নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইলিশ ও বৈশাখ

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৭



বৈশাখ বাঙালির আত্মপরিচয় । বৈশাখ এসে জানিয়ে দেয় বাঙালি সংস্কৃতি কত কত খদ্ধ। বৈশাখকে ঘিরে যে উৎসব, তার উদযাপনে যে সর্বজনীনতা, সে আমাদের জানায়, বাঙালি জাতিগতভাবে অসাম্প্রদায়িক, জানায়, এ ভূখন্ডের মানুষ ক্ষয়িষ্ণু নয়, সহিষ্ণু।

বৈশাখ মানে ঝড় ঝঞ্ঝা উত্তাল অশান্ত প্রকৃতি। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে প্রকৃতি সঙ্গে । তারপর হাতে হাত রেখে ঋজু ভঙ্গীতে দাঁড়ায় বুক চিতিয়ে। এ অনেকটা প্রার্থনার মতো। ঋজুতায় দাঁড়ানোর ওই সারিতে লোকেদের কোনো ভেদ নেই। আবার এই ঝড়ের আগমন উপলক্ষে এরাই করে উৎসব আয়োজন । প্রখর উত্তাপে আকাশপানে চায়, দৃষ্টিতে তার তাচ্ছিল্য । সূর্যকে বাঁকায় ঠোঁট। তারপর ভীষণ উচ্ছলে গান ধরে, 'তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে...' এই হলো বাঙালি। এই-ই তার সংস্কৃতি, তার আত্মপরিচয়ের বৈশাখ ।

বাঙালির এই আত্মপরিচয়টি সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করেছিলেন রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর । তিনি জেনে গিয়েছিলেন বৈশাখই পারে মুমূর্ষুরে উড়িয়ে দিতে । জানতেন সকল গ্লানি মুছে দিতে পারে বৈশাখ, পারে ঘুচায়ে দিতে জরাজীর্ণকে, প্রখর উত্তাপে শুদ্ধ করতে পারে ধরণীকে।

পয়লা বৈশাখ বিভাজনের বিপক্ষে। সে অসাম্প্রদায়িক। তার আয়োজন বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের জন্যে নয় ৷ নয় বিশেষ কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসীদের জন্যেও । পয়লা বৈশাখ আর তার সকল আয়োজন সকল মানুষের, বাংলার সকল মানুষের ।

কিন্তু বাঙালির এই আয়োজন এখন আক্রান্ত হয়েছে। না, বাইরের কেউ করে নি এই আক্রমণ। ঐক্যবদ্ধ বাঙালি এখন নিজেরাই বিভাজিত। হরেক রকম বিভাজন। বিভাজিত হয়ে কেবল নিজেরা একলা হয় নি, পয়লা বৈশাখ আর তার উৎসবকেও ভাগ করেছে। নগরের লোকেদের বৈশাখ উদযাপন মেলে না গাঁয়ের লোকেদের সঙ্গে । মেলে না উচ্চবিত্তের সঙ্গে মধ্য কিংবা নিম্নবিত্তের পয়লা বৈশাখ । ভাগ হয়েছে, বিত্তে, ধর্মে, শ্রেণিতে।

এখন পয়লা বৈশাখ মানে পান্তা-ইলিশ ভক্ষণ । বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহকরা ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছেন, নববর্ষ উদযাপনে ইলিশ ভোজন হতো না। বৈশাখে ইলিশ খাওয়া বাঙালি সংস্কৃতির অংশ নয়। এ কেবলই শহুরে রেওয়াজ। নিকট অতীতেই এ রেওয়াজ চালু হয়েছে। পান্তা-ইলিশ এখন ধনী লোকেদের বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে।

পান্তা গরিব মানুষের খাবার। এ খাবার এখন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। পয়লা বৈশাখ এগিয়ে এলে রাজধানীর নব্য ধনীদের মাঝে ইলিশ কেনার ধুম পড়ে যায়। ইলিশের আকাশছোঁয়া দাম পত্রিকার পাতায় জায়গা করে নেয়। অথচ যে কৃষকদের উপলক্ষ্য করে পয়লা বৈশাখ, তাঁদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিতে পান্তা-ইলিশ কখনো অপরিহার্য ছিল না। গ্রামের সংস্কৃতি সম্পর্কে রাজধানীর নব্য ধনীদের আসলে সঠিক কোনো ধারণা নেই।

সংস্কৃতি হলো বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য এবং জ্ঞান। এর মধ্যে ভাষা, বিশ্বাস, নৈতিকতা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্প, সামাজিক আচার, সঙ্গীত এবং শিল্পকলা এই বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত। এসব মিলেই সংস্কৃতি । পান্তা-ইলিশের সংস্কৃতি বাঙালির সংস্কৃতিকে সম্মান করবার বদলে ব্যঙ্গ করছে যেন। ইলিশ বাঙালির ঐতিহ্য বটে, সংস্কৃতি নয়। ঐতিহ্যকে সংস্কৃতির ওপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ইলিশের উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। এভাবে বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশ ধরার উৎসব চললে নিকট অতীতে জাতীয় এ মাছটি হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

