নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা কথাই বুঝি \"হয়ত প্রতিবাদ করো নয়ত মরো\"

মুহাম্মাদ আরজু

একজন পরিপূর্ন মায়ের কাছে তার ছেলে একটা রাজপূত্র।আর আমি আমার মায়ের রাজপূত্র।

মুহাম্মাদ আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

"দীর্ঘ ৯ মাসের অনুপ্রেরণা"

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৩

-কিরে ভীতুর মতো এইখানে বসে কাঁদছিস
কেনো?
হিমেল নিচু থেকে মাথাটা উঁচু করে খুজছে কে
বলল কথাটা।স্বরটা শুনে তো ওর মনে হলো ওর বড়
ভাই বলেছে।কিন্তু কিভাবে?কিছুক্ষন আগেই তো
তিনি হানাদার বাহিনীর গুলি খেয়ে শাহাদাত
বরন করলেন।তাই কৌতুহল টা একটু বেশিই।সাথে
ভয়ও করছে।
.
-(কাপা স্বরে) কে?
আধার কাটিয়ে চাদের আলোয় বড় ভাইয়ের মুখটা
দেখে হিমেল চমকে গেলেন।সেই শার্টটা পরা।
সাথেই তো পরা তার লাশটা কিন্তু এটা
কিভাবে সম্ভব?
.
-কিরে হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো?
-(চোখমুখ মুছে) না মানে তুমি না একটু আগে
মারা গেলে?
-(মুচকি হাসি) মানুষ তো শুধু মরে একবার কিন্তু
মনের মাঝে তো সারাজীবন বেচে থাকে।তুই
আমাকে মনের ভিতর রেখেছিলি তাই সামনে
এসে দাড়ালাম তোকে অনুপ্রেরণা দিতে।
-কিসের অনুপ্রেরণা?
-তোকে এই ধানের ভেতর পালিয়ে রেখে আমি
আর মা বাইরে রইলাম কেনো জানিস?
-কেনো?
-কারন আমরা মরে গেলেও যেন তুই দেশের জন্য
লড়াই করতে পারিস তাই।
-কিন্তু আমারতো মাত্র ২০ বছর আমি কিভাবে
তাদের মোকাবেলা করব?
-(মুচকি হেসে)ধুর বোকা ওইদিকে দেখ।
.
আজ্ঞুল দিয়ে হিমেলের বড় ভাই রশিদ একটা
পিচ্চিকে দেখালেন।হিমেল চাইলেন:
-দেখেছিস ওর বয়স কত হবে?
-১৫ বা ১৬ বছর হবে।
-ও কি তোর থেকে ছোট না?
-হ্যা।
-ওর চোখে কি দেখতে পাচ্ছিস?
-প্রতিশোধের আগুন।
-ও তোর থেকে ছোট হয়ে যদি প্রতিশোধ নিতে
প্রস্তুত থাকে তাহলে তুই কেনো পারবি না।
.
হিমেলের মনে নিজের ভাই ও মা মরার
প্রতিশোধ নেওয়ার আগুন জলে উঠল।
তারমধ্যে আরেকজনের আগমন।
-খোকা।
হিমেল ডানদিকে চাইল।বুঝতে পারল ওর মা ডাক
দিয়েছে।
-তুই কি আমাদের মারা যাওয়ার প্রতিশোধ
নিতে চাস?
-(কান্নাজরিত কন্ঠে)হ্যা মা।
-না খোকা।এমনটা করিসনে।
-তাহলে?
-আমার মতো হাজারো মা তোর ভাইয়ের মতো
হাজারো ভাই মারা গেছে।তারা কি তাদের
স্বজনহারার প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে?
-তাহলে কেনো তারা এমন লড়াই করছে?
-তারা তার মার মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার
প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে।তারা স্বাধীন ভাবে
বাচার জন্য লড়াই করছে।তারা নিজের দেশ
মায়ের জন্য লড়াই করছে।তুই ও তাই কর।
-হ্যা তাই করব মা।আচ্ছা তারাও কি-আমার
মতো ওরাও কি তাদের মা-ভাইদের সাথে কথা
বলছে?
.
হিমেলের বড় ভাই ও ওর মা একসাথে মুচকি হেসে
বলল:
-হ্যা।তারাও বলছে।এখন তুই কথা না বলে
নিজেকে তৈরি কর নিজের দেশ ও মায়ের মুখের
ভাষা রক্ষা করার।
-হ্যা যাচ্ছি মা।আর কথা দিলাম তোমার মুখের
ভাষা রক্ষা করেই ছাড়ব দোয়া করো।
.
তারপর নিজের মায়ের সাদা আচল থেকে
খানিকটা ছিড়ে হিমেল মাথায় বেধে নিল।
তারপর ওর মতো আরো অনেকেই একজোট হয়ে
দীর্ঘ নয় মাস মায়ের মুখের ভাষা রক্ষা করার
মিশনে নেমে পড়ে।
যুদ্ধ চলাকালে যখনই কোন বাধা বিপত্তি আসে
তখনই তারা আবার এসে বুঝায় এইত আর একটু বাকি
দৈয্য ধর জয় আমাদের হবে।
.
যুদ্ধের এক পর্যায়ে যখন হিমেলের পায়ে গুলি
লাগে আর ও কাতরাতে থাকে তখন আবার ওর মা
আর ভাই এসে বলে
-এই ব্যাথা কিছুই না রে।তুই লড়ে যা দেখবি জয়
আমাদেরই হবে।
.
বারান্দায় বসে হিমেল সাহেব ১৬ ডিসেম্বরের
জন্য ছেলে-বেলেদের পতাকা লাগানো দেখে
কথাগুলা ভাবছেন আর মুচকি হাসছেন।মানুষের
স্বাধীন ভাবে বেচে থাকা দেখে ভাবছেন।
.
-মা আর ভাই বুঝি এই স্বাধীনতার কথাই
বলেছিল।
.
তারপর লাঠিটা নিয়ে ঘরের দিকে খোড়াতে
খোঁড়াতে যায় হিমেল।ঘরের দরজাটা বন্ধ করে
খাটের নিচ থেকে ট্রাংকটা বের করে।তারপর
খুলে ভাইয়ের সাদা রক্তে মাখানো শার্টটা আর
মায়ের ছিড়ে রেখে দেওয়া আচলটা নিয়ে খাটের
উপর বসে কাদতে কাদতে বলে
.
-আমি পেরেছি মা।আমি পেরেছি তোমাদের
সপ্নে দেখা বাংলা গড়তে।আজ সবাই
স্বাধীনভাবেই থাকছে।
.
তারপর তা আবার ট্রাংকে রেখে।নিজের আলগা
পা-টা খাটের সাইডে রেখে শুয়ে পড়েন হিমেল
(যুদ্ধে পা-টা হারিয়ে ফেলেন হিমেল)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.