নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

মুবিন খান

নিজের পরিচয় লেখার মত বিখ্যাত বা বিশেষ কেউ নই। অতি সাধারণের একজন আমি। লিখতে ভাল লাগে। কিন্তু লেখক হয়ে উঠতে পারি নি। তবে এই ব্লগে আসা সে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য নয়। মনে হল ভাবনাগুলো একটু সশব্দে ভাবি।

মুবিন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মঞ্জুর গল্প ১

১৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৬

মঞ্জুটা মরে গেল।
টিটু রাতেই লন্ডন থেকে ফোন করেছিল। আমি জ্বরের ঘোরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলাম বলে টের পাই নি। আর টের পেলেও বা কি হতো? আমি মঞ্জুর মরে যাওয়ার খবরে কাতর হয়েছি দেখে কি মঞ্জু বেঁচে উঠত? মোটেও না। কি নিষ্ঠুর এই মৃত্যু! মঞ্জুর সঙ্গে এই জীবনে আর কোনো দিন আমার দেখা হবে না!

আমরা মানুষের আনন্দ খবরে আনন্দিত হই না। কারও জীবনে আনন্দদায়ক কোনো ঘটনা ঘটলে সেটা অন্যকে জানাতে ব্যস্ত হয়ে উঠি না। কিন্তু শোকের খবরের বেলায় উল্টাটা করি। মঞ্জু যেদিন 'শুভ বিবাহ' করে ফেলল, সে খবর কাউকে জানাতে আমি ব্যস্ত হয়ে উঠি নি। কিংবা যেদিন মঞ্জু প্রথম বাবা হয়ে উঠল, সে খবরও আমাকে জানায় নি কেউ। অথচ মঞ্জু মরে গেছে শুনেই টিটু সে সুদূর লন্ডন থেকে বারবার আমাকে ফোনে ধরতে চেষ্টা করেছে শোক ভাগ করতে।

আচ্ছা, শোক ভাগ করলে কি শোকের ভার কমে? আমি জানি না। তবে হৃদয় আর্দ্র হয়। পরদিন টিটুর সঙ্গে যখন আমার কথা হলো, আমি টিটুর গলা ধরে আসা টের পাচ্ছিলাম। ওর বুকের পাঁজর যে ভারি হয়ে আসছে বুঝতে পারছিলাম। টিটু নিজের দায়িত্বর জায়গা থেকে আমাকে মঞ্জুর মৃত্যুর খবর জানাতে চেয়েছিল। নাকি টিটু ভাইয়ের মৃত্যুর শোক ভাগ করতে আমাকে ফোন করেছিল। সচেতন ও অবচেতন ভাবে দুটাই সত্য আসলে।

আমি রতনকে ফোন করলাম। রতন এখন মেরিল্যান্ডে থাকে। ফলে বাংলাদেশ-লন্ডন-মেরিল্যান্ডের তিন দাগের সময় আমাকে ঠাওর করতে দেয় না কোথায় দিনরাতের কয়াটা বাজে। রতন ফোন ধরলে আমি বলি, রতন, মঞ্জু মরে গেছে রে!

চমকে ওঠে রতন, কোন্‌ মঞ্জু!

আমার খুব বিরক্ত লাগে। বলি তুই কয়টা মঞ্জু চিনস্‌?

রতন চুপ করে থাকে। আমি বলি, টিটু-মঞ্জুর মঞ্জু।

সদ্য হজ করে আসা রতন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইন্নালিল্লাহ পড়ে বলে, আল্লাহ বেহেশত নসিব করুক।

আমি খুবই মেজাজ খারাপ করে বলি, ওই হারামজাদারে বেহেশত নসিব করবে মানে কি! আমি কি মরে গেছি?

সত্যিই তাই, কথা রাখে নি মঞ্জু। এভাবে ওর মরে যাওয়ার কথা নয় মোটেও। কথা ছিল যেখানেই থাকি শেষ জীবনটা আমরা ঠিক ছেলেবেলার মতো একসঙ্গে কাটাবো। মঞ্জু হলো আমার জীবনের প্রথম বন্ধু। মঞ্জুর ভাই টিটুও আমার বন্ধু। এমন ভাইয়ে ভাইয়ে বন্ধু আমার অনেক আছে। তবে টিটু-মঞ্জুই প্রথম।

মঞ্জু সবকিছুতেই আমার থেকে এগিয়ে ছিল। আমার আগে সাইকেল চালাতে শিখে ফেলেছিল। আট আনায় সাইকেল ভাড়া করে যখন পাড়ার রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটত, আমি দৃষ্টিতে বিস্ময় আর লোভ চেয়ে থাকতাম। একদিন আমাকে এসে বলে, সাইকেল চালাইতে পারস্‌ না?

