এই গানটা টাইপ মেশিনে টাইপ করা একটা কপি আমাদের পাশের বাসার বাবু কোত্থেকে যেন জোগার করল। সে কপিটা বাবুর জন্যে বড় আকারের অহঙ্কার হয়ে উঠেছিল। আর সেটা বাবুর বয়সি সবার কাছে বিশেষ আরাধ্যও হয়ে উঠল। আমি ভালো করে পড়তে না পারলেও উৎসাহর আতিশয্যে আমিও একটা কপি দাবী উত্থাপন করে আদায় করেছিলাম।

দেখা গেল প্রায় আড়াই দশকের ব্যবধানে একই শিল্পীর দুই গানে আদর্শগত দিকটাতে বিস্তর ব্যবধান চলে এসেছে। পুতুলের মতো সাজিয়ে রাখাতে মেয়েরা এখন আর আপ্লুত হয় না। তারা পড়াশুনা করতে চায়। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চায়। নারী নয়, মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চায়। যোগ্যতার মাপকাঠিতে আপন সঙ্গীও নির্বাচন করতে চায়। অযোগ্যতা প্রমাণিত হলেই তাকে আস্তকুঁড়ে ছুঁড়ে আপন গন্তব্যে যেতে পারার মনের জোর এখন তাদের আছে। এখানে বলে রাখা ভালো, ভালোবাসার যোগ্যতা ভালোবাসতেই হয়।



তো ব্যাপারটা পুরুষদের আঁতে লেগেছে। তাই যে পুরুষ তার প্রেয়সীকে পুতুলের মত সাজিয়ে হৃদয়ের কুঠুরিতে রাখতে চাইতেন, সেই একই পুরুষ এখন বলছেন, প্রেয়সী তাকে ছেড়ে চলে গেলে সে সমাজ থেকে নির্বাসিত হবে না তার বিরহে। এমন কি 'তোমার মতো ললনারে' সেও আস্তাকুঁড়েই ফেলার কথা বলছেন। এটাই ঠোঁটের কোণে কেমন একটা হাসি জাগায় বৈকি।

সময় আসলেই একটা বড় ফ্যাক্টর।

একদিন বাসে যেতে আমার পাশের সিটে দুটা ছেলে বসেছে। তারা নিজেদের মাঝে গল্পে একজন আরেকজনকে জানালো গতকাল সে ক্র্যাশ খেয়েছে। আমি ওদের দিকে ভালো করে তাকালাম। দুজনেই অক্ষত। ক্র্যাশ শব্দটা আমার ভেতরে খচখচ করতে লাগল। অনেকদিন লেগেছিল ওই ক্র্যাশের অর্থ বুঝতে। ছেলেমেয়েরা এখন ক্র্যাশ শব্দটার নতুন অর্থ দাঁড় করিয়েছে। ক্র্যাশ মানে এখন আর শুধু ভেঙেচুরে গুঁড়ো হয়ে যাওয়া নয়।

পাবলিক লাইব্রেরির এক আড্ডায় আমাদের এক বড় ভাই একবার বলেছিলেন,

'ধুর মিয়ারা, তোমরা কিসের প্রেম করো? প্রেম করার আসল বয়সই হয় চল্লিশের পরে।"

ভদ্রলোক এখন সেলিব্রিটি মানুষ। তাই তার নামটা উহ্য রইল। আমরা তখন বয়স পঁচিশ হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম। তার সঙ্গে আরও পনের বছর যুক্ত হওয়ায় খুব মিইয়ে গিয়েছিলাম। ওই অতটা বয়স হওয়ার পরেও আমরা জানতে পারি নি ভালোবাসাটা পঁচিশ বা চল্লিশের হিসেব ধরে আসে না। তার আগে বা পরেও আসে। এসে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে না। স্থূল ষড়যন্ত্রে বেনামী কবির কবিতা আওড়ায় না। প্রবল আস্থায় হাত ধরে।

আচ্ছা রবীন্দ্রনাথ কি ধুমপায়ী ছিলেন? মনে তো হয় না। লাবণ্যকে দেখার অমিত রায়ের প্রথম অনুভূতি ছিল, 'এ যেন অম্বুরি তামাকের হালকা ধোঁয়া, জলের ভিতর দিয়ে পাক খেয়ে আসছে- নিকোটিনের ঝাঁজ নেই, আছে গোলাপজলের স্নিগ্ধ গন্ধ।'

অধুমপায়ী হয়েও অম্বুরি তামাকের ঝাঁজ যেমন জানা যায়, তেমনি ভুল মানুষও যায় জানা? শুদ্ধ জনসভায় শুদ্ধ নেতা ছিল না বলে তো আদর্শ সফল হল না। তাই বলে একজন সঠিক মানুষও কি থাকবে না? থাকতে নেই বুঝি?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২২

রাজীব নুর বলেছেন: কুমার বিশ্বজিতের উত্তরার বাসায় গিয়েছিলাম তার সাক্ষাৎকার নিতে।
রবীন্দ্রনাথ একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ছিলেন।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪৮

মুবিন খান বলেছেন: আমি কুমার বিশ্বজিতের উত্তরার বাসায় যাই নি।... রবীন্দ্রনাথের সময়টাতে ধুমপান যে স্বাস্থ্যর জন্যে ক্ষতিকর, সেটা তখনও জানা যায় নি। উল্টো তখন ধুমপানকে উৎসাহিত করা হতো । ফলে স্বাস্থ্য সচেতনতার সঙ্গে অন্তত সে যুগে বিরোধ থাকবার কথা নয়। তারমানে আমি বলছি না তিনি ধুমপান করতেন। আমি আসলে বিষয়টা জানি না।

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৩

মা.হাসান বলেছেন: শেষের প্যারায় চাকু চালালেন।
খুব ভালো লেগেছে।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৫০

মুবিন খান বলেছেন: আপনার ভালো লাগা আমাকে আপ্লুত করেছে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.