নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা কথাই বুঝি \"হয়ত প্রতিবাদ করো নয়ত মরো\"

মুহাম্মাদ আরজু

একজন পরিপূর্ন মায়ের কাছে তার ছেলে একটা রাজপূত্র।আর আমি আমার মায়ের রাজপূত্র।

মুহাম্মাদ আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

"গল্প-নৌকা"

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০০

রৌদ্রের প্রখরতা এখনো কমে নি।বিকেল ৩ টা
কি ৪ টা হবে।সূর্য্য পশ্চিমে হেলতে শুরু করেছে
মাত্র।হিমেল এখনই বেরিয়ে এসেছে ঘুরতে
যাবে বলে।অনেকদিন পর নানির গ্রামের
বাড়ি আসা।হিমেলের নানিরাও শহরে চলে
গেছে তাই গ্রামে আসা হয় নি প্রায় ৮-১০ বছর।
বেড়ে উঠার পর এই প্রথম গ্রামে আসা।তাই
গ্রামের পরিবেশ নিয়ে কৌতুহল টা একটু
বেশিই কাজ করছে হিমেলের ভিতর।এখন
নৌকা দিয়ে ঘুরবে বলে ঠিক করেছে।
নানিদের গ্রামের পরিবেশ নিয়ে এত কিছু
জানা নেই তাই সঙ্গে করে গ্রামের এক
সমবয়সী বন্ধু নিয়ে এসেছে নদীপথ ঘুরতে।
.
হিমেল একটু জলদি করে হেটে ঘাটের দিকে
এসে পড়ে।কিন্তু ঘাটে একটা নৌকা ছাড়া
আর নৌকা নেই দেখে একটু চমকে যায়।কমড়ে
হাত দিয়ে ঘাটের এপাশ-ওপাশ ভাল করে
দেখে নেয় হিমেল।ছোট ছোট ঢেউ এসে
ঘাটে বাড়ি খাচ্ছে।কিন্তু ঘাটে তো দূরের
কথা কোথাও কোন নৌ-যান দেখা যাচ্ছে
না।ঘাটে যে নৌকাটা ভিড়ে রয়েছে
আস্তে আস্তে তার সামনে গিয়ে নৌকার
ভিতর উকি মারে হিমেল।দেখে একটা ৪০-৪৫
বছরের লোক পশ্চিমের আকাশে চেয়ে আছে
আর হাতে কি যেন একটা দিয়ে দাঁত
খোঁচাচ্ছে।হিমেল লোকটাকে ডাক দেয়ঃ
...
>ও চাচা!!
লোকটা দাঁত খোঁচানো বন্ধ করে পিছে
ফিরে চায়।হিমেল আবার বলেঃ
>চাচা!!যাবেন?
লোকটা বিরক্তভাব প্রকাশ করে বলেঃ
>না যামু না।
হিমেল আশ্চর্য হয়ে ভ্রু-কুচকে বলেঃ
>আরে চাচা চলেন না।
লোকটা আবার বলেঃ
>কইলাম তো যামু না।
হিমেল আবার বলেঃ
>যাইবেন না কেন?চলেন এদিকেই ঘুরমু।টাকা
বাড়িয় দিবো নে।
লোকটা এবার রাগের ভাবে বলেঃ
>ধুর মিয়া কইসি যামু না।তুমি আবার আমারে
টেকার লোভ দেহাও।তোমার সাহস তো কম
না।যাও এনতে।
হিমেল সম্পূর্নভাবে আশ্চর্য হয়ে গিয়ে এক কদম
পিছে ফিরে আসে।আর ওমনিতেই হিমেলের
সঙ্গে যে ছেলেটি যাবে সে ছেলেটি
দৌড়ে আসে।আর নৌকার মাঝির রাগাম্বিত
মুখ দেখে জিজ্ঞাস করেঃ
>চাচা!! কি অইসে?
চাচামিয়া ছেলেটার উদ্দেশ্যে বলেঃ
>ওই বেডা।এই পোলা তোর লগের?
ছেলেটি সম্মতি জানিয়ে বলেঃ
>হ।আমার লগের।কি করসে?
>নাদান পোলা আমারে টেকার লোভ
দেহাইয়া আমার নৌকায় উঠতে চায়।
>চাচা!!তুমি চিনতে পারো নাই।এইডা আমগো
ছগির মিয়ার নাতি।
>ছগির মিয়ার নাতি হোক আর যের নাতিই
হোক।আমারে কোন সাহসে টেকার লোভ