আমি মাথা নেড়ে বলি, না।

দারুণ মজা পায় মঞ্জু। তারপর বলে, শিখবি?

আমি বলি, হ।

চল্‌।

আমরা পাড়ার হাঁটতে হাঁটতে গোডাউন পেরিয়ে চলে যাই সিএমবি মাঠে। টুটুলদের বাসার উল্টাপাশে একটা তেঁতুল গাছ। এই তেঁতুল গাছ নিয়ে পুরো পাড়া জুড়ে তখন নানান জল্পনা। কারা কিংবা কিসব নাকি থাকে ওই তেঁতুল গাছে। সন্ধ্যার পর টিটু-মঞ্জু আর আমাদের আপারা তেঁতুল গাছ পেরুবার সময় নানান দোয়া আর সুরা পড়তে পড়তে পার হয়। কিন্তু দিনের বেলায় ওই তেঁতুল গাছের তলাতেই শহীদ ভাইয়ের রিকশার গ্যারেজ। মঞ্জু আমাকে জানিয়েছিল, শহীদ ভাই হলেন রিকশার ইঞ্জিনিয়ার। সঙ্গে বেশ কিছু রিকশার মালিকও তিনি। আর আছে পাঁচ-ছ'টা সাইকেল। সেসব সাইকেল তিনি ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দেন। এই সাইকেলের কারণেই শহীদ ভাইকে পটিয়ে তার সঙ্গে মঞ্জু দহরম মহরম খাতির করে ফেলেছে।

রিকশার ইঞ্জিনিয়ার শহীদ ভাইয়ের সাইকেলের ভাড়া ঘন্টা প্রতি আট আনা। কিন্তু মঞ্জুর সঙ্গে বিরাট খাতির বলে ওর জন্যে বারো আনা। আচ্ছা, এখনকার ছেলেমেয়েরা কি আট আনা- বারো আনার হিসেবটা জানে?

মঞ্জু আমাকে শহীদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বারো আনা ঘন্টার সুবিধা পাইয়ে দিল। এরপর শুরু হলো আমার সাইকেল চালানো শিক্ষা। শিক্ষকের নাম মঞ্জু। আমি সাইকেলে চড়ে প্যাডেল ঘুরাই, শিক্ষক মঞ্জু পেছন থেকে ধরে রেখে দৌড়াতে থাকে যেন পড়ে না যাই- সঙ্গে ক্রমাগত খিস্তি করতে থাকে। ঘণ্টা ফুরোলে সাইকেল থেকে নেমে আমি ওর কলার ধরে বলি হারামজাদা কয়টা গালি দিছস্‌ ক। মঞ্জু তখন হাসে। কি যে নির্মল সে হাসি!

কেউ কি ধারণা করতে পারেন আমাদের বয়স তখন কত? আমি তখন থ্রিতে পড়ি। মঞ্জু পড়ে টুতে। অথচ মঞ্জুর পড়বার কথা ফোরে। এটা মঞ্জু নিজেই বলত। কিন্তু পড়তে ওর ভালো লাগে না বলে ওর ক্লাস টু-ই ভালো।

এভাবে সাইকেল চালনা শিখতে শিখতে দিন সাতেক পর মঞ্জু হাঁপাতে হাঁপাতে সামনে এসে বলে, ...য়ার পোলা, আমি তো দৌড়াইতেছি, তুই কতক্ষণ ধইরা একলা একলা চালাইতাছস্‌ জানস্‌?

আমি অবাক হয়ে মঞ্জুর দিকে তাকাই। যা জানা গেল, শুরুতে মঞ্জু রোজকার মতো সাইকেল ধরেই রেখেছিল যেন আমি পড়ে না যাই। তারপর একটু ছেড়ে দেয়, আবার ধরে। এভাবে অনেকটা সময় চলার পর শেষ দশ পনের মিনিট একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি ভেবেছি ও ধরে আছে। সে ভাবনাতে আমি পরম আস্থায় নিশ্চিত মনে সাইকেল চালিয়ে গেছি। ওই দশ পনের মিনিট ঊর্ধ্বশ্বাসে মঞ্জু সাইকেলের পেছন পেছন ছুটেছে শুধু এটা বোঝাতে- দোস্ত্‌ আমি আছি, তুই পড়ে যাবি না।

(বাকিটা পরে লিখি?)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১১

রানার ব্লগ বলেছেন: ছেলে বেলার বন্ধুরা এমন হয়।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:২৩

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ৮০ কিংবা ৯০ দশকের ছেলেদের এমন গল্প সবার জীবনে রয়েছে। আপনার গল্প ভালো লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৩১

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লেগেছে আপনার গল্প।
জীবনেরই কথা।

৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.