চাপিয়ে দেয়া এই অপসংস্কৃতি থাকে বেরিয়ে আসা এখন খুব জরুরি । ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি এক নয়। দুটাই দামি বটে। একের সঙ্গে অন্যর তুলনা চলে না। তেমনি অযাচিত একের ওপর অন্যকে চাপিয়ে দিলে আপন আকৃতিটা হারিয়ে ফেলে । আকৃতিটার পরিচয়টা তখন 'বিকৃতি' হয়ে যায়।❐

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



ঐতিহ্য হচ্ছে সংস্কৃতির অংশ।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:০১

মুবিন খান বলেছেন: তাহলে ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি এক নয়। বাঁচা গেল।

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার সংস্কৃতির ডেফিনেশনে মুল বিষয়টি বাদ পড়েছে, উহা হচ্ছে, "শিক্ষা"।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:০১

মুবিন খান বলেছেন: শিক্ষা আপনি দিলেন তো। এখন আর বাদ রইল না তবে।

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৫৯

মা.হাসান বলেছেন: এখন সারা বছর ইলিশ পাওয়া যায়। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেও বরফের সরবরাহ একরম ছিলো না। মধ্য এপ্রিলে ইলিশ থাকার কোনো সম্ভাবনাই ছিলো না। কাজেও ইলিশ পান্তার কালচার আবহমান কালের কালচার হবার কথা না। সহমত।

আগে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা হতো। আলাদা ভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হতো কি? অতটা মনে করতে পারছি না।

বেশি বড় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে তেমন একটা বের হই না। অনুস্বর সম্পর্কে জানলাম। পরের বার স্টলের দিকে গেলে খোঁজ করবো।
আপনার খেরো খাতা থেকে মাঝে মাঝে পোস্ট দেয়ার অনুরোধ থাকলো।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:০৪

মুবিন খান বলেছেন: আমার লেখার আকৃতিটি বড় না করবার প্রয়োজন ছিল। ফলে অনেক কিছুই বাদ রয়ে গেছে। আপনার ছোট্ট মন্তব্য অনেক কিছু যুক্ত করে দিল লেখায়। আপনাকে কৃতজ্ঞতা। আপনার অনুরোধটি ভালো লাগা। ধন্যবাদ জানবেন।

৪| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



হজ্বের দিনকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে উহা সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় হবে।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১৭

মুবিন খান বলেছেন: আপনার আইডিয়াটি দারুণ। চমৎকারিত্ব আছে। আপনার উচিত রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হবার চেষ্টা করা। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সমস্যা হবে না। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র নীতিতে কাজ করলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গেও মেলবন্ধন হতে পারে। শুভকামনা রইল।

৫| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১৩

শায়মা বলেছেন:

নতুন বছরের শুভেচ্ছা - আমি আর আমার পান্তাবুড়ির পক্ষ থেকে.....

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:২৬

মুবিন খান বলেছেন: কৃতজ্ঞতা আপনাকে। একলা আপনাকে না, পান্তা বুড়িকেও। সঙ্গে একটা ধন্যবাদ।

৬| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৪০

শায়মা বলেছেন: এইবার তাহলে তরমুজ আর কাঁচা আমের শরবৎ দিলাম ভাইয়া.....

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৪৬

মুবিন খান বলেছেন: ক্ষতি করলেন। শুনেদেখে এখন সত্যি সত্যি খেতে ইচ্ছা করছে।

৭| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৫০

শায়মা বলেছেন:

বানিয়ে ফেলো ভাইয়া তারপর খেয়েও ফেলো।

আর না পারলে আমার পরীর দেশে উড়ে আসো। এখনও কিন্তু ফ্রিজে রেখে দেওয়া আছে। :)

তেঁতুলের শরবৎও আজ বানিয়েছিলাম ভাইয়া।



কাঁসার গ্লাসটাতে তেতুলের শরবৎ ঢালা আছে.....

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:২৭

মুবিন খান বলেছেন: শায়মা, আমি আপনার ভাইয়া নই। হুটহাট কাউকে বোন ডেকে ফেলতে পারি না আমি। তাই আপনার ভাইয়া হতেও চাই না। আমার পাঁচটা বোন আছেন। আর লাগবে না।

পরীর দেশেও যেতে পারব না। পথঘাট চিনি না। পথঘাট চিনলেও যাওয়া যেত না। আমার ডানা নেই যে উড়ে চলে যাব। তাছাড়া মানুষ আমি। সেখানে আমাকে ঢুকতে দেবে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন বটে।

অতএব বানিয়ে রাখা শরবৎ আপনাকেই খেতে হচ্ছে। খেতে থাকুন।

৮| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: আজ তো আমি ইলিশ মাছ খাই নি। এখন আমার কি হবে? সমাজ কি আমায় মেনে নেবে?

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:২৯

মুবিন খান বলেছেন: যে সমাজ ইলিশ না খেলে মেনে নেবে কিনা সন্দেহ জাগায়, সে সমাজ নিলো কিনা সেটা নিয়ে ভাবিত কেন আপনি?

৯| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৩৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক সুন্দর লিখেছেন। পান্তা-ইলিশের যে অপসংস্কৃতির কথা বলেছেন, সেই ব্যাখ্যার সাথে অক্ষরে অক্ষরে একমত। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:৩১

মুবিন খান বলেছেন: আপনার জন্যেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এবং মার্জিত মন্তব্যটির জন্যে কৃতজ্ঞতা আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.