নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেঁকা চাউনি

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৮




কদিন আগে আমার এক বন্ধু সুখ বিষয় নিয়ে কবিতা লিখে ফেলছে। বন্ধু জানাইতেছে, সুখের খোঁজে মন তার ব্যাকুল। তারপর ব্যাকুল মনকে শান্ত করতে বলতেছে, সুখ সে তো এক মানসিক অনুভূতি। তারপরে প্রমাণ হিসেবে পথে প্রান্তরে ফুটপাতের লোকেরা যে কত্তগুলা অসুখি, সেই গল্প অশান্ত মনকে শান্ত করতে বলতে শুরু করে দিছে।

কবিতার পরের চ্যাপ্টারে আছে বিত্তঅলা লোকেদের কথা। বিত্তঅলা লোকেরা তাদের বিত্ত দিয়ে সকল বিলাস নিজেদের বাড়িতে জমা করে রাখছে। কিন্তু তবু তারা সুখে নাই।

পরিশেষে বন্ধু আমার ‘সুখ সেতো নয় নির্ভর, অর্থবিত্তের কাছে’- এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে ঠান্ডা হয়েছে।

তো বন্ধুর এই কাব্য আমাকে নস্টালজিক করে ফেলল। ক্লাস ফোরে আমাদের বাংলা বইয়ে একটা গল্প ছিল। সেই গল্পর কথা আমার মনে পড়ে গেল। গল্পর নাম ‘সুখি মানুষ।’ সেই গল্পে রাজ্যর রাজার অচিন এক অসুখ হয়ে যায়। কবিরাজ ব্যবস্থাপত্রে বলে দেয়- সুখি লোকের জামা জোগাড় করে পিন্দে ফেলতে হবে। পিন্দে ফেললেই অসুখ সেরে যাবে।রাজা তখন সুখি লোক খুঁজে বের করে তার গা থেকে জামা খুলে আনতে পেয়াদা লোকেদের পাঠায়ে দেয়।

কিন্তু হায়! সুখি লোক পাবে কই! যারেই জিগানো হয়- সেই সুখি লোক না। কেউ সুখি নয়। অবশেষে জঙ্গলে গিয়ে এক লোকেরে পাওয়া গেল। সেই লোকের বিরাট বুকের পাটা। সেই বুকের পাটায় টোকা দিয়ে ওই লোকে নিজেরে সুখি লোক বলে দাবী করে ফেলল। পেয়াদা লোকেরা বেজায় খুশী। রাজ্যর পথে প্রান্তরে জঙ্গলে হাঁটতে হাঁটতে তাদের পাও ব্যথা হয়ে গেছিল।

কিন্তু তখনই খুবই প্রকটভাবে নতুন সমস্যা আবির্ভূত হলো। এই লোকে উদাম হয়ে চলাফেরা করে। তার কোনও জামা-টামা নাই। ফলে কবিরাজের ব্যবস্থাপত্রর ওষুধ- সুখি লোকের জামা নামক ওষুধ আর পাওয়া গেল না।

এখন কথা হলো, এই গল্পর মরাল বলতেছে, সুখি লোক লোকালয়ে থাকতে পারে না। যদি সুখি লোক বলে কেউ থাকতে থাকে, তাহলে তারে থাকতে হবে গিয়ে জঙ্গলে।

আরেক কথা হলো, সুখি লোকেরে থাকতে হয় উদাম হয়ে। কাপড়জামা থাকাথাকির কোনও নিয়ম নীতি সুখি লোকের নাই।

গল্পর সেই সুখি লোকেও বলাবলিতে অহংকার মিশায়ে বলে দিছিল, তার কাপড়জামা নাই, চুরি হওয়ার মতো কোনও সম্পদ নাই - এই কারণেই নাকি সে সুখি।সম্পদশালী হলেই লোকেদের চুরির ভয়। তখন চুরির চিন্তা তার সুখ কেড়ে নেয়। সম্পদ সে গড়তেও যায় না। সে সৎ ও পরিশ্রমী লোক। জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাটে। সেই কাঠ বাজারে বেচে বেচে তার খাওয়াখাদ্য আর পায়জামা কেনে। এই কাঠ কেটে বেচে ফেলার ঘটনাটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।

