নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা কথাই বুঝি \"হয়ত প্রতিবাদ করো নয়ত মরো\"

মুহাম্মাদ আরজু

একজন পরিপূর্ন মায়ের কাছে তার ছেলে একটা রাজপূত্র।আর আমি আমার মায়ের রাজপূত্র।

মুহাম্মাদ আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

"যেমন কর্ম তেমন ফল"

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:০২

ডাকঘর থেকে বাসায় ফিরেই একটা শরগোলের আওয়াজ শুনতে পায় রফিক সাহেব।ভিতরের ঘর থেকে আওয়াজটা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল।গেটটা খোলা ছিলো তাই চুপচাপ সামনের ঘরে প্রবেশ করলো রফিক সাহেব।তার ছেলে হিমেল তার স্ত্রীর সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছিলোঃ
>ভাল একটা রেসাল্ট করলাম।স্কলারশিপ পেলাম তাও আবার অস্ট্রেলিয়াতে।এমন ভাগ্য কয়জনের হয় বলো তো।তারপরেও তোমরা বলছো ওইখানে যেতে না।
>তুই তোর পড়াশোনা এইখানে কমপ্লিট কর।এইখানেও তো এখন পড়াশোনার মান অনেক ভাল হয়েছে।
>মা তুমি বিদেশের পড়াশোনার সাথে এইখানের পড়াশোনার তুলনা করছো?মাথা ঠিক আছে তো?
...
আয়শা বেগম হিমেলকে বুঝাতে শুরু করেঃ
>দেখ বাবা আমরা এত বড়লোক না যে তোকে বিদেশে পড়ালেখা করাতে পারবো।এইখানে পড়াশোনা করে ভাল দেখে একটা চাকরি নিয়ে নিলেই লাইফটা সেটেল হয়ে যেত।
হিমেল রেগে গিয়ে বলেঃ
>আমি এইখানে থেকে নিজের লাইফটা এইভাবে শেষ করতে চাই না।সারাজীবন তো দেশেই কাটিয়ে দিলো বাবা।কি করতে পারলো?পিয়নের কাজ করতে হচ্ছে।আমিও চাই এইখানে থেকে তার মতো পিয়নের কাজ করতে।আমার স্বপ্ন বড় আমি বড় কিছুই করতে চাই।
হিমেলের মার মন খারাপ হয়ে যায়।মাথাটা নিচু করে রাখে।কথাটা বলেই ওইখান থেকে চলে যায় হিমেল।যাওয়ার সময় ওর বাবা উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পারে নি।
...
আয়শা বেগম ভেতরের ঘর থেকে বাইরের ঘরে যেতেই রফিক সাহেবকে দেখে চমকে যায়।হকচকিয়ে আয়শা বেগম রফিক সাহেবকে জিজ্ঞাস করেঃ
>কখন এলে তুমি?
রফিক সাহেব চশমাটা মুছতে মুছতে মুচকি হাসি দিয়ে বলেঃ
>এইত এইমাত্র।একটু পানি দিতে পারবে?গলাটা শুকিয়ে গেছে।
আয়শা বেগম পানি আনার জন্য রান্নাঘরে যায় আর রফিক সাহেব একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে চশমাটা পড়ে নেয়।আয়শা বেগম পানি এনে রফিক সাহেবকে দেয়।রফিক সাহেব ডান হাত দিয়ে পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি পান করতে থাকে।আয়শা বেগম হুট করে রফিক সাহেবকে জিজ্ঞাস করেঃ
>কি ব্যাপার তোমার মন খারাপ নাকি?
রফিক সাহেব পানির গ্লাসটা রেখে বলেঃ
>না।শুধু একটু ক্লান্ত লাগছে।
...
আয়শা বেগম মনে করে নেয় রফিক সাহেব কিছুই শুনে নি।আনমনে থাকা অবস্থাতেই রফিক সাহেব হঠাৎ জিজ্ঞাস করেঃ
>অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগবে?
প্রশ্নটা বোদহয় শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না আয়শা বেগম।তাই হকচকিয়ে বলেঃ
>মানি?
রফিক সাহেব হেলান দিয়ে বসে চশমাটা টেবিলে রেখে বলেঃ
>ওর অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগবে?
কিছু না বুঝার ভান করে আয়শা বেগম বলেঃ
>ঠিক বুঝতে পারলাম না।
রফিক সাহেব মুচকি হাসি দিয়ে বলেঃ