দেহায়।
>ভুল কইরা লাইসে চাচা।আমগো একটু
কলিমুদ্দিনের ঘাডে নামায় দিয়া আহো
অনেক দরকার আসে।
>না এই পোলারে আমার নৌকায় উঠতে দিমু
না।
>চাচা!!বিপদে পইড়া আইসি আর তুমি না কইরা
দিতাসো।
চাচামিয়া রাগ ঠান্ডা করে বলেঃ
>আইচ্ছা আয়।
ছেলেটা হিমেলের উদ্দেশ্যে ফাইলামি
মার্কা একটা হাসি দিয়ে বলেঃ
>ওডো!!ওডো!!
হিমেল ছেলেটার উদ্দেশ্যে বলেঃ
>কলিমুদ্দিনের ঘাটে গিয়ে কি করব?আমি তো
নৌকা দিয়ে ঘুরব।
ছেলেটা হিমেলের কাঁধে হাত দিয়ে
বলেঃ
>আগে ওডো।পরে কমুনে।
...
তারপর হিমেল আর ছেলেটা নৌকায় উঠে
পরে।মাঝি লুঙ্গি কাছাড় দিয়ে নৌকা
থেকে হাটুজল পানিতে নামে।তারপর নৌকা
পানির উদ্দেশ্যে ঠেলে দিয়ে আবার নৌকায়
উঠে পড়ে।হিমেল আর ছেলেটা জুতাজোড়া
খুলে নৌকার ভিতরে গিয়ে বসে।তারপর
হিমেল ছেলেটাকে জিজ্ঞাস করেঃ
>আচ্ছা তোমার নামটা যেন কি?
ছেলেটা হাসি দিয়ে বলেঃ
>শান্ত
আরে মিয়া কলিমুদ্দিনের ঘাডে যাইতে ৩০
মিনিটের মতো লাগব।হেয় তো এহোন নৌকাই
চালাইত না।আর হেয় না গেলে তোমার ঘুরতে
যাওয়াও হইত না।তাই কলিমুদ্দিনের ঘাডে
যাই তোমার ঘোরাও অইব আর হের নৌকা
চালান ও অইব।
>কেন?এইখানের আর মাঝি কই?
>এইহানে আর কোন মাঝি নৌকা চালায় না।
>কেন?
>সবাই বেশি টেকা কামানের লাইগা শহরে
গেসে গা।গেরামের টানে এই জলিল চাচাই
একলা নৌকা চালায়।
>তো উনি এত রেগে গেল কেন?
>হেয় এই সময়ে নৌকা চালায় না।আর কেউ
হেরে টেকা দিলেও এই সময়ে যায় না।হের
ভাবনা অইল টেকা কামাইতে হইলে শহরেই
চইলা যাইত।এইহানে মানুষের মহব্বতের লাইগা
রইসে।
>ও।তাহলে তো আমি ভুল কইরা ফালাইসি।
জলিল মাঝি আস্তে আস্তে নৌকা বাইতে শুরু
করে।বৈঠার সাথে পানির কলকল শব্দ বেশ
ভালোই লাগছে হিমেলের কাছে।হিমেল আর
শান্ত নিজেরা কথা বলা শুরু করে।নদীর মাঝে
শীতল বাতাস পেয়ে হিমেলে দীর্ঘনিশ্বাস
ফেলে।কারন জীবনে প্রথম এমন কোন
অভিজ্ঞতা পাচ্ছে হিমেল।আর ওইদিকে জলিল
মাঝি মনের সুখে গান গাইতে শুরু করে।হিমেল
মনযোগ দিয়ে তার গাওয়া গান শুনতে থাকে।
...
কিছুক্ষন পর আকাশ একটু কালো মেঘ দিয়ে
ঢেকা যায়।পশ্চিমের সূর্য্যটা মেঘে ঢাকা
পরে।আর তখনই জলিল মাঝি তার গান বন্ধ করে
দৌড়ে নৌকার ভিতরে এসে হিমেলকে
বলেঃ
>চাপেন দেহি।
হিমেল আশ্চর্য হয়ে বলেঃ
>কোথাও সরবো?
>আরে ওডেন তো এনতে।
হিমেল তার বসা যায়গা থেকে সড়ে শান্তর
সাথে গিয়ে বসে।মাঝি হাটু গেড়ে বসে
বসার মাদুরটা সড়িয়ে নৌকার নিচের অংশ
থেকে একটা লাঠি নিয়ে তার বৈঠার
ওদিকে আবার দৌড় দেয়।হিমেল আর শান্ত
উকি দিয়ে দেখতে থাকে মাঝির কর্মকান্ড।
মাঝি তার হাতের লাঠিটা দিয়ে পশ্চিমের
কালো মেঘদের শাসাতে শুরু করে চিৎকার