তো, ওই লোকে জঙ্গলে একলা একলা থাকে। জীবনধারণের যে সামাজিক নিয়ম আছে, তার বেলায় সেগুলা নাই। সে মানেও না। বউ বাচ্চা বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন তার নাই। জঙ্গলে যে অহংকার নিয়ে থাকাথাকি করে তাতে বোঝা যায় ওগুলার ঠ্যাকাও তার নাই। তার মানে এই লোক চরম অসামাজিক। সামাজিক হলে সমাজের মধ্যে থেকে নতুন সম্পর্ক বানাবার প্রচেষ্টা থাকত। সে প্রচেষ্টা তার নাই। জামা তো পরেই না। পাকস্থলী আর পায়জামা ছাড়া তার কোনও ভাবনা নাই। তাই তার চাকরি বাকরিরও দরকার নাই। সৎ ও পরিশ্রমী এই লোকে রাষ্ট্রের মালিকানাধীন জঙ্গলে গিয়ে রাষ্ট্রের মালিকানাধীন গাছেদের কেটে কেটে বাজারে নিয়ে অবলীলায় বেচে দিয়ে খাদ্য ও পায়জামা কিনে ফেলে।

এখন দেখেন খুব পরিকল্পিতভাবে গল্পর এই সুখি লোকটারে কোমলমতি শিশুদের আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ওই গল্প পাঠ করে কোমলমতি শিশুরা সত্যিকার সুখি লোক হতে চাইবে, তারা সম্পদ গড়তে চাইবে না, দালান-কোঠা বাড়ি-গাড়ি তাদের লাগবে না, তারা জঙ্গলে গিয়ে কুঁড়েঘরে বসবাস করতে মনে মনে প্রস্তুত হবে- এইটাই কি পাঠ্য বইয়ের অভিপ্রায়?

তো এই যে ছোটকাল থেকে আমাদেরকে সম্পদশালী না হতে কেন শিক্ষা করা হলো! দেশে বেকার সমস্যা তো এমনে এমনে বাড়ে নাই, তাই না? কি বলেন?

তবে যুগ পাল্টে গেছে। আগের সেই যুগ আর নাই। সুখি লোক এখন আর জঙ্গলে থাকতে যায় না। কেমনে যাবে! আমাজনে দাবানলের যে অভিজ্ঞতা, জঙ্গলে কি মরতে যাবে? বাড়ির কাছে আরশি নগর সুন্দরবনে গেলেও ঝামেলা আছে। সুন্দরবনের গাছপালা কেটে ফেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাইতেছে। তো গাছ না থাকলে সুখি লোকে কি কেটে বেচে বেচে খাদ্য আর পায়জামা কিনবে? তাছাড়া এখনকার শহরগুলাও তো একপ্রকার জঙ্গলই। জানোয়ারের চেয়েও অধিক হিংস্রতায় শহরের লোকগুলা অনায়াসে জংলীদেরও স্বচ্ছন্দে পরাজিত করতে পারে।

এই শহরে তাই ওই সুখি লোকের আদর্শ নিয়ে মোটামুটি একটা প্রজন্ম দাঁড়ায়ে গেছে। সমাজে বসবাস করলেও সামাজিকতার ধার এরা ধারে না। সম্পর্কর কোনও দায়বদ্ধতা নাই। ওসি প্রদীপ তার নিজের বোনের জমি নিয়ে ফেলছে। ভাগ্নেকে নারী নির্যাতনের মামলা দিয়ে চালান করে দিছে। সেদিন শুনি এক দম্পতি তাদের ছেলেমেয়ের নামে মামলা করে দিছে। উচ্চশিক্ষিত আর উচ্চপদে চাকরি করা ছেলেমেয়ে মিলে বাপ-মাকে সম্পদের জন্যে নাকি নিত্য মারধোর করে। মারধোর করে একটা সাততলা বাড়ি নাকি এর মধ্যে তারা নিয়ে ফেলছে। এখন তাদের আরও লাগবে।

তো সম্পর্কর দায়বদ্ধতার মতো জীবনধারণের যে সামাজিক নিয়ম আছে, এদের বেলায় সেগুলা নাই। এমনকি রাষ্ট্রের আইনের ধারও এরা ধারে না।