>থাক লুকাতে হবে না।আমি সব শুনেছি।এখন বলো কত লাগবে?
আয়শা বেগম ভান ধরার লজ্জায় মাথা নিচু করে অকপটে বলে ফেলেঃ
>৩ লক্ষ টাকা।
রফিক সাহেব দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলেঃ
>হুমম।এই বাড়িটা বিক্রি করলে টাকা ম্যানেজ হয়ে যাবে তো নাকি আরও দরকার পড়বে?
আয়শা বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরে।চোখ বড় বড় করে বলেঃ
>কি বলছো এইসব?বাড়ি বিক্রি করে দিবে?
>দিলাম তাতে কি হবে?
>এই বাড়ি না তোমার বাবার ছিল।তোমার বাবার রেখে যাওয়া জিনিস তুমি বিক্রি করে দিবে?
>আমার বাবা যখন আমার জন্য বাড়িটা দিয়েছিল তখন আমি তার ছেলে ছিলাম।সে আমার জন্য বাড়িটা দিয়েছিল আর আজ আমি আমার ছেলের খুশির জন্য বাড়িটা বিক্রি করতে চাচ্ছি।দুইটার সূত্রই এক।
আয়শা বেগম চুপসে যায়।রফিক সাহেব সোফা থেকে উঠে বলেঃ
>ওকে ওর জিনিসপত্র গুছাতে বলো।এইখানে থাকলে বড়জোর ডাকঘরের পিয়নই হতে পারবে।
এই কথা শুনে আয়শা বেগম বুঝতে পারে কথাগুলো রফিক সাহেবের বুকে বিঁধেছে।
...
কিছুদিন পর রফিক সাহেব বাড়িটা বিক্রি করে দেয়।হিমেল অস্ট্রেলিয়া যেতে পারবে এই ভেবে অনেক খুশি হয়।ভিসার জন্য যথারীতি ৩ লাখ টাকা জমা দেয়।কিছুদিন পর ভিসাও এসে পড়ে।রফিক সাহেব তার বাবার দেওয়া বাড়িটা ছেড়ে পাশের এলাকায় একটা ছোট রুম নিয়ে নেয়।বাড়িটা ছাড়ার সময় পিছনে চেয়ে রফিক সাহেব শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসে।
হিমেলের অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ফ্লাইট পরে।হিমেল অনেক খুশি হয়ে ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।আয়শা বেগম তার ছেলেকে অশ্রুসিক্ত বিদায় দেয়।
হিমেল অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে প্রথম কয়েকমাস বাসায় ফোন দিয়ে খোজ খবর নিত।কিন্তু তারপর থেকে হঠাৎ ফোন দেওয়া অফ করে দেয়।রফিক সাহেবও ফোন দিলে ব্যস্ততার অজুহাতে কেটে দিতো।আয়শা বেগমকে রফিক সাহেব শুধু সান্তনা দিতো যে ছেলে পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত তাই ওকে ডিস্টার্ব না করাই ভাল।
রফিক সাহেব নিয়মিত ফোন দিতো তাই হিমেল বিরক্তবোধ হয়ে সিম পাল্টে ফেলে।কিছুদিন পর যখন হিমেলের আর কোন খোজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না তখন রফিক সাহেব আর আয়শা বেগম খুব মন খারাপ করে।আয়শা বেগম অনেক কাঁদত আর রফিক সাহেব তাকে আগের মতোই সান্তনা দিয়ে রাখতো।
...
অনেক বছর অতিবাহিত হয়ে যায়।হিমেল অস্ট্রেলিয়াতেই বিয়ে করে সেটেল হয়ে যায়।দেশে যে মা-বাবা আছে তা একদমই ভুলে বসে।আর এইদিকে রফিক সাহেব তার কাজ থেকে রিটায়ার্ড হয়ে যায়।শেষ বয়সে তার হাতে কোন কাজ না থাকায় পেপার বিক্রি করে জীবনধারণ করে।হিমেল তাদের খোজ খবর নিবে তো দূরের কথা তাদের কাছে কোন টাকা পর্যন্ত পাঠায় নি।তারা কিভাবে জীবন ধারন করছে তা কখনো হিমেলের মাথায়ই আসে নি।
...
হিমেলের একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়।ছেলেটাকে খুব আদর যত্ন করে বড় করে হিমেল ও তার স্ত্রী হামযা।হিমেলও প্রায় বয়স্ক হয়ে যায়।ওর ছেলেটা বড় হতে থাকে।নিজের ছেলের প্রতি নিজেদের আদর স্নেহ দেখে হঠাৎ হিমেলের মনে পরে বাবা-মা বলতেও যে পৃথিবীতে কোন একটা জিনিস আছে।ও তার পুরোনো সিমটা খুঁজতে শুরু করে।ভাগ্যবশত আলমারির একটা বাক্সে সিমটা খুঁজে পায়।সিমটা ফোনে লাগিয়ে বাবার নাম্বারে অনেকবার ট্রাই করে কিন্তু বারবারই বন্ধ বলে ওইপাশ থেকে আওয়াজ আসে।কি যেন মনে করে হিমেল ওর এক বন্ধুর নাম্বারে ফোন দেয়ঃ