করে বলতে থাকেঃ
>আমার নৌকার যাত্রী নিবি।আয় দেহি।
এইবার তোরে ছাড়মু না।একবার নিয়া গেসোস
দেইখা কি বারবার নিতে পারবি।আয় দেহি।
বলতে বলতেই আকাশের মেঘগুলা সূর্য্য থেকে
সড়ে যায়।আর মাঝি রাগ ভেঙ্গে হাসতে
হাসতে বলতে থাকেঃ
>কি ডরায় গেসোস?এইবার আর পারবি না।
এইবার আইলে পড়ে একেবারে খবর আসে।
বইলা মাঝি হাসতে হাসতে লাঠিটা নিয়ে
আবার নৌকার ভিতরে এসে জায়গা মতো
রেখে দেয় আর হাসতে হাসতে বলতে
থাকেঃ
>হাহা।ডরায় গেসে।এইবার আর ছাড়মু না।
লাঠিটা রেখে আবার নৌকা বাইতে শুরু করে
জলিল মাঝি।হিমেল মাঝি কর্মকান্ড দেখে
চোখ বড় বড় করে রাখে।তারপর হুট করে নিজের
জায়গায় গিয়ে শান্তকে জিজ্ঞাস করেঃ
>উনার কি হইসে?এমন করলেন কেন?
>কিছুই হয় নাই।
>তাহলে এমন করলেন কেন?উনি কি পাগল
নাকি?
>ধুর মিয়া।পাগল অইতে যাইবো কে?আকাশে
কালা মেঘ দেখলে সবসময় এমনই করে।
>কালো মেঘ দেখলে তো মানুষের খুশি লাগে
যে বৃষ্টি আসবে।আর উনার মাথা খারাপ হয়ে
যায়।
>আরে ভাই হের জায়গায় আপনে থাকলে
আপনেও এমনই করতেন।
>কেন কি হইসে তার সাথে?
শান্ত মনস্থির করে জলিল মাঝির কাহিনি
বলতে থাকেঃ
>হের নাম জলিল চাচা।এই গ্রামে ৩০-৩৫ বছর
ধইরা থাকে।এই নদীর দক্ষিন পাশেই হের
বাড়ি আসিলো।বউ-বাচ্চা লইয়া ওইহানেই
থাকতো।গ্রামডা অনেক বড় আসিলো নদী
ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে জলিল চাচার বাড়ি ঘরও
লইয়া যায়।তখন অনেকে শহরের উদ্দেশ্যে চইলা
গেলেও জলিল চাচা যায় নাই এই গ্রামের
টানে।বাড়ি ঘর হারানের পর থাইকা নৌকায়
পরিবার লইয়া থাকা শুরু করে।কিন্তু যহন সবাই
গ্রাম রাইখা শহরে চইলা যায়।তহন জলিল
চাচার বউও গ্রামে গিয়া থাকার কথা কয়।
চাচা প্রথমে যাইতে রাজি না হইলেও পরে
শহরের উদ্দেশ্যে নিজের নৌকা লইয়া রওনা
হয়।যাওনের সময় নদীর মাঝ পথে ঝড় শুরু অইলে বউ
আর বাচ্চাডা পানিতে পইড়া মারা যায়।
তারপর থাইকা শহরের মানুষরে বেশি একটা
ভালা পায় না।আর এই নৌকা ছাইড়াও কোন
জায়গায় যায় না।হেয় মনে করে এই নৌকায়
হের বউ আর বাচ্চা এহোনো থাকে।আর তাই
যহনই আকাশে মেঘ দেহে তহনই লাঢি লইয়া
মেঘেরে শাসাইতে শুরু করে।চাচা খুব ভাল
মনের মানুষ তাই বিপদে পড়া মানুষরে সাহায্য
করে।চাচার একটা ইচ্ছা আসে হেয় মরলে এই
নদীতেই ভাসায় দিতে কইসে
...
হিমেল কথাগুলা শুনে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে
শান্তকে বলেঃ
>জীবনে অনেক হেরে যাওয়া মানুষের গল্প
শুনেছি।কিন্তু বাস্তবকে হারিয়ে বেচে
থাকা মানুষ এই প্রথম দেখলাম।
শান্ত মুচকি হাসি দেয়।আর জলিল মাঝি
ওমনিতেই গানের সূর ধরেঃ
"ও বন্ধুরে!!তোর পিরিতে ভাসাইলাম নাও
