নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা কথাই বুঝি \"হয়ত প্রতিবাদ করো নয়ত মরো\"

মুহাম্মাদ আরজু

একজন পরিপূর্ন মায়ের কাছে তার ছেলে একটা রাজপূত্র।আর আমি আমার মায়ের রাজপূত্র।

মুহাম্মাদ আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কর্মের ফল"

২২ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯

সকাল সকাল বউয়ের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাজ্ঞল আশফাক সাহেবের।নিজের ঘরেই শোয়া ছিলেন তিনি।আওয়াজ টা বেশি হওয়ায় হুট করে ঘুমটা ভেজ্ঞে যায়।হাতের বামে থাকা টেবিলটায় হাত দিয়ে চশমাটা পড়ে নেয়।তারপর বিছানা থেকে নেমে খাটের পাশে পড়ে থাকা স্যান্ডেল পড়ে ছেলের রুমের দিকে এগিয়ে যায় ঝগড়ার বিষয়টা জানার জন্য।ঘুম ঘুম চোখে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় তিনি।আর ওইদিকে আওয়াজটা বাড়তেই থাকে।
.
ছেলের রুমের পাশে যেতেই বউয়ের কথা শুনে থেমে যায় আশফাক সাহেব।দেওয়ালের পাশ থেকে রাগি কন্ঠটা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছেঃ
>আমি আর পারছি না তোমার বাবাকে নিয়ে।(মুখ ভেজ্ঞিয়ে)তরকারিতে লবন কেন হলো?বউমা এইটা করো।আমার পাঞ্জাবিটা ধুয়ে দিও।আর তার উপর সারাদিন কাশতে থাকে রাইহান তো উনার কাছেই থাকে যদি ওর কিছু হয়?
>(অস্বস্তির স্বরে) বুঝ না কেন বাবা বুড়ো হয়েছে?এই বয়সে মন মানসিকতা থাকে অন্য রকম।
>তাই বলে কি আমাকে সারাদিন গরুর মতো খাটিয়ে ফিরবে নাকি?
>খাটানো কই হলো।তোমার বাবা হলে কি এই কাজগুলা করতে না?
>আমার বাবা আমাকে কাজ করতে দিতেনই না।আর সারাদিন ঘ্যানরঘ্যানর করে বেড়ায়।এইসব একদমই ভাল লাগে না।
>তো কি করবো বলো?উনি তো আমার বাবা লাগেন।
>(রাগের মাত্রাটা বাড়িয়ে)আমি উনার সাথে থাকতে পারব না।হয়ত এই বাড়িতে আমি থাকব নয়ত উনি থাকবেন।
>কি বলছো এইসব?এই বয়সে উনি কোথায় যাবেন?
>তোমাদের নিজস্ব বৃদ্ধাশ্রম আছে না ওইখানে দিয়ে আসো।
>বাবা বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে পারবে না রিয়া।
>থাকতে পারুক বা না পারুক আমি উনার সাথে থাকতে পারবো না।
.
দেওয়ালের ওইপাশে থাকা আশফাক সাহেব কথাগুলা শুনে হতভম্ব হয়ে পড়লেন।পিছনে রাখা হাতদুটো মুঠ করে ধরে নিজের রুমের দিকে আবার যেতে লাগলেন।মনে খুব কষ্ট অনুভব করলেন তিনি।বিছানায় মনস্থির করে বসে ডান হাত দিয়ে চশমাটা খুলে বিছানায় রাখলেন আর ভাবতে লাগলেনঃ
>১২ বছর ছিল যখন হিমেলের মা মারা গেল তখন থেকে নিজেই ওকে মায়ের মতো বড় করলাম।আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে এখন ও অনেক বড় হয়ে গেছে।প্রতিটা সুখ কিনে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতাম।আজ ও বড় হয়েছে ওর সুখের চাহিদাটাও।যাক এই সুখটাও পূরন করবো।বাবা তো ছেলের সুখ না পূরন করতে পারলে কিসের বাবা হলাম।
ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে জমে থাকা জলগুলো মুছে একটা মুচকি হাসি দেয় আশফাক সাহেব।
.
পরেরদিনঃ
----------
সকাল ৯ টার দিকে একটা ট্যাক্সি বাড়ির বাইরে থামানো থাকে।আর আশফাক সাহেব তার জামা-কাপড় গুলা একটা ব্যাগে গুছাতে থাকেন।এমন অবস্থায় হিমেলের ছোট্ট ছেলে রাইহানের কাছ থেকে নিজের বাবার চলে যাওয়ার কথা শুনে ছুটে আসে হিমেল।
>(বৃষ্মিত কন্ঠে) বাবা কি হচ্ছে এইসব?
গোছানো ব্যাগটা থেকে মুখটা হিমেলের দিকে নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে আশফাক সাহেব বলেনঃ
>কই কিছু না তো।
তাহলে ব্যাগ গুছাচ্ছ আবার বাইরে গাড়ি দাড় করানো।তুমি যাচ্ছো কোথায়?
>তোর মায়ের নামে করা বৃদ্ধাশ্রমে।
>কেন ওখানে কেন?
>আমার এখানে ভাল লাগে না রে।একা বসে সময় কাটাতে পারি না।ওইখানে আমার মতো আরো অনেক লোক আছে আমার ভাল লাগবে।
>ওইখানে গিয়ে কোন লাভ নেই বাবা।
দরজার সামনে দাঁড়ানো রিয়া কথাগুলা শুনছিল আর মনে মনে হিমেলকে না থামানোর অনুরোধ করছিলো।
>ওইখানের মানুষের আমার প্রয়োজন আছে আমাকে থামিয়ে রাখিস না।
কথাটা বলতে বলতে হিমেলের ছেলে ওর প্যান্ট টান দিয়ে জিজ্ঞেস করেঃ
>বাবা!!বাবা!! দাদুভাই কোথায় যাচ্ছে?
আশফাক সাহেব ফ্লোরে হাটু গেড়ে নাতির উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে ইশারায় ডাক দেয়।হিমেলের ছেলে দৌড়ে গিয়ে আশফাক সাহেবকেই জিজ্ঞেস করেনঃ
>দাদুভাই তুমি কোথায় যাচ্ছো?
আশফাক সাহেব মুচকি হাসি দিয়ে বলেঃ
>বেড়াতে যাচ্ছি দাদুভাই।
হিমেলের ছেলে বায়না ধরে বলেঃ
>আমিও যাবো।আমাকে নিয়ে যাও না দাদুভাই।
>না দাদুভাই ওইখানে ছোট ছেলেরা যায় না।তুমি বড় হলে দাদুভাইয়ের সাথে দেখা করে এসো।তুমি হবে না দাদুভাই?
>হ্যা!!আমি অনেক বড় হবো।
কথাটা শুনে হেসে দেয় আশফাক সাহেব।তারপর নাতির গালে চুমু খেয়ে বলেঃ
>চলো দাদুভাইকে এগিয়ে দিয়ে আসো।
বলে ব্যাগটা নিয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়া শুরু করে আশফাক সাহেব।যেতে যেতে হিমেলকে বলেঃ
>বউমা আর রাইহানের খেয়াল রাখিস।
আর রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলেঃ
>সুখে থেকো ভাল থেকো বউমা।
.
তারপর গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে আশফাক সাহেব।গেটটা লাগাতে লাগাতে নাতির উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে বিদায় পালা বুঝিয়ে যায়।নাতিও উরন্ত চুমে দাদার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেয়।গাড়িটা চালু দেওয়ার খানিক সময়ের মধ্যে কান্নায় ভেজ্ঞে পড়ে আশফাক সাহেব।ড্রাইবার আশফাক সাহেবকে জিজ্ঞেস করেঃ
>কান্দেন কেন,কি হইছে চাচা?
আশফাক সাহেব চশমা খুলে চোখের জলগুলো মুছে উত্তর দেয়ঃ
>কিছু না।শুধু আজ আবেগটা সামলাতে পারলাম না।
ড্রাইবার কাহিনি কিছুটা বুঝতে পেরে চুপসে যায়।
.
তারপর থেকে শুরু হয় আশফাক সাহেবের বৃদ্ধাশ্রমের জীবন।প্রতিটা মূহুর্তেই হিমেলদের কথা মনে পড়ত।কিন্তু কি করার ছেলেকে সুখে রাখার জন্য তার এই করা।ওইদিকে প্রথমে কিছুদিন বাবার খবর নিলেও পরে আর কোন খবর নেয় নি হিমেল।দেখতে দেখতে বৃদ্ধাশ্রমে ৬ মাস কাটিয়ে দেয় আশফাক সাহেব।হঠাৎ একদিন হিমেলের কাছে বৃদ্ধাশ্রম থেকে খবর আসে আশফাক সাহেব খুব অসুস্থ।দেখা করার জন্য তারা হিমেলকে আসতে বলে।কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে দেরি হয়ে যায় হিমেলের।সন্ধ্যার দিকে বৃদ্ধাশ্রমে এসে আশফাক সাহেবের রুমে যায় হিমেল।গিয়ে দেখে আশফাক সাহেব বিছানায় শোয়া।হিমেল আশফাক সাহেবের পায়ের কাছে বসে পা টা ধরে বলতে থাকেঃ
>বাবা!!আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমাদের সুখের কারনে এখানে চলে এসেছ।আমরাও মনে করেছিলাম তোমায় ছাড়া সুখেই থাকব।কিন্তু আমরা ভুল বাবা।তোমাকে ছাড়া আমাদের চলে না।রাইহান অসুস্থ হয়ে যায় বারবার আর তোমাকে দেখার জিদ করে।তুমি চলে আসো আবার আমাদের সাথে।
কথার কোন রিপ্লাই না আসায় পা ধরে ঝাঁকুনি দেয় হিমেল।এবার বেশ উদ্দিগ্ন হয়ে বুক ধরে ডাক দেয় হিমেল।কোন উত্তর না পাওয়ায় পাগলপ্রায় অবস্থায় সবাইকে ডাকতে শুরু করে হিমেল।
.
কিচ্ছুক্ষনের মধ্যে মানুষ জন এসে আশফাক সাহেবের অবস্থা দেখে মৃত বলে দেয়।হিমেলের মাথায় যান আকাশ ভেজ্ঞে পড়েছিল।কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।
.
এখন হিমেলের বয়স ৫৬ বছর।বিছানায় হেলান দেয়া অবস্থায় কথাগুলা ভাবছিল।এর মধ্যে রিয়া এসে ডাক দিয়ে হিমেলের ধ্যান ভাজ্ঞায়।দুই জনই খুব বুড়ো হয়ে গেছে।চামড়াগুলো কুঁচকিয়ে গেছে।বাবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা বিছানায় আজ দুজনের থাকতে হচ্ছে।এটা যেন ভাগ্যের নির্মম পরিনতি।হিমেলের ছেলে রাইহানও আজ তাদের বাড়ি থেকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সেই বিছানা,সেই খাট,সেই যায়গাই রয়েছে শুধু আজ আশফাক সাহেব নেই।তার যায়গা তার ছেলে পূরন করে রেখেছে।অবশেষে তারা দুজনই বুঝতে পারে "বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার সিদ্ধান্তটাই তাদের এই দশার মূল কারন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৫৭

সিনিয়ার মোফিজ বলেছেন: ওনেক ভলো লাগছে

২| ২২ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৫

ইঞ্জিনিয়ার ইমরান হোসেন বলেছেন: সুন্দর লাগলো

৩| ২২ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১

মুহাম্মাদ আরজু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাদের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.