নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবি ও নারী

১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫০



- কি চাও কবি? বল তো কি চাও আমার কাছে?

- কিছুই চাই না নারী। কিচ্ছুটি নয়।

- তাহলে সারাটাক্ষণ আমার পেছন পেছন ঘুরঘুর কর কেন এত?

- পরিব্রাজক বলে।

- আরে!

- কি?

- কবি তুমি। নও?

- কবিতা তো তুমিই। তুমিই নির্মাণ কর কবি। আমি তো নিরেট গদ্য।

- তবে যে পরিব্রাজক হতে চাইলে? শিলংয়ের পাইন বন বুঝি আমি!?

- তা নও, নারী তুমি। তীর্থ তুমি।

- হাহা! সে আবার কি রকম!?

- জানো তো, তীর্থ মানে জন্ম ও মৃত্যুর চক্র জয় করতে হয়। তখন ঘরদোর আর জাগতিক সকল সম্পদ ছেড়েছুঁড়ে পবিত্র জায়গায় চলে গিয়ে...

- হাহাহা... মানে কি! আমি পবিত্র তীর্থস্থান?

- হ্যাঁ।

- আরে!

- সত্যিই তাই। জানো তো, আত্মার সত্য প্রকৃতি অবগত হলে পরেই সর্বজ্ঞতা অর্জন করা যায়।

- কি যে বল কবি! কিছুই বুঝি না। সর্বজ্ঞ হতে চাও তবে?

- আমি সর্বজ্ঞতা চাই নি নারী। সর্বজ্ঞ নইও আমি। আমি কেবল আমাকে জানতে চেয়েছি।

- বেশ তো! জেনে নাও না নিজেকে। তাতে কবি থেকে পরিব্রাজক হয়ে উঠে আমাকে তীর্থ বানাতে হবে কেন! বল দেখি?

- তোমাকে দেখেই যে জেনেছি নিজেকে।

- আরে! এ আবার কি রকম!?

- সেই যে আকাশ বজ্রকে ছুঁড়ে মেরে সপ্তদশী মেঘকে যেদিন বলেছিল, ‘উঠ্ ছুড়ি তোর বিয়ে।’ খুব কান্নায় বুক ভাসিয়েছিলে সেদিন। আর আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম...

- হ্যাঁ, মনে আছে কবি। আকাশের আদেশ অমান্য করবার সাহস সেদিন ছিল না মেঘের।

- হুঁ, তোমার চোখ দিয়ে সেদিন নির্দয় পুরুষতন্ত্রর অমানবিকতা আর কঠিনতা উপলব্ধি করে খুব বিস্মিত হয়েছিলাম।

- তাতেই বুঝি আমাকে তীর্থ বানিয়ে তোমার পরিব্রাজক হতে ইচ্ছে করল?

- তা নয়। বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে যাবার পর মেঘ ভাবলো, যা হবার হয়েছে। এরপর বজ্রের বিদ্যুৎকে উপেক্ষা করে, মেঘ ঠিক করল বৃষ্টি হয়ে ঝরবে। ঝিরঝির করে একটু ঝরতেও শুরু করেছিল। আর তখুনি আচমকা ঝড়ো হাওয়া। প্রবল বেগে বজ্রপাতে সাইক্লোন। বৃষ্টি ঝরাতে প্রস্তুত গুছিয়ে থাকা মেঘকে লম্পট বজ্র লন্ডভন্ড করে দিল একেবারে। সেটা দেখে তোমার পাঁজরের হাড়গুলো কেমন সশব্দে ভেঙেছিল, মনে আছে? আমি নিজের পাঁজর ভাঙার শব্দে তোমার সে ব্যথা আর যন্ত্রণা অনুভব করেছিলাম নারী।

- হ্যাঁ কবি, আছে মনে। তাহলে তো জানোই, সেদিন মেঘের ঝরানো বৃষ্টিগুলো মুহূর্তেই কেমন অশ্রু হয়ে উঠেছিল।

- না, জানি নি। তুমি না থাকলে জানাও হোতো না। তুমি কি আশ্চর্য্য দক্ষতায় মুহূর্তেই হৃদয় দিয়ে শুষে নিয়েছিলে মেঘের সকল অশ্রু! কেউ বুঝতেই পারে নি! কেবল আমিই দেখেছিলাম, তোমার দু চোখ কি অদ্ভুত দক্ষতায় খিলখিল করে হাসতে হাসতে সে সকল অশ্রুদের বাষ্প বানিয়ে দিল! হায় নারী! কি করে পারো অমন! বল দেখি!?