দিমু পাড়ি দেশ-দেশান্তর
কিন্তু মাঝপথে আইসাও পাইলাম নারে তোর
সাও"
হিমেল আর শান্ত মনযোগ দিয়ে জলিল মিয়ার
গান শুনলেন।তার কিছুক্ষন পরই নৌকাটা ঘাটে
এসে ভিড়ল।জলিল মিয়া পানিতে নেমে
নৌকাটা মাটি পর্যন্ত টেনে নিয়ে এলেন।
তারপর শান্তকে ডাক দিয়ে বললঃ
>আইয়া পড়সি।নাইমা আয়।
হিমেল আর শান্ত জুতা হাতে নিয়ে হাটতে শুরু
করে।শান্ত জলিল মাঝি টাকা সাধলে জলিল
মিয়া টাকা নিতে রাজি হয় না।হিমেলের
মনে জলিল মাঝিকে নিয়ে সম্মান ও
ভালবাসা জন্মে যার কারনে ও এক লাফে
কাঁদাতে নেমে জলিল মাঝিকে বুকে
জড়িয়ে নেয়।জলিল মাঝি কিছু বুঝে উঠার
আগেই হিমেল আবার সামনের দিকে হাটতে
শুরু করে।জলিল মাঝি তার নৌকা নিয়ে আবার
নিজের চিরচেনা ঘাটে ফিরে যায়।
সারা বিকাল কলিমুদ্দিনের ঘাটে কাটিয়ে
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে হিমেল।তারপর থেকে
প্রতিদিনই জলিল মাঝির নৌকায় করে ঘুরে
বেড়াত হিমেল যার কারনে মাঝির সাথে
হিমেলের একটা সখ্য গড়ে উঠে।কিছুদিন পর
শহরে চলে আসার জন্য প্রস্তুত হয় হিমেল।
যাওয়ার আগে জলিল মাঝির কাছ থেকে
বিদায় ও দোয়া চেয়ে নেয়।তারপর শহরে
ফিরে আসে হিমেল।শহরে এসে জলিল মাঝির
কথা খুব মনে পড়ত হিমেলের।
৬ মাস পরঃ
-----------
হিমেল আবার গ্রামে ফিরে যায়।গিয়েই
প্রথমে নিজেদের গ্রামের ঘাটে জলিল
মাঝির সাথে দেখা করতে যায়।কিন্তু ঘাটে
কোন নৌকা না দেখতে পেয়ে হিমেল আশ্চর্য
হয়।তারপর শান্তর কাছে জলিল মাঝির খবর
জানতে চায়।শান্ত হিমেলকে বলেঃ
>চাচা তো আর বাইচা নাই ভাই।
হিমেল ভ্রু-কুচকে বলেঃ
>মানে কি?কিভাবে কি হলো?
>২ মাস আগে আকাশ কালা দেইখা শাসাইতে
শাসাইতে নৌকা লইয়া নদীর মাঝে চইলা
যায়।ওইদিন অনেক ঝড় অয়।তার পরের দিন নদীর
মাঝখান থাইকা জলিল চাচার নৌকাডা
তুলতে পারলেও জলিল চাচারে আর খুইজা
পাওয়া গেল না।আশে পাশের গ্রামেও অনেক
খোজ করসি।কোনহানে হের লাশ ভাইসাও
ওডে নাই।
কথাটা শুনে হিমেলের চোখ পানিতে ভরে
যায়।আর মনে মনে ভাবতে থাকেঃ
>মাঝিগুলার জীবনই বোধহয় এমন হয়।নদীতেই শুরু
আর নদীতেই শেষ।এই নদীই লোকটার সবকিছু
নিলো।তারপরেও ক্ষান্ত হলো না।অবশেষে
নিজের গর্ভে লোকটাকেও নিয়ে গেল।
তারপরে ওই নদীতে আর কখনো কোন মাঝি
নৌকা ভাসাতে পারে নি কারন নদীটা
শুকিয়ে যায়।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮

অবনি মণি বলেছেন: :) :)

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩

অবনি মণি বলেছেন: :) :)

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: আরো গোছানো হলে ভাল হতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.