>হ্যালো!!
>হ্যালো!!রাব্বি?
>জ্বী।জানতে পারি আপনি কে?
>আমি হিমেল।
>কোন হিমেল?
কি বলবে ভেবে না পেয়ে হিমেল উত্তর দেয়ঃ
>ওই যে তোর সাথে ছোটবেলা স্কুলে পড়তো ওই হিমেল।
রাব্বি বুঝতে পেরে ওর কথাকে ব্যঙ্গ করে বলেঃ
>ও আচ্ছা!!বিদেশি হিমেল।যে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে আর যে ২৪ বছরে একটু সময়ও পায় না নিজের মা-বাবার খোজ নিতে।
>এমন করে কথা বলছিস কেন রে?
...
>ও!!ভুল হয়ে গেছে।আপনি তো সাহেব মানুষ।তো আমার কাছে কেন ফোন করেছেন জানতে পারি?
>বাবার নাম্বারটা বন্ধ।অনেক ট্রাই করলাম কিন্তু বারবার অফ বলছে।বাবা কি নতুন সিম ইউস করছে রে?
>মৃত মানুষ আবার কি সিম ইউস করতে পারে?
হিমেল ভ্রু-কুচকে বলেঃ
>মানে কি?
>মানি আপনার বাবা।ও সরি আপনার বাবা বললে তো আবার আপনার অসম্মানি।কারন সে তো একজন পিয়ন ছিল।তো যে লোকটা পিয়ন ছিল না সে মারা গেছে।
হিমেল হতভম্ব হয়ে যায়।খাটে ধপাস করে বসে কাঁদতে কাঁদতে রাব্বিকে জিজ্ঞাস করেঃ
>কিভাবে হলো রে?
>কিভাবে আবার হবে শেষ বয়সে লোকটা পেপার বিক্রি করে জীবন চালাতো আর কত কুলায় ওই দেহে।
হিমেল আবার প্রশ্ন করেঃ
>আর মা?
রাব্বি খানিকটা হেসে বলেঃ
>উনি তো ওইদিনই মরে গিয়েছিল যেইদিন তুই তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলি।শুধু দেহটা জিন্দা ছিল সেটাও ২ বছর আগে হিমেল হিমেল করতে করতে মরে গেছে।
...
হিমেল হাত থেকে ফোনটা ছেড়ে দিয়ে হতভম্ব হয়ে বসে থাকে।ফ্লোরে পরে থাকা মোবাইলটা থেকে রাব্বির হ্যালো!!হ্যালো!! আওয়াজটা শুনা যাচ্ছিল।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই বৃদ্ধাশ্রমের হিমেলের রুমে নক করে ডেভিড সাহেব।এতক্ষনে ধ্যান ভাঙ্গে হিমেলের।বসে বসে জীবনের মূহুর্ত গুলোর কথা ভাবছিলো হিমেল।বাবা-মার সাথে করা অন্যায়ের কথা ভাবতেই চোখের কোণে জল জমা পড়ে হিমেলের।ভাগ্যের নির্মমতায় আজ হিমেল তার শেষ সময় বৃদ্ধাশ্রমে কাটাচ্ছে ওর স্ত্রীও মারা গেছে।তাই এখন হিমেল সম্পূর্ন একা।ওর ছেলে ওকে ওর বাবা-মার সাথে করা অন্যায়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল।ওর ছেড়ে যাওয়াতে ওর বাবা-মায়ের কেমন অনুভূতি ছিল এখন ওর ছেলের ওকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যাওয়ার পরই অনুভব হচ্ছে।
শাস্তিটা যে ওর প্রাপ্য ছিল এটা হিমেল ভালভালেই বুঝতে পেরেছিল।কারন ভাল কর্মের ফল সব সময় ভালই হয় আর খারাপ কর্মের ফল খারাপ।হয়ত জীবনের শেষ মূহুর্ত এখানেই কাটাতে হবে।হয়ত ওর ছেলের মাটিও ওর ভাগ্যে জুটবে না ভেবেই গা সিউরে উঠছিল হিমেলের।
...
লেখক- মুহাম্মাদ আরজু (পথহীন মুসাফির)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৪

মার্কো পোলো বলেছেন:
হৃদয় বিদারক। বাবা-মা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলেও ছেলে মেয়েরা বুঝার চেষ্টাই করে না। :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.