ফলে প্রাকৃতিক জঙ্গলে গিয়ে বসবাস করবার ঠ্যাকা এখনকার সুখি লোকেদের নাই।তারা শহরেই বসবাস করে। তবে উদাম হয়ে বসবাস করে না। নানানরকম পোশাক আশাক তারা পরিধান করে।শহরে বসবাস করতে করতে আইয়ুব বাচ্চু গান গাওয়া লোকেদের খুঁজতে থাকে। আইয়ুব বাচ্চু গেয়ে দিছে, 'আসলে কেউ সুখি নয়।' এই গান গাইতে থাকা লোকেদের পাওয়া গেলে নিজের পুরান-ধুরান শার্ট, টি শার্ট, স্যান্ডো গেঞ্জি ইত্যাদি বেচাবিক্রি করা যাবে। এখন মুক্তবাজার অর্থনীতি তো কিছুই ফেলনা না। আবার কিছুই মাগনা না।

খালি রাষ্ট্রীয় সম্পদ মাগনা। সেই যুগে সৎ ও পরিশ্রমী লোকেরা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জঙ্গলের গাছপালা কেটে কেটে বেচে বেচে খাদ্য আর পায়জামা কিনে ফেলত। কদিন আগে দেখি ঢাকার ফ্লাইওভারের তলে যে সড়ক দ্বীপ আছে, বেড়াগুলা নাই। নিশ্চয়ই কোনও সুখি লোকে সেটা খুলে নিয়ে বেচে দিয়ে খাদ্য ও পায়জামা কিনে ফেলছে।

আমাদের বুড়িগঙ্গা নদীটার তো দুই পার ভরে ভরে বাড়িঘর থেকে শুরু করে দোকানপাট কলকারখানার মেলা বানায়ে ফেলছিল। বানাতে বানাতে প্রমত্তা বুড়িগঙ্গারে চিপা ড্রেন বানায়ে ফেলছিল। রাষ্ট্র এখন কিছু কিছু উদ্ধার করতে শুরু করছে। কিন্তু বুড়িগঙ্গা যে রাষ্ট্রের সম্পদ এইটা বাড়িঘর, দোকানপাট আর কলকারখানার সুখি লোকেরা মানতে রাজি না। কেননা আসলে তারা প্রকৃত সুখি লোক না।

কিন্তু রাষ্ট্রর উর্দি পরা লোকেদের দেখে তারা প্রকৃত সৎ, পরিশ্রমী ও সুখি লোক হয়ে যায়। তারা তখন নায়ক জাফর ইকবালের গান গাওয়া লোক হয়ে যায়। জাফর ইকবাল গেয়ে দিছে, 'সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী।' কেননা আসলে তারা প্রকৃত সুখি লোক না। প্রকৃত সুখি লোক হলে তারা আইয়ুব বাচ্চুর গান ধরত, 'আসলে কেউ সুখি নয়।'

তবে হতাশ হওয়ার কিছু নাই। হতাশ হওয়া কোনও কাজের কথা না। আমার মতো আশাবাদী লোক হতে হবে। সুখি লোক যে এক্কেরে নাই- ঘটনা এমন না। আছে।আমিও এই শহরেই আছি। আমিও উদাম থাকি না। কারও যদি সুখি লোকের জামা লাগে তাহলে আওয়াজ দিবেন। ভাবনার কারণ নাই। সুলভ মূল্যে দিব। পিন্দে পিন্দে পুরান করে ফেলছি তো। কত আর রাখব! চক্ষুলজ্জা বলে একটা কথা আছে না!

এখন কথা হলো, এরম একটা গল্প স্কুলের শিশুপাঠ্য বইয়ে কেন দেয়া হয়েছিল?

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৬

মা.হাসান বলেছেন: বই গুলো বদলানো দরকার। সালমান দরবেশ, পিপিপি মন্ত্রী, টিন-খাম্বা-শেয়ার ফালু- এদের জীবনি পড়া দরকার। এনাদেরকে আমার খুব সুখি মানুষ মনে হয়।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:০৭

মুবিন খান বলেছেন: আপনার মন্তব্যর জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৮

সাগর শরীফ বলেছেন: টাকা পয়সা, বাড়ি গাড়ি জাতীয় প্রয়োজনীয় উপকরণ যথেষ্ট মজুদ থাকলে তাকেই কি মূলত সুখ বলে?

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১২

মুবিন খান বলেছেন: "বিত্তঅলা লোকেরা তাদের বিত্ত দিয়ে সকল বিলাস নিজেদের বাড়িতে জমা করে রাখছে। কিন্তু তবু তারা সুখে নাই।... পরিশেষে বন্ধু আমার ‘সুখ সেতো নয় নির্ভর, অর্থবিত্তের কাছে’- এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে ঠান্ডা হয়েছে।"

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার ,সৃজনশীল লেখা ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৩

মুবিন খান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৩

মুবিন খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.