- কি আশ্চর্য্য কবি! তুমি জানলে কি করে!?

- সকলে যখন তোমার বাইরের হাসি দেখছিল, আমি তখন তোমার বুকের ভেতরে হৃদপিন্ড কামড়ে থাকা যন্ত্রণার দিকে তাকিয়েছিলাম যে!

- জানো তবে! তাহলে তো এও জানো কবি, সে যন্ত্রণা হৃদপিন্ডেই বাসা বেঁধেছে। ছেড়ে যায় নি কোনও দিনও।

- জানি। এও জানি, নিঃসঙ্গতায় অসহ্য তোমার ভেতরটা খা খা করছিল। ভালোবাসা জানো নি তুমি। বুকের গহীণ গোপনে ভালোবাসা পুকুরটার গভীর আর স্বচ্ছ জল আজলা ভরে তোলে নি কখনও কেউ। উথাল পাথাল লাগে নি ঢেউ। খড়কুটো পেলেও পুকুরের জল জাপটে টেনে ধরে গভীরে নিয়ে প্রলেপ খুঁজতে চায়।

- তাও জানো দেখছি! কেন অন্তর্যামী হতে চাও কবি?

- চাই না। চাই নি আসলে। কিন্তু জেনে গেছি।

- কেউ তো জানতে পায় নি কখনও! তুমি কেমন করে জানলে! বল তো কবি?

- তোমার বুকের ভেতরটা আমার খুব যেন পরিচিত যেন! যেন অনেক অনেকদিন ধরে চেনাজানা। কেন বল তো?

- কেন কবি?

- তুমি নাকি সৌরজগতের রহস্যতর? তুমি মেলে না দিলে কি করে জানবো নারী?

- না কবি, মেলে দিই নি। কিন্তু... কিন্তু তুমি... তুমি এমনভাবে সামনে এসে দাঁড়ালে; যে মন বলল, তুমিও খুব চেনা... যেন অনেকদিনের...

- কি করব বল নারী! তুমি বলেই যে ওভাবেই দাঁড়াতে হয়। তোমার আকর্ষণ উপেক্ষা করবার শক্তি যে নেই কারও।

- আকর্ষণ না ছাই! কিছু নেই আমার। তুমি কবি বলেই...

- তাই বুঝি সত্যি সত্যিই খড়কুটোই ধরে পুকুর জলে স্নানে ভিজিয়েছ?

- আসতে অনেক দেরী করে ফেললে কবি! আরও আগে কেন এলে না, বল তো? বল কবি?

- না, দেরী করি নি। এই বিশ্বব্রহ্মান্ড বড় হিসেবি হে নারী! পৃথিবীর কক্ষ যদি সূর্যর আরেকটু কাছে হতো, সব জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যেত। যদি একটু দূরে হতো, সব জমে বরফ হতো। বড় চুলচেরা এর হিসেব। যেখানটাতে থাকলে প্রাণের প্রাণী বুকে ধারণ করে প্রদক্ষিণ করতে পারবে, ঠিক সেখানটাতেই রয়েছে সে। তেমনি আমার যখন তোমার কাছে আসবার ক্ষণ, তখনই নিয়ে এসেছে। এ তারই চুলচেরা হিসেব নারী।

- কিন্তু কবি! আমার যে উপায় রইল না! আমার যে তোমার তীর্থ হওয়া হবে না!

- হায় নারী! এই বুঝলে তবে! হও নি কি? হয়েছ তো! তোমার দৃষ্টি দিয়ে হৃদপিন্ড হয়ে ধমনীতে প্রবাহিত হতে হতে স্পন্দনে গিয়ে মিশেছি, টের পাও নি বুঝি?

- হায় কবি! কি নিষ্ঠুর আমি!

- না নারী, তুমি নিষ্ঠুর নও, তুমি অসহায় নও, উপায়হীনও নও তুমি। তুমি অনিন্দ্য অবয়বে শৈল্পিক খাঁজে মানবী নও কেবল। যন্ত্রণায় মোড়া কাব্যিক হৃদপিন্ড সর্বস্বও নও তুমি। পূর্ণাঙ্গ মানুষ তুমি। বাইরেটা গদ্য হলে ভেতরটা যার পদ্য। পদ্য দিয়েই রচিত হয় গদ্য। এই যেমন, আমাকে দিয়ে রচিত তুমি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


পড়ে ভালো লেগেছে আপনার কাছে?

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:১২

মুবিন খান বলেছেন: কার কাছে?

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: বেশ।

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:১৩

মুবিন খান বলেছেন: কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.