![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন পরিপূর্ন মায়ের কাছে তার ছেলে একটা রাজপূত্র।আর আমি আমার মায়ের রাজপূত্র।
রাত ১:২০ মিনিট।বাড়ির বাম পাশের যে রুমটা ছোট আছে সেখানে গিয়ে বসে আছে হিমেল।প্রতিদিনই প্রায় এই টাইমে গিয়ে বসে থাকে।গেটটা আবজানো পুরোপুরি লাগানো না।
.
পাশ থেকে কাঠের চেয়ারটা এনে সুইংগিং চেয়ারের পাশে রাখে তারপর জোকারের মুখোশটা পাশে রেখে চেয়ারটায় বসে হিমেল।
দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে ডান হাত দিয়ে সামনের চেয়ারটাকে ধাক্কা দিয়ে দুলতে দেয়। তারপর আস্তে আস্তে একটা জোক্স বলতে থাকে।
.
জোক্সটা শেষ করে নিজেই জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে আর বলেঃ
-কি সুন্দর না জোক্সটা?আমার তো হাসতে
হাসতে পেট ধরে যাচ্ছে।
সামনের চেয়ার থেকে কোন শব্দ আসছে না।তারপরেও নিজে নিজে কথা বলে যাচ্ছে হিমেল।
.
-আরেকটা শুনবে?
উত্তর শুনার ভান করে আবার বলেঃ
-আচ্ছা বলছি।
.
তারপর আবার শুরু করে নতুন একটা জোক্স।শেষ করতে না করতেই অট্টোহাসিতে পড়ে যায় হিমেল।চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে উপরের
দিকে চেয়ে হাসতে শুরু করে।হাসা শেষে আবার সামনের দিকে চায়।আর বলতে শুরু করেঃ
.
-জানো এখন আমি মানুষকে অনেক হাসাই আর নিজেও হাসি।তুমি খুশি তো?
আবার উত্তর শুনার ভান করে বলেঃ
-তুমি খুশি তো আমি খুশি।এখন ঘুমাও।
আবার একটু বিরক্ত বোধ করে বলেঃ
-এই এত হাসা ভাল না।ডাক্তার হাসতে বলেছে
তাই এত্ত না।এখন রেস্ট নাও পড়ে আসি।।
.
বলে চেয়ার থেকে উঠে যায় হিমেল।হাতে জোকারের মাক্সটা নিয়ে হাটতে শুরু করে।এক পর্যায়ে গেট থেকে বের হয়ে গেট লাগানোর সময়
সুইংগিং চেয়ারের দিকে চেয়ে বায় ইশারা করে আর গেটটা লাগিয়ে দেয়।
.
১০ মাস আগে
------------
ঠিক এই ঘরেই বসে ছিল হিমেল আর ওর বউ ভাবনা।কথা বলত বসে বসে।ভাবনার সাথে হিমেলের বিয়ে হয় মাত্র ২ বছর ধরে।অনেক সুখে ছিল দুজন।তার মাঝে ভাবনার গর্ভে হিমেলের
বাচ্চা ছিল।
.
কিন্তু হঠাৎ ভাবনার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ডাক্তার বলেছিলো ভাবনাকে যত পারে হাসিখুশি রাখতে তাই হিমেল প্রায় সময়
ভাবনাকে জোক্স শুনাত আর ভাবনা মন খুলে হাসতো।
.
চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নিয়েও ব্যর্থ হয়।যখন সব আশা শেষ হয়ে যায় তখন ডাক্তার হিমেলকে বলে ভাবনাকে যত পারে খুশি রাখতে।হিমেল তাই চেষ্টা করত।
.
একদিন রাতে এই রুমে বসেই দুজন কথা বলছিলো। হিমেল ভাবনাকে একটা সুন্দর জোক্স শুনিয়ে জিজ্ঞাস করেঃ
-কি কেমন হয়েছে?
ভাবনা অট্টহাসি দিতে দিতে বলেঃ
-হা হা হা।তুমি না আস্তা একটা জোকার।
হিমেল একটা মুচকি হাসি দেয়।
হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে কেদে দেয় ভাবনা।চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে।হিমেলভাবনার মুখে হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে
জিজ্ঞাস করেঃ
.
-কি হয়েছে?কাদছো কেনো?
ভাবনা বাম হাত দিয়ে হিমেলের হাতে ধরে
বলেঃ
-এখন কত হাসছি।হয়ত কিছুদিন পর আর হাসতে
পারবো না।
-এই এইরকম কথা বলো না তো।তোমার কিচ্ছু হবে
না।
ভাবনা কাদার মাঝে একটা মুচকি হাসি দিয়ে
বলেঃ
-মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে লাভ নেই হিমেল।আমি
জানি আমি বাচবো না।
-চুপ করো তো প্লিজ।
ভাবনা নিজের পেটে হাত দিয়ে ঢুকরে কেঁদে
উঠে আর বলেঃ
-আমি পারব না এই মাসুম জিবনটাকে আলোর মুখ
দেখাতে।
হিমেল আফসোসের স্বরে বলেঃ
-ভাবনা!!
.
ভাবনা কথা পাল্টে বলেঃ
-হিমেল আমার একটা কাজ করে দিবে প্লিজ।
-হুমম বলো?
-আমার যদি কিছু হয়ে যায় কথা দাও এভাবেইনিজেকে ও মানুষকে হাসিয়ে ফিরবে।মানুষের দুঃখ হাসিতে পরিনত করবে।
-আমি বললাম তো তোমার কিছু হবে না।
-এই কথা বাদ দাও।তুমি বলো কাজটা পারবে কি
না?
হিমেল দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে বলেঃ
-হুমম চেষ্টা করবো।
-চেষ্টা না পারবে কি না বলো?
-হুমম পারবো।
ভাবনা ডান হাতটা বাড়িয়ে বলেঃ
-ওয়াদা করো কাজটা করবে।
হিমেল নিজের ডান হাতটা ভাবনার হাতে
দিয়ে বলেঃ
-ওয়াদা।
.
ভাবনা হিমেলের হাতটা জোড়ে চেপে কাছে আনে।আর হিমেল ভাবনার মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু খায়।
.
সেদিন রাতে ভাবনা মারা যায়।হিমেল সেদিন একটুও কাদে নি।কারন ভাবনার সাথে করা ওয়াদা পুরন করতে হবে যে।তার কিছুদিন পর থেকে হিমেল একটা লাল টি-শার্ট যেটার পিছনে
লিখা "কিপ স্মাইলিং" আর জোকারের মাক্সটা পরে বের হয়ে যায় মানুষকে হাসাতে।
.
হিমেল বেশিরভাগ সময় বাচ্চাদের স্কুলের সামনে গিয়ে তাদের সাথে দুষ্টামি করে তাদের হাসায় আর নিজেও হাসে।হিমেলের এমন ড্রেস
আপ দেখে সবার মাঝেই কৌতুহল জাগে কে এই লোক?কেন মানুষকে এত্ত হাসায়।কিন্তু কেও আজো জানতে পারে নি।
.
পরেরদিন সকালে আবার সেই সেম ড্রেস আপ পড়ে বের হয়ে যায় মানুষকে হাসাতে।মানুষ খুব বেশি ইনজয় করে হিমেলের সাথে।জোকারের এই হাসানোর ক্ষমতাটা সবার মধ্যে থাকে না।
©somewhere in net ltd.