নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা কথাই বুঝি \"হয়ত প্রতিবাদ করো নয়ত মরো\"

মুহাম্মাদ আরজু

একজন পরিপূর্ন মায়ের কাছে তার ছেলে একটা রাজপূত্র।আর আমি আমার মায়ের রাজপূত্র।

মুহাম্মাদ আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ "মায়ের জন্য হাজারবার মরবো"

২৬ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

[১]
ফজরের নামাজটা পরে বাসায় ফিরে হিমেল।
উদ্দেশ্য আবার ঘুমাবে।রাতে ঘুমাতে একটু দেরি
হয়েছিল তাই আবার ঘুমাতে হবে।সকাল ৯ টায় একটা
চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে।বাসায়
ফিরেই দক্ষিন সাইডের রুমটায় চোখ দেয় হিমেল।ওর
মা "হামিদা বেগম" মাত্র নামাজটা শেষ করেছেন।
ভোরের আলোয় মার মুখটা দেখে হৃদয়টা জুড়িয়ে যায়
হিমেলের।মুখের কোনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পা
টিপে টিপে ওর মা দিকে এগোতে থাকে যাতে ওর
অস্তিত্ব টের না পায়।কিন্তু যেই হিমেল ওর মার
কাধে হাত রাখবে সেই ওর মা বলে উঠেঃ
>কিরে কখন এলি?এদিকে বস।
হাতটা গুছিয়ে হিমেল বাচ্চাদের মতো বিরক্ত
প্রকাশ করে বলেঃ
>মা!!আমি তো টু শব্দও করি নি।তাহলে বুঝো
কিভাবে আমি এসেছি?
হাতের উপর ভর করে ওর মায়ের দিকে চেয়ে হেলান
দিয়ে বসে হিমেল।ওর মা মুচকি হাসি দিয়ে
হিমেলের গালে হাত বুলিয়ে বলেঃ
>মায়ের মন সব জানে রে।কারো বলতে হয় না।
হিমেলও মুচকি হেসে বলেঃ
>আচ্ছা ঘুমাও।আমার সকালে ইন্টারভিউ দিতে
যেতে হবে।
...
বলে হামিদা বেগমকে কোলে নিয়ে বিছানায় তুলে
দেয় হিমেল।হিমেলের মার পা দুটো
প্যারালাইসিস হয়ে গেছে।নিজের পায়ে চলতে
ফিরতে পারে না।তাই হিমেল টিউশনি করে করে
তার জন্য একটা হুইল চেয়ার কিনে দিয়েছে যা দিয়ে
তিনি ঘরের এদিক ওদিক চলাফেরা করে।
জায়নামাজ টা গুছিয়ে আলনার উপর রাখে হিমেল।
তারপর নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
...
সকাল ৮:২৪
-----------
ততক্ষণাক ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে হিমেল।
মাথাটা ফুল হ্যাং ধরে আছে।মোবাইলের ঘড়িতে
সময়টা দেখে তাড়াতাড়ি করে গোসলটা সেড়ে নেয়
হিমেল।প্রতিদিনের খাবার হিমেলকেই তৈরি
করতে হয় কিন্তু আজ দেরি হওয়াতে নাস্তা
বানানোর কোন সুযোগ নেই।এক দৌড়ে বাইরের
হোটেল থেকে ওর মার জন্য খাবার এনেই কোনমতে
রেডি হয়ে যায়।তারপর গিয়ে ওর মার পা ধরে
সালাম করে।এতেই ঘুম ভাংজ্ঞে হিমেলের মার।
>কিরে চলে যাচ্ছিস?
>হ্যা মা।সময় নেই।
>কিছু খেয়েছিস?
>না।খেয়ে নেব।তুমি দোয়া করো আমি যাই।
বলেই দৌড় দেয় হিমেল।সামনের বড় রাস্তার পাশে
যে সি,এন,জি স্টান্ডটা আছে সেখানে গিয়ে
সি,এন,জি ভাড়া করতে থাকে হিমেল।ওর গন্তব্য
স্থানে যেতে কেউ রাজি হয় না।শেষমেষ একটা
সি,এন,জি যেতে রাজি হলঃ
>মামা যাইবা?
>কই?
>অমুক জায়গায়।
>২৫০ টাকা লাগব।
>কি কও মামা?ওইখানের ভাড়া তো ২০০ টাকা।
>যেই জাম পড়ে এই ভাড়া না হইলে পোষায় না।
>আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু জাম দিয়া নিও না।
>আইচ্চা ওডো।
বলেই হিমেল গাড়িতে উঠে পড়ে।গাড়িটা বেশ
ভালো স্পিডেই চলছিলো।গাড়ির স্পিড দেখে
হিমেল মনে মনে ভাবতে শুরু করলোঃ
>মামার মনে হয় পাইলট হওয়ার ইচ্ছা আসিলো।
ভাগ্যক্রমে হয় নাই।এখন সি,এন,জি রেই প্লেন মনে
করতাসে।
...
ভাল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে ৩০ মিনিটের রাস্তা
২০ মিনিট করে ফেলে গাড়িওয়ালা।তাড়াতাড়ি
পৌঁছাতে পেরে মামাকে টাকার সাথে ধন্যবাদ
জানায় হিমেল।তারপর বিল্ডিংটার সাইনবোর্ডের
দিকে তাকিয়ে নামটা পড়ে নেয়।যেখানে লেখা
এ,আর কোম্পানি লিমিটেড।নামটা পড়েই
বিল্ডিংটার ভেতরে চলে যায় হিমেল।রিসেপশনে
থাকা চিকন মেয়েটাকে জিজ্ঞাস করেঃ
>ইন্টারভিউ নিচ্ছে কোন খানে?
মেয়েটা হাসি দিয়ে বলেঃ
>দোতলার পশ্চিম পাশে।
>ধন্যবাদ।
...
হিমেল ওর কাধে ঝুলানো ব্যাগটা হাতে ধরে সিড়ি
দিয়ে উপরে উঠে।গিয়ে দেখে অনেক মানুষ বসে
আছে।লম্বা সরু লাইনে একটা চেয়ার ফাকা ছিল
যেখানে গিয়ে বসে হিমেল।সাথে ওর মতোই একজন
যুবক বসা ছিল যার সাথে পরিচয় হয় হিমেলের।
ওইদিকে একের পর এক লোকদের নাম ধরে ডেকে
ভিতরে নেওয়া হচ্ছে।মনের ভিতর কিউরিয়াস
বেরেই চলেছে হিমেলের।এতক্ষন ওয়েট করার পর
প্রায় ১২ টার দিকে হিমেলকে ডেকে নেওয়া হয়।
রুমটার গেট নক করে হিমেল ৩ জন ভদ্রলোক দেখতে
পায় যাদের উদ্দেশ্যে হিমেল বলেঃ
>মে আই কামিং স্যার?
তাদের মধ্যে থাকা একজন ভদ্রলোক উত্তর দেয়ঃ
>ইয়েস অফ কোর্স।
হিমেল চেয়ারের সামনে গিয়ে নিজের ব্যাগটা
থেকে ফাইলটা বের করে টেবিলে তাদের উদ্দেশ্যে
রাখে হিমেল।তারপর তাদের মধ্যে একজন বলেঃ
>প্লিজ সিট ডাউন।
হাসিমুখে হিমেল বলেঃ
>থ্যাংকস স্যার।
বলে চেয়ারে বসে হিমেল।তাদের মধ্যে মাঝখানে
বসা লোকটা হিমেলের ফাইল খুলে পড়তে থাকে।
তারপর তারা একে অপরকে ফাইলটা পাস করে পড়ার
জন্য।তারা সবাই ফাইলটা পড়ে টেবিলে বন্ধ করে
হিমেলের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন রাখেঃ
>বাবা মৃত?
>জ্বী স্যার।
>কিভাবে মারা গেলেন?
>একটা বাস এক্সিডেন্ট এ।
>আপনার এক্টিভেটিস তো ভালোই দেখা যাচ্ছে।সব
জায়গায় টপার ছিলেন।কি মনে হয় চাকরিটা
পাবেন?
>ক্ষমা করবেন স্যার।কিন্তু আমার মনে হয় মানুষের
গ্রেড দেখে চাকরি দেওয়াটা বোকামি।আর আমার
প্রতিভা বেচতে এখানে আসি নি।
তারা সকলেই একে অপরের দিকে চেয়ে বিষ্মৃত হয়ে
আবার প্রশ্ন করেঃ
>তাহলে কি অভিজ্ঞতা আছে আপনি আমাদের
এখানে চাকরি করবেন যে?
>অভিজ্ঞতা নেই স্যার।অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য
এখানে এসেছি।
>অনভিজ্ঞতা নিয়ে কি এখানে কাজ করা যাবে বলে
আপনি ভাবেন?
>আমার মন বলছে যখন আপনারা এই কোম্পানি চালু
করেন তখন আপনারাও অনভিজ্ঞ ছিলেন।
ইন্টারভিউয়াররা একে অপরের দিকে চেয়ে বলেঃ
>ইম্প্রেসিভ।এখন বলুন কবে থেকে জয়েন করছেন আর
কত টাকা মাইনে পেলে খুশি হবেন?
এই প্রশ্নটা শুনে মুচকি হাসে হিমেল।সাথে তারাও
হেসে দেয়।
...
হাসিমুখে জলদি বাড়ি ফিরে হিমেল।খুশির
সংবাদটা নিজের মাকে শোনায়।হিমেলের মা
খুশিতে কেঁদে দেয়।আর বলতে যায়ঃ
>আজ যদি তোর...
কথাটা থামিয়ে হিমেল বলেঃ
>হইসে থাক।বাংলা ছবির ডায়লগ দেয়া লাগবে না।
কথাটা শুনে হাসতে হাসতে হিমেলের মাথায়
একটা আস্তে থাপ্পড় দেয় ওর মা।তারপর হিমেলের
কপালে চুমু বসায়।
.
[২]
কিছুদিন পরঃ
------------
অফিসে জয়েন করে হিমেল।মনযোগ দিয়ে কাজ
করতে থাকে সে।এর ভিতর কোম্পানির মালিক
আব্দুর রহমান সাহেব তার মেয়েকে নিয়ে আসে তার
অফিসের নতুন লোকদের সাথে পরিচয় করিয়ে
দেওয়ার জন্য।আস্তে আস্তে সবার সাথে পরিচয়
করানোর এক পর্যায়ে আব্দুর রহমান সাহেবের
হিমেলের কাছে আসতেই তার মেয়েকে বলেঃ
>এই অফিসের সবচেয়ে ট্যালেন্ডেট ছেলে।
তিনি হিমেলের উদ্দেশ্যে বলেনঃ
>হিমেল এই আমার মেয়ে ভাবনা।
হিমেল পিছে ফিরে ভাবনাকে শুধু হায় বলে আবার
কাজে লেগে পড়ে।যা ভাবনা দেখে ইম্প্রেস হয়ে
যায়।আর ভাবেঃ
>আমাকে দেখলে সবাই তাকিয়ে থাকে আর ও
কিভাবে চোখ ফিরিয়ে নিলো?
ভাবনার মনে অনেক অহংকার তাই মনে মনে
হিমেলকে নিজের বানানোর ইচ্ছা করে বসল।
...
তারপর থেকে প্রতিদিনই ভাবনা অফিসে গিয়ে
হিমেলের সাথে কথা বলার চেষ্টা করতো।হিমেল
প্রথম প্রথম পাত্তা না দিলেও একসময় ভাবনার
প্রেমে পড়ে।এভাবেই অনেকদিন চলার পড়ে ভাবনা
হিমেলকে বলে তাকে বিয়ে করতে।কিন্তু হিমেল
অস্বীকৃতি জানায়।বলেঃ
>তোমার আর আমার ভিতর কখনোই বিয়ে হবে না।
>তুমি এমন কেন বলছো?
>তোমার বাবা কখনোই মেনে নিবেন না।তোমার
স্ট্যাটাস দেখো আর আমার স্ট্যাটাস দেখো।
কখনোই মিলে না।
>আমি বাবাকে মানিয়ে নিবো।বাবা আমাকে খুব
ভালবাসে।সে আমার কথা রাখবে আমি জানি।
হিমেল কিছুক্ষন চুপ করে থাকে।ভাবনা এবার বলেঃ
>হিমেল তুমি আমাদের ব্যাপারে তোমার মার
সাথে কথা বলো।
>আচ্ছা ঠিক আছে।
...
বলে চলে আসে হিমেল।বাসায় এসে মার সাথে কথা
বলতে যায় কিন্তু তখন হামিদা বেগম তসবীহ
পড়ছিল।তাই হিমেল পিছ থেকে ওর মাকে ডাক
দেয়ঃ
>মা!!কিছু কথা ছিলো।
হিমেলের মা পিছে না চেয়েই জবাব দেয়ঃ
>আমি জানি তুই কি বলবি?কিন্তু ওই মেয়েকে
আমার একটুও পছন্দ হয় না।কাজ কাম কিছু পারে না
শুধু ঘরে এনে কোন ফয়দা হবে না।
কথাটা শুনে ওইখান থেকে চলে আসে হিমেল আর
ধরে নেয় ভাবনাকে বুঝি তার মার পছন্দ হয় নি।
কিন্তু ওর মা সকালে হিমেলের বলে যাওয়া কাজের
মেয়েটার ব্যাপারে বলছিলো।ব্যাপারটা নিয়ে আর
কথা বলে নি হিমেল।পরেরদিন ভাবনাকে গিয়ে সব
বলে দেয় হিমেল।ভাবনা রাগের মাথায় হিমেলকে
বলেঃ
>কি এমন কমতি আছে আমার ভেতর?
>কোন কমতি নেই।কিন্তু মার পছন্দ হয় নি।
>বিয়ে কি তোমার মা করবে না তুমি?
>বিয়ে আমি করবো।কিন্তু সারাদিন মার সাথেই
তো থাকতে হবে।এখন অপছন্দের লোকের সাথে তো
আর থাকা যায় না।
>তুমি কি আমায় ভালবাসো না?
>হ্যা।অনেক।
তাহলে তোমার মাকে ছেড়ে চলে আসো..
কথাটা শুনে রাগে মাথা ফেটে যাওয়ার অবস্থা
হিমেলের।
>যা বলেছো ভালই বলেছো।মুখে ওই কথা আর কখন
যেন না আসে।
ভাবনা আরো রেগে বলেঃ
>তোমার মাই তো সমস্যা।ওকে ফাইন।এই সমস্যা
আমি চিরতরে মিটিয়ে দেব।
বলেই চলে যায় ভাবনা।হিমেলও বাসায় ফিরে
আসে।পরেরদিন একটু দেরি হয় বাসায় ফিরতে
হিমেলের।রাস্তায় ঔষধের দোকানে ঔষধ নিতে
দাড়ায় হিমেল।তখনি মনের ভিতর কেমন জানি
লাগছিলো।তাই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে গেটটা
খুলে চমকে যায় হিমেল
[৩]
...
কথাগুলা ভাবতে ভাবতেই পুলিশ ভ্যানটা ব্রেক
করে।এতক্ষনে ধ্যান ভাংজ্ঞে তার।ভ্যানের গেটটা
এক পুলিশ খুলতে খুলতেই হাতকড়া অবস্থায় মুখ ঢাকে
হিমেল।আজ আলোটা কেমন জানি বিস্রি লাগল ওর
কাছে।টানা ৩ দিন ২৭ মিনিট পর পূর্নাঙ্গ আলো
দেখতে পারলো হিমেল।কনডেম সেলের ফোটা
আলো আর বাইরের আলোর তফাৎ এতক্ষনে বুঝতে
পারলো হিমেল।কোর্ট প্রাঙ্গণ একেবারে স্তব্দ হয়ে
আছে।আজ আর অন্য কোন শুনানি হবে না কারন
বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর মেয়ের হত্যাকান্ডের ব্যাপার।
হিমেলকে পাশ থেকে দুই পুলিশ দুই হাতে ধরে
রেখেছে।আর পিছনে ১০ জনের মতো পাহাড়া দিতে
দিতে আসছে।এইসব দেখে মুচকি হাসে হিমেল।
বিচারকক্ষে হিমেলকে নিয়ে যাওয়া হয়।কাঠগড়ায়
হিমেলকে দাঁড়িয়ে রেখে পুলিশগুলা লাইনে
দাঁড়িয়ে যায়।বিচারকক্ষে শুধু আইনজীবীরা আর
আব্দুর রহমান সাহেব আছেন।এই একটা কেস লড়তে ১২
জনের মতো আইনজীবী আব্দুর রহমান সাহেবের
পক্ষে গেছেন।
...
কিছুক্ষন পর বিচারপতি কক্ষে প্রবেশ করেন।সবাই
দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান দেয়।বিচারপতি হিয়ারিং
করার আগে জানতে চায় হিমেলের পক্ষের
আইনজীবী কে?হিমেল জানায় তার পক্ষে কেউ
আসে নি আর প্রয়োজন নাই।তারপর বিচারপতি
আব্দুর রহমান সাহেবের পক্ষের আইনজীবীদের
হিয়ারিং করার সুযোগ দেয়।আর এই ফাকে হিমেল
আবারো সেই রাতের ধ্যানে পড়ে যায়ঃ
>গেটটা খুলে চমকে যায় হিমেল।ঘরের সবকিছু
এলোমেলো হয়ে আছে।আস্তে আস্তে মায়ের ঘরের
দিকে যেতেই দেখতে পায় ভাবনার রক্তে ভেজা
লাশ ফ্লোরে পড়ে আছে।সাথে পিস্তলটা পড়া।
হিমেলের মা বড় বড় চোখ করে দেওয়ালে হেলান
দিয়ে ভয় পেয়ে আছেন।একদম স্তব্দ হয়ে গেছেন।
হিমেল ওর মার কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিতেই
তার ধ্যান ভাংজ্ঞে আর তিনি ততক্ষণাক
হিমেলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেঃ
>বাবারে আমি এইটা ইচ্ছা করে করি নি।আমি তো
জানিই না এই মেয়েটা কে?আমাকে মারতে
চাইছিলো।বাচার জন্য হয়ে গেছে।
আশ্চর্য চোখে চেয়ে হিমেল ওর মাকে বলেঃ
>আমি না সেইদিন তোমাকে ওর ব্যাপারে বলতে
চাইলাম তুমি বললে ওকে পছন্দ হয় না।
>সেইদিন আমি তো তোর দেখানো কাজের মেয়ের
কথা বলেছিলাম।আমি তো ওর ব্যাপারে কিছুই
জানি না।
হিমেল দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।আর
নিজের মায়ের মাথা বুলিয়ে সান্তনা দিতে
থাকে।
...
>বাবা আমাকে ক্ষমা করে দে।আমি ইচ্ছা করে এটা
করি নি।
>কে বলেছে তুমি এটা করেছ?এই খুন আমি করেছি।
হিমেলের মা কাঁদতে কাঁদতে আশ্চর্যজনক চোখে
তাকিয়ে বলেঃ
>না।আমি তোর গায়ে এই কলঙ্ক লাগতে দেবো না।
এটা আমিই করেছি।
পিস্তলটায় সাইলেন্সার লাগানো ছিল যার কারনে
বাইরে আওয়াজ যায় নি।হিমেল ওর মাকে ছেড়ে
পিস্তলটা হাতে নিয়ে একটা রুমাল দিয়ে মুছতে
থাকে যাতে ও বাদে কারো ফিঙার প্রিন্ট না
পাওয়া যায়।রুমাল দিয়ে ভাল করে মুছে হিমেল
নিজের হাতটা পিস্তলের গায়ে বসিয়ে দেয়।আর ওর
মা চিৎকার করতে থাকে
>হিমেল।এই কলঙ্ক নিজের গায়ে নিস নে।
যার কারনে পাশের বাড়ির লোকজন এই কাজটা
দেখে পুলিশকে খবর দেয়।
...
এতক্ষনে বিচার শেষ হয়ে যায়।রায় দেওয়ার আগে
বিচারপতি হিমেলকে জিজ্ঞাস করে সে কিছু বলবে
কি না?হিমেল মুচকি হাসি দিয়ে বলেঃ
>আমি জানি আমার ফাসি হবে।কিন্তু এটা জেনে
রাখুন স্যার আমার মাকে মারার জন্য যে আসবে
তাকে মেরে আমি হাজারবার মরবো।
বিচারপতি হিমেলকে ফাসির রায়ই ঘোষনা দেয়।
আইনজীবীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে।তাদের হাসি
দেখে হিমেলও মুচকি হাসে।
.
ফাসির রাতঃ
------------
তুমুল বৃষ্টি ঝড়ছে।রাত ১০ টা ১ মিনিটে হিমেলের
ফাসি হবে।তার আগে তাকে তওবা কালেমা
ইত্যাদি পড়ানো হয়।হিমেলের লকাপে একজন পুলিশ
তার শেষ ইচ্ছা জিজ্ঞেস করেঃ
>তোমার শেষ ইচ্ছা কি?
মুচকি হাসি দিয়ে হিমেল বলেঃ
>মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোকের শেষ
ইচ্ছা বাঁচতে চাওয়ার থেকে বেশি কিছু হতে পারে
না।কিন্তু এটা আপনারা পূরন করতে পারবেন না।
তাই আমার মাকে আমার সাথে দেখা না করতে
দেওয়ার আদেশ দিন।যাতে আমি হেসে মরতে পারি
মায়ের কান্নাময় চেহারা দেখে নয়।
পুলিশটা হিমেলের কাধ চাপড়ে দিয়ে চলে যায়।
কিছুক্ষন পর হিমেলকে ফাসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া
হয়।তিনজন জল্লাদের দ্বারা হিমেলের ফাসির
কাজ শুরু হয়।হিমেলকে জমটুপি পড়ানো হয়।সাদা
রুমালটা হাত থেকে পড়ার সাথে সাথে হিমেলের
ফাসির কাজ সম্পাদন হয়।আর যা দিয়ে হিমেল
মায়ের প্রতি ভালবাসার এক অন্য নিদর্শন রেখে
